খুঁজুন
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১৫ কার্তিক, ১৪৩২

ফরিদপুরের বেদে সম্প্রদায়ের কষ্টেভরা বৈচিত্র্যময় জীবন, সুখ যেন তাদের অধরা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩১ এএম
ফরিদপুরের বেদে সম্প্রদায়ের কষ্টেভরা বৈচিত্র্যময় জীবন, সুখ যেন তাদের অধরা

‘বাবু সেলাম বারে বার
আমার নাম গয়া বাইদ্যা, বাবু
বাড়ি পদ্মা পার।’

পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের লেখা এই গানের মতো, অনেক চলচ্চিত্রেও বেদেদের বিচিত্র জীবনের গল্প দেখা যায়। তারা ছোট ছোট নৌকায় করে এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে ভেসে বেড়াতো। নদীর পাশে অস্থায়ী বসতি গড়ে তারা লোকজ চিকিৎসা, যেমন দাঁতের পোক বের করা বা শিঙ্গার সাহায্যে বাতের ব্যথা দূর করা, এবং সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।

এক সময়ের যাযাবর বেদে সম্প্রদায় এখন ফরিদপুর শহরতলীর মুন্সিবাজারের মতো বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। জীবিকার তাগিদে তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা বদলে গেছে এবং তারা এখন হয়রানিমূলক ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছে। এই সামাজিক অবক্ষয় রোধে সাধারণ মানুষ শিক্ষার অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে।

‘মানুষ মানুষের জন্য’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বেদে শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে, আর ফরিদপুর সদর উপজেলার ইউএনও জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব পেতে তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে সময়ের সাথে তাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন বেদে পরিবারগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলছে। তেমনই একটি উদাহরণ হলো ফরিদপুরের মুন্সিবাজার এলাকা, যেখানে একটি বেদে পল্লী গড়ে উঠেছে। মাত্র চার বছর আগেও এখানে হাতে গোনা কয়েকটি ঝুপড়ি থাকলেও, বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫৫টিতে দাঁড়িয়েছে।

এই স্থায়ী নিবাস গড়ার কারণে তাদের চিরাচরিত পেশা এখন আর তাদের প্রধান জীবিকা নয়। পুরুষ সদস্যরা এখন প্রায়শই বেকার থাকে, আর নারীরা শিশুদের নিয়ে শহরের পথে পথে এক ভিন্ন ধরনের ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছে। তারা সরাসরি হাত পেতে ভিক্ষা না করে, পথচারীদের হয়রানি করে টাকা আদায় করে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এভাবে, একসময়ের ঐতিহ্যবাহী পেশার ধারক এই সম্প্রদায়টি এখন দারিদ্র্য ও সামাজিক প্রান্তিকতার এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে।

সাধারণ পথচারীদের মতে, বেদেদের বর্তমান হয়রানিমূলক ভিক্ষাবৃত্তির প্রধান কারণ হলো শিক্ষার অভাব। তারা মনে করেন, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের অবক্ষয় রোধে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। পথচারীরা বিশ্বাস করেন যে, নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে পারলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।

ফরিদপুরের কুমার নদের তীরে মুন্সিবাজারে বসবাসকারী বেদে পল্লীর প্রায় ৩০০ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এখানকার শিশুরা শৈশব থেকেই মাদকাসক্ত এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকাংশ শিশুই অসুস্থ, এমনকি পোলিও টিকাও পায়নি।

শিশুদের আচরণও কিছুটা অস্বাভাবিক, অনেকের মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ দেখা যায়। এমন করুণ পরিস্থিতিতে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ‘প্রজন্মের আলো’ নামে একটি স্কুল স্থাপন করেছে। এই স্কুলটি বেদে শিশুদের শুধু অক্ষরজ্ঞানই নয়, বরং একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

সংগঠনটি আশা করে, তাদের এই প্রচেষ্টা সবার জন্য অনুপ্রেরণা হবে এবং সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে দাঁড়াবে, যাতে এই শিশুরা আর কখনো ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য না হয়।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান জানিয়েছেন, যাযাবর বেদে সম্প্রদায় জন্ম নিবন্ধন না থাকায় বিভিন্ন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।

ইউএনও আরও জানান, বর্তমানে শিক্ষা ও মেডিকেল ক্যাম্পের মতো সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও, বেদে সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি এই কাজে আগ্রহী বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়াও, যদি বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী হন, তবে প্রশাসন তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বেদেদের এই বঞ্চনা দূর করতে এবং তাদের হয়রানিমূলক ভিক্ষাবৃত্তির অবসান ঘটাতে প্রশাসনের আশ্বাস এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রচেষ্টা এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। সম্মিলিত উদ্যোগে হয়তো তাদের সামাজিক অবক্ষয় দূর হবে এবং নতুন প্রজন্ম মূলধারার সমাজে ফিরে আসার সুযোগ পাবে।

