খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

ভাঙ্গায় পৃথক তিনটি স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ৫০

আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা (ফরিদপুর):
প্রকাশিত: রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:২৫ পিএম
ভাঙ্গায় পৃথক তিনটি স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ৫০
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার, বাসস্ট্যান্ড দখল ও তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে পৃথক তিনটি স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় নারী পুরুষ সহ কমপক্ষে ৫০ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় ২০টি বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও ৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে গ্রামবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করেছে। এ ঘটনায় পুকুরিয়া এলাকা থেকে ৮জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাজার ও বাসস্ট্যান্ড দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১০টি বাড়ি ভাংচুর, লুঠপাট  ও ৫টি বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ পক্ষের সুলতান মাতুব্বর ও মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর পক্ষের ইয়াকুব মাতুব্বর গ্রুপের মধ্যে পুখুরিয়া বাজার ও বাসস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিগত ১৭ বছর ধরে প্রতিমাসে বাজার ও বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা ও খাজনা আদায় করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ ভাগবাটোয়ারা করে নেয় । রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে বিএনপির লোকজন তাদের দুই পক্ষের সাথে মিলিত হয়।
এঘটনা নিয়ে শনিবার রাতে ইয়াকুব মাতুব্বর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে নিয়ে অপর পক্ষে সুলতান মাতুব্বরের দলের জামাল মাতুব্বরের বাড়ি ভাংচুর চালায়। এঘটনার জের ধরে ঘোষণা দিয়ে রবিবার সকালে  দুই পক্ষের শত শত গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র  নিয়ে তিন ঘন্টাব্যাপী  চলা সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় ভাঙ্গা-সদরপুর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১০টি বাড়ি ভাংচুর, লুঠপাট  ও ৫টি বাড়ি  অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ফরিদপুর জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্য এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এসময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা একজন মহিলা সহ ৮ জনকে আটক করে।
অপর দিকে, রবিবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলা আলগী ইউনিয়নের সুয়াদি গ্রামে আমপাড়া নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সুযাদী গ্রামের আলী মিয়া লোকজন ও দেলোয়ার মিয়ার গ্রুপের লোকজন বেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় এলাকায় রণক্ষেত্র পরিনত হয়।  সংঘর্ষে চলাকালে দুই পক্ষের প্রায় ৩০ জন গ্রামবাসী আহত হয়। আহতদের ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে আলীমিয়ার দলের শাজাহান মিয়ার আম গাছে দেলোয়ার মিয়া দলের সোহাগের ছেলে তানভীর কয়েকটা আম পাড়ে। আমপাড়া নিয়ে গাছের মালিক শাহজাহান এসে তানভীরকে চড়থাপ্পড় মারে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে দেলোয়ারের লোকজন বেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলী মিয়ার লোকজন উপর হামলা চালায়। পরে দুই পক্ষের লোকজন ২ ঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষে ১০ জন গ্রামবাসী আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে, শনিবার রাতে ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নারী সহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০/১৫ জন গ্রামবাসী আহত হয় ।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, আজিমনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর মাতুব্বর ও একই গ্রামের ফারুক ফকিরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিকেলে  বিরোধপূর্ণ জমির মাপঝোপ করার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ বৈঠক করা হয়। সালিশের  উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।  উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র অস্ত্র, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল  নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাতে আহতরা ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় আবারো দুই পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে।  সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০/১৫ জন লোক আহত হয়। আহতদেরকে ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে । দুই পক্ষের ২টি মামলা দায়ের করেছে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, গত দুদিন ধরে পুখুরিয়া, শুয়াদী ও আজিমনগর গ্রামের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পুকুরিয়া এলাকা থেকে ৮জনকে আটক করেছি। এঘটনায় ভাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে। দাঙ্গা হাঙ্গামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল নারীর

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:৫৬ পিএম
ফরিদপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল নারীর

ফরিদপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস নামক ট্রেনে কাটা পড়ে দীপ্তি রানী সাহা (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে ফরিদপুর শহরের ১ নং হাবেলী গোপালপুরের ৩ নং রেলগেটে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত দীপ্তি রানী সাহা ফরিদপুর সদরের চন্ডিপুর এলাকার মৃত বিজয় কুমার রায়ের স্ত্রী। ওই নারী শহরের ১নং গোয়ালচামট ভাড়া বাসায় থাকতেন। তবে, কি কারণে আত্মহত্যা করেছেন তা জানা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, হাবেলী গোপালপুর এলাকার সামনে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেস নামক ট্রেনের নিচে দীপ্তি রানী সাহা ‌ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ‌করেন। নিহত নারী আগে থেকেই ট্রেনে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য রেললাইনের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিলেন। রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফরিদপুর শহরস্থ স্টেশন ত্যাগ করে হাবেলী গোপালপুরে পৌঁছালে দীপ্তি রানী নামক ওই মহিলা সেই ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এ সময় তার শরীর মাঝামাঝি স্থান থেকে আলাদা হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও কোতয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রেলওয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

আজ ১৭ ডিসেম্বর : ফরিদপুরে শত্রুমুক্ত হয় এইদিনে

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:১৬ পিএম
আজ ১৭ ডিসেম্বর : ফরিদপুরে শত্রুমুক্ত হয় এইদিনে

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও, সেই দিন বিজয়ের আনন্দ পুরোপুরি সাধ পায়নি ফরিদপুরবাসী। বিজয়ের সূর্য ফরিদপুরের আকাশে উদিত হয় একদিন পরেে ১৭ ডিসেম্বর। এইদিন ফরিদপুর অঞ্চলের মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ও ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীসহ শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে ১০ মার্চ (১৯৭১) পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা অম্বিকা ময়দানে উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা ভিপি শাহ মো. আবু জাফর সার্কিট হাউজে বিজয়ী স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ফরিদপুর জেলা শত্রুমুক্ত হয়।

২৫ মার্চ ১৯৭১-এর কালরাতের পর দেশের অন্যান্য জেলার মতো ফরিদপুরেও শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা শুরু করে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও লুটপাট। ফরিদপুর সদর ও বোয়ালমারী উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠে একাধিক নির্যাতনকেন্দ্র। বহু নিরীহ মানুষ শহীদ হন, অসংখ্য পরিবার সর্বস্ব হারায়। তবুও দমে যাননি ফরিদপুরের মানুষ। কৃষক, ছাত্র, শ্রমিক, সবাই যার যার অবস্থান থেকে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।

মাসের রক্তঝরা লড়াইয়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা শত্রুমুক্ত হয়ে গেলেও ফরিদপুরে তখনও যুদ্ধের বিভীষিকা পুরোপুরি থামেনি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সরাসরি উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের সহযোগী বিহারি ও রাজাকার বাহিনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে থাকে। শহরের বিভিন্ন স্থানে তারা অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়, যাতে করে মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা যায়।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণের খবর ফরিদপুরে পৌঁছালেও শত্রুপক্ষ তখনো অস্ত্র ফেলে দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক অবস্থান নেন। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিবাহিনী ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের রিজিওনাল হেডকোয়ার্টারের প্রধান ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর জাহানজের আরবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের জন্য বার্তা পাঠায়।

এই বার্তার মধ্য দিয়ে কার্যত ফরিদপুরে যুদ্ধের ইতি ঘটতে শুরু করে। কিছু সময়ের মধ্যেই শত্রুপক্ষের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ফরিদপুর শহরের আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

১৭ ডিসেম্বরের সেই সকাল ছিল ফরিদপুরবাসীর জন্য আবেগে ভরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জেলা। যারা স্বজন হারিয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের চোখের জল আর গর্ব একাকার হয়ে যায়।

ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি জেলার মুক্তির গল্প নয়, এটি সাহস, ত্যাগ আর অবিচল প্রতিরোধের এক অনন্য দলিল। এখানে যুদ্ধ হয়েছে সম্মুখসমরে, আবার হয়েছে নীরব প্রতিরোধে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা নাম না জানা থেকেই গেছেন, কিন্তু তাদের অবদান ইতিহাসের পাতায় অমলিন।

