পেট ভালো থাকলে মনও ভালো – জানুন কেন এবং কীভাবে

আমরা প্রায়ই শুনি ‘তোমার মনটা ভালো নেই কেন?’ কিন্তু কেউ কি ভাবে, এর পেছনে কারণ হতে পারে আমাদের পেটের সমস্যা? গবেষণা বলছে, আমাদের পাকস্থলী বা অন্ত্র শুধু হজমেই কাজ করে না, এটা আমাদের মেজাজ, মন, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। তাই পেটের যত্ন নেওয়া মানেই হলো নিজের সার্বিক সুস্থতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। আমাদের পাকস্থলী বা অন্ত্র হলো শরীরের এমন এক জটিল অংশ, যেখানে কোটি কোটি জীবাণু বাস করে। এসব জীবাণু একসঙ্গে কাজ করে খাবার হজমে সাহায্য করে, শরীরের পুষ্টি শোষণ করে এবং এমনকি মস্তিষ্কের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের অন্ত্রে এত জীবাণু থাকে যে সব এক জায়গায় জমালে ওজন হবে প্রায় ১.৮ কেজি! আর এদের সবকটা কাজ একেবারে জানা না গেলেও, বৈজ্ঞানিকরা বলছেন— যত বেশি বৈচিত্র্যময় এই জীবাণুগুলো, ততই ভালো আমাদের স্বাস্থ্য।
পাকস্থলী কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
পাকস্থলীর স্বাস্থ্য শুধু হজমের জন্যই নয়, এটা আমাদের পুরো শরীরের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। পেটের সঙ্গে মস্তিষ্কের রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ, যাকে বলে Gut-Brain Axis।
পেট ভালো থাকলে মস্তিষ্কে সঠিকভাবে সেরোটোনিন নামে এক ধরনের ‘ভালো লাগা’ রাসায়নিক তৈরি হয়। আবার পাকস্থলীকে অনেক সময় ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ বলেও অভিহিত করা হয়।
পাকস্থলীতে থাকা ইমিউন কোষ শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে। ধারণা করা হয়, শরীরের ৭০% রোগপ্রতিরোধ কোষ এখানে অবস্থান করে।
পেট সুস্থ রাখবেন কীভাবে?
বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ পরামর্শ দিয়েছেন যেগুলো মেনে চললে আপনার পেট ও মন দুটোই থাকবে সুস্থ।
বেশি রঙিন ও বৈচিত্র্যময় উদ্ভিজ্জ খাবার খান
– প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩০ রকমের উদ্ভিদজাত খাবার (ফল, সবজি, বাদাম, মশলা, বীজ) খাওয়ার চেষ্টা করুন।
– সকালের নাশতায় শুধু ওটস না খেয়ে সঙ্গে কুইনোয়া, ফল ও বীজ যোগ করুন।
– রান্নায় মাঝে মাঝে মাংসের পরিবর্তে ডাল বা মটরশুঁটি ব্যবহার করুন।
আঁশযুক্ত খাবার খান
– হোল গ্রেইন (সাদা রুটির বদলে বাদামি রুটি বা চাল)
– মটরশুঁটি, মসুর, ছোলা
– কলা, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি, ওটস, আঙুর ইত্যাদি
খাওয়ার মাঝে বিরতি দিন
অন্তত ১২ ঘণ্টা খাবার না খেয়ে থাকলে (যেমন রাত ৮টায় রাতের খাবার খেয়ে পরদিন সকাল ৮টায় নাশতা) পেটের উপকার হয়।
যেসব জিনিস এড়িয়ে চলা ভালো
– অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি)
– অ্যালকোহল ও ধূমপান
– রাস্তার অস্বাস্থ্যকর খাবার (বিশেষ করে যেগুলো ভালোভাবে ধোয়া হয়নি)
– অতিরিক্ত মানসিক চাপ – কারণ এটি পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে
প্রোবায়োটিক কি কাজে দেয়?
প্রোবায়োটিক নামক কিছু খাবার বা সাপ্লিমেন্ট বাজারে পাওয়া যায়, যেগুলো পেটের ভালো জীবাণু বাড়াতে সাহায্য করে বলা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সবসময় কাজে দেয় না। এটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের সমস্যা বা পরিস্থিতিতে আছেন।
আর এখন যেসব কোম্পানি ‘পাকস্থলীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করে দেওয়ার কথা বলে, সেগুলোও সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এতে অন্তত আপনার অন্ত্রে জীবাণুর বৈচিত্র্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
আমাদের শরীর আর মনের মধ্যে যোগসূত্রটা যতটা ভাবি, তার চেয়েও অনেক গভীর। তাই শুধু মুড ভালো রাখতে চাইলে চকোলেট নয়, খেয়াল রাখতে হবে পাকস্থলীর দিকেও। পেট ভালো থাকলে মনও ভালো থাকবে। তাই খাওয়াদাওয়ায় সচেতন হোন, নিজের শরীরকে সময় দিন— এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ ও মানসিকভাবে শান্ত।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন
Array