খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১ আশ্বিন, ১৪৩২

সালথার খোয়াড় গ্রামে শাপলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫, ৫:৩৭ পিএম
সালথার খোয়াড় গ্রামে শাপলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

‘ভাসমান বিল-দোপ কিংবা পুকুরের পানি ডিঙিয়ে তাৎক্ষণিক সৌন্দর্যখচিত সাদা শাপলা ফুলগুলোকে একটু স্পর্শ করার সাধ সত্যিই অতুলনীয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেই ইচ্ছে কিছুটা পূর্ণতা পায় তখন। শাপলার কোমলতা যেমন মন ছুঁয়ে যায়, তেমনি এর সরল সৌন্দর্যে লুকিয়ে থাকে এ গ্রামের নিঃশব্দ কাব্য।’

কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের সালথার আটঘর ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামের মো. হেমায়েত ফকির (৪০)। তিনি পেশায় একজন চাকরিজীবী।

এই খোয়াড় গ্রাম ঘেঁষে রাস্তার দক্ষিণ পাশে দোপের (বিল) পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা। আর এ সৌন্দর্য এক নজর দেখতে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। এসময় কেউ করছেন ক্যামেরাবন্দী কেউবা সৌন্দর্য উপভোগ করছেন শাপলার।

আর এ গ্রামটির সৌন্দর্যে ঘেরা মায়াভরা শাপলা ফুলের বর্ণনা এভাবেই করছিলেন হেমায়েত ফকির।

হেমায়েত ফকির বলেন, ‘মায়াময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমার শৈশব-কৈশোরের বেড়ে উঠা গর্বের ছোট্ট একটি গ্রাম ‘খোঁয়াড় গ্রাম’। যে গ্রামটির সৌন্দর্য বর্ষাকালে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলা। সাদা শাপলা যেমন বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। তেমনিভাবে শাপলার সাদা রং আমাদের গ্রামের সহজ-সরল মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, তেমনি পাপড়িগুলোর মতোই সুন্দর এদের মন। গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বর্ষার থইথই পানি আর সাথে সাদা শাপলা ফুল আমাদের গ্রামটিকে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য রুপে ধরা দেয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এ সৌন্দর্য রক্ষাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে গ্রামটি হতে পারে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তীর্থস্থান এবং গ্রামীণ জনপদের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রতিচ্ছবি।’

‘দখিনা হওয়ায় এ গ্রামটিতে আকাশের তারারা যেন খসে পড়েছে জলের ওপর। বিপুল জলরাশির উপরিভাগে ফুটে থাকা অজস্র শাপলা শোভা পাচ্ছে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। দেখলে মন ভরে যায়। গ্রাম-বাংলার অকৃত্রিম রূপ ছায়া মায়া সবই যেন ধারণ করে আছে এই শাপলার বুকে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই শাপলার মাঝে সৌন্দর্য খুঁজে পায়। বর্ষা এলে এ গ্রামে শুধু মাটি নয়, হৃদয়ও জেগে ওঠে। আর সেই জাগরণের নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে ওঠে শাপলা ফুল। সাদা, সবুজ আর গোলাপি রঙে সে জানান দেয় প্রকৃতির শুদ্ধ সৌন্দর্যের গল্প।’ – কথাগুলো বলছিলেন গ্রামটির আরেক চাকরিজীবী মাফিকুল ইসলাম।

মাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খোয়াড়ের এ দোপে গেলে চারিদিক থেকে ভেসে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল। হাঁটার মধ্যে ভেসে আসা মৃদু বাতাস বেশ ভালোই লাগে, এছাড়াও রয়েছে দেশী প্রজাতির হরেক রকমের মাছের আনাগোনা। এটি আশেপাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।’

খোয়াড় গ্রামের আবু মুসা নামের এক যুবক বলেন, ‘এই শাপলার দোপে শুকনোর সময় পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ শেষে পাটের চাষ করা হয়। আর এই ক্ষেতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর গজায় শাপলা ফুলের গাছ। আর এ মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শাপলা ফুলের হাসি দেখতে আশপাশের এলাকার তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমায়।’

স্থানীয় মোস্তফা কামাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাদ্র-আশ্বিন মিলে শরৎ। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ। তবে শুধু সৌন্দর্যই নয়, আমাদের জীবিকারও সুযোগ সৃষ্টি করেছে জাতীয় ফুল শাপলা। খোয়াড় গ্রামের শাপলা ফুল দেখতে নৌকা নিয়ে ভাসতে দেখা যায় অসংখ্য মানুষকে। আমরাও এ শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করি।’

মামুনুর রশিদ নামের এক যুবক বলেন, ‘এ গ্রামের দোপের চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। তার মাঝখানে চোখ জুড়ানো সাদা শাপলা ফুলের সমারোহ। পানির উপর ফুটে থাকা সাদা শাপলা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। চোখে না দেখলে নজরকাড়া সৌন্দর্যের উপলব্ধি করা যাবে না। নীরব, শান্ত এক দুপুরে শাপলা হয়ে উঠতে পারে আপনার মানসিক প্রশান্তির দিশারি।’

