খুঁজুন
শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১ আশ্বিন, ১৪৩২

ফরিদপুরে তীব্র খরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়, লোকসানে চাষিরা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ২:৪২ পিএম
ফরিদপুরে তীব্র খরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়, লোকসানে চাষিরা
ফরিদপুরে এবার লিচুর ফলন বিপর্যয় ফরিদপুরের মধুখালীতে এবার লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে।
ফরিদপুরের মধুখালীতে এবার লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফলন মোটেও ভালো হয়নি। মূলত অনাবৃষ্টি ও টানা তাপপ্রবাহের কারণে এ ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) মধুখালী এলাকার উল্লেখিত এলাকা ঘুরে চাষিদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য উঠে আসে।
চাষিরা জানান, লিচুর ফুল ও মুকুল ঝরে পড়ায় আশানুরূপ ফল আসেনি। আকার ছোট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এবছর ফরিদপুরের লিচু বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। গতবার যে বাগানে সাত লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে, এবার একই বাগানে তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে কি-না আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার জাহাপুর গ্রামটি লিচুর জন্য বিখ্যাত। অনেকের কাছে এটি ‘লিচু গ্রাম’ নামেও পরিচিত। জাহাপুর গ্রামের প্রায় মানুষেরই লিচুর বাগান রয়েছে। অন্য ফসল উৎপাদন ছেড়ে দিয়ে এ গ্রামের সবাই লিচু চাষে ঝুঁকেছেন। লিচুগাছ-বাগান নেই, এমন একটিও বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটি বাড়ি কিংবা জমিতে রোপণ করা হয়েছে লিচুগাছ। গত ২৫ বছরে এ ইউনিয়নে লিচু চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।
চাষিরা জানান, দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লিচু চাষ। কম খরচে অধিক মুনাফার আশায় প্রতি বছরই কৃষকরা ঝুঁকছেন এই চাষাবাদের দিকে। তবে উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের জাহাপুর, দোস্তরদিয়া, টেংরাকান্দি, মনোহরদিয়া, চর মনোহরদিয়া, খাড়াকান্দি ও মির্জাকান্দি গ্রামে ব্যাপকভাবে লিচুর চাষ হয়। মোজাফফরি জাতের পাশাপাশি গুটি, বোম্বাই এবং চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ বেশি হয় এসব এলাকায়। তবে এবার চরম ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, মধুখালী উপজেলার প্রায় শতাধিক বাগানে এবছর ৯৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে, যার মধ্যে শুধু জাহাপুরেই ৪০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে গড় ফলন হয়েছে ৪ দশমিক ১ টন। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে ৫-৭টি পূর্ণবয়স্ক লিচুগাছ থেকে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব এলাহী বলেন, জাহাপুরের লিচু ফরিদপুর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পুরোদমে লিচু সংগ্রহ শুরু হয় এবং জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকে। এবার অনাবৃষ্টিতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। ফলনও বেশ কম হয়েছে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর পরিচর্যা এবং সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

ফরিদপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

হারুন আনসারী, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:৩১ পিএম
ফরিদপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

ফরিদপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাসানচর চৌধুরী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিহত দু’জনের মরদেহ স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত ৮টা) এখনো এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে।

নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের বেলালউদ্দিন মৃধার স্ত্রী মালেকা বেগম (৭০) এবং তাঁর দুই নাতি তৌসিক (৬) ও সোয়াদ (৭)। নিহত দুই শিশু সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। তৌসিকের বাবার নাম জহিরুল ইসলাম তোতা আর সোয়াদের বাবার নাম শরিফউদ্দিন মৃধা। তারা যথাক্রমে ভাসানচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির পাশে কুমার নদে গোসল করতে যায় আপন চাচাতো দুই ভাই শিশু সোয়াদ (৬) ও তৌসিফ (৭)। এসময় তারা পানিতে ডুবে যায়। তাদেরকে উদ্ধার করতে যেয়ে তাদের দাদিও পানিতে ডুবে যান। তবে তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কেউ জানতে পারেনি।

এদিকে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নদীতে দু’টি মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় জনতা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। এরপর মরদেহ উদ্ধার করলে তাদের পরিচয় জানা যায়।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার মোহাম্মদ নিসার আলী বলেন, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে দু’টি মরদেহ কুমার নদে ভেসে উঠেছে বলে খবর পেয়ে সেখানে উদ্ধার কর্মীরা ছুটে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাদের উদ্ধার করার পর নিহতদের পরিচয় জানা যায়। এ ঘটনায় নিহত অপর শিশু সোয়াদ নিখোঁজ রয়েছে। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় আজকের মতো উদ্ধার কাজ শেষ করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নিখোঁজ শিশুর সন্ধান না মিললে পুনরায় উদ্ধার অভিযান চালানো হবে।

