বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী

পান্না বালা, ফরিদপুর:
প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ । ৪:১৫ পিএম

বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে শেষ হয়েছে ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। দুইদিনব্যাপী এ আয়োজনে প্রিয় শিক্ষাঙ্গণে ফিরে এসে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীরা। স্মৃতিময় এ মিলনমেলায় অংশ নিয়ে অনেকেই যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশবের সোনালি দিনগুলোতে।

এই আনন্দঘন আয়োজনে অংশ নিতে ছুটে আসেন স্কুলটির সবচেয়ে প্রবীণ শিক্ষার্থী আকিদুল ইসলাম। তিনি ১৯৫২ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। একইভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও পরিভ্রাজক হাসনাত আব্দুল হাই (মেট্রিকুলেশন-১৯৫৪) এবং সাবেক রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ ঘোষ (মেট্রিকুলেশন-১৯৫৯)। পুরনো সহপাঠীদের টানে তারা সবাই ফিরে আসেন প্রিয় বিদ্যাপীঠে।

সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের খুঁজে বেড়ান স্কুল প্রাঙ্গণজুড়ে। দীর্ঘদিন পর বন্ধুর দেখা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে অনেককে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে শোনা যায়— “এতদিন কোথায় ছিলি বন্ধু?”

বেলা ১১টার দিকে স্কুলের উন্নয়নে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় ফরিদপুর জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের। এতে আহ্বায়ক করা হয় মির্জা মো. আরিফুর রহমান (১৯৮৪ ব্যাচ) এবং সদস্য সচিব করা হয় ওয়াহিদ মিয়াকে (১৯৮৯ ব্যাচ)।

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব ওয়াহিদ মিয়া। আলোচনায় অংশ নেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মীর মো. নাসির হোসেন, শহীদুল হাসান, সুভাষ চন্দ্র ঘোষ, মিজানুর রহমান, আতিয়ার রহমান, শামসুল আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন, পান্না বালা, মির্জা মো. আরিফুর রহমান, বেনজীর আহমেদ, মো. সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ অনেকে।

সারাদিনের কর্মসূচিতে ছিল মিনি ম্যারাথন, বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব, সংগীতানুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ ও বিভিন্ন বিনোদনমূলক আয়োজন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় র‍্যাফেল ড্র। রাতে দেশের স্বনামধন্য ব্যান্ড শিল্পী জেমস–এর পরিবেশনায় ব্যান্ড সংগীতের মধ্য দিয়ে দুইদিনের এ উৎসবের পর্দা নামে।

ব্রিটিশ ভারতে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হাতে গোনা যে কয়েকটি বিদ্যালয় রয়েছে, ফরিদপুর জিলা স্কুল তার অন্যতম। ১৮৪০ সালে যাত্রা শুরু করা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৮৫ বছরের পথচলায় এ অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আন্দোলন ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। কালের পরিক্রমায় আজও ফরিদপুর জিলা স্কুল তার গৌরব ও ঐতিহ্য অটুট রেখে জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত।

এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের ইতিহাস, আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান এবং প্রবীণ-নবীন শিক্ষার্থীদের লেখায় সমৃদ্ধ “পরম্পরা” নামে ১৯০ পৃষ্ঠার একটি নান্দনিক সংকলন প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুইদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর)। ওইদিন জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা, উৎসবের পতাকা ও জিলা স্কুলের পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

প্রিন্ট করুন