খুঁজুন
শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩২

ডাক্তারদের উপঢৌকন বন্ধ হলে ৩০% কমবে ওষুধের দাম

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
ডাক্তারদের উপঢৌকন বন্ধ হলে ৩০% কমবে ওষুধের দাম

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বেলা ১১টা।

বহির্বিভাগের ডাক্তারের কক্ষ থেকে কোনো রোগী বের হলেই তাকে ঘিরে ধরছেন বেশ কয়েকজন মানুষ। হুমড়ি খেয়ে তার হাতের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।

 

কথা বলে জানা যায়, তারা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। ছবি তোলার কারণ, নিজেদের কোম্পানির ওষুধ চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন কি না, সেটা যাচাই করে দেখা। প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সেই ছবি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও পাঠিয়ে দেন।

কেবল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেই নয়, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলার দৃশ্য এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর এর কারণ হিসেবে জানা যায়, নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য ডাক্তারদের কোম্পানির পক্ষ থেকে নিয়মিত দামি দামি উপহার এবং নগদ টাকাও দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দেশে-বিদেশে একক বা দলগতভাবে ভ্রমণ কিংবা সেমিনারে অংশগ্রহণের ব্যবস্থাও করে ওষুধ কোম্পানিগুলো।

একটি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক পর্যায়ের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এখন অধিকাংশ চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নানারকম সুবিধা নিয়ে থাকেন। এসব নিয়ে আর কী বলব! যারা এমন করছেন তারা আমাদেরই ছাত্র, ভাই-বন্ধু ও সহকর্মী। আবার সৎ ডাক্তার যে একেবারে নেই, তা নয়। কোনো কোম্পানি নগদ খাম দেয়, কেউ দামি উপহার দেয়, কেউ হয়তো ডাক্তারদের পরিবার-পরিজনদের দেশে-বিদেশে ট্যুরের টাকাও দেয়।

তিনি আরও বলেন, এই যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এত এত লোকজন লাগিয়ে রেখেছে ওষুধ কোম্পানি, তারা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে থাকে, কোন ডাক্তার কী ওষুধ লিখছে দেখার জন্য। এসবের তো একটা খরচ আছে। সব খরচ কিন্তু ওষুধের মূল্যের সাথেই যুক্ত হয়ে যায়।

গত কয়েক মাস থেকে দেশে ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ। স্বল্প আয়ের মানুষ বাড়তি মূল্যে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। ওষুধের দাম বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকদের মধ্যে চলা প্রমোশনের নামে অনৈতিক লেনদেন। কারণ, ডাক্তারদের দেওয়া টাকা বা উপহার কোনো কোম্পানিই নিজেদের পকেট থেকে দেয় না। ওষুধের দাম বাড়িয়ে সেই টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকেই আদায় করা হয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রমোশন কিংবা মার্কেটিংয়ের নামে ডাক্তারদের যে অনৈতিক সুবিধা দেয়, তা বন্ধ করা গেলে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে ওষুধের দাম অনেকটাই কমানো সম্ভব।

ওষুধের কাঁচামাল ও উৎপাদন খরচ, লেভেলিং-প্যাকেজিং, প্রোমোশন ও মার্কেটিংসহ ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত কোন পর্যায়ে কত টাকা খরচ হয় জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ওষুধ শিল্পে ৪২ বছরের বেশি কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ বি এম জামালুদ্দিনের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের আগে এ বি এম জামালুদ্দিন ফাইজারের ম্যানেজার পদে ১৩ বছর, রেনেটায় ১৩ বছর, অ্যাক্টিভ ফাইন ক্যামিক্যালসে ১৫ বছর কাজ করেছেন। এ ছাড়াও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল বিষয়ক জাতীয় এপিআই (অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্স) পলিসির স্টেকহোল্ডার হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।

