খুঁজুন
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ, ১৪৩২

আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে

ইলিয়াস সরকার, বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:২৫ এএম
আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে

 বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সাড়ে ৮১ বছরের পুরোনো দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আন্দোলন দমনের নামে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে দলটির বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ১৪শ’র বেশি মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

ফলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। একইসঙ্গে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে দলটির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা দেশ-বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে পালাতে না পেরে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী।

এ অবস্থায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীসহ বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। তাদের অভিযোগ, গণহত্যার পর কোনো দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। বিশেষ করে সম্প্রতি ভারত থেকে অনলাইন মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের পর সে দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অফিসিয়ালি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনগণই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে চিফ প্রসিকিউটর বলছেন, কোনো দল নিষিদ্ধ হবে কি না বা কোনো দলের বিচার হবে কি না সেটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

অন্যদিকে আইনজীবীরা বলছেন, বিচার বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পাকিস্তান আমলে অধিকার আদায়ের সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরও বিভিন্ন গণআন্দোলনে শামিল ছিলো দলটি। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে দেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে আওয়ামী লীগ নতুন করে নিবন্ধন পায়।

চব্বিশের আন্দোলন ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন
১৯৭৫ সালের পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতার মসনদে বসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরবর্তী তিন নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়ম করে দলটির নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে, ২০১৮ সালে রাতের ভোটে এবং ২০২৪ সালে বিরোধী জোট বিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। শুধু নির্বাচন নিয়েই নয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধংস, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, গুম, খুন, বৈষম্যসহ নানান অভিযোগ ওঠে দলটির বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে কোটা নিয়ে একটি রায়কে কেন্দ্র গত বছরের মাঝামাঝিতে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে। ওই আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর দায় মাথায় নিয়ে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ঘটনার অনুসন্ধান করা হয়। সেই অনুসন্ধানে আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা উঠে আসে। তার আগে ২৩ অক্টোবর তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এর ক্ষমতাবলে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে গেজেট জারি করে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আমলা, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

এ অবস্থায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলো।

বৈষম্যবিরোধীদের দাবি
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউবে ‘ছাত্রসমাজের উদ্দেশে’ সরাসরি বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। তার ওই বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি প্রায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নিষিদ্ধে দাবি তোলা হয় আওয়ামী লীগকে । এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিনিয়ত পোস্ট করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভাংচুরের পর গাজীপুরে হামলায় আহত কাশেমের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’।

একইদিন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আরও দুইটি পোস্ট করেন তিনি। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে কফিন মিছিল করা হয়।

সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ শীর্ষ নেতা  এক  জরুরী পোস্টে ১৪০০জনকে হত্যা ও হাজার হাজার মানুষকে নির‌্যাতনের  অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেন।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি নির্বাচন কমিশন। তারা বিষয়টি সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কি বলছে?
১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে থাকতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে বলার সময় এখনো আসেনি। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা বলতে আরও সময় লাগবে। এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। সময়ই বলে দেবে, সময়ই আমাদের গাইড করবে। সময়ই বলবে, আমরা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ’

বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সময়ের ওপর ছেড়ে দিলেও বিএনপি সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছে জনগণের ওপর।

জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে: মির্জা ফখরুল
১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা তো আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, জনগণ উইল ডিসাইড। আমরা পক্ষ-বিপক্ষ থাকা ইমমেটেরিয়াল… পিপলস উইল ডিসাইড। ‘

নিষিদ্ধের আগে বিশ্লেষণ করতে হবে: আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, দল নিষিদ্ধে সরকারের একটা ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। যেদিন নিষিদ্ধ ওদিন বলেছিলাম যে অভিযোগে নিষিদ্ধ করা যায় সেটা প্রমাণ করা খুব কঠিন। দল নিষিদ্ধ করতে হলে, রাষ্ট্র-সার্বভৌমত্ব বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেটা প্রমাণ করতে হবে। এটা জামাতে ইসলামীকে করলো। কিনতু করার কয়েকদিনের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেলো এবং সরকারের পতন হয়ে গেলো। এটা হলো একটা প্রেক্ষাপট।

