বাবা, তুমি আজকে ছুটি নাও!

Faridpur Protidin
আনিসুর বুলবুল
প্রকাশের সময়: রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫ । ২:৩৭ পিএম
‘বাবা, তুমি আজকে ছুটি নাও!’—এই কথাটি আমার ছয় বছরের ছেলের মুখে যখনই শুনি, কেমন যেন একটা কাঁটার মতো বুকে বিঁধে যায়। কথাটি ছোট, সরল, নিরীহ। কিন্তু এর গভীরতা এতটাই বিস্ময়কর যে, তা কোনো অফিস মেমো, মিটিং নোট কিংবা প্রেজেন্টেশন ফাইলেও মাপা যায় না।

প্রতিবারই মনে হয়, এই ছোট্ট মানুষটি আসলে কী চাইছে? খুব বেশি কিছু তো না।

শুধু চায় তার বাবা একটু বেশি কাছে থাকুক। বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটবে, কোনো দোকানে গিয়ে চকলেট কিনবে, বাড়ির সামনের মাঠে একটু খেলা করবে—এতটুকুই তো তার আকাঙ্ক্ষা। 

কিন্তু আমরা বাবারা কি পারি এই সামান্য ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে? অফিসের তাড়া, দিনের পর দিন ভরা শিডিউল, ফোনের টুনটুনানি আর একের পর এক মিটিংয়ের ভেতর ডুবে থাকি।

আজ বাবা দিবস।

এই বিশেষ দিনে অন্তত ওর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য একটু সময় দিতে পারতাম। সকালেই বেরিয়ে এসেছি অফিসে। পেছনে ফেলে গিয়েছি এক জোড়া অপেক্ষারত চোখ। ও হয়তো এখনও জানে না, আজ ‘বাবা দিবস’ বলে কিছু একটা আছে।
কিন্তু সে বোঝে, আজ যদি বাবা কাছে থাকত, তাহলে সকালটা একটু অন্যরকম হতো। 

আমরা প্রতিদিনই বলি, ‘সময় নেই।’ যে শিশুটি আজ আমার হাত ধরে হাঁটতে চায়, সে তো খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবে। একদিন সে আর আমার সঙ্গে হাঁটতে চাইবে না, চকলেট কিনতে বলবে না। তখন হয়তো মনে পড়বে, কেন সেই ছোট্ট হাতটি ধরে একটু বেশি হাঁটলাম না, কেন আরেকটা গল্প শোনালাম না।

 

বাবা হওয়ার অর্থ শুধু সংসারের খরচ জোগানো নয়। সন্তানের মনে নিরাপত্তা জাগানো, তার চোখে আনন্দ ফোটানোও তো আমাদের দায়িত্ব। অফিসের কাজ কখনো শেষ হবে না, কিন্তু সন্তানের শৈশব তো একবারই আসে। আজ বাবা দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—যত ব্যস্তই থাকি না কেন, প্রতিদিন অন্তত কিছুক্ষণ শুধু সন্তানের জন্য রাখব।

কারণ, সময় ফিরিয়ে আনা যায় না, কিন্তু সময় দেওয়া যায়। আজ যদি না-ও পারি, কাল সকালেই আয়ানকে বলব, ‘চলো বাবা, আজকে বাবা তোমার জন্য পুরো দিন ছুটি নিয়েছি।’ আসলে, সন্তানের হাসির জন্য যে সময়টা দিই, সেটাই তো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বিনিয়োগ।

© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

প্রিন্ট করুন