ওষুধের উৎপাদন খরচ প্রসঙ্গে জামালুদ্দিন বলেন, ওষুধের ইন জেনারেল থিউরি হচ্ছে, কস্ট অব গুডস অর্থাৎ উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। মার্কেটিং, প্রোমোশন এবং অন্যান্য খরচ আরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোম্পানির মুনাফা। এটা বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে, ছোট কোম্পানির মুনাফা আরও বেশি হয়। ডাক্তারদের অনৈতিক সুবিধা না দিলে কোম্পানির মার্কেটিং খরচ ১০ শতাংশে নামিয়া আনা সম্ভব।

প্যারাসিটামল ট্যাবলেট উৎপাদনের খরচ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, প্রতিটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেটে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ পয়সা খরচ হয়। এটা বিক্রি করা হচ্ছে ১.২০ টাকায়, মার্কেটিং খরচ বাদে যা থাকে সেটাই লাভ।

এ বি এম জামালুদ্দিন আরও জানান, ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত মেটফরমিন ৫০০ মি.গ্রা. এবং ৮৫০ মি.গ্রা. আকারে বাজারে পাওয়া যায়। মেটফরমিন ৮৫০ মি.গ্রা. প্রতিটির উৎপাদন খরচ হয় ৫৫ পয়সা, এর সাথে এক্সিপিয়েন্ট (সহযোগী উপাদান) যোগ করলে মোট খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ পয়সা। প্যাকেজিংসহ এই ওষুধে মোট প্রায় এক টাকা খরচ হয়। এটা প্রতি পিস বিক্রি হয় ছয় টাকায়। এই ছয় টাকার ১৫ শতাংশ জনগণ ভ্যাট হিসেবে দেয়। বাকি পাঁচ টাকার মধ্যে আবার প্রমোশনাল এবং মার্কেটিং বাবদ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যয় হয়। বাকিটা কোম্পানির লাভ থাকে।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোসারটান পটাশিয়াম ১০০ মি.গ্রা. প্রতি ট্যাবলেটে উৎপাদন খরচ হয় দশমিক শূন্য ছয় পয়সা। সহযোগী কেমিক্যাল, প্যাকেজিং সব মিলে প্রতি ট্যাবলেটে ১.২৫ টাকার মতো খরচ হয়। এটা কোম্পানি ভেদে বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রমোশন খরচ।

এ বি এম জামালুদ্দিন বলেন, কোনো ওষুধের গায়ে যদি মূল্য ১০০ টাকা থাকে, সেইখান থেকে সরকার ভ্যাট ১৫ টাকা পায়, ফার্মেসির লাভ থাকে ১৫ টাকা। বাকি ৭০ টাকার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচামালসহ উৎপাদন খরচ, এর সাথে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রোমোশন খরচ, বাকিটা কোম্পানির মুনাফা।

তিনি জানান, ওষুধের দাম বাড়ার একটা বড় কারণ; ডাক্তারদের স্পিড মানি, খাম ও উপহার সামগ্রী দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় কোম্পানির ৩০ শতাংশ ব্যয় হয়ে যায়। ডাক্তারদের যদি এসব না দিতে হতো তাহলে ওষুধের দাম বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে ৩০ শতাংশ কম থাকতো।

ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের উপহার দেওয়ায় প্রবণতা বন্ধ হলে ওষুধের দাম কমতে পারে কি না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাব্বির হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, প্রমোশনের নামে চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপহার, টাকা-পয়সা দেওয়াসহ অনৈতিক সব ব্যয় ওষুধের মূল্যের সাথে যুক্ত হয়। সেই মূল্য ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হয়। কোম্পানি অযৌক্তিক এসব ব্যয় কমালে ওষুধের মূল্য বেশ কমে আসবে।

