খুঁজুন
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২ আশ্বিন, ১৪৩২

ফরিদপুরের মধুমতি নদীতে এক মৎস্যজীবীর বৈঠার আঘাতে নিখোঁজ অপর মৎস্যজীবী 

তৈয়বুর রহমান কিশোর, বোয়ালমারী:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫, ৩:২৬ পিএম
ফরিদপুরের মধুমতি নদীতে এক মৎস্যজীবীর বৈঠার আঘাতে নিখোঁজ অপর মৎস্যজীবী 

ফরিদপুরের মধুমতি নদীতে মাছ ধরার সময় শৌখিন খান (৩৮) নামে এক মৎস্যজীবী প্রতিপক্ষ মৎস্যজীবী জব্বার মোল্যার (৩৭) হাতে থাকা বৈঠার আঘাতে নিখোঁজ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর ২টা পর্যন্ত নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল অভিযান চালিয়েও নিখোঁজ মৎস্যজীবী শৌখিনের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে জানা গেছে।

এর আগে বুধবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা এবং মাগুরা জেলার মহম্মদপুর সীমান্তে মধুমতি নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ মৎস্যজীবী শোখিন খান মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা চরপাড়া গ্রামের ছাত্তার খানের ছেলে। সকাল থেকেই নিখোঁজের স্বজনরা ও এলাকাবাসী মধুমতি নদীর বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া ঘাটে আহাজারি করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের ন্যায় মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা চরপাড়া গ্রামের ছাত্তার খানের ছেলে মৎস্যজীবী শোখিন খান ও ফরিদপুর জেলার নওপাড়া গ্রামের আহমদ শেখের ছেলে হুমায়ূন শেখ নৌকায় চায়না জাল নিয়ে বুধবার রাত ১০টার দিকে মাছ ধরতে বের হয়। একই সময়ে পাশেই মাছ ধরতেছিল ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া গ্রামের ছলেমান মোল্লার ছেলে জব্বার মোল্লা (৩৮), রবিউল মোল্লা (৩০) ও একই গ্রামের নৌকা চালক ছলেমানের ছেলে সানি শেখ।
ওইদিন রাত পৌনে ৩টার দিকে বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী চন্ডিবিলা মাঝিপাড়া ঘাট এলাকা দিয়ে মৎস্যজীবী শোখিন খান ও হুমায়ূন শেখ নৌকা নিয়ে ফিরছিলেন। এ সময় অপর মৎস্যজীবী জব্বার মোল্লা (৩৮) ও রবিউল মোল্লা (৩০) শৌখিনদের বলে, আমাদের জালের উপর আসলি কেন? ঘটনার সময় দুই মৎস্যজীবী পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জব্বার মোল্লা শৌখিনের মাথায় বৈঠা দিয়ে আঘাত করলে নদীর পানিতে ডুবে যায়।

খবর পেয়ে ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও নিখোঁজ মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করতে পারেনি। সকাল থেকেই নিখোঁজের স্বজনরা ও এলাকাবাসী মধুমতি নদীর বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া ঘাটে আহাজারি করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সৌখিনের সাথে থাকা অপর মৎস্যজীবী হুমায়ুন শেখ জানান, রবিউল ও জব্বারের পেতে রাখা কারেন্ট জালের উপর দিয়ে নৌকা চালানো হয়েছে দাবী করে জব্বার সৌখিনের মাথায় আঘাত করলে সে নদীর মধ্যে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে পাওয়া না গেলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তার কোন সন্ধান মেলেনি।

উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি গনি আমিন জানান, আমরা ঘটনাস্থলে এসে জানতে পারি রাতে মাছ মারার সময় এক মৎস্যজীবী অপর মৎস্যজীবীকে আঘাত করলে একজন পানিতে পড়ে নিখোঁজ হন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে নিখোঁজের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় মাঝখানে অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। এখনো ওই ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে।

সালথায় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে চলছে নাড়ু তৈরির কাজ 

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪:৪৩ পিএম
সালথায় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে চলছে নাড়ু তৈরির কাজ 

আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাড়ি বাড়ি এখন সাজসজ্জার পাশাপাশি নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতনী গৃহবধূরা। একদিকে রান্নাঘরে উৎসবের পদ তৈরির কোলাহল, অন্যদিকে রং-তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করছেন কারিগররা।

হিন্দু ধর্মাবলীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তাইতো প্রতিটি মন্ডপে এ উৎসবের আয়োজন চলছে পুরোদমে। আর দুর্গাপূজার প্রধান আর্কষণ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মজাদার খাবার নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি। পূজার সময় আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে বেড়াতে এলে তাদের আপ্যায়নের জন্য খেতে দেওয়া হয় সুস্বাদু নাড়ু, মোয়া ও মুরকি। পূজা আসতে আর একদিন বাকি। এজন্য বাড়ির বউ-ঝিদের দম ফেলানোর সময় নেই এখন। তাইতো কেনা-কাটা ও ধোঁয়া-মোছার সাথে নাড়ু বানানোর কাজও চলছে খুব জোরে সরে।

কথা হয় সালথার গৃহীনি বিনা রানীর সাথে। সে বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আমরা প্রতিবছর অনেক ধরণের নাড়ু-বরি তৈরি করি। এর মধ্যে রয়েছে, তিলের নাড়ু, নারিকেলের নাড়ু, দুধের নাড়ু, গঙ্গাজলির নাড়ু, খই, মুড়কি, মুড়ির মোয়া, চানাচুরের মোয়া, ভেটের খইয়ের মোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে থাকি।

আরেক গৃহীনি দুর্গা রানী বলেন, তিলের নাড়ু তৈরির জন্য প্রয়োজন তিল, গুড়, ঘি, জল ও খোসা ছারানো বাদামভাজা। প্রথমে তিল হালকা ভেজে নিতে হবে। এরপর চুলায় জল ও গুড় দিতে হবে। মিশ্রণ ঘন আঠালো হয়ে এলে তিল ও বাদাম দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে। একটু নেড়েচেড়ে নামিয়ে গোল গোল করে বানিয়ে ফেলতে হবে তিলের নাড়ু। প্রতিটি নাড়ু বানানোর সুবিধার জন্য হাতে ঘি বা তেল মেখে নিলে ভালো হয়। এতে নাড়ু বানানোর সময় হাতে আঠা ভাব লাগবে না।

সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারকেলের নাড়ু তৈরির জন্য প্রয়োজন কুড়ানো নারকেল, গুড় ও এলাচগুঁড়া। প্রথমে কুড়ানো নারকেল ও গুড় একসঙ্গে মিশিয়ে বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। পরে এলাচগুঁড়া মেশাতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে গরম থাকতে থাকতে নারকেলের খামি হাতে নিয়ে গোল গোল করে নাড়ু তৈরি করতে হবে।

 

সালথায় ইমাম-ওলামা মাশায়েখদের সাথে জামায়াতে ইসলামী’র মতবিনিময়

সালথা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪:৩৯ পিএম
সালথায় ইমাম-ওলামা মাশায়েখদের সাথে জামায়াতে ইসলামী’র মতবিনিময়

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইমাম ও ওলামা মাশায়েখদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা মডেল মসজিদ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে ইসলামী আদর্শের বিকল্প নেই।

তারা আরও বলেন, মানুষের প্রকৃত শান্তি, অধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হলে ইসলামের শিক্ষা এবং সুশাসনকে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নৈতিক অবক্ষয় রোধ ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রের কোনো বিকল্প নেই।

জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার রক্ষায় আলেম-ওলামাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তারা ইমাম, মাশায়েখ ও তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় অংশগ্রহণকারী স্থানীয় ইমাম ও ওলামারা বলেন, সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ চর্চা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসার ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তারা সমাজ সংস্কার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র সালথা উপজেলা শাখার আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল ফজল মুরাদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সেক্রেটারী মো. তরিকুল ইসলামলর সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মো. বদরুদ্দিন, ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা সোহরাব হোসেন, জেলা জামায়াতের ওলামা বিভাগের সেক্রেটারী মুফতি ফজলুর রহমান, ফরিদপুর জেলা পৌর জামায়াতের সুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, সালথা উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান মজনু, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি চৌধুরী মাহবুব আলী সিদ্দিকী (নসরু), মাঝারদিয়া ইউপি সভাপতি ওয়ালিউজ্জামান, যদুনন্দী ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা মিকাইল হোসেন, রামকান্তপুর ইউনিয়ন সভাপতি মো. ফারুক হোসেন প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় সালথার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে আসা ইমাম, ওলামা, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ।

দালাল ছাড়াই ফরিদপুর পার্সপোর্ট অফিসে মিলছে সেবা, খুশি সেবা প্রত্যাশীরা

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৪২ পিএম
দালাল ছাড়াই ফরিদপুর পার্সপোর্ট অফিসে মিলছে সেবা, খুশি সেবা প্রত্যাশীরা

“অফিসের গেটের সামনে অনবরত বাজছে মাইক। যেখান থেকে বলা হচ্ছে দালালের খপ্পরে কেউ পরবেন না। আপনি দালাল ছাড়া চলে আসুন। আপনার সেবার দায়িত্ব আমাদের। দালাল থেকে সাবধান। এরপর কোন রুমে কি সেবা দেওয়া হচ্ছে মাইকে সেটাও বলা হচ্ছে অনবরত। বারবার নানা সতর্কতা ও সেবামূলক কথা ভেসে আসছে কানে। একটু সামনে আগালেই মূল গেটে ঝুলানো খোঁদাই করা লেখা চোখে মেলে। যেখানে লেখা- “আপনার মূল এনআইডি কার্ড/জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক”, এগুলো সঙ্গে আনুন। দালাল না ধরে নিজে আসুন। পরিবর্তিত আইন অনুযায়ী আপনার মূল আইডি কার্ড ও নাগরিক সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। অযথা দালালের শরণাপন্ন না হয়ে সঠিক কাগজাদি সহ সরাসরি নিজে ১০১ নং রুমে সাক্ষাৎ করুন।”

মূলগেইটসহ দেয়ালজুড়ে এরকম নানা লেখা চোখে পড়ে ও জনসাধারণকে সতর্ক করতে মাইকের সতর্কতামূলক কথাগুলো ভেসে আসছে কানে।

এতক্ষণ যে কথাগুলো বলছিলাম সেটার দেখা মিলে ফরিদপুরের আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে।

এরপর গেটের ভিতরে ঢুকতেই থামিয়ে দিচ্ছে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। তারা কারণ জিজ্ঞেসা করছেন আগমনের। শুধু পার্সপোর্ট আবেদনকারী কিংবা পার্সপোর্ট সেবা প্রত্যাশী ছাড়া ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না তারা। কোন রুমে কোন সেবা দেওয়া হচ্ছে আবেদনকারীকে তা আন্তরিকতার সাথে জানিয়ে দিচ্ছেন কর্মরত আনসার সদস্যরা। যাতে কোনো দালাল কিংবা অযথা লোক ভিতরে না ঢুকতে পারেন তাই এই কঠোরতা বলে পার্সপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়। গেট পার হলেই আপনাকে সেবা নিতে কাউন্টারে দাঁড়াতে হবে। সেখানেও দেখা গেল সুশৃঙ্খল। আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করছেন সবাইকে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। বদলে গেছে ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা দৃশ্যপট ও সেবার ধরন। সহজেই মিলছে সব সেবা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ আর নজরদারিতে গতি পেয়েছে ডিজিটাল সেবাদান কার্যক্রম। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রতিটি স্তরে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্কসহ বয়স্ক, অসুস্থ রোগীদের সেবাদানে মোবাইল এনরোলমেন্ট ইউনিট। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কর্মদিবসে গণশুনানি কার্যক্রম সেবা প্রত্যাশীদের কাছে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করায় কমেছে হয়রানি ও ভোগান্তি। মিলছে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান। পাসপোর্টের জন্য আবেদন গ্রহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সেবা গ্রহীতরা পাচ্ছেন স্বস্তি।