‘এখন একটা আলোচনা হলো যারা অভ্যুথান করে ক্ষমতায় এসছে তাদের কিছু কিছু বলতে চাচ্ছেন এটা (আ’লীগ) নিষিদ্ধ করা হোক। তারা আর রাজনীতি করতে পারবে না। আমি মনে করি এগুলো পলিটিক্যাল বক্তব্য। সংবিধানে বলা আছে , রাজনীতি করা মৌলিক অধিকার। কোনো সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হওয়া যাবে না। সংবিধান হলো প্রধান আইন। সংবিধান পরিপন্থি কিছু করতে পারবেন না। নিষিদ্ধ করতে হলে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। সেটির কতটুকু বাস্তবতা আছে তা বিশ্লেষণ করতে হবে। ’

অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, পাকিস্তান আমলে দেখেছি দল করতে না পারলে তখন তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। স্বাধীনতার পরে সর্বহারা পার্টি দেখেছি, নিষিদ্ধ ছিলো।

সব কিছু দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপরাধ করবেন বিচার হবে। সেটা ব্যক্তি হতে পারে। নারী হতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু দল তো অন্য জিনিস।

রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপার: চিফ প্রসিকিউটর
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম রাজনৈতিক দল নিয়ে বলেন,  রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না  এটা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে দলগত ভাবে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে আছে। সে ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা বা অভিযোগ নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। সেটা ভবিষ্যতে করা হবে কিনা আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে অভিযোগ তথ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান আছে। প্রয়োজন হলে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। বাট এটার পেছনে রাষ্ট্রের একটা সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে।

দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এক ধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া জরুরি: আসিফ মাহমুদ

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনের অধিবেশন শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সারা বিশ্বে ফ্যাসিস্টদের যে নজির, আওয়ামী লীগেরও তেমন হওয়া উচিত। আমরা ইউরোপের দেশগুলোকে গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে ধরি। জার্মানি ও ইতালিতে ফ্যাসিস্টদের কী হয়েছিল, আমাদের সামনে সেই নজির রয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা ডকুমেন্টেড হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এক ধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কোন প্রক্রিয়ায় কী শাস্তি হতে পারে সে বিষয়েও সবার মতামত নেওয়া সরকার প্রয়োজন মনে করেন, আশা করি তারপর একটা সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারবে।

যে আইনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ
সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ১৮। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোন ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে বা তফসিল হতে বাদ দিতে পারবে অথবা অন্য কোনভাবে তফসিল সংশোধন করতে পারিবে।

আওয়ামী লীগের জন্ম ও ইতিহাস
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে (খায়ের মিয়া) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নতুন নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

তার আগে ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৬৬ সালে সভাপতি হন শেখ মুজিব। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। পরের বছর ১৫ আগস্ট এক সেনা অভ্যুত্থানে দুই কন্যা ছাড়া পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তিনি নিহত হন।

বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় শেখ হাসিনাকে। সেই থেকে তিনি একই পদে আছেন।

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চিকিৎসা বঞ্চিত রোগীরা

এহসানুল হক মিয়া, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ১:০৮ পিএম
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চিকিৎসা বঞ্চিত রোগীরা

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চিকিৎসা বঞ্চিত রোগীরা। বহিরাগত স্বাস্থ্য সহকারী দিয়ে চলছে জরুরী বিভাগের চিকিৎসা সেবা। বিভিন্ন অনিয়মে জর্জরিত হাসপাতালে কোনভাবেই ফিরছে না শৃঙ্খলা। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত, গর্ভবতী নারী শিশুসহ বিভিন্ন ধরনের মুমূর্ষু রোগী জরুরী সেবা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও মিলছে দায়সারা চিকিৎসা সেবা। এমনকি বহিরাগত লোক দিয়ে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