ওষুধ কোম্পানি এবং ডাক্তারদের অনৈতিক সুবিধা আদান-প্রদান বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, এটাকে আমরা বলি অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং। ওষুধের দাম যদি সরকারের প্রাইসিং ফর্মুলার ভিত্তিতে হয়, তাহলে কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। অতিরিক্ত মূল্য যখন নিতে পারবে না তখন ওষুধ কোম্পানির সারপ্লাস থেকেই অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিংয়ের খরচ বহন করতে হবে। তখন তারা এই অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং থেকে সরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু কোম্পানি নিজেরাই দাম নির্ধারণ করে, তাই দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে ডাক্তারকে ৮ টাকা দিলে তো তাদের ক্ষতি নাই। তারা যেহেতু দাম নির্ধারণ করে তাই তারা এটা করতে পারছে। কিন্তু দাম যখন সরকারের অথরিটি নির্ধারণ করবে, তখন এটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সমস্ত প্রকার ওষুধের দাম ফর্মুলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য একটা জাতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি তৈরি করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ডাক্তারদের যেমন নৈতিকতা মেনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া উচিত ঠিক তেমনি ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করা উচিত। যদি ওষুধ কোম্পানিগুলো নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করে এবং ডাক্তারদের কোনোরকম অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না দেয়, তাহলে ওষুধের দাম অবশ্যই কমে আসতে পারে।

Source: Banglanews24

“ঘুম”

মাহমুদুল হাসান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২৫ পিএম
“ঘুম”

ঘুম—সে কি কেবল জৈবিক নিঃশেষে এক নিথরতা? নাকি সময়ের অদৃশ্য ভারে গঠিত কোনো আধ্যাত্মিক বিন্দু, যার প্রতিটি নক্ষত্রজালেই ঘুমিয়ে থাকে একটি বিলুপ্ত আলো?
আমি জানি না। বরং জানি—ঘুম আসলে অনস্তিত্বের সীমানায় একটি নরম ছায়া, যাকে ধরা যায় না, ছুঁয়ে ফেলা যায় না, কেবল অনুভবে তার উপস্থিতির কম্পন মাত্র।

ঘুম কখনো আত্মার প্রান্তে অপেক্ষমাণ এক ছায়াপথ, আবার কখনো মস্তিষ্কের গহ্বর-জুড়ে এক বিপরীত সংবেদন। সে এসে চোখের পাতায় ফেলে নিরাকার শব্দের ধুলো। তখন সময়ও থেমে যায়—এক অনিয়মিত তালে, যেখানে ঘুম নিজেই নিজের সংজ্ঞা অস্বীকার করে।

ঘুম ঘুম নয়—সে এক অন্তর্বর্তী হ্রস্ব বিস্মৃতি।
সে ‘আমি’ থেকে ‘তুমি’ হয়ে যাওয়া, আবার ‘তুমি’ থেকে ‘কেউ নয়’ হয়ে পড়ার অনিবার্য অন্তর্বিপর্যয়।
সে নিদ্রা নয়, সে নিস্পন্দিত অনুপ্রাণ—এক পরাবাস্তব ঘূর্ণিপাকে অস্তিত্বের জরায়ুতে জমে ওঠা নিরুত্তর অবচেতনতা।

ঘুমের ভেতর আমি হারিয়ে ফেলি আমার ‘আমি’-কে। সেখানে আমার নাম থাকে না, মুখ থাকে না, থাকে কেবল রন্ধ্রে রন্ধ্রে রচিত অপার স্বপ্নাবিষ্টতা।
স্বপ্ন? না, স্বপ্নও নয়।
এ যেন এক বহুতল নিঃসরণ, যেখানে প্রতিটি স্তরেই চৈতন্য নিজেকে উল্টো করে তোলে, নিজের ভাষাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

একটা প্রশ্ন—ঘুম কি নিঃশেষে বিস্মৃতি?
না, সে এক পলক-দীর্ঘ মুক্তিপত্র।
যেখানে জন্ম নেয় নীরব চিৎকার, শব্দহীন গল্প, আর অজানা কোনো পুরাকথার অসমাপ্ত অনুরণন।

ঘুম মানে কেবলই চোখ বুজে থাকা নয়।
ঘুম মানে শরীর থেকে মন ছিঁড়ে ফেলা।
ঘুম মানে একটি চলমান ট্রেন, যার গন্তব্য নেই—অথচ গন্তব্যহীনতাই তার একমাত্র পরিচয়।

