ফরিদপুরে বিএনপি’র সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বাতিলের দাবিতে এক্সপ্রেসওয়েতে অবরোধ, যানজট-ভোগান্তি

ফরিদপুরে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙ্গন আতংকে রয়েছে মানুষ। জেলার সদরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। প্রতি বছর নদীর তীরে ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অসংখ্য পরিবার। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। নদী শাসনের টেকসই ব্যবস্থা, প্রয়োজন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া, আকোটের চর, চর নাসিরপুর ও চরমানাইর ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার পদ্মার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রতি বছরই পদ্মার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার- এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, ঝুঁকিতে রয়েছে দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের নুরুদ্দীন সরদারকান্দি, আব্দুল হামিদ জঙ্গিরকান্দি, আলেফ সরদারকান্দি ও জব্বার শিকদারকান্দিসহ বেশ কিছু গ্রাম।
আতঙ্কে থাকা প্রায় ১’শ ১০টি পরিবারের দাবি ভাঙ্গন ঠেকাতে টেকসই নদীশাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
নদীভাঙনে এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে না। নদী শাসনের টেকসই ব্যবস্থা, প্রয়োজন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথেই ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
ভাঙ্গনরোধে আশ্বাস নয়, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি স্থানীয়দের।
ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আসরউদ্দিন মুন্সির ডাঙ্গী এলাকায় পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। তারা আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে এ মানববন্ধন করেন তারা। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তি হলেন, প্রবাসী মো. আলমাছ খা (৪০)। গত শনিবার রাতে তাকে হত্যা করেন তার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৩৩)। ঘটনার পর পুলিশ হোসনেয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তার প্রেমিক আলী শেখকে (৫৫) এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ইতোমধ্যে নিহতের বাবা হাতেম খান বাদী হয়ে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মানববন্ধনে এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা ও যুবকরা অংশ নেন। তাদের দাবি নিহত আলমাছ খা ছিলেন সহজ-সরল। এ সময় বক্তব্য রাখেন নিহতের বাবা হাতেম খান ও স্থানীয় মির্জা প্রিন্স, হাজেরা বেগম, খালেদ হাসান মুরাদ, তাসলি বেগমসহ অন্যরা। বক্তারা বলেন, ‘আলমাছ দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকাকালীন স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বিভিন্ন পরপুরুষের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। বিষয়টি আলমাছ জানার পরে তাকে নিষেধ করলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় মনোমালিন্য। আলমাছ বিদেশ থেকে বাড়িতে আসার পর থেকেই স্ত্রী তাকে পুনরায় বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। আলমাছ বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিলে শুরু হয় নির্যাতন। গত শনিবার রাতে স্বামীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী হোসনেয়ারা। পরের দিন রবিবার সকালে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে।’
তারা বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্ত্রীকে আটক করলেও কথিত পরকীয়া প্রেমিক আলী শেখকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অতিদ্রুত আলী শেখকে গ্রেপ্তার করে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।’ পরে এলাকাবাসী বিচারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মামলার প্রধান আসামি স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামি আলী শেখকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। হোসনেয়ারা বেগমের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
‘সোনালি আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর’—স্লোগানের মতোই ফরিদপুর জেলা পাট চাষের মাধ্যমে দেশের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। গতবারের চেয়ে এ বছর ফরিদপুরে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য উপযোগী। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাম্পার ফলনের আশা করলেও পাট জাগ দেওয়ার জন্য খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চাষিরা শঙ্কিত। আবার খরচ বাড়লেও ভালো দাম না পেলে লোকসানের চিন্তা তো আছেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের সোনালি আঁশ শুধু জেলার পরিচিতিই নয়; কৃষকদের জীবন-জীবিকারও প্রতীক। সঠিক নীতি ও সহায়তা পেলে এ ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবার গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ কিছুটা বেড়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গতবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার পাটের ফলন সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত সন্তোষজনক এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে। তবে কিছু নিম্নাঞ্চলের জমিতে বৃষ্টির পানি দীর্ঘসময় জমে থাকায় পাটের আকার প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি পায়নি। যা সীমিত পরিসরে পাটের ক্ষতির কারণ হয়েছে। তবে এ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জেলার অধিকাংশ এলাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। যা কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
চাষিদের দাবি, পাটের ন্যায্য দাম নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বীজ, জৈব ও রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকদের মজুরির মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যার কারণে তাদের লাভের সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। তারা সরকারের কাছে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা এবং বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
সালথা উপজেলার গট্টি গ্রামের পাট চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এবার পাট চাষে প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি ১ শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১২ কেজি পাট উৎপাদন হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
উপজেলার ভাওয়াল গ্রামের ফরিদ মোল্লা ও পুরুরা গ্রামের সুদের বিশ্বাস বলেন, ‘বীজ সার, ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুরই দাম বৃদ্ধি। শ্রমিকের মূল্য বেশি। অনাবৃষ্টির কারণে কয়েকবার মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হয়েছে। এখন দুশ্চিন্তায় আছি। খালে-বিলে, নদী-নালায়, পুকুরে পানি নেই; পাট জাগ দেবো কোথায়? ভালো পানি না হলে পাটের রং ভালো হবে না। আমাদের দাবি, পাটের দাম যেন ভালো দেওয়া হয়।’
পাটের আবাদ নিয়ে কথা হয় বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বাইখীর গ্রামের সুইট মন্ডলের সাথে। তিনি বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা গেলে পাট চাষের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। তবে সবকিছুর দাম বেশি। ফলে পাট আবাদের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আশপাশের খাল-বিলে, পুকুরে পানি নেই। পাট জাগ দেবো কোথায়? এত কিছুর পরেও যদি কাঙ্ক্ষিত দাম না পাই, তাহলে ক্ষতিতে পড়তে হবে।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর জেলা পাট উৎপাদনে সব সময়ই শীর্ষে। এ বছর পাট আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।’
আপনার মতামত লিখুন
Array