উপজেলার শশা গ্রাম থেকে জাহিদ হাসান নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান , আমার ছেলে জুনায়েদ (৬ মাস) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হলে ২৩ জুলাই রাত ১০ টার দিকে আমার স্ত্রী নগরকান্দা হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরী বিভাগে তখন কোন চিকিৎসক ছিলো না। একটা ছেলে বসা ছিলো সে চিকিৎসক নয় তারপরও ওষুধ লিখে দেয়েছে।

জানা গেছে, চিকিৎসক সংকটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। সেই সুযোগে ঘোলাটে পরিবেশে দায়সারা চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকগণ। বহিরাগত দুই জন স্বাস্থ্য সহকারীই চালাচ্ছে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, বহিরাগত দুই জন স্বাস্থ্য সহকারী জরুরী বিভাগে সব সময় ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। তবে ফ্রি সার্ভিসের আড়ালে তারা জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে রেফার্ড করে।

এবিষয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার অভিজিৎ সাহা জানান, সালাউদ্দিন নামে একটি ছেলে জরুরী বিভাগে ডিউটিতে থাকে , সে মূলত চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। কোন রোগী আসলে তার চিকিৎসা দেওয়ার কথা নয়, ডিউটিরত চিকিৎসককে ডেকে দেওয়ার কথা।

নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সরকার জানান, তারা (বহিরাগত স্বাস্থ্য সহকারী) চিকিৎসকদের সহযোগিতা করার জন্য থাকে, তবে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা নয়। তিনি আরোও বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. দবির উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে এক ভুক্তভোগী আমার নিকট অভিযোগ করেছে। আমি হাসপাতাল প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ফরিদপুর সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘মেঘলা আকাশের নিচে আমি’

মাহমুদুল হাসান
প্রকাশিত: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
‘মেঘলা আকাশের নিচে আমি’

এমন মেঘলা আকাশ আমি বহুবার দেখেছি। ছায়া ঘেরা, রঙহীন, নিঃশব্দ—যেন নিজের মধ্যে ডুবে থাকা কোনো বিষণ্ণ মানুষ। জানি না কেন, যখনই এমন আকাশ দেখি, মনে হয় ওটা আমারই প্রতিচ্ছবি। আমি যেমন হাসি লুকিয়ে রাখি মনের অন্ধকারে, তেমনি সে আকাশও সূর্যকে ঢেকে রাখে বুকের গোপন কষ্টে। যেন আমরা দুজন—আমি আর মেঘলা আকাশ—একই রকমের নিরবতা নিয়ে বেঁচে আছি।

ছোটবেলাতেই মেঘলাকে আপন করে নিয়েছিলাম। কারণ আমি কখনোই রঙিন সকাল কিংবা রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরের মানুষ ছিলাম না। আমার ভেতরেও বরাবরই একটা ঘন সাদা-কালো ভাব, যেটা বৃষ্টি নামার আগে আকাশে দেখা যায়। আশেপাশের মানুষজন যখন ঝলমলে দিনকে ভালোবেসে গান গায়, তখন আমি একা বসে থাকি জানালার ধারে—মেঘের দিকে তাকিয়ে। মেঘের মধ্যে কী আছে, জানি না। শুধু জানি, ওখানে কোথাও আমার মন লুকিয়ে আছে।

প্রতিবারই মনে হয়, আজ হয়তো আকাশ কেঁদে ফেলবে। আমিও তো কেঁদে ফেলতে চাই—অকারণে, অজুহাতহীন, শব্দহীন এক কান্না। কিন্তু পারি না। কারণ আমাকে শক্ত থাকতে হয়। আমার কান্না কেউ বোঝে না, কেউ দেখতে চায় না। তাই হয়তো আকাশও নিজেকে ধরে রাখে। তার বুকভরা জলের ভার, আর আমার বুকভরা হাহাকার—দুটোই যেন জমে থাকে এক জায়গায়, ফেটে না পড়ে কোনোদিন।