ঘুম কি কখনো জেগে থাকে?
হ্যাঁ—ঘুম জেগে থাকে, অনেক সময়।
যখন আমাদের চোখ বুজে, কিন্তু চিন্তা ফুঁপিয়ে কাঁদে।
যখন আমরা সুতীব্র ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় পড়ি, কিন্তু অবচেতন চেতনায় ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া কোনো অনুক্ত আর্তনাদ।
তখন ঘুম আমাদের শরীরে আসে, মগজে নয়।
তখন ঘুম হয় এক নিষ্ফল অনুগ্রহ।

ঘুমের গভীরে আমি দেখি নিজেকে,
এক ফাঁকা আয়নায়, যেখানে মুখ নেই, ভাষা নেই—
শুধু অসীম সাদা কুয়াশার মধ্যে ডুবে থাকা এক বিকারগ্রস্ত সত্তা।
তুমি যদি সেখানে আমাকে চিনতে চাও—চিনতে পারবে না,
কারণ ঘুমের মাঝখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না—থাকে কেবল অভিজ্ঞতার ছায়া, অনুভবের দংশন,
আর অনন্ত বিষণ্ন একাকীত্ব।

ঘুম হয়তো শেষ নয়, শুরুও নয়।
সে কেবলই একটি অন্তরীক্ষ—যেখানে নিজের ভেতরের আলো আর অন্ধকার একে অপরকে গ্রাস করে।

ফরিদপুরে ২০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ৮:১৯ পিএম
ফরিদপুরে ২০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গার এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিশ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুরের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভাঙ্গার এক্সপ্রেস ওয়ের টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান চালায়।

এসময় একটি পিকআপ ভ্যানে থাকা ২০ কেজি গাজা, দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার ও দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গার চুমুরদী এলাকার সুমন শেখ ও নগরকান্দার ডাঙ্গী এলাকার জুলহাস মুন্সি।

ফরিদপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. হাসেম আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে চিহ্নিত দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও ২০ কেজি গাজা উদ্ধার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

গণঅভ্যুত্থান : আকাঙ্খা, প্রাপ্তি ও অপূর্ণতা

শেখ রফিক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ১:৩৪ পিএম
গণঅভ্যুত্থান : আকাঙ্খা, প্রাপ্তি ও অপূর্ণতা

আমার দুই ছেলে, সক্রেটিস পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে আর সব্যসাচী সদ্য এসএসসি দিয়েছে। প্রতিদিন রাতে আমি বাসায় ফিরলে ওরা নানা প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলোর অনেকটাই আসে ফেসবুকে দেখা কোনো দুর্ঘটনা, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজি বা সংঘর্ষ নিয়ে। ছোট ছেলে বেশি প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তরগুলো খুব কঠিন। ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা, মানুষ এত খারাপ হয় কেন? তুমি জান, আজ একটা মাজার ভেঙে দিয়েছে। আজ ছাত্ররা-ছাত্ররা মিছিলে মারামারি করেছে। আজ একজনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আজ একজন শিক্ষককে মেরেছে। আজ একজনের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলেছে। আজ একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আজ একজন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়েছে। আজ একজন ছাত্রকে মেরে ফেলেছে। আজ একজনকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলেছে! আজ একজন মেয়েকে রেপ করে মেরে ফেলেছে! এমন অসংখ্য ঘটনার কথা এবং কেন হচ্ছে সেই জিজ্ঞাসার সম্মুখীন গত এক বছর আমাকে হতে হয়েছে। ওরা বলে, ‘এসব করে কেন?’ কিংবা সরাসরি জিজ্ঞাসা করে, ‘সরকার কী করে?’ আমি কখনো উত্তর দিই, আবার কখনো নীরব থাকি। ওদের প্রশ্নের উত্তর হয়তো সবসময় দিতে পারি না। কিন্তু প্রতিদিন প্রশ্ন করে।

