ফরিদপুরের পানিবন্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৬০ পরিবার পেল খাদ্য সহায়তা

দেশের শীর্ষ কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর তীরে গড়ে উঠা ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ২৬০ পানি বন্দি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত একসপ্তাহ ধরে ওই এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়ে সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে বেশি সমস্যা পড়ে বয়স্ক মানুষ, শিশু ও গৃহপালিত পশুরা। বিষয়টি নিয়ে সোমবার (১৮ আগস্ট) বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
অতঃপর মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের স্বপ্ননগর জেলা প্রশাসক উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬০ পরিবারকে ১৫ কেজি করে মোট ৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত, উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল মোল্যা প্রমুখ।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩ একর জমির ওপর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয় টিনসেট ওয়াল বিশিষ্ট ২৬০টি ঘর। ওই সময় এলাকাটিকে ‘স্বপ্ননগর’ আবাসন নামকরণ করেন জেলা প্রশাসন। যাদের জমি নেই, ঘর নেই এমন অসহায় পরিবারগুলোর ঠাঁই মেলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তবে সরকার ঘোষিত উপহারের এই ঘরগুলো মধুমতির তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠায় গত ৮-১০ দিন ধরে মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প স্বপ্ননগর এলাকা প্লাবিত পয়ে দুর্ভোগে পড়েন সেখানে বসবাসরত ২৬০ পরিবার। বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রথম সারির দৈনিক কালের কণ্ঠসহ বেশি কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে তাৎক্ষনিক ৪ মে. টন চাল ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের ঘর মেরামতের জন্য নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসন। তবে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে স্বপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলকার পানি কমতে করলে বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে।
গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরকাতলাসুর এলাকায় ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রবেশপথে কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও তার চেয়ে বেশি। সারি সারিতে থাকা ঘরগুলির প্রতিটি গলিতেও পানি প্রায় হাঁটু সমান। বেশির ভাগ ঘরের মেঝেতে ঢুকে পড়ে নোংরা পানি। পানিতে তলিয়ে যায় রান্না করার চুলা। এছাড়া পানিতে তলিয়ে যায় টয়লেটের রিং-স্লাব। শিক্ষার্থীরা পানি বন্দি হয়ে পড়ে। সুপেয় পানির অভাব ও নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির স্পর্শে বেড়ে যায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। একই সঙ্গে দেখা দেয় সাপের উপদ্রব। সেখানে বসবাসরত দিন এনে দিনে খাওয়া বাসিন্দারা হয়ে পড়ে অসহায়। বিশেষ করে সেখানে পশু পালন, ভ্যানচালানো, কৃষি কাজ, টেইলাসের কাজসহ নানান পেশার কাজ করে বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করেন। প্লাবিত হওয়া ঘরগুলোতে বসবাসকারীদের ঘরে খাবার না থাকায় হাহাকার দেখা দেয়।
চাল পাওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জবেদা বেগম বলেন, ‘মধুমতি নদীতে সাতবার বাড়ি ভাঙছে। পরে সরকার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার জন্য একটা ঘর দিয়েছে। কিন্তু এখানে এসেও চরম বিপাকে পড়তে হয় ঘরের মধ্যে বন্যার পানি ঢুকার কারণে। তিনবেলার জায়গায় এক বেলা চলছিল রান্নাবান্না। আজকে পানি কমে যাওয়া এবং সরকারি চাল পেয়ে মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া শাহা বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘ঘরের ভিতর পানি বাবা, খাতি নতি পাইনে কি করবো?, গরু বাচুর বানতি পাইনে, কামাই না হলে কি খাব কও মনি’। এখন আমাদের খাটের উপর বসে থাকতে হচ্ছিল। আজকে চাল পেয়েছি আবার পানিও কমে যাচ্ছে। এখন আবার মোটামুটিভাবে চলতে পারবো।
সরকারি চাল পাওয়া স্বপ্ননগরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) বলেন, পানি হওয়াতে সব জায়গায় তলায় গেছিল। ক্ষেত খামারী যা করছিলাম সব পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আজকে টিএনও স্যার ১৫ কেজি চাল দিলো। হইতো কোন রকমভাবে খাওয়া দাওয়া করতে পারবো।
চাল বিতরণ শেষে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, মধুমতি নদীতে পানির বৃদ্ধির কারণে ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে হাটু সমান পানি হয়ে যায়। বিষয়টি উদ্ধত্মন কর্তৃপক্ষকে জানালে জরুরি ভিত্তিতে ত্রানের ৪ মে. টন চাল ও নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক আলফাডাঙ্গা উপজেলায়। সেখান থেকে আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের ১৫ কেজি করে চাল ২৬০ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকায় পানি কমতে শুরু করায় সেখানে বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন
Array