
ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ডা. এম এ জলিল সহ নেতৃবৃন্দ ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নসহ ১০ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। জুলাই ঘোষণাপত্রে ৩১টি রাজনৈতিক দল ও জোট ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করতে সম্মত হয়েছেন। অধিকাংশ ব্যাংকের বিভাগীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় কার্যালয় ফরিদপুরে অবস্থিত।
ভৌগোলিক অবস্থানগত ও যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধার কারণে ব্রিটিশ আমল থেকে ফরিদপুরে কোর্ট কাচারিসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, শিশু হাসপাতাল, ডায়াবেটিস হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে আশপাশের প্রায় ৭টি জেলার মানুষ সুবিধা গ্রহণ করছেন।
ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার, ১৪ তম বৃহত্তম শহর, “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। প্রশাসনিক বিভাগের কোড- ৩০ ২৯। ফরিদপুর শহরটির পুরনো নাম ছিল ফতেহাবাদ। পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ফতেহাবাদে একটি টাঁকশাল স্থাপন করেছিলেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল ফতেহাবাদ। এটি একটি সু-বিকশিত নগর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি ছিল।
শহরে গুরুত্বপূর্ণ মুঘল সরকারি কর্মকর্তারা যেমন জেনারেল, বেসামরিক কর্মচারী এবং জায়গিরদারদের বসবাস ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে সতেরো শতকে স্থানীয় জমিদার সত্রাজিত ও মুকুন্দ মুঘল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। উনিশ শতকে আজমীর চিশতিয়া তরিকার অনুসারী সুফি সাধক শাহ ফরিদ উদ্দিন মাসুদের সম্মানে শহরটির নামকরণ করা হয় ফরিদপুর। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং দুদু মিয়া ফরিদপুরে রক্ষণশীল ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৭৮৬ সালে ব্রিটিশরা ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠা করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল ফরিদপুর মহকুমা। ১৮৬৯ সালে ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজের সময় এটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ফরিদপুর ছিল বেঙ্গল প্রোভিন্সিয়াল রেলওয়ে এবং ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের একটি রেল টার্মিনাল যা কলকাতাকে গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ ঘাটের সাথে সংযুক্ত করেছিল। এখান থেকেই জাহাজগুলো তৎকালীন ঔপনিবেশিক আসাম ও বার্মায় চলাচল করত। ব্রিটিশ ফরিদপুর বেশ কয়েকজন উপমহাদেশীয় জাতীয়তাবাদী নেতার জন্মস্থান ছিল, যাদের মধ্যে ছিলেন অম্বিকা চরণ মজুমদার, হুমায়ূন কবির, মৌলভী তমিজউদ্দিন খান, শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ কুমরুল ইসলাম সালেহ উদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং কে.এম ওবায়দুর রহমান।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার ফরিদপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ২০২৫ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ নামে দেশের নবম বিভাগ গঠনের কাজ হাতে নেয়। খুব শীঘ্রই নিকার বৈঠকে ফরিদপুর বিভাগ চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করতে ফরিদপুরবাসী আন্দোলন করছেন। যেটা তাদের ন্যায্য দাবি- এটা বললে ভুল হবেনা।