খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

লালমিতে হাসছে ফরিদপুরের কৃষক, ৪৫ কোটি বাণিজ্যের টার্গেট!

বি কে সিকদার সজল, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১:৪৬ পিএম
লালমিতে হাসছে ফরিদপুরের কৃষক, ৪৫ কোটি বাণিজ্যের টার্গেট!

চলতি বছর ফরিদপুরে লালমির বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে ফলটির চাহিদা ও দামও বেড়েছে। ফলে লাভের মুখ দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত লালমি যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। চলতি বছর ৪৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বাঙ্গি জাতীয় সুস্বাদু ফল লালমি দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতো হলেও স্বাদ ও ঘ্রাণে এটি ভিন্ন। পানির পরিমাণ বেশি থাকায় রোজাদারদের কাছে ফলটি বেশ জনপ্রিয়। রমজান সামনে রেখে প্রতি বছর ফরিদপুরের কৃষকরা লালমির চাষ করেন। এবারও সদরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এর আবাদ হয়েছে। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে লালমির চাষ। চলতি মৌসুমে একশ লালমি প্রকারভেদে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা লালমি উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্ষেত থেকে লালমি তুলে পাশেই ধোয়া হচ্ছে, এরপর ভ্যান ও গাড়িতে করে পাঠানো হচ্ছে হাটে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এতে শ্রম দিচ্ছেন।

লালমি চাষি আবেদ আলী বলেন, ‘এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে, পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছি। যদিও খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে, তবে লাভ ভালোই হচ্ছে।’

অন্য এক চাষি ছলেমান শেখ বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে প্রতি বছরই আমরা লালমি চাষ করি। চার মাসের মধ্যেই বিক্রি করা যায়, খরচও কম, লাভও বেশি। তাই এলাকার কৃষকেরা লালমির চাষে আগ্রহী হচ্ছে।’

লালমি চাষে নারীদের অংশগ্রহণ

নারীরাও লালমি চাষ ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শারমিন বেগম বলেন, ‘লালমি আবাদ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত পরিবারের সবাই মিলে কাজ করি। এখান থেকে যা লাভ হয়, তা দিয়ে সারা বছরের সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চলে।’
কৃষিকাজ করে সংসার চালানো শিউলি আক্তার বলেন, ‘বাবা অসুস্থ, সংসারের দায়িত্ব আমার ওপর। তাই গত পাঁচ বছর ধরে লালমি চাষ করছি। কম সময় ও খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এটা চাষ করি।’
গৃহবধূ লাকি খাতুন বলেন, ‘লালমির মৌসুমে ক্ষেতে কাজ করি। কখনো লালমি তুলি, কখনো ধুই। প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ টাকা রোজগার হয়, যা সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনায় কাজে লাগে।’
লালমির বাজার ও বাণিজ্য

 

উপজেলার চর দড়িকৃষ্ণপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে লালমির হাট। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাইকাররা লালমি কিনে নিয়ে যান। এখানে কোনো আড়ৎদারি নেই। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে লালমি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় এখানকার লালমির চাহিদা দেশজুড়ে।

পাবনা থেকে আসা পাইকার কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে দুই দিন এখানে আসি। একশ লালমি আড়াই হাজার থেকে আট হাজার টাকায় কিনতে হয়। গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একশ পিসে এক হাজার টাকা খরচ হয়। পরে প্রতিটি লালমি ১০ টাকা লাভে বিক্রি করি।’

ঢাকা থেকে আসা ব্যাপারী সামচুল আলম বলেন, ‘এখানে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে লালমি কেনা যায়, কোনো আড়ৎদার নেই। এখানকার লালমির স্বাদ ভালো, রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় সারা দেশে এর চাহিদা রয়েছে।’
ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘এই হাটে প্রতিদিন চার লাখ টাকার লালমি বিক্রি হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, বিক্রিও বাড়ছে।’

লক্ষ্যমাত্রা ও কৃষি বিভাগের তথ্য

 