ঢাকায় পঁচিশ বছর ধরে আমি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন, শহীদ মিনার, শাহবাগ ও প্রেসক্লাবে হাজারবার মিছিল-মিটিং-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছি। এই মিছিল-সমাবেশগুলো বারবার বলেছে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা দিন, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম দিন। মতপ্রকাশে বাধা দেবেন না। বিরোধী দলের ওপর মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করুন। হত্যা, ধর্ষণ ও গুম বন্ধ করতে হবে। গরিব মেহনতি মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করুন। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করুন। দুর্নীতি বন্ধ করুন, লুটপাট থামান, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করুন। খেলাপি ঋণ আদায় করুন, সন্ত্রাস দমন করুন, টেন্ডারবাজি ও দখলদারিত্ব রোধ করুন। সিপিবি লাখ লাখবার এসব বলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? কেউ কথা শুনেনি, কেউ কথা রাখেনি। ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?’ বঙ্কিমচন্দ্রের অবিস্মরণীয় এই উক্তি মনুষ্যত্বের এক বাস্তব ও গভীর মূল্যবোধের উৎসারণ। গত ৫৪ বছর ধরে যারা লেখাপড়া করেছেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন, প্রত্যেকেই এই ভাব-সম্প্রসারণ পড়েছেন ও লিখেছেন। কিন্তু কতটা ধারণ করেছেন এবং তা নিজের কর্মজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রয়োগ করেছেন সেটা জনগণ খুব ভালো করেই জানে। বঙ্কিমের এ উক্তি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিম্নলিখিত বাক্যটি স্মরণীয় ‘Relationship is the fundamental truth of the world of appearance, সম্পর্কই হলো এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূল সত্য। মানুষকে মানুষ করে তোলে তার পারস্পরিক সম্পর্ক, সংযোগ এবং সহানুভূতি। আমাদের জীবনে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। এটাই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই সময়ের স্বপ্ন ছিল, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। ‘খেয়ে-পরেই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই’  শিক্ষা ও চিকিৎসায় বৈষম্য বেড়েই চলছে, সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থা ও বেসরকারি খাতের উচ্চ ব্যয় দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে স্বপ্ন করে তুলেছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল দুঃখ-দুর্দশা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। কিন্তু পাঁচ আগস্টের পর শুরু হওয়া হামলা, নির্যাতন ও দমন-পীড়ন ন্যায়বিচারের স্বপ্নকে অনেকটা ভেঙে দিয়েছে। খুনের বিচার হয়নি, দুর্নীতিবাজ গ্রেপ্তার হয়নি, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা যায়নি। মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য বেড়েই চলছে, জনজীবন অনিশ্চিত। জনগণ ভেবেছিল, শেখ হাসিনা চলে গেলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। কারণ তার সরকারের অধীনে ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সম-অধিকার হারিয়ে গিয়েছিল। বিরোধী দল দমন, গুম, খুন, ধর্ষণ ও দুর্নীতি রাজত্ব ছিল। সেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটায়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, গত এক বছরে শান্তি-শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরেছে কি? জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার পেয়েছে কি? র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র কতটুকু বদল হয়েছে? রাষ্ট্র যদি জনবান্ধব হতো, তাহলে আন্দোলনের পর চিন্তাচেতনার সংস্কার হতো; কিন্তু বাস্তবতা বিপরীত, হয়রানি ও দমন চলছে। অপরাধীরা সরকারের দুর্বল নেতৃত্বে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা আজও অধরা। ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার শুধু কোনো ব্যক্তি বা দালান-কোঠায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাষ্ট্রযন্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে গভীরে প্রবাহিত একটি ব্যবস্থা। তাই স্বৈরাচারী শাসন কেবল শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করলেই নির্মূল হয় না; বরং তা পুনরুৎপাদনের আশঙ্কা থেকেই যায়। এ জন্য সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পন্থায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রচর্চার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলা প্রয়োজন। গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়া। যেখানে সবাই মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার পাবে। কিন্তু নেতৃত্বের স্বার্থপরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্ষমতার ‘ডিসিপ্লিনারি মেকানিজম’ জনআকাক্সক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘মব-সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সংখ্যালঘু ও বিরোধী মতের ওপর সহিংসতা এবং গণতান্ত্রিক কণ্ঠরোধকে উসকে দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা কীভাবে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে? অপরাধীরা প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মুখে। ধর্ষক, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও মাদকাসক্তরা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করার চেষ্টা করছে। তারা অস্থিরতা ও ভয় সৃষ্টি করছে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে। এসব ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই অপরাধীরা হঠাৎ কোথাও জন্ম নেয় না; তারা গড়ে ওঠে বৈষম্যপূর্ণ, অব্যবস্থাপনা ও ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যেই।

