ফরিদপুরে মন্দিরের জমির বিরোধকে ঘিরে অপপ্রচার, যা বলছে পুলিশ

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ । ৯:০৩ পিএম

সম্প্রতি ফরিদপুরের সদরপুরে মন্দিরের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব ও অপপ্রচারের অভিযোগে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পুলিশ।

রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে ফরিদপুর জেলা পুলিশ এ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি “HINDUS NEWS” নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবং ফেসবুক পেইজে “ফরিদপুরের সদরপুরে মন্দিরের জমি নিয়ে সংঘর্ষ- পালিয়ে যাচ্ছে হিন্দু পরিবার, টহলে পুলিশ” শিরোনাম একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত সংবাদে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের হরিনা গ্রামে রাধা গোবিন্দ মন্দিরের জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর সহ হামলার পর ভয়-আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক হিন্দু পরিবার বলে দাবী করা হয়। বিষয়টি ফরিদপুর জেলা পুলিশের নজরে এসেছে। উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্ত এবং প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ নিশ্চিত করছে যে, ছড়িয়ে পড়া ওই তথ্যটি অতিরঞ্জিত, অসত্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘হরিনা মৌজার ৫৮৪ নং খতিয়ানের ৪১২/৪১৩ দাগে ৪৬ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন মহাদেব ঘোষ। আনুমানিক ৬/৭ মাস পূর্বে মহাদেব ঘোষ উক্ত জমি স্থানীয় বাবুল বেপারী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী সুশান্ত মালো গং-এর নিকট সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন।’

জেলা পুলিশ জানায়, ‘জমি বিক্রির বিষয়টি মহাদেব ঘোষের প্রতিপক্ষ মানিক ঘোষ গং জানতে পারলে তারা দাবি করেন যে, ওই জমিটি সার্বজনীন মন্দিরের। এ নিয়ে বিক্রেতা মহাদেব ঘোষ এবং ক্রেতা সুশান্ত মালো ও বাবুল বেপারী পক্ষের সাথে প্রতিপক্ষ মানিক ঘোষ পক্ষের বিরোধ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, বিরোধটি মূলত ‘জমির মালিক/বিক্রেতা ও ক্রেতা’ বনাম ‘প্রতিপক্ষ দাবিদার’-এর মধ্যে, যেখানে উভয় পক্ষেই সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন জড়িত রয়েছেন।

মারামারি ও পুলিশি পদক্ষেপ:

‘গত ১৬ নভেম্বর ভোরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। খবর পাওয়া মাত্রই সদরপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুশান্ত মালো নামের একজনকে আটক করে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ কর্তৃক বাবুল বেপারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

গুজব নিরসন:

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত “হামলার ভয়ে ৫ শতাধিক হিন্দু পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে” এবং “চরম নিরাপত্তাহীনতা”—এই তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন । সরেজমিনে তদন্তে দেখা গেছে, কোনো পরিবার গ্রাম ছেড়ে যায়নি এবং বর্তমানে এলাকাটি পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।’

সতর্কবার্তা:

একটি স্বার্থান্বেষী মহল সাধারণ জমি সংক্রান্ত বিরোধকে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে জনমনে ভীতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হলো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যেকোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলা পুলিশ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উক্ত ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।

© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

প্রিন্ট করুন