ফরিদপুরে ফুটপাত দখলে পথচারীদের দুর্ভোগ, ব্যাহত স্বাভাবিক চলাচল
ফরিদপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত দখল করে দোকানপাট ও ভাসমান ব্যবসা বসানোর কারণে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্ধারিত ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে।
শহরের জনতা ব্যাংক মোড়, হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের সামনের সড়ক, থানা মোড়, গোয়ালচামট সড়কসংলগ্ন এলাকায় দেখা গেছে, ফুটপাতের অধিকাংশ অংশ দখল করে অস্থায়ী দোকান, চা-স্টল ও ফলের দোকান বসানো হয়েছে। কোথাও কোথাও স্থায়ী দোকান মালিকরাও দোকানের সামনের ফুটপাত পুরোপুরি দখল করে রেখেছেন। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, নারী ও বয়স্ক মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রহিমা বেগম নামে এক পথচারী ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, “ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কোনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তায় নামতে হয়। এতে সব সময় দুর্ঘটনার ভয় থাকে।” আরেকজন জানান, সন্ধ্যার পর অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
জনতা ব্যাংকের মোড়ের সালাম নামের ভাসমান এক শীতের পোশাক বিক্রেতা ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, ‘কারো অনুমতি না নিয়েই এখানে বসেছি। এখানে বসার জন্য কাউকে কোনো ভাড়া দিতে হয়না। পৌরসভা কিংবা জেলা প্রশাসনের অনুমতিরও দরকার হয়না’
তবে রাজবাড়ির খানখানাপুর এলাকা থেকে আসা মো. শাহিন নামের এক দোকানদার ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, ‘স্থায়ী দোকানের সামনের মালিকদের প্রতিদিন চাঁদার নামে ৫’শ টাকা বকশিস দিতে হয়। এছাড়া দোকান না খুললেও মাসে ১৫ হাজার টাকা গুনতে হয়।’
এছাড়া আরেক দোকানদার অনিক মিয়া বলেন, ‘ভাড়া কিংবা অনুমতির বিষয়টি দোকান মালিক জানে। আমি তার কর্মচারী।’
পৌরসভার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও পরে আবার ফুটপাত দখল হয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি আবরাব নাদিম ইতু ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘প্রশাসন দুই দিন পর পর বলে থাকেন তারা ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু তাদের বলার মধ্যেই কথাগুলো সীমাবদ্ধ থাকে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষদের।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. সোহরাব হোসেন ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘ফরিদপুর পৌরসভা থেকে অনুমতি নিতে একটা প্রসিডিউর মেইনটেইন করতে হয়। সেটা তারা করেনি ও অনুমতি নেইনি। আমরা অবৈধ ভাসমান দোকানগুলোর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছি। শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। শহরের যানজট নিরসনে শিগগিরই নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করা হবে এবং অবৈধভাবে ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে কিছু ব্যবসায়ী বারবার নির্দেশনা অমান্য করছেন।”
সচেতন মহলের মতে, ফুটপাত পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারা মনে করেন, নিয়মিত মনিটরিং ও স্থায়ী সমাধান ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না।

আপনার মতামত লিখুন
Array