ফরিদপুর কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লালমি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘রমজান সামনে রেখে এ অঞ্চলের মানুষ লালমির চাষ করে। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় চাষ বাড়ছে। এ বছর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকেরা। চাহিদা থাকায় জেলার লালমি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার লালমিতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না, তাই এটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। এ কারণেই দেশজুড়ে ফরিদপুরের লালমির চাহিদা বেড়েছে।’

ফরিদপুরে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে এক ব্যবসায়ী নিহত

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:৩৩ পিএম
ফরিদপুরে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে এক ব্যবসায়ী নিহত
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে লিয়াকত মোল্যা (৪০) নামে এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাদিরদী বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী এলাকার ইউপি সদস্য বুলবুল আহমেদ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মাগুরা জেলার গোপালনগর ইউনিয়নের সংকোচ খালী এলাকার তিন ব্যবসায়ী কয়েকটি গরু বোঝাইকৃত ট্রাক নিয়ে ফরিদপুর টেপাখোলা গরুর হাটে যাচ্ছিলেন। তারা মহম্মদপুর-বোয়ালমারী উপজেলার সীমান্ত ব্রীজ পার হয়ে ফরিদপুর জেলার কাদিরদী বাজার এলাকায় পৌঁছালে পিকআপ থেকে গরু লাফ দিলে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে যায়। এ সময় পিকআপে থাকা লিয়াকত মোল্যাসহ দুই ব্যবসায়ী আহত হয়। স্থানীয়রা মারাত্মক আহত অবস্থায় দুই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিয়াকত মোল্যাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অপর ব্যবসায়ী ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী এলাকার ইউপি সদস্য বুলবুল আহমেদ জানান, মাগুরা সদর থেকে গরু বোঝাইকৃত পিকআপটি ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা গরুর হাটে যাচ্ছিল। গরুর গাড়িটি কাদিরদী বাজারে আসলেই একটি গরু লাফ দিলে গাড়ীটি উল্টে ব্যবসায়ীরা চাপা পড়ে। সেখান থেকে আহত দুইজনকে ফরিদপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরে জানতে পেরেছি লিয়াকত নামে ব্যবসায়ী মারা গেছে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনো অবগত নই। এমনকি ঘটনাটি আমাদের কেউ জানায়নি।

ফরিদপুরে তাল পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোরের মৃত্যু 

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:২৮ পিএম
ফরিদপুরে তাল পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোরের মৃত্যু 
ফরিদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইমন শেখ (১৪) নামে  এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (০৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত ইমন শেখ কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক শেখের ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের মো. ফারুক শেখের ছেলে ইমন শেখ তাল পাড়ার উদ্দ্যেশ্য বাঁশ নিয়ে বাড়ির পাশে তাল গাছে উঠে। গাছে ওঠার পর বাঁশ দিয়ে খুচিয়ে তাল পাড়ছিল। এ সময় ওই গাছের পাশ দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের লাইনে তারে ইমনের হাতে থাকা বাঁশ স্পর্শ করলে  বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে গিয়ে সে মারাত্মক ভাবে আহত হয়।
পরে স্থানীয়রা ইমনকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ফরিদপুরে চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজরসহ চার সহযোগী গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:২৩ পিএম
ফরিদপুরে চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজরসহ চার সহযোগী গ্রেপ্তার
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
মঙ্গলবার (৩ জুন) গভীর রাতে তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
বুধবার (০৪ জুন) গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানান, মেজর হায়দারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরহাদ হোসেনসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজু মোল্ল্যা অভিযোগ করে বলেন, অভিযানের সময় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ফরহাদ হোসেন ‘মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ বলে গুজব ছড়ান। এতে আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। পরে পুলিশ সাইরেন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানায়—এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব, ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এলাকাবাসীর সহায়তায় ফরহাদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মেজর হায়দারকেও নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
এর আগে উপজেলার ডাংগি ইউনিয়নে বৈষম্য বিরোধী এক নারী নেত্রীকে ঘিরে উত্তেজনার সময় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ চলাকালে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে উগ্র আচরণ ও অশোভন মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন মেজর হায়দার। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানান, “রাজু মোল্লা নামের এক ব্যক্তি চাঁদাবাজির অভিযোগ দিলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার (০৩ মে) সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে তাদের।”