নগরকান্দায় জাকের পার্টির জনসভা ও র‍্যালী

নগরকান্দা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:৪০ পিএম
নগরকান্দায় জাকের পার্টির জনসভা ও র‍্যালী

দেশব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতার আহ্বানে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাকের পার্টি দলকে সু-সংগঠিত করার লক্ষ্যে এক জনসভা ও র‍্যালীর আয়োজন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১ টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড়ের আমিন উদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জাকের পার্টির এ জনসভা ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

ডা. মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জনসভায় উপস্থিত ছিলেন- জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল, বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ড. সায়েম আমীর ফয়সল, জাকের পার্টির জাতীয় স্থায়ী কমেটির সদস্য ফারাহ্ আমীর ফয়সল, ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগ ২ এর সভাপতি ডা. মো. ফজলুল হক, সালথা উপজেলার জাকের পার্টির সভাপতি সরোয়ার হোসেন (বাচ্চু) সহ জাকের পার্টি সকল সহযোগী সংগঠনের
নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও দাওয়াতি মেহমানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

জাকের পার্টির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভার্চুয়ালে বক্তব্য রাখেন।

জাকের পার্টির চেয়ারম্যান দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেশকে ঢেলে সাজাতে হবে। আর বাংলাদেশকে যদি সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে হয় তাহলে প্রতিটি মানুষকে আগে সোনার মানুষে রূপান্তর করতে হবে। কেননা সৎ, জ্ঞানীগুনী মানুষ ছাড়া এদেশের মঙ্গল কামনা সম্ভব না কখনো।জাকের পার্টি বিগত ৩৬ বছর ধরে বিশ্বওলি আদর্শে আদর্শিত হয়ে, সেই পথের পথিক হয়ে জাকের পার্টির প্রতিটি সদস্য আজ সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে। জাকের পার্টির নেতাকর্মীগণ ক্ষমতার লোভ নেই , চাঁদাবাজি করে না, টেন্ডারবাজি করে না, লুট হত্যার সাথে জড়িত নেই।

তিনি বলেন, ক্ষমতা আমাদের কাছে বড় না,দেশ আমাদের কাছে বড়। এজন্য আমাদের ষড়যন্ত্রের পথে যেতে হয় না। জাকের পার্টি একটি আদর্শের নাম, জাকের পার্টি ঐক্যর নাম, জাকের পার্টি জেহাদের নাম, জাকের পার্টি সংগ্রামের নাম।

জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এ সময় জাতির উদ্দেশ্য বলেন, জাকের পার্টি প্রতিটি নেতা কর্মী মজলুম,অসহায়, খেটে খাওয়া, গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, কাজ করে যাবে। এদেশের তরুণ প্রজন্মের মেরুদণ্ড কে খুব সু-পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে,এই ধ্বংসের হাত থেকে জাকের পার্টি মাধ্যমে রক্ষা করতে হবে। কোটি-কোটি মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে জাকের পার্টি উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যের সম্পর্কে। বাংলাদেশে গত ৫৪ বছরে নির্বাচন নামে যে ছলনা, প্রহসন, কেন্দ্র দখল, ক্ষমতা ও পেশিশক্তি প্রয়োগ করা, কালো টাকার ছড়াছড়ি যে রাজনৈতিক ধারা চালু রয়েছে তা যদি সংস্কার করা না হয় তাহলে ২৫ শে আগস্ট এর আগে এবং পরে একই চিত্র অর্থাৎ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছাড়া ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবে।

তিনি বলেন, যদি নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি, কেন্দ্র দখল, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রবেশ নষ্ট করা হয় তাহলে জাকের পার্টি ৩০০ আসন থেকে এককভাবে নির্বাচন প্রত্যাহার করবে।

জনসভা শেষে তালমার মোড়ে জাকের পার্টি মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীগণ শান্তিপূর্ণ র‍্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।

র‍্যালি শেষ করে উপস্থিত সকলের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।

ফরিদপুরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও টায়ারে আগুন

নুর ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:১৯ পিএম
ফরিদপুরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও টায়ারে আগুন

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেছে পদবঞ্চিত একাংশের নেতাকর্মীরা। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ফরিদপুরের মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বোয়ালমারী ওয়াবদা মোড়ে দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ করার কারণে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অবরোধকারীদের অভিযোগ, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে থাকা নেতাকর্মীদের নবগঠিত কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে কমিটি বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সকল ধরনের সড়ক অবরোধ করা হবে।