দুর্বল শাসনব্যবস্থা, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রশাসনিক পক্ষপাত অপরাধীদের উৎসাহ দেয়। যখন অপরাধীরা শাস্তি পায় না, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিচারহীনতা ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নারীর প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব, লিঙ্গ বৈষম্য এবং ঘৃণার রাজনীতি বিকৃত মানসিকতার অপরাধী তৈরিতে সহায়ক। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার প্রতি অবহেলা অপরাধ প্রবণতা বাড়ায়। অপরাধকে ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে দেখা এবং অসৎ জীবনযাপনকে সামাজিক সহানুভূতির মাধ্যমে মেনে নেওয়া একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও মানুষের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, এই জাতি অন্যায় সহ্য করে না। ভাষার অধিকার, ভোটাধিকার বা ন্যায্য জীবনের দাবিতে মানুষ বারবার রক্ত দিয়েছে। প্রতিবারই জন্ম দিয়েছে গণঅভ্যুত্থান, যা শুধু সরকারের পতনের জন্য নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নৈতিক কাঠামো চ্যালেঞ্জ করার জন্য। তবে ১৯৬৯ সালের ছাত্র-অভ্যুত্থান থেকে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া একই প্রতিক্রিয়াশীল ও আত্মবিমুখ।

প্রশাসনে দায়বদ্ধতার অভাব প্রকট, আত্মসমালোচনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিপক্ষের দোষারোপে লিপ্ত, জনগণের রক্ত ও ক্ষোভকে ক্ষমতার খেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে গণতন্ত্র ক্ষয়ে যাচ্ছে, লোভ-হিংসা বাড়ছে, রাষ্ট্র থেকে মানুষ আবার দূরে সরে যাচ্ছে। বর্তমান অস্থিরতা ও হতাশার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো, নিজেকে প্রশ্ন করা ‘আমি কী আমাকে পরিবর্তন করেছি’? সর্বত্র সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। সংস্কার ও নির্বাচন এই দুই পরস্পরের পরিপূরক। জনগণ চায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরে পেতে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারই হওয়া উচিত প্রথম পদক্ষেপ। ভোটাধিকার ফিরলে শাসনব্যবস্থায় শান্তি আসবে। বিচারব্যবস্থা, পুলিশ ও প্রশাসনে সংস্কার অপরিহার্য, সাংবিধানিক পরিবর্তনও সময়ের দাবি। তবে গণতান্ত্রিক সংস্কার সফল হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কারণ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাই প্রথম প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনভাবে কথা বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর আলোচনা চলছে এবং তরুণদের কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরুর কিছু অভিযান সাধারণ মানুষের মাঝে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘমেয়াদে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রদর্শন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও ন্যায্য সম্পদের বণ্টন নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি প্রশাসন স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করবে, সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি অপরাধ ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখবে। নারীর মর্যাদা ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা ধর্ষণ কমাবে। যুবসমাজে নৈতিকতা গড়ে উঠলে দুর্নীতি কমে। উন্নত দেশগুলোতে বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক নিরাপত্তাই অপরাধ হ্রাসের মূল কারণ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের ৩১ দফা রূপরেখা এবং ভিশন-২০৩০-এ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও নির্বানের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক রূপান্তরের বার্তা বহন করে। তবে সময় বলে দিতে এই রূপান্তরের বার্তা কতটা কার্যকর হবে। গণতন্ত্র তখনই সফল হবে, যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবে ‘সাধারণ মানুষ’ এবং রাষ্ট্র হবে সবার মৌলিক অধিকারের রক্ষক ও জনতার প্রকৃত সেবক। তখনই ‘খেয়ে-পরেই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই’ এই আর্তনাদ শব্দহীন হয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক