খুঁজুন
শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫, ১৬ কার্তিক, ১৪৩২

হত্যাকাণ্ড ঢাকায় : ফরিদপুরের ব্যবসায়ীদের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
হত্যাকাণ্ড ঢাকায় : ফরিদপুরের ব্যবসায়ীদের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা
ফরিদপুরের সদর উপজেলার শিবরামপুর এলাকার বিশ্বজিৎ ঘোষ দিপু(৫৮) একজন পাট ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় বহুল পরিচিত। রাজনীতিক কোন দলের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা কোন সময়ই ছিল না। সারাজীবন তার ব্যবসা ছিল পাট এবং ভূসি মালের। গত ৫ আগস্ট ঢাকার বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ফরিদপুর সদর উপজেলার মো. সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারী (২৯)। এই হত্যার ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়।
এরপর এক অজানা কারণে এই মামলা কাউকে গ্রেপ্তার শুরু না হলেও হঠাৎ করেই তরিঘরি করে সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে তার পাটের ব্যবসার দোকান খলিলপুর বাজার থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এরপর র‍্যাব তাকে আটক করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাকে না রাখতে চাইলে তাকে দ্রুত ঢাকার বাড্ডা থানায় পাঠিয়ে দেয় র‍্যাব। সেখানে যাওয়ার পর তাকে আদালতে হাজির করলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। কোনদিন হাজত, জেলখানা চোখে না দেখলেও তার জেল জীবন শুরু হয়। এলাকার মানুষের শত্রুতায় সেই জিনিসটিই তাকে বেছে নিতে হয়। কয়েক মাস জেল খাটাকালীন সময়ে এই কষ্ট সহ্য না করতে পেরে গত ৪ ডিসেম্বর তিনি হার্ট স্টোক করেন। জেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখে জানায় হার্ট স্টোক করেছে। জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয় তার। একই সঙ্গে অন্যান্য অসুখও তার সঙ্গে বাসা বাধে। পরে তাকে দ্রুত গত মাসের ১২ জানুয়ারি মেডিকেল ভিসা করে ভারতের কলকাতার টাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ব্যয়বহুল চিকিৎসা চলছিল তার। চিকিৎসা কালীন অবস্থায় শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ সময় তার সাথে তার স্ত্রী করুণা ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। নিহত দিপু ঘোষের ছোট্ট একটি ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।‌
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভারতে একটি হাসপাতালে শুক্রবার সকালের দিকে তার অবস্থা অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে সিসিইউ তে নেয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। এই মুহূর্তে তার পাশে তার স্ত্রী করুণা ঘোষ রয়েছে। তিনি সেখান থেকে চেষ্টা করছেন দ্রুত তার লাশ দেশের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য। লাশ আসার পরে তাদের পারিবারিক শ্মশানের তাকে দাহ করা হবে।
যে মিথ্যা মামলাটি দেয়া হয় সেই মামলায় তার সাথে তার ছোট তিন ভাইকেও আসামি করা হয়। একই পরিবারের চার ভাই এই মামলার আসামি। অন্য তিন ভাই বাড়িঘর ছাড়া বিগত কয়েক মাস। এদের মধ্যে বাড়িতে আসা-যাওয়া গোপনে করলেও তেমনভাবে তারা আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন না। যারা তাকে এ মামলায় ফাঁসিয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে তারা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দিলে তাদেরকে আরো হয়রানি ও মামলায় দেয়া হবে বলে প্রতিটি মুহূর্তে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছিল এই সংখ্যালঘু পরিবারকে।
পারিবারিক যত ব্যবসা, জমিজমা যা কিছু ছিল কেউ দেখার নেই। এক বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে তাদের বাড়িটি। তাদের যে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল সেগুলো সব বন্ধ। ব্যবসা বাণিজ্য দেখার এখন আর কেউ নেই। পুরো পরিবার এখন এলাকা ছাড়া। তাদেরকে এখনো হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে আরো বিভিন্ন মামলায় ঝুলিয়ে দেয়ার।
আর এই ভয়ের কারণেই তারা এখন এলাকায় ফিরতে পারছেন না বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। দিপু ঘোষ এর একটি মেয়ে একটি ছেলে তাদেরও পড়াশোনা এখন বাদ রয়েছে। নিজের স্ত্রী ছোট ছেলে এবং মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে চলে যায় স্বামীকে নিয়ে কলকাতায়। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারটি অসহায় অবস্থায় দিনপাত করছেন।‌
এ মামলার অপর আসামি তার মেজ ভাই চঞ্চল ঘোষ জানান, আমরা কখনো কোন রাজনীতি করিনি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করি। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজেদের মতন চলার চেষ্টা করি। এলাকার বহুৎ মানুষকে আমরা এই ব্যবসা বাণিজ্য দিয়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি সবসময়। কিছু লোকজনের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ ছিল। তারা বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা চাইতো। আমরা না দেয়ার কারণে বিরোধ তৈরি হয়। আর এ কারণে ঢাকার একটি হত্যা মামলায় আমাদের পরিবারের চারটি ভাইকেই আসামি করা হয়। এরপর বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি শুরু হয়। মামলা করার পরে বাড়ি ছাড়ার জন্য। যখন আমরা বাড়ি ছাড়ছিলাম না তখন আমার বড় ভাই দিপু ঘোষকে হঠাৎই র‍্যাব দিয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও তখন এই মামলা আটকের কোন সিদ্ধান্ত ছিল না কারো কাছেই। এরপর থেকেই আমরা সবাই এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। গত কয়েক মাস যাবত আমরা এলাকা ছাড়া। এর ভিতর আবার আমার ভাই ভারতে মারা গেল। আমাদের পুরো ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে কিছুই করতে পারছি ঠিক মতো। না খেয়ে চলার মতন অবস্থা আমাদের তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। পালিয়ে থাকার মতন যে টাকা পয়সা সে টাকা-পয়সাও এখন আর আমাদের হাতে নেই। চলার পথ অনেক ছোট হয়ে এসেছে। আমার ভাই বড় ভাই তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর জেলখানায় স্টোক করে। স্টোক করা কালীন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পরে হাইকোর্ট থেকে তার জামিন মঞ্জুর হয়। এরপর তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার ১২ই জানুয়ারি ভারতের টাটা হাসপাতালে সে মৃত্যুবরণ করে।
এভাবে মিথ্যা হত্যা মামলাটিতে ফরিদপুরের ৫৯ জন ধনীক শ্রেণীর ব্যক্তিদেরকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ফরিদপুরের হিন্দু ব্যবসায়ীরা রয়েছে ১৫ জন। তাদের অনেকেই এখন পলাতক অবস্থায় রয়েছে।
ফরিদপুরের ব্যবসায়ী রাম দত্ত জানান, আমি ঘটনার দিন দোকানে ছিলাম। গন্ডগোলের অবস্থা দেখে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এই মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে। আমাদের ফোন চেক করে ট্যাকিং করলে সব বেরিয়ে আসবে।
এই মামলার অপর আসামি বিধান সাহা জানান, আমি ঘটনার দিন বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এই মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার পর অনেকদিন পলাতক ছিলাম দেশে। পরে দেশ ছেড়ে পরিবার পরিজন ফেলে বিদেশে চলে এসেছি।
এই হত্যা মামলায় ফরিদপুরের ৫৯ জনকে আসামি করা নিয়ে দেশের জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে নিহতের বাবা শফিকুল জানিয়েছেন লাবলু তাঁর পরিচিত কেউ নয়। তাঁর সঙ্গে কথা না বলেই তিনি বাড্ডা থানায় মামলা করেছেন। তিনি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য শফিকুল গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের অনেকেই আমার অত্যন্ত পরিচিত এবং একই এলাকার। তারা নিরপরাধ এবং আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত নয়। আমি ছেলের প্রকৃত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করব। তিনি একটি মামলা দায়ের করে ওই মামলাটি প্রত্যাহার করে এলাকার নির্দোষ আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামায় বলেন, মামলার বাদী লাবলু তাঁর আত্মীয় অথবা পরিচিত নয়। লাবলু ফরিদপুরের অনেক নিরীহ লোকসহ ১১৫ জনকে আসামি করেছেন। লাবলু তাঁর ছেলের লাশ নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার বাড্ডা থানা এলাকায় গত ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ফরিদপুর সদর উপজেলার মো. সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারী (২৯)। আসামিদের মধ্যে ফরিদপুরের সদর উপজেলার বাসিন্দাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে বেশি।
২৯ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে করা এ মামলার বাদী ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খলিশাডুবি গ্রামের হাসিবুল হাসান লাবলু।
মামলার নথিতে দেখা যায়, এতে নাম উল্লেখ করে ১২০ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৩০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আসামি জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক মৎস্যমন্ত্রী আবদুর রহমান ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
মামলায় বলা হয়, প্রথম এই সাত আসামির নির্দেশে ৮ থেকে ১২০ নম্বর আসামি এবং অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে আক্রমণ করেন। তখন অজ্ঞাত আসামির ছোড়া গুলিতে সিরাজুল ইসলাম নিহত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহতের ঘটনা রাজধানী ঢাকার হলেও মামলায় নাম থাকা ১২০ জনের মধ্যে অর্ধেকই (৫৯ জন) ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলার। তাঁদের কারও কারও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার পরেই নথিপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন বাদী।
মো. সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারীর মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দিয়ে তাঁর বাবা শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জনতা বাড্ডা থানা আক্রমণ করলে পুলিশ গুলি করতে করতে থানা থেকে বের হয়। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সিরাজুল। তার পকেট থেকে ফোন নিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি পরিবারকে এ খবর দেয়।
এ ঘটনায় মামলা করার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন শফিকুল ইসলাম। এই মামলার যে বাদী হয়েছেন তিনি নিহতের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে করেছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, হাসিবুল হাসান লাভলু নামে কাউকে তিনি চেনেন না। তিনি বলেন আমরা শুনেছি তিনি মামলা দিয়ে অনেকের কাছে টাকা দাবি করছেন। আমি আমার ছেলের হত্যার ন্যায্য বিচার দাবি করছি। ‌ তবে আমার জেলার মানুষদের নিয়ে যে মামলা দেয়া হয়েছে এবং তাদের কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে এটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে কেউ অর্থনৈতিক খেলা খেলুক এটা আমি চাইনা। এটা সরকার অতি দ্রুত বন্ধ করবে এই দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, এই মামলাটি বাড্ডা থানায় হয়েছে। বাড্ডা থানায় ঘটনার তদন্ত করে দেখবে। আমরা শুধু এখানে মামলার আসামিদের নাম ঠিকানা সহ সবকিছু অনুসন্ধান করে তাদেরকে রিপোর্ট প্রদান করবো। এছাড়া আমাদের আসলে কোন কিছুই আমাদের হাতে নেই। তবে এই মামলার আটক সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কাছে আপাতত কোন তথ্য নেই।
এদিকে এই মামলা নিয়ে ফরিদপুরের রাজনৈতিক মহল সহ বিশিষ্ট জনেরা বলছেন, সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করে এই মামলাটি করা হয়েছে। এইসব মামলায় এদেরকে আসামি করার কারণে মূল আসামিরা ঘটনার আড়ালেই থেকে যাবেন বলে তারা মনে করছেন। তাই সরকারের উচিত এইসব মামলা যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর ঘটনার প্রকৃত আসামিদের অন্তর্ভুক্ত করে মামলা করা। নইলে নিরীহ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ ঘোষের মত ব্যক্তিদের মৃত্যুর লাইন আরো দীর্ঘ হতে পারে।