চরভদ্রাসনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

মো. মুস্তাফিজুর রহমান শিমুল, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮:২০ পিএম
চরভদ্রাসনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে জনদুর্ভোগ কমাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার হাসপাতাল রোড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

এসময় চার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা খাতুন।

অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিএ মো. উজ্জল সেক ও চরভদ্রাসন থানা পুলিশ।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাসপাতাল রোড এলাকায় কয়েকজন ব্যাবসায়ী যত্রতত্র গাছের গুঁড়ি ও কাঠ ফেলে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করায় দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯১ ধারা ভঙ্গের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আট হাজার পাঁচশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- খাদিজা আর হালিমা ফার্নিচার ২ হাজার টাকা, বিল্লাল ফার্নিচারকে ১ হাজার পাঁচশত টাকা, একলাছ ফার্নিচারকে ২ হাজার টাকা ও হাওলাদার স্ মিল মালিককে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ফরিদপুরের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভেড়া বিতরণ

তামিম ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:০৪ পিএম
ফরিদপুরের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভেড়া বিতরণ

ফরিদপুর সদর উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া চর অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে “সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের” অধীনে ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নদী-বিধৌত চর এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০৭ জন সুফল ভোগীর মাঝে প্রত্যেকের জন্য দুটি ভেড়ি ও একটি ভেড়া দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। ভেড়া বিতরণের পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষদের দুই দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সঠিকভাবে পশুপালন করতে পারে। এছাড়াও, ভেড়া ও ছাগলের ঘর তৈরির জন্য ১১,০০০ টাকা এবং হাঁস-মুরগির ঘর তৈরির জন্য ৮,৮০০ টাকা করে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের অধীনে ফরিদপুর সদর উপজেলার মোট ৫৮৩৫ জন সুফল ভোগীকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে ১৩০ জনকে উন্নত জাতের হাঁস, ২৫ জনকে দেশি মুরগি এবং ২৫ জনকে ছাগলও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫৫ জন সুফলভোগী তিন কিস্তিতে মোট ২২৬ কেজি হাঁস-মুরগির খাবার পেয়েছেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রকল্পের পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, “আমাদের এই সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পটি ৭টি জেলার ৩১টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৬৫,২৯০ জন সুফল ভোগীকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফরিদপুরে আমরা বিশেষ করে নদী-বিধৌত চর অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছি।”

সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.কে.এম আমজাদ।

তিনি বলেন, “ভেড়া বিতরণ কেবল একটি কর্মসূচি নয়, এটি প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির একটি বড় সুযোগ। আমরা আশা করি, এই ভেড়াগুলো চর এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং স্থানীয় মানুষদের স্বাবলম্বী করে তুলবে।”

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “সদর উপজেলার চর এলাকার মানুষের জন্য এই প্রকল্পটি একটি বড় প্রাপ্তি। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যে প্রকল্পের সকল সুবিধা প্রকৃত সুফল ভোগীদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়।”

এই সহায়তা পেয়ে খুশি চর অঞ্চলের বাসিন্দারা। চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আকবর মোল্লা বলেন, “আমরা চর এলাকার মানুষ, আমাদের জীবন অনেক কষ্টের। এই ভেড়াগুলো পেয়ে আমরা খুব খুশি। শুধু ভেড়াই নয়, তারা আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ঘর বানানোর টাকাও দিয়েছে। এতে আমাদের মতো গরিব মানুষেরা একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।”

ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের মো. হাবিব জানান, “আমাদের আগে ভেড়া পালনের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়ে আমরা এখন ভেড়া পালন করতে পারব। আশা করি, এই ভেড়াগুলো বড় হলে বিক্রি করে আমরা ভালো লাভ পাব এবং আমাদের পরিবারের অভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।”

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আসমার আক্তার বলেন, “আমাদের মতো মহিলাদের জন্য এই প্রকল্প একটি বড় সুযোগ। ভেড়া পালন করে আমরাও পরিবারের আয়ে সাহায্য করতে পারব। এই ধরনের সহযোগিতা পেলে আমরাও স্বাবলম্বী হতে পারব।”

এই প্রকল্প ফরিদপুরের চর অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।