মেঘলা আকাশ এক রকমের প্রতারণাও করে। সে বলে, “আমি আসছি, তোমার মন ভালো করতে।” কিন্তু শেষে করে কী? আলো ঢেকে দেয়, বাতাস ভারি করে তোলে, চারপাশে এক ধরণের বিষণ্নতা ছড়িয়ে দেয়। ঠিক যেমন আমার জীবনের মানুষগুলো করেছে। তারা বলেছে—”ভালোবাসবো”, “সাথে থাকবো”, “তোমাকে বোঝার চেষ্টা করবো”—কিন্তু শেষে কি তা করেছে? করেছে ঠিক উল্টোটা। যেমন আকাশ, তেমনি তারাও।

আমি ভেবেছি, এই আকাশের নিচেই আমি হেঁটে যাবো অনেক দূর। একদিন কেউ বুঝবে আমার পথচলার ক্লান্তি। কেউ হয়তো ধরে ফেলবে, এই গাঢ় মেঘের ভেতর কতটা অসহ্য বিষণ্নতা জমে আছে। কিন্তু কেউ বোঝেনি। সবাই ব্যস্ত নিজের গল্পে, নিজের রোদে, নিজের সুখে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম একা, একদম একা, এক আকাশ-ভর্তি অনিশ্চয়তার সামনে।

আমার জীবনের প্রতিটি বড় মুহূর্তেই যেন এই মেঘলা আকাশ ছিল। পরীক্ষার খারাপ ফল, প্রথম প্রেমে ধোঁকা খাওয়া, বাবার অসুস্থতা, বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা—সব কিছুর পেছনে ছিল এক ছায়াঘেরা আকাশ। যেন সৃষ্টিকর্তা আমায় বলেনি, “সব ঠিক হবে”—বরং বলেনি, “তোমার কষ্টটাই হবে তোমার পরিচয়।”

তবু আশ্চর্যের কথা, আমি এই আকাশকে ঘৃণা করতে পারিনি। বরং ভালোবেসেছি। কারণ আমি জানি, যেমন করে সে আলো ঢেকে রাখে, তেমনি আমিও হাসির আড়ালে কান্না ঢেকে রাখি। সে যেমন গর্জন করে—তেমনি আমিও গর্জন করতে চাই, কিন্তু পারি না। আমি তো মানুষ, আর মানুষ চুপ থাকে—বুকের সব আগুন নিয়েই।

একবার এক ভোরে, খুব তীব্র মেঘলা দিনে আমি রাস্তায় হাঁটছিলাম। চারপাশে লোকজন ছাতা হাতে ছুটছে, বৃষ্টি আসবে বলে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, যেন বৃষ্টির অপেক্ষায় না—বরং সেই মুহূর্তের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকতে চাইছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, এই আকাশ আমাকে জানে, আমার কষ্ট চেনে। এমনকি সে আমায় বলতে চাইছে—”আমি আছি, তুই একা না।” অদ্ভুত এক শান্তি এসেছিল সেদিন। যেন কারো কোলে মাথা রাখা, কোনো উত্তরহীন প্রশ্নের ছোট্ট একটা সমাধান।

এই আকাশ মাঝে মাঝে আমায় শেখায়, ভেঙে যাওয়ারও এক ধরনের সৌন্দর্য আছে। তুমুল বৃষ্টির পর যেমন আকাশ পরিষ্কার হয়, তেমনি হৃদয়ের কষ্ট সাফ করতে কষ্টের প্রয়োজন হয়। আমি ভেঙেছি, গুঁড়িয়ে গেছি, বারবার। কিন্তু প্রতিবারই উঠে দাঁড়িয়েছি। হয়তো আকাশও তাই করে—বৃষ্টির পরে আবার সেজে ওঠে নতুন করে, রংধনু আঁকে, সূর্যকে ডাক দেয়।

তবে আমার মনে হয়, মেঘলা আকাশই আমার আসল রূপ। অন্যরা হয়তো একদিন রোদ চাইবে, আলো চাইবে, পরিষ্কার আকাশ চাইবে। কিন্তু আমি চাই একটানা এক মেঘলা বিকেল—যেখানে কোনো শব্দ নেই, মানুষ নেই, কেবল আমি আর আমার নিরবতা। এই নিরবতাই তো আমার আত্মা, আমার শেকড়, আমার সত্য।

