
ফরিদপুরের মধুখালীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মোহন শেখ (৫০) নামে এক কৃষকের ২৮ শতাংশ জমিতে বপন করা গম ও সরিষা ফসল নষ্ট করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে প্রতিপক্ষের দাবি, নিজেদের জমি থেকে ফসল কেটে নিয়েছেন।
রোববার সকালে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বিদ্যুৎ সাব স্টেশন সংলগ্ন আমুরদী মৌজায় ৭২৬ নং দাগের ওই জমিতে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে জমিতে ছুটে গিয়ে দিশেহারা হয়ে থানা পুলিশকেও অবগত করেন। কৃষক মোহন শেখ ওই ইউনিয়নের পাইককান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তার অভিযোগ, পাশ্ববর্তী তেলিকান্দি গ্রামের প্রভাবশালী গ্রাম্য মাতুব্বর মো. ফরিদ মোল্যার (৪০) নেতৃত্বে ফসল নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ওই জমিতে সরিষা ও গমের চাষ করা হয়েছে। ফলন আসলেও এখনও ঘরে তোলার উপযুক্ত হয়ে উঠেনি। বপনকৃত ফসল কাঁচা রয়েছে। এ অবস্থায় এবড়ো থেবড়ো ভাবে ফসলের মাথা কেটে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে স্থানীয় অনেকে সেখানে ভিড় করেন। এমন ঘটনা দেখে বিস্মিত স্থানীয়রাও।
স্থানীয় আব্দুর রহমান মোল্যা বলেন, গত ৪০ থেকে ৫০ বছর যাবৎ এই জমি মোহন শেখ চাষাবাদ করছে। প্রতিবছরের মতো এবাবরও সে চাষ করছে। রোববার সকালে শুনি কাঁচা ফসল কেটে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যারা কেটে নিছে তারা অনেক শক্তিশালী। ওদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না। এর আগে গত বছরও কেটে নিয়েছে। এভাবে অন্যের জমি থেকে জোড়জবর করে কেটে নেয়া সমাজ ও আইনের কাছেও খারাপ কাজ। কিন্তু কোনো বিচার হয় না বা কোনো সমাধানও হয় না।
কৃষক মোহন শেখ জানান, পৈত্রিক সম্পত্তিমূলে পাশাপাশি তিনটি দাগের ১২২ শতাংশ জমির মালিক তারা তিন ভাই। এই জমি নিয়ে গত ৪০ বছরের বেশি সময় মামলা মোকাদ্দমা চলে আসতেছে। বর্তমানে তাদের নামে রেকর্ডও হয়েছে। তবে সম্প্রতিকালে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন ওই জমির জাল কাগজপত্র করে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমি শুরু থেকেই আমরা চাষ করে আসতেছি। আজ সকালে ফরিদ মোল্যা তার লোকজন নিয়ে ওই জমির কাঁচা কম ও সরিষার গাছ ভাবে কেটে নিয়ে যায়। অন্যান্য ফসল বিনষ্ট করে রেখে যায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
অপরদিকে ওই জমি নিজের দাবি করে জমি থেকে নিজেই বপন করা ফসল কেটে এনেছেন বলে জানান ফসল কর্তনকারী ফরিদ মোল্যা। তিনি দাবি করেন, এসএ রেকর্ডমূলে তার পিতা মজিদ মোল্যা স্থানীয় মোবারক মোল্যা নামে এক ব্যক্তির নিকট থেকে ওই জমি ক্রয় করেন। পিতার ক্রয় সূত্রে ওই জমির মালিক হয়েছেন।
তবে কাঁচা ফসল নষ্ট করার প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রতিপক্ষ লোকজন ফসল কেটে নিয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কায় তিনি ফসল কেটে নিয়েছেন। এছাড়া একই জমির পৃথক দুটি বিএস রেকর্ড হয়েছে এবং পরবর্তীতে রেকর্ড সংশোধনী মামলায় তাঁদের পক্ষে রায় এসেছেও বলে জানান।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. ইমরুল হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। এছাড়া জমিজমা সংক্রান্ত কাজ আদালতের বিষয়, আমাদের কোনো বিষয় না। তারপরও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।