খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১ আশ্বিন, ১৪৩২

আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে

ইলিয়াস সরকার, বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:২৫ এএম
আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে

 বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সাড়ে ৮১ বছরের পুরোনো দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আন্দোলন দমনের নামে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে দলটির বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ১৪শ’র বেশি মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

ফলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। একইসঙ্গে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে দলটির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা দেশ-বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে পালাতে না পেরে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী।

এ অবস্থায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীসহ বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। তাদের অভিযোগ, গণহত্যার পর কোনো দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। বিশেষ করে সম্প্রতি ভারত থেকে অনলাইন মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের পর সে দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অফিসিয়ালি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনগণই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে চিফ প্রসিকিউটর বলছেন, কোনো দল নিষিদ্ধ হবে কি না বা কোনো দলের বিচার হবে কি না সেটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

অন্যদিকে আইনজীবীরা বলছেন, বিচার বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পাকিস্তান আমলে অধিকার আদায়ের সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরও বিভিন্ন গণআন্দোলনে শামিল ছিলো দলটি। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে দেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে আওয়ামী লীগ নতুন করে নিবন্ধন পায়।

চব্বিশের আন্দোলন ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন
১৯৭৫ সালের পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতার মসনদে বসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরবর্তী তিন নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়ম করে দলটির নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে, ২০১৮ সালে রাতের ভোটে এবং ২০২৪ সালে বিরোধী জোট বিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। শুধু নির্বাচন নিয়েই নয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধংস, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, গুম, খুন, বৈষম্যসহ নানান অভিযোগ ওঠে দলটির বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে কোটা নিয়ে একটি রায়কে কেন্দ্র গত বছরের মাঝামাঝিতে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে। ওই আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর দায় মাথায় নিয়ে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ঘটনার অনুসন্ধান করা হয়। সেই অনুসন্ধানে আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা উঠে আসে। তার আগে ২৩ অক্টোবর তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এর ক্ষমতাবলে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে গেজেট জারি করে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আমলা, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

এ অবস্থায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলো।

বৈষম্যবিরোধীদের দাবি
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউবে ‘ছাত্রসমাজের উদ্দেশে’ সরাসরি বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। তার ওই বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি প্রায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নিষিদ্ধে দাবি তোলা হয় আওয়ামী লীগকে । এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিনিয়ত পোস্ট করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভাংচুরের পর গাজীপুরে হামলায় আহত কাশেমের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’।

একইদিন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আরও দুইটি পোস্ট করেন তিনি। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে কফিন মিছিল করা হয়।

সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ শীর্ষ নেতা  এক  জরুরী পোস্টে ১৪০০জনকে হত্যা ও হাজার হাজার মানুষকে নির‌্যাতনের  অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেন।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি নির্বাচন কমিশন। তারা বিষয়টি সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কি বলছে?
১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে থাকতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে বলার সময় এখনো আসেনি। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা বলতে আরও সময় লাগবে। এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। সময়ই বলে দেবে, সময়ই আমাদের গাইড করবে। সময়ই বলবে, আমরা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ’

বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সময়ের ওপর ছেড়ে দিলেও বিএনপি সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছে জনগণের ওপর।

জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে: মির্জা ফখরুল
১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা তো আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, জনগণ উইল ডিসাইড। আমরা পক্ষ-বিপক্ষ থাকা ইমমেটেরিয়াল… পিপলস উইল ডিসাইড। ‘

নিষিদ্ধের আগে বিশ্লেষণ করতে হবে: আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, দল নিষিদ্ধে সরকারের একটা ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। যেদিন নিষিদ্ধ ওদিন বলেছিলাম যে অভিযোগে নিষিদ্ধ করা যায় সেটা প্রমাণ করা খুব কঠিন। দল নিষিদ্ধ করতে হলে, রাষ্ট্র-সার্বভৌমত্ব বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেটা প্রমাণ করতে হবে। এটা জামাতে ইসলামীকে করলো। কিনতু করার কয়েকদিনের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেলো এবং সরকারের পতন হয়ে গেলো। এটা হলো একটা প্রেক্ষাপট।

‘এখন একটা আলোচনা হলো যারা অভ্যুথান করে ক্ষমতায় এসছে তাদের কিছু কিছু বলতে চাচ্ছেন এটা (আ’লীগ) নিষিদ্ধ করা হোক। তারা আর রাজনীতি করতে পারবে না। আমি মনে করি এগুলো পলিটিক্যাল বক্তব্য। সংবিধানে বলা আছে , রাজনীতি করা মৌলিক অধিকার। কোনো সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হওয়া যাবে না। সংবিধান হলো প্রধান আইন। সংবিধান পরিপন্থি কিছু করতে পারবেন না। নিষিদ্ধ করতে হলে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। সেটির কতটুকু বাস্তবতা আছে তা বিশ্লেষণ করতে হবে। ’

অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, পাকিস্তান আমলে দেখেছি দল করতে না পারলে তখন তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। স্বাধীনতার পরে সর্বহারা পার্টি দেখেছি, নিষিদ্ধ ছিলো।

সব কিছু দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপরাধ করবেন বিচার হবে। সেটা ব্যক্তি হতে পারে। নারী হতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু দল তো অন্য জিনিস।

রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপার: চিফ প্রসিকিউটর
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম রাজনৈতিক দল নিয়ে বলেন,  রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না  এটা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে দলগত ভাবে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে আছে। সে ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা বা অভিযোগ নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। সেটা ভবিষ্যতে করা হবে কিনা আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে অভিযোগ তথ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান আছে। প্রয়োজন হলে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। বাট এটার পেছনে রাষ্ট্রের একটা সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে।

দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এক ধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া জরুরি: আসিফ মাহমুদ

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনের অধিবেশন শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সারা বিশ্বে ফ্যাসিস্টদের যে নজির, আওয়ামী লীগেরও তেমন হওয়া উচিত। আমরা ইউরোপের দেশগুলোকে গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে ধরি। জার্মানি ও ইতালিতে ফ্যাসিস্টদের কী হয়েছিল, আমাদের সামনে সেই নজির রয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা ডকুমেন্টেড হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এক ধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কোন প্রক্রিয়ায় কী শাস্তি হতে পারে সে বিষয়েও সবার মতামত নেওয়া সরকার প্রয়োজন মনে করেন, আশা করি তারপর একটা সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারবে।

যে আইনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ
সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ১৮। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোন ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে বা তফসিল হতে বাদ দিতে পারবে অথবা অন্য কোনভাবে তফসিল সংশোধন করতে পারিবে।

আওয়ামী লীগের জন্ম ও ইতিহাস
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে (খায়ের মিয়া) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নতুন নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

তার আগে ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৬৬ সালে সভাপতি হন শেখ মুজিব। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। পরের বছর ১৫ আগস্ট এক সেনা অভ্যুত্থানে দুই কন্যা ছাড়া পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তিনি নিহত হন।

বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় শেখ হাসিনাকে। সেই থেকে তিনি একই পদে আছেন।

প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৩২ পিএম
প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচি আগামী শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দেন তারা।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয় এজন্য আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা। সে অনুযায়ী আগামী বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কোন অবরোধ থাকবে না বলে জানায় আন্দোলনকারী সমন্বয়ক কর্তৃপক্ষ।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কাউকে হয়রানি করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময়, আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) তাদের ৫ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে, পুনরায় লাগাতার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

 

ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:২৮ পিএম
ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ-রেলপথ বন্ধের পর সহিংস ঘটনাও ঘটে। এরপর ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন বরাবর এ চিঠি দেন ডিসি।

চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর-০২ এবং ফরিদপুর-০৪ এর সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

ওই তালিকায় ফরিদপুর- ৪ এর অন্তর্গত ২টি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ ওই আসনবিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হবার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

 

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-০৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-০২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণের বিষয় দুইটি সংসদীয় আসনের জনগণ মেনে নিতে পারেনি। ওই দুইটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ণিতাবস্থায়, জাতীয় সংসদীয় আসন ২১২ ফরিদপুর- ২ (নগরকান্দা ও সালথা) এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এর মধ্যে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।

এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ-আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থানা, হাইওয়ে থানা ও উপজেলা পরিষদে আগুন-হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হল রুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, ১০টি ফ্যান ও ৩৫ টির বেশি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। এসময় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা অফিসার্স ক্লাবও ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে, ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। থানা চত্তরে থাকা অন্তত চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। থানার ব্যানার ও ভবনের কাচ সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করা হয়।

অপরদিকে, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় আন্দোলনকারীরা ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আন্দোলনকারীরা চারটি পিক-আপ, একটি রেকার, একটি জলকামান গাড়ী, আটটি মোটরসাইকেল, একটি এম্বুলেন্স ও দুইটি আলামতের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

ভাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, থানা, হাইওয়ে ও উপজেলায় ভাঙচুরের সময় লোকজন হঠাৎ করে রামদা-লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। ওইসব অস্ত্র দিয়ে তাণ্ডব চালায় এবং পেট্রল দিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এসব করতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, হামলা-ভাংচুরের সময় কয়েকজন কনস্টেবলকে কৌশলে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর আমরা কয়েকজন থানার রান্না ঘরের পাশে একটি বাথরুমে আশ্রয় নেই। হামলাকারীরা গাড়ী, মোটরসাইকেলসহ অফিসের ল্যাপটপ, টিভি থেকে শুরু করে এমন কোথাও নেই যে ভাংচুর করতে বাকি রেখেছে। তারপরও বিস্তারিত দেখে পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য জানানো যাবে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় সংযুক্ত করার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় জনতা। তারা আসনগুলোর পূর্বের অবস্থায় বহাল চান। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার থেকে টানা তিন দিন বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর ভাঙ্গা উপজেলা সদরে এসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।