চরভদ্রাসনে পদ্মার ভাঙনে ৩০ মিটার জিওব্যাগের বাঁধ বিলীন

মুস্তাফিজুর রহমান শিমুল, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম
চরভদ্রাসনে পদ্মার ভাঙনে ৩০ মিটার জিওব্যাগের বাঁধ বিলীন

oplus_0

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের সদর ইউনিয়নের টিলারচর গ্রামে হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন।

গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে এ ভাঙনে ওই এলাকার নদী পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিওব্যাগের ডাম্পিং করা প্রায় ত্রিশ মিটার বাঁধ ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙন এলাকা হতে প্রায় ৯০ মিটার দূরে রয়েছে এমপি ডাঙ্গী ও জাকেরেরশুরা হয়ে জেলা শহর ফরিদপুরের যাতায়াতের পাকাসড়ক, শতশত বসত বাড়ি ও সরকারী স্কুল।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীর পানি কমতে থাকা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে হঠাৎ করে নদী ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে নদী পাড়ের মানুষ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিনে ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে নদীর তীর রক্ষা স্থায়ী বাঁধের সাথে আপদকালীন সময়ে জিওব্যাগের ডাম্পিং করা বাঁধের বড় একটা অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কয়েকটি অংশের মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভাঙনের বিষয়ে নদী পাড়ের বসতি শেক মেতালেব (৫৩) ও মো. ইমারত হোসেন (২৫) জানায়, বুধবার সকাল থেকে ওই এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিছু সময় পর পর মাটির বড় বড় অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।