এ সময় পৌর সদরের ব্যস্ততম এলাকা ওয়াবদা মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে দুইঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এতে দুই কিলোমিটার এলাকা সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌরসভা, আলফাডাঙ্গা উপজেলা ও পৌরসভা এবং মধুখালী উপজেলা ও পৌরসভার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন। তবে বুধবার মধুখালী উপজেলা কমিটিতে থাকা দুইজন পদত্যাগ করেছেন।

কমিটিতে বিগত ১৭ বছর হামলা মামলা, জেল-জুলুম সহ্য করা ত্যাগী ও ছাত্রদল, যুবদল থেকে উঠে আসা নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকারান্তরে কমিটিতে স্থান পেয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পদ পদবিতে থাকা একাধিক ব্যাক্তি, এমনটাই দাবী করেন দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটির তীব্র সমালোচনা করেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে যারা বিএনপির দুর্দিনে পাশে থেকে দলকে ধরে রেখেছেন, সেই ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে নতুন কমিটিতে চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, টাকার বিনিময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ব্যক্তিদের পদ দিয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে বিএনপিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বক্তারা এ সময় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা নাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিল এবং নতুন করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান।

এ সময় বক্তব্য দেন, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন মিলু মিয়া, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু, বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুকুল, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মিনহাজুর রহমান লিপন, সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি ও সাবেক শেখর ইউপি চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ, উপজেলা বিএনপির বর্তমান সহসভাপতি ডা. আব্দুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালা মিয়া, বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস এনায়েত হোসেন মেম্বার, সাবেক পৌর কাউন্সিলর শেখ আজিজুল হক, সাবেক কাউন্সিলর শেখ আতিকুল আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন চৌধুরী, গত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ উপজেলা জাসাসের সাবেক আহ্বায়ক মো. শাহিন আনোয়ার, রুপাপাত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আবুল কালাম, চতুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি একলিম শরীফ, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হোসেন সালেহ্ রুবেল, ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া মোল্যা সুমন ও সাদমান পাপ্পু প্রমুখ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবরোধকারীদের আন্দোলনে যখন সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দুই কিলোমিটার যানজট হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী ও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আল আমিন দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে ইউএনওর অনুরোধে অবরোধকারীরা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সর্বশেষে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শেখর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ বলেন, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে কমিটি বাতিল না করলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে সকল ধরনের রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর -১ আসনে (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) এ দলটির অভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরে দুইটি গ্রুপ পৃথকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে দেন কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম।

অপর গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু। দু’জনই আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। সম্প্রতি নবগঠিত কমিটিতে শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা।

‎ফরিদপুরে নারীকে ধর্ষণ‌ ও হত্যার দায়ে ৪ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

সুমন ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:১২ পিএম
‎ফরিদপুরে নারীকে ধর্ষণ‌ ও হত্যার দায়ে ৪ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চর দড়িকৃষ্ণপুর এলাকার এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে ৪ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে দেড় লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক(জেলা ও দায়রা জজ) শামীমা পারভীন এই রায় প্রদান করেন।


এ সময় আসামীদের মধ্যে একজন বাদে সকল আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদেরকে পুলিশ পাহারায় জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

‎আসামিরা হলেন, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারী (৩৭), কামরুল মৃধা (৩৭), আলী বেপারী (৪২), ও বক্কার ব্যাপারী (৬৭)। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর বেপারী পলাতক রয়েছেন।

‎এছাড়া এই মামলার আলামত নষ্ট করার দায়ে মমতাজ বেগম এবং আবুল কালাম বেপারী নামে দুই জনের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন।

‎মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১২ সালের ১ অক্টোবর ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চর দড়িকৃষ্ণপুরে মেয়েটির বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর বেপারী রাত ১ টার দিকে কয়েকজনকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যান। এরপর বোনের অসুস্থতার কথা বলে তাকে দরজা খুলতে বলে। ‌‌ মেয়েটি সহজ সরল মনে দরজা খুললে আসামি মেয়েটিকে তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে।

‎এরপর আসামী প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মেয়েটিকে কবর দিয়ে দেয়। মেয়েটির মায়ের এ বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তিনি ফরিদপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ নং আমলী আদালতে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মামলা দায়ের করে।

‎রায়ের বিষয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী ভুঁইয়া রতন জানান, সদরপুরে এক নারীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফরিদপুর জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক ৪ আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ দেন এবং একই সাথে দেড় লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করা হয়। যা জেলা কালেক্টর আসামির কাছ থেকে সংগ্রহ করে ভিকটিমকে প্রদান করবেন।

তিনি বলেন, আদালতে আমরা সর্বোচ্চ বিচার পেয়েছি, এই রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ খুশি হয়েছি বলে তিনি জানান।