বহুল আলোচিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের তপশিল ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ট্রেনে উঠেছে দেশ। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ আবশ্যক, সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সহিংসতা সে দিকটায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। সন্দেহ নেই, এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির অকুতোভয় যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। আততায়ীর বুলেটে বিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এক রকমের উত্তেজনা বিরাজ করছিল রাজনীতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে। তবে বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুর খবরের পর উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গোটা দেশ ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। ক্ষোভের মধ্যেই একদল মানুষ একাধিক গণমাধ্যম অফিসে জ্বালাও-পোড়াও আর ভাঙচুর করে। রাজধানী ঢাকার বাইরেও এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটে বেশ কিছু সহিংস ঘটনা। ওই রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টারের সামনে সহিংসতাকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর। একই রাতে ধানমন্ডিতে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তৃতীয়বারের মতো হামলার শিকার হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ধ্বংসস্তূপ হওয়া বাড়ি। ঢাকায় এসব সহিংসতার আগে ওই রাতেই ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাস নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং পরে তার লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। একই রাতে খুলনার ডুমুরিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন এক সাংবাদিক। এসব ঘটনায় বিচ্ছিন্ন উগ্রগোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকতে সরকার বিবৃতি দেয় শুক্রবার। স্বভাবতই গণতন্ত্র উত্তরণের পথে আসন্ন নির্বাচনমুখী যাত্রায় এ অস্থিরতা নানামুখী শঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
ইতিবাচক দিক, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের যথাযথ তৎপরতায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফ থেকে সে সব পদক্ষেপ নেওয়া এবং আহ্বান জানানো হয়েছে, তা কাজে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর বার্তা দিয়ে নৃশংস অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই ছাড় না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে উত্তেজনা যে পরিপূর্ণভাবে প্রশমিত হয়েছে, তা নয়। বিশ্লেষকরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর দেশ এক সংকট থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে নির্বাচন বানচালের অংশ কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্বেগ-সহিংসতা ও ধারাবাহিক নিরাপত্তা ব্যর্থতার কারণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিসহ বেশকিছু উৎকণ্ঠার কথা চাউর হতে দেখা যায়।
সব মিলিয়ে এই যখন পরিস্থিতি, তখন শনিবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অগণিত মানুষের ঢল নামে। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রিয় হাদি আজকে আমরা তোমাকে বিদায় দিতে আসিনি। তোমার কাছে আমরা ওয়াদা করতে আসছি। তুমি যা বলে গেছ, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি।’ দেশকে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল হাদির। আমাদের প্রত্যাশা, আসন্ন নির্বাচন যেন সত্যিকারই বাংলাদেশের ইতিহাসের ‘সেরা নির্বাচন’ হবে। স্বপ্ন পূরণ হবে হাদীর। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা আইনশৃঙ্খলার অবনমন বা অস্থিতিশীলতা, যে কোনো উপায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। আমাদের বিশ্বাস, উদ্ভূত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষ হবে অচিরেই।

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ । ১১:৪৭ এএম