‘মানুষের জীবনচক্র’

হারুন-অর-রশীদ
প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫ । ১২:১৫ পিএম

গ্রামের নাম খোয়াড়। নিভৃত পল্লী। শুনশান নিরবতা। গোমট হাওয়া। ঘাসে ঢেকেছে কবরের চারপাশ। একটি ঘুঘু ডাকছে পাশের মেহগনি গাছে। রাস্তার পাশে কবর, তবু মানুষের চোখ মিলে তাকানোরও সময় নেই এদিকে।

আমি গ্রামের বাড়িতে গেলে এই গোরস্থানে গিয়ে একটু দাঁড়াই। দেখতে পাই নতুন নতুন কত-না কবর। যাঁরা একসময় বুকভরা স্বপ্ন ও আশার কথা শুনাতেন। আজ তাঁরা নিথর হয়ে শুয়ে আছে এই কবরের বুকে। জানিনা কেমন আছেন তারা। তবে, সব স্বপ্ন আর অসংখ্য ভাবনা পৃথিবীর বুকে রেখে গেছেন তাঁরা। আজ ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন ঈদ কিংবা বিশেষ কোনো দিনে একটু-আধটু স্মরণ করেন। কেউবা সেই স্মৃতি চারণ থেকেও বঞ্চিত হন যুগ থেকে যুগান্তরে। কিন্তু, বেঁচে থাকতে ছেলে-মেয়েদের জন্য কি-না করতেন এই মানুষগুলো।

আমি একটা সময় আপনাদের শুনিয়েছিলাম এ গ্রামের কাশেম সরদারের কথা। যিনি, সরকারি একটি ভিজিডি কার্ড না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে গত হয়েছেন। গত হয়েছেন গ্রামের অবহেলিত কুশের মা-ও। কত না দুঃখ ছিল তাদের মনে! অন্যদিকে, মসজিদ আর মাদরাসাকে ভালোবাসা বালিয়া গ্রামের মহসিন শিকদারও আজ কোনো কথা বলেননা। শুধু কবরটা ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে লতাপাতার বুক চিরে।

এভাবে আমরাও একদিন কত-না স্বপ্ন অপূরণ রেখে এদের সঙ্গে সঙ্গী হবো। কেউ খবর নিবেনা, ছেলে-মেয়ে কিংবা আত্মীয়-স্বজনও ভুলে যাবে আমাদের। নিথর হয়ে পড়ে থাকবো ঘুঘু ডাকা দুপুর পেরিয়ে রাতের পেঁচাদের ভিড়ে। খানিকটা মায়ার টান পড়লে কেউবা নিশানা টাঙিয়ে দিবে এই বাঁশে বাঁধা লাল জাল দিয়ে। অতঃপর নিত্য সঙ্গী হিসেবে বছরের পর বছর কথা হবে ঘাসেদের সাথে, পাখিদের কিচিরমিচিরে, কিংবা কবরের পোকামাকড়ের ভিড়ে।

লেখক : হারুন-অর-রশীদ, সংবাদকর্মী, ফরিদপুর।

© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

প্রিন্ট করুন