কয়েক জন সেবা গ্রহীতারা জানান, ‘ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে এক সময় নানা অভিযোগ থাকলেও উপ-পরিচালক আবু নাঈম মাসুম যোগদানের পর থেকে এখন আর তেমনটি শোনা যায় না। যে কোন মূল্যে এই সেবাদান কার্যক্রমকে ধরে রাখতে কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তারা।’

ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, ‘নানা অব্যবস্থাপনা আর অরাজকতার মডেল হিসেবেই একসময় পরিচিতি পেয়েছিল ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দালাল চক্রের ফাঁদ ডিঙ্গিয়ে সহজে পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানি ছিল অনেকটাই নিয়তির মতো। নির্ধারিত ফি’য়ের বাইরে দর কষাকষির বাড়তি টাকা আর ধরাধরি ছাড়া সহজে মিলতো না কোন পাসপোর্ট। অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর অসহযোগিতা সেবা প্রত্যাশীদের এই হয়রানিকে আরও অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রতিবাদ করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। এসব নানা কারণে ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল।’ এ আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক আবু নাঈম মাসুম যোগদানের আগ পর্যন্ত এ অফিসের এমন সব অভিযোগ ছিল সবার মুখে মুখে।

তবে এই চিত্র এখন বদলে গেছে উপ-পরিচালক আবু নাঈম মাসুমের যোগদানের পর। সহজেই মিলছে প্রত্যাশিত সেবা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ই-পাসপোর্ট পেতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ আবেদন জমা পড়ছে। অনলাইনে জমা দেয়া এসব আবেদনের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ ই-পাসপোর্ট। এর বাইরে ৩টি শর্তে এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই মিলছে পাসপোর্ট। কোন আবেদনকারী চাইলে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে তার আবেদন কী অবস্থায় আছে কিংবা হালনাগাদ তথ্য জেনে নিতে পারছেন। এছাড়া এসএমএস এর মাধ্যমেও আবেদনকারীকে পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ঝামেলাও নেই এখন আর।

এসব নানামুখী উদ্যোগে একদিকে গতি পেয়েছে সেবাদান কার্যক্রমে। অপরদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়ে গেছে বহুগুণ। কমেছে আবেদন ও ডেলিভারির জট।

ফরিদপুরের নগরকান্দার শহিদুর রহমান (৬০) ও জেলা সদরের গঙ্গাবর্দী এলাকার মো. ওহিদুল (২০) আবেদনের পর নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে জানান, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির সেবা পেয়ে খুশি তারা। উপ-পরিচালক আবু নাঈম মাসুমের আচরণে সন্তুষ্ট। তবে অফিসের অন্যন্যা কর্মচারীদের আচরণে আরও সংযত ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন তারা।’

স্থানীয় শাহ্ গাজী আলম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ‘দালালদের হয়রানি আর বাড়তি খরচ নেই। আবু নাঈম মাসুমের মতো এমন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছাড়া এতো ভালো সেবা পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। পাসপোর্ট অফিসের অতি চেনা এই দৃশ্য বদলে গেছে দাবি করে এই ব্যবসায়ী জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে সেবা প্রাপ্তি অনেকটা সহজ হয়েছে। কমেছে ভোগান্তি।’

এব্যাপারে ফরিদপুর আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক আবু নাঈম মাসুম বলেন, ‘অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার। এ ছাড়া যে কোনো সমস্যার সমাধান না পেলে আমার দরজা খোলা থাকে সর্বদা। আমার অফিস রুমে ঢুকতে কোনো অনুমতি লাগেনা, যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকতে পারেন। এ ছাড়া পার্সপোর্ট অফিসের যেকোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাইতো, কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সহজেই পাচ্ছে পার্সপোর্ট।’

দালালের কাছে না গিয়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধানে আবেদনকারীকে সরাসরি এ উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানান তিনি।