তারা বলেন, দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ না করলে বিলীন হয়ে যাবে ফসলি জমি, পাকা সড়ক সহ স্থানীয় শত শত বসত বাড়ি।

ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা খাতুন বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার নিকট থেকে ওই এলাকায় নদী ভাঙনের খবর পেয়েছি। জায়গাটি পরিদর্শন করে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলব।

ভাঙনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, “ টিলারচর গ্রামের কয়েকটি পয়েন্টে আপদকালীন ভাঙন রোধে বর্ষা মৌসুমে জিওব্যাগের ডাম্পিং করা হয়েছিল। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ভাঙন রোধে চরভদ্রাসন উপজেলার কয়েকটি পয়েন্ট মিলে ৩.১৫ কি.মি. জায়গায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলেও জানান পাউবোর এই নির্বাহী প্রকৌশলী।

ফরিদপুরে কলেজ গেট স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
ফরিদপুরে কলেজ গেট স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

ফরিদপুর শহরের এডুকেশন জোন খ্যাত বাইতুল আমান কলেজ গেট স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন ফরিদপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে আসলে তার কাছে বাইতুল আমান এলাকাবাসী ও আশেপাশে কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের এই দীর্ঘদিনের দাবি তুলে ধরেন এবং স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় ফরিদপুর কলেজ গেট স্টেশনে ট্রেন থামানো দাবি কমিটির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ আলাওল হোসেন তনু, ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাহিম, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সভাপতি মো. পার্থ আহমেদ, মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান,মোহাম্মদ রোমন চৌধুরী, মো. আব্দুস সালাম সহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, বাইতুল আমান কলেজগেটে বহু আগে থেকেই রেলের একটি স্টেশন রয়েছে, সেখানে আগে ট্রেন এসে থামতো, অজ্ঞাত কারণে এখন আর এখানে ট্রেন থামে না । এলাকাটি ফরিদপুরের মধ্যে এডুকেশন জোন নামে খ্যাত। যেখানে রয়েছে‌ ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর সিটি কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।

সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের একেক জেলার একেক প্রান্ত থেকে তারা শিক্ষা লাভের জন্য কেউ বাসে, কেউ লঞ্চে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং অধিক ভাড়া দিয়ে তারা ফরিদপুর থেকে যাতায়াত করেন। অথচ বায়তুল আমান কলেজগেট স্টেশন থেকে কলেজের কোনোটির দূরত্ব ৪০০ মিটার, ৫০০ মিটার, ৬০০ মিটার। বাইতুল আমান কলেজ গেট স্টেশনে যদি ট্রেন থামানো হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর হবে তাদের সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প ভাড়ায় তারা বাড়িতে যাতায়াত করতে পারবে।

এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে বাইতুল আমান রেলগেট স্টেশনে পুর্বের মতো ট্রেন থামানো নির্দেশনার মতো একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে রেলের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন এলাকাবাসী ও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর।

‘আমি এমপি হলে আমার কাছে আসতে কোন নেতা ধরতে হবে না’ — স্থপতি মুজাহিদ বেগ

সোহাগ মাতুব্বর, ভাঙ্গা:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:১৩ পিএম
‘আমি এমপি হলে আমার কাছে আসতে কোন নেতা ধরতে হবে না’ — স্থপতি মুজাহিদ বেগ

‘আমি এমপি হলে আমার কাছে আসতে কোন নেতা ধরতে হবে না। সরাসরি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন। কথা বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মো. মুজাহিদ বেগ।’

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের উচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক উঠান বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মুজাহিদ বেগ বলেন, ‘আমি যদি ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আমি আপনাদেরকে নিয়ে এই আসনটি এমনভাবে সাজাবো যাতে বাংলাদেশের মধ্যে রোল মডেল হিসেবে তৈরি হয়।’

এসময় তিনি আরো বলেন, ফরিদপুর-৪ আসনের একটা যুবক ভাই বেকার থাকবে না। যুবক ভাইয়েরা আমার হৃদয়ে আছে। তাদের শিক্ষা নিশ্চিত করা, খেলাধুলা করার সুযোগ তৈরি করার জন্য সব করব।

হাফেজ কুব্বাত মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাগর বেগের সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন- হায়দার হোসেন, সোবাহান হোসেন, বাকী মাতুব্বর, সেলিম মাহমুদ, সহিদুল ইসলাম, আল-আমিন, মো. রাসেল মোল্লা ও সৌরভ বিশ্বাস প্রমূখ।