রনাঙ্গণে ফরিদপুরের মধ্যে ১৯৭১ সালে ২১শে এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনীর ফরিদপুর জেলা শহরের প্রবেশমুখে শ্রী অঙ্গনে কীর্তনরত ৮ সাধুকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকযুদ্ধ। এরপর ২রা মে প্রথম পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালায় ঈশান গোপালপুর জমিদার বাড়িতে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৮ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়।

এছাড়া সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামে ১১ জন নিরীহ মানুষকে বাড়ি থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহগুলোকে রাস্তার পাশে এনে মাটি চাপা দেয় এলাকাবাসী।

একাত্তরের ১৬ মে ও ১৫ আগস্ট বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম জ্বালিয়ে ৩৩ জন মানুষকে হত্যা এবং নগরকান্দা উপজেলার একটি গ্রামে ১৮ নারীসহ ৩৭ জন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এমন অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় ফরিদপুর জেলা।

রনাঙ্গনের স্মরণীয় ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে যুদ্ধকালীন ফিল্ড কমান্ডার (বি.এল.এফ) শাহ্ মো. আবু জাফর প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর উত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে সারাদেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়। তখন আমি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১০ মার্চ অম্বিকা ময়দানে সকল ছাত্রদের জমায়েত করে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। রনাঙ্গনের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর আমরা ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে তৎকালীন ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর নেতৃত্বে এফ.এফ ও বি.এল.এফ একসাথে আক্রমণ করি। তুমুল আক্রমণ করার সময় ঢাকা ও যশোর থেকে বিমান এসে আমাদের উপর সেলিং করতেছিল। ওই সময় আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা মারা যায়।

তিনি বলেন, ওইদিন আক্রমণের মুখে আমরা তাদের পরাহস্ত করতে পারলাম না। ১৫ ডিসেম্বর আমরা মর্টার দিয়ে আক্রমণ দিয়ে ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্পে আক্রমণ করলাম, অনেক গুলাগুলি হলো। তারপরও পাক আর্মিরা আত্মসর্মাপন করল না। তারপর ১৬ ডিসেম্বর জানতে পারলাম ঢাকায় হানাদার বাহিনী আত্মসমার্পণ করেছে। ওইদিন বিকেলে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর নিকট ভাটিয়াপাড়ায় আর্মিরা আত্মসমার্পণ করেন। ওই সময় বোয়ালমারীতে শত শত মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ উল্লাস করার কথা জানতে পারি। পরেরদিন ১৭ ডিসেম্বর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ফরিদপুর সার্কিট হাউজে বেলা ১২টার মধ্যে পৌঁছায়, সেখানে ডিসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন তারা।

তিনি আরো বলেন, “দুপুরে খাওয়ার আগে বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউজে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীকে পতাকা উত্তোলন করতে বললাম। এ সময় তিনি বললেন (জামাল চৌধুরী) তুমিই প্রথম ছাত্রনেতা হিসেবে গত ১০ মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছিলে, তাই আজকেও ছাত্র হিসেবে তুমিই পতাকা উত্তোলন করো। তারপর আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। ফরিদপুর শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। ওইদিন পাকিস্তান আর্মিরা বিকেল ৪টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ফরিদপুর অঞ্চলের মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ও ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর হাতে পাকিস্তান আর্মিরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমার্পণ করেন।

সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (২৬) নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় জড়িত অভিযোগে জাফর মোল্যা (৪২) নামের আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের সদস্যরা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জাফর মোল্যাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার সাভারের পশ্চিম ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাফর মোল্যা ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন তেঁতুলিয়া এলাকার মৃত কাদের মোল্যার ছেলে।

এদিকে, গত ১৩ ডিসেম্বর এ হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ফিরোজ মাতুব্বর নামের অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১০।

র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জাফর মোল্যাকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাছ ব্যবসায়ী উৎপল হত্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে তার নাম এসেছিল। জাফরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।’

প্রসঙ্গ, গত ৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের কালীতলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী উৎপল সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হত্যার একদিন পর উৎপলের বাবা অজয় কুমার সরকার বাদী হয়ে সালথা থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।