ভরা মৌসুমেও ইলিশ শূন্য ফরিদপুরের পদ্মা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশের সময়: শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫ । ৭:১৩ এএম

ইলিশের ভরা মৌসুমেও ইলিশ শূন্য ফরিদপুরের সদরপুরের পদ্মা নদীতে। জেলেদের জালে আগের মতো ধরা পরছেনা ইলিশ। নদীতে জাল ফেলে ইলিশ না পেয়ে জেলেরা ফিরছে শূন্য হাতে। এ উপজেলার বহু জেলে পদ্মায় কাঙ্খিত ইলিশ না পাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও মেঘনা নদী ও সমূদ্র উপকূলে অধিক পরিমাণে ইলিশ শিকার হওয়ায় পদ্মায় আর তেমন ইলিশ ঢুকতে পারে না৷ পদ্মায় যে ইলিশ পাওয়া যায় তা আকারে ছোট, যদিও বড় কিছু পাওয়া যায় তাও খুব অল্প পরিমাণে৷ যে কারণে সেসব বড় ইলিশের প্রচুর দাম হয়ে থাকে। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া, ঢেউখালী, আকোটের চর ও চর নাসিরপুর ইউনিয়নের জেলেরা মূলত ইলিশ শিকার করে থাকেন। এ ইউনিয়ন গুলোর প্রায় ৭ হাজার মানুষ ইলিশ শিকার পেশায় জড়িত রয়েছে। যার মধ্যে কার্ডধারী জেলে রয়েছে প্রায় ৬৫০ জনের মতো। তবে দ্রুত কার্ডধারী জেলের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।

নদীতে মাছ ধরতে আসা জেলে মো. মোকলেছুর রহমান জানায়, ‘গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পদ্মায় গিয়ে এক প্রকার খালি হাতেই ফিরে এসেছি। ৬/৭ জন মিলে যাও কয়টা ইলিশ পেয়েছি তা বেঁচে তেলের পয়সাও ঠিক মতো উঠে না৷ আমাদের খাটুনির কথাতো বাদই দিলাম৷’

আরেক জেলে আবুল ফরাজি জানায়, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে নদীতে জাল ফেলে কাংঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছি না। কালেভদ্রে দু’একটি পেলেও তা সাইজে অনেক ছোট। আমাদের পেশা ইলিশ ধরা। আমরা যদি ইলিশই না ধরতে পারি তাহলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো কিভাবে। বাপ-দাদার পেশা চাইলেও পরিবর্তন করতে পারিনা৷’

ঢেউখালী ইউনিয়নের পিয়াজখালী বাজারের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী মো. জয়নাল মোল্যা জানান, ‘ভাদ্র মাস গেলে সামনে ভালো পরিমাণে ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। ১০/২০ বছর আগের তুলনা এখন আর দিয়ে লাভ নাই। বিগত কয়েক বছর ধরে ইলিশ খুব কমই পওয়া যাচ্ছে পদ্মায়। আগে ইলিশ পাওয়া যেত বেশি, দাম ছিলো কম৷ আর এখন ইলিশ পাওয়া যায় কম, কিন্তু দাম অনেক বেশি। বর্তমানে পদ্মার একটি ১ কেজি সাইজের ইলিশ ৩/৪ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজও ১/২ হাজারের কম না।’

আকোটের চর ইউনিয়নের কালিখোলা বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা শহিদুল মুন্সী জানান, বাড়িতে মেহমান আসছে, তাই সেই ফরিদপুর সদর থেকে আসছিলাম পদ্মার তাজা ইলিশ কিনতে। এসে দেখলাম ইলিশ কিছু আছে তবে দাম আকাশছোঁয়া। সাইজেও ছোট সব৷ যদিও এক ডালা ছোট সাইজের ইলিশ কিনেছি তবে অনেক দাম দিয়ে৷ যদি বাজারে ইলিশের পরিমাণ বেশি থাকতো তাহলে হয়তো আরো কম দামে কিনতে পারতাম।

সদরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, ‘পানি প্রবাহের সাথে ইলিশের আনাগোনার একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে। নদীতে পনি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন জেলেদের জালে তুলনামূলক ইলিশ কম ধরা পড়ছে। বিগত ২ সপ্তাহ হলো মেঘনাতে বেশ ভালো পরিমাণে ইলিশ ধরা পরছে। সে হিসাবে আমরা আশা করতে পারি পানি একটু কমলে পদ্মায়ও ভালো পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে।’

এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা জানান, ‘আমরা যদি ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করি এবং জাটকা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকি তাহলে কিন্তু ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। আমরা উপজেলা প্রশাসন সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় নিয়মিত পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করি। ওই সময়ে পদ্মায় ইলিশ শিকার করলে জেলেদের জেল-জরিমানাও করি কিন্তু তার পরেও বহু জেলে লুকিয়ে এবং রাতের আধারে ইলিশ শিকার করে। এতো বিশাল পদ্মায় ২৪ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করেও একেবারে ইলিশ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হয়না। জেলেরা যদি প্রতি বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি মানতো তাহলে হয়তো ইলিশ সংকট কিছুটা হলেও দূর করা যেত।’

© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

প্রিন্ট করুন