খুঁজুন
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬ পৌষ, ১৪৩২

প্রকৃতির আলিঙ্গনে ভেজা সকালের গল্প

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:০৭ এএম
প্রকৃতির আলিঙ্গনে ভেজা সকালের গল্প

ভোরের আলো ঠিকমতো ফোটার আগেই প্রকৃতি যেন নিঃশব্দে নিজের কাজ সেরে নেয়। রাতের দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস শেষে গাছের পাতা, ঘাসের ডগা, ধানের শীষ আর মাটির বুকে জমে ওঠে ছোট ছোট স্বচ্ছ বিন্দু—শিশির। সকালের এই শিশির ভেজা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, গ্রামবাংলার জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এক অনুচ্চারিত গল্প।

ভোরের প্রথম আলোয় মাঠে নামা কৃষকের পায়ে তখনও লেগে থাকে ঠান্ডা শিশির। পাটক্ষেতে কিংবা ধানক্ষেতে হাঁটলে পায়ের নিচে নরম ঘাসে জমে থাকা পানির স্পর্শ শরীর শিরশির করে তোলে। কৃষকেরা বলেন, এই শিশিরই ফসলের প্রাণ। রাতের আর্দ্রতা গাছকে সতেজ রাখে, পাতায় জমে থাকা শিশির সূর্যের আলোয় ধীরে ধীরে শুকিয়ে গিয়ে গাছের বৃদ্ধি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

শিশির ভেজা সকাল মানেই গ্রামবাংলায় এক ভিন্ন ব্যস্ততা। কেউ গরু ছাগল মাঠে ছাড়ছেন, কেউ সবজি তুলছেন, কেউবা খোলা উঠানে দাঁড়িয়ে রোদ ওঠার অপেক্ষায় ভিজে কাপড় মেলে দিচ্ছেন। শিশির ভেজা কাপড়ের গন্ধে থাকে এক ধরনের স্বচ্ছতা—যেন মাটির সঙ্গে মিশে থাকা প্রকৃতির নিজস্ব সুগন্ধ।

শিশুদের কাছে শিশির ভেজা সকাল এক ধরনের আনন্দ। স্কুলে যাওয়ার পথে খালি পায়ে শিশিরে ভেজা ঘাসে হাঁটা, পাতার ওপর জমে থাকা পানির ফোঁটা হাতে নিয়ে খেলা—এসব মুহূর্ত আজও গ্রামবাংলার শৈশবকে আলাদা করে চিহ্নিত করে। অনেকেই বলেন, শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটলে শরীর ভালো থাকে, মন শান্ত হয়।

শহরের মানুষদের কাছেও শিশির ভেজা সকালের আবেদন কম নয়। ভোরবেলা ছাদে বা পার্কে হাঁটতে বের হলে ঘাসে জমে থাকা শিশির সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করে ওঠে। কোলাহলমুখর শহরের মাঝেও এই দৃশ্য কিছুক্ষণের জন্য হলেও মানুষকে থামিয়ে দেয়, মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের কথা।

প্রকৃতিবিদরা বলছেন, শিশির জলবায়ুর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিষ্কার আকাশ, ঠান্ডা রাত আর আর্দ্র পরিবেশ শিশির পড়ার জন্য অনুকূল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক এলাকায় আগের মতো শিশির দেখা যায় না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও কৃষি ব্যবস্থাও।

তবু যতদিন ভোরের আলো ফোটার আগে পাতার ডগায় ঝুলে থাকবে শিশিরের বিন্দু, ততদিন প্রকৃতি আমাদের নীরবে আশ্বাস দেবে—সব কিছুর মধ্যেই আছে নতুন দিনের সম্ভাবনা। সকালের শিশির ভেজা তাই শুধু ভেজা ঘাস নয়, এটি এক নতুন দিনের প্রথম স্পর্শ, যা মানুষকে আবারও প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে।

ফরিদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৪৯ পিএম
ফরিদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

ফরিদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় জেলার সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা। সভার শুরুতে পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা করা হয় এবং সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এ সময় সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পানি সম্পদ, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ‌মো. সোহরাব হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এস.এম আব্দুল হালিম, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাশউদা হোসেনসহ জেলার অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেলায় সারের মূল্যবৃদ্ধি এবং সার সংকট সমাধানে সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসার ‌ আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ফরিদপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন বস্তিতে মাদকের বিস্তার রোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে ‌বলে জানানো হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, “সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই জেলার টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। প্রতিটি দপ্তরকে নির্ধারিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।” তিনি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।”

ফরিদপুরে সবুজে ফিরছে বরো ধান, মাঠে মাঠে আশার বার্তা

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
ফরিদপুরে সবুজে ফিরছে বরো ধান, মাঠে মাঠে আশার বার্তা

ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলতি বরো মৌসুমে ধানের ক্ষেতে আবারও ফিরছে সবুজের ছোঁয়া। মৌসুমের শুরুতে কিছু এলাকায় পাতোর রোগের হালকা প্রভাব দেখা দিলেও সময়মতো কৃষি বিভাগের তদারকি ও কৃষকদের সচেতন ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে অধিকাংশ জমির ধান সুস্থ ও সতেজ হয়ে উঠেছে। এতে করে মাঠে মাঠে আশার বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে কৃষক সমাজে। ফলে ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।

ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, মধুখালী, বোয়ালমারী ও সালথা উপজেলার একাধিক মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কিছু জমিতে ধানের পাতায় দাগ দেখা দিলেও অধিকাংশ ক্ষেতেই তা বিস্তার লাভ করেনি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ছত্রাকনাশক প্রয়োগ ও সুষম সার ব্যবস্থাপনার ফলে গাছ আবারও সবুজ হয়ে উঠছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষক হায়দার খাঁন বলেন, “শুরুর দিকে পাতায় দাগ দেখে চিন্তায় পড়েছিলাম। কৃষি অফিসের পরামর্শে ওষুধ দেওয়ার পর ধান এখন বেশ ভালো আছে। ফলন নিয়ে এখন আশাবাদী।”

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডিএ) কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘ফরিদপুর জেলায় মোট ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে রয়েছে এবং বড় ধরনের রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব নেই। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত নজরদারি করছেন এবং কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।”

তিনি আরও জানান, ‘কোথাও রোগ বা পোকার আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ ও সুষম সার ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে, যাতে ফলন আরও বাড়ে।’

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার এবং নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণের ফলে ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রয়েছে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও কৃষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে। এবছর বরো ধানের ভালো ফলন হলে জেলার খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে, যা দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে।

সব মিলিয়ে ফরিদপুরের মাঠে মাঠে সবুজ বরো ধান যেন কৃষকের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবছর বরো মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ফলন অর্জনের ব্যাপারে আশাবাদী কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা।

ফরিদপুরে কলেজে অস্ত্র হাতে মহড়া, সেই আল-সাদকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ এএম
ফরিদপুরে কলেজে অস্ত্র হাতে মহড়া, সেই আল-সাদকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলাকালে অস্ত্র হাতে মহড়া, শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং পরীক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি আল-সাদকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাব-১০ সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আল-সাদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

এর আগে একইদিন বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা এলাকা থেকে র‌্যাব-১০ সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্প ও র‌্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া আল-সাদ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার আলফাডাঙ্গা এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

র‌্যাব প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘গত ৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বহিরাগত আল-সাদ ১৪৪ ধারা অমান্য করে জোরপূর্বক পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় সে কর্তব্যরত শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে সহযোগী সাদি খানকে সঙ্গে নিয়ে হাতে তলোয়ারসহ কলেজ ক্যাম্পাসে পুনরায় প্রবেশ করে শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে পরীক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করলে মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১০ এর সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্প গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে।’

র‌্যাব জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে খুলনা মহানগরীর সদর থানাধীন ময়লাপোতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল-সাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া আল-সাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’