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘এ গ্রামের মানুষ শাপলার ভাসমান ফুলের মধ্য দিয়ে ডিঙি নৌকা কিংবা তাল গাছের ডোঙা চালিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান। যেতে যেতে অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করেন। কেউ কেউ হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় দু-একটি শাপলা ফুল। দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা আবার নিজেরাই ছোট নৌকা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। নৌকার পাটাতন ভর্তি করে শাপলা নিয়ে বাড়ি ফেরে তারা।’

তাদের দাবি, ‘একসময় এ গ্রামের মানুষ ও কিশোর-কিশোরীরা বিলঝিলে ও দোপে ডুব দিয়ে শালুক তুলে আনত। শাপলার শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত শালুক সেদ্ধ করে খেয়ে জীবন বাঁচাতেন অনেকে। এখন গ্রামীণ অর্থনীতিও দ্রুত বদলাচ্ছে। মাটির নিচ থেকে শালুক তুলে খাওয়ার লোক তেমন চোখে পড়ে না। তবে অনেকেই শাপলা ফুল সবজি হিসেবে রান্না করে খাচ্ছেন।’

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, ‘এ উপজেলার খাল-বিল ও পুকুরে প্রতিবছরই বর্ষায় শাপলা ফুল ফোটে। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসে। আমরাও মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। বাংলাদেশে সারা বছর শাপলা কম বেশি সব জায়গায়ই হয়। তবে বেশি হয় বর্ষা আর শরৎকালে। শাপলা গ্রামের মানুষ সবজি হিসেবে খেতে খুব পছন্দ করে। আর এ ফুলের বীজ ও গুঁড়ো দিয়ে খই বানানো হয়।’

শাপলা ভাজি করে খেতে খুব মজা। এতে পুষ্টিগুণও আছে। জলজ সবুজ ডাটায় আছে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ রয়েছে বলে যোগ করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

যেভাবে যেতে পারেন এ শাপলাফুলের রাজ্যে:

ফরিদপুর শহর থেকে বাস কিংবা অটোতে করে ০৮-১০ কি.মি পেরিয়ে ঠেনঠেনিয়া কিংবা বালিয়াগট্টি বাজারে প্রথমে নামবেন। এখান থেকে পুনঃরায় অটোরিকশা বা ভ্যানে করে খোয়াড়গ্রামে গেলেই দেখতে পাবেন শাপলা ফুলের এই মায়াবী সৌন্দর্য।

 

প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৩২ পিএম
প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচি আগামী শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দেন তারা।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয় এজন্য আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা। সে অনুযায়ী আগামী বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কোন অবরোধ থাকবে না বলে জানায় আন্দোলনকারী সমন্বয়ক কর্তৃপক্ষ।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কাউকে হয়রানি করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময়, আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) তাদের ৫ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে, পুনরায় লাগাতার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

 

ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:২৮ পিএম
ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ-রেলপথ বন্ধের পর সহিংস ঘটনাও ঘটে। এরপর ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন বরাবর এ চিঠি দেন ডিসি।

চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর-০২ এবং ফরিদপুর-০৪ এর সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

ওই তালিকায় ফরিদপুর- ৪ এর অন্তর্গত ২টি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ ওই আসনবিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হবার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

 

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-০৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-০২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণের বিষয় দুইটি সংসদীয় আসনের জনগণ মেনে নিতে পারেনি। ওই দুইটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ণিতাবস্থায়, জাতীয় সংসদীয় আসন ২১২ ফরিদপুর- ২ (নগরকান্দা ও সালথা) এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এর মধ্যে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।

এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ-আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থানা, হাইওয়ে থানা ও উপজেলা পরিষদে আগুন-হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হল রুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, ১০টি ফ্যান ও ৩৫ টির বেশি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। এসময় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা অফিসার্স ক্লাবও ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে, ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। থানা চত্তরে থাকা অন্তত চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। থানার ব্যানার ও ভবনের কাচ সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করা হয়।

অপরদিকে, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় আন্দোলনকারীরা ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আন্দোলনকারীরা চারটি পিক-আপ, একটি রেকার, একটি জলকামান গাড়ী, আটটি মোটরসাইকেল, একটি এম্বুলেন্স ও দুইটি আলামতের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

ভাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, থানা, হাইওয়ে ও উপজেলায় ভাঙচুরের সময় লোকজন হঠাৎ করে রামদা-লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। ওইসব অস্ত্র দিয়ে তাণ্ডব চালায় এবং পেট্রল দিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এসব করতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, হামলা-ভাংচুরের সময় কয়েকজন কনস্টেবলকে কৌশলে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর আমরা কয়েকজন থানার রান্না ঘরের পাশে একটি বাথরুমে আশ্রয় নেই। হামলাকারীরা গাড়ী, মোটরসাইকেলসহ অফিসের ল্যাপটপ, টিভি থেকে শুরু করে এমন কোথাও নেই যে ভাংচুর করতে বাকি রেখেছে। তারপরও বিস্তারিত দেখে পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য জানানো যাবে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় সংযুক্ত করার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় জনতা। তারা আসনগুলোর পূর্বের অবস্থায় বহাল চান। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার থেকে টানা তিন দিন বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর ভাঙ্গা উপজেলা সদরে এসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।