আমার জীবন কখনো সহজ ছিল না। ছোট ছোট ভালোবাসা পেয়েছি, বড় বড় ভুল করেছি, গভীর গভীর শূন্যতায় ডুবে গেছি। সেই শূন্যতা অনেকটা মেঘের মতো—দেখতে ভারি, কিন্তু ধরতে গেলে ফাঁকা। মানুষ যেমন আমার মনের ভেতরটা বুঝতে পারেনি, তেমনি তারা মেঘের ওজনও বোঝে না। কেবল দেখে, “আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি আসবে”, কিন্তু বোঝে না, সেই মেঘে কতটা না বলা কথা জমে আছে।

আমার ভিতরে যে কষ্ট, তা আমি কাউকে দেখাই না। কারণ জানি, সবাই শুধু নিজের গল্প বোঝে। কেউ আমার আকাশের দিকে তাকায় না, কেউ আমার মেঘের ওজন মাপতে চায় না। তাই আমি চুপচাপ হাঁটি, মাথার উপর এক বিস্তীর্ণ মেঘলা আকাশ নিয়ে। সে আকাশই আমার সঙ্গী, আমার প্রতিচ্ছবি।

জীবনে কিছু কিছু মানুষ এসেছে, যারা বলেছে, “তুই খুব গভীর”। আমি হেসেছি। তারা জানে না, এই গভীরতা কোনো গৌরব নয়, একটা অভিশাপ। গভীরতা মানে একা হয়ে যাওয়া। গভীরতা মানে, কিছুই আর হালকা করে বলা যায় না, সব কিছুই বোঝানোর জন্য সময় লাগে, শব্দ লাগে, হৃদয় লাগে। তাই হয়তো আকাশও কিছু বলে না—সে শুধু থাকে, তার নিজের ছায়া নিয়ে।

আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় সময়গুলো ছিল তখনই, যখন বৃষ্টি নামছিল, কেউ ছিল না আশেপাশে, আর আমি একা দাঁড়িয়ে ছিলাম জানালার ধারে। সেই সময়গুলোতে মনে হতো, আমি নিজের কাছে ফিরে এসেছি। কেউ নেই আমাকে বদলাতে, কেউ নেই আমায় বোঝাতে—আমি কেবল আমি, একা, নিঃশব্দ, মেঘলা।

জানি না, এই আকাশ আর কতবার এমন করে ফিরে আসবে। জানি না, আমি আর কতবার নিজের ছায়া খুঁজে পাব মেঘের ভেতর। তবে এটুকু জানি—আকাশ যেমন তার রঙ বদলায়, আমিও একদিন বদলে যাব। হয়তো পুরোপুরি ভেঙে গিয়ে আবার নতুন করে গড়ে উঠব। হয়তো একদিন সূর্য উঠবে, কিন্তু আমি তবু তাকিয়ে থাকব মেঘের দিকে—কারণ সেখানে লুকানো আমার হৃদয়, আমার যন্ত্রণা, আমার আমি।

শেষে শুধু এটুকু বলি- যখনই কেউ বলবে, “আজ আকাশটা অনেক বিষণ্ন”—তখন আমি মনে মনে বলব, “না, আজ আকাশটা আমার মতো হয়েছে।”

ফরিদপুরে বাসচাপায় গৃহবধূ নিহত, বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ১১:০০ এএম
ফরিদপুরে বাসচাপায় গৃহবধূ নিহত, বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুর

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বাসচাপায় রনি বেগম (৫৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন।

রোববার (২৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর-মুকসুদপুর আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার কোদালিয়া শহীদ নগর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুর থেকে মুকসুদপুরগামী জেইন ট্রাভেলস নামে একটি যাত্রীবাহী বাস কোদালিয়া এলাকায় পৌঁছালে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আবু শেখের স্ত্রী রনি বেগমকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।


খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিকে ধাওয়া করে ঈশ্বরদী বটতলা এলাকায় আটকায় এবং ভাঙচুর করে। এ সময় চালক বাসটি ফেলে পালিয়ে যান।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওসি।