খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০ পৌষ, ১৪৩২

স্মৃতি আবেগ আর মিলনে রঙিন ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পুনর্মিলনী উৎসব

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:১২ পিএম
স্মৃতি আবেগ আর মিলনে রঙিন ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পুনর্মিলনী উৎসব

উৎসাহ-উদ্দীপনা, স্মৃতিচারণা আর আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসব শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার (দুই দিন) নানা আয়োজনের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরবময় পথচলা উদযাপন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করেন। বহুদিন পর পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালের এক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, তার অনেক সমবয়সী বন্ধু আজ আর বেঁচে নেই, তবুও স্কুলের প্রতি ভালোবাসার টানেই তিনি এই পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে এসেছেন।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে। এরপর এসেম্বলি, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা। বিশেষ অতিথি ছিলেন- ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নজরুল ইসলাম।

এছাড়া বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রীতিলতা সরকার এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ওয়াহিদ মিয়া কুটি।

বক্তারা বলেন, ফরিদপুর জিলা স্কুল শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি এ অঞ্চলের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অসংখ্য গুণীজন দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত উৎসব চলমান ছিল। আয়োজক কমিটি জানায়, পরবর্তী পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, বিনোদনমূলক আয়োজন ও আতশবাজি অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় স্কুলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে আলোচনা সভা এবং রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছে।

পুরনো স্মৃতি আর নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন—সব মিলিয়ে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছরের এই পুনর্মিলনী উৎসব পরিণত হয়েছে এক আবেগঘন ও আনন্দঘন

ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপন

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৫১ পিএম
ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপন

ফরিদপুরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন চার্চে নেওয়া হয়েছে দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি। শীতের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই চার্চগুলোতে ভিড় জমাতে দেখা যায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও শিশুদের।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ফরিদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মিশনে প্রধান উপাসনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠিত উপাসনায় যিশু খ্রিস্টের জীবন, ত্যাগ ও মানবপ্রেমের বাণী তুলে ধরা হয়। প্রার্থনা শেষে আয়োজন করা হয় সম্মিলিত প্রীতিভোজ। এ সময় ধর্মপ্রাণ মানুষ একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা বিনিময় করেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা যায় সবাইকে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় বড়দিন উপলক্ষে চার্চ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। ধর্মীয় আলোচনা ও প্রার্থনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শান্তা ক্লজের উপস্থিতি। শান্তা ক্লজ শিশুদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করলে শিশুদের মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে ওঠে। গান, নাচ ও অভিনয়ের মাধ্যমে বড়দিনের আনন্দ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

চার্চ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলায় মোট সাতটি চার্চে বড়দিনের উৎসব একযোগে পালিত হচ্ছে। প্রতিটি চার্চেই স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বড়দিন উপলক্ষে আগামী কয়েকদিন পরবর্তীতে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এসব আয়োজনের মাধ্যমে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।

সার্বিকভাবে ফরিদপুরে বড়দিন উদযাপন পরিণত হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, আনন্দ ও মানবিকতার এক মিলনমেলায়।

ফরিদপুরে কনকনে শীতেও থেমে নেই জনজীবন

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:২৫ এএম
ফরিদপুরে কনকনে শীতেও থেমে নেই জনজীবন

ফরিদপুরে হঠাৎ করে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর কমে যাওয়া তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে ভোরের দিকে শীতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবুও জীবিকার তাগিদে থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন চলাচল ও কর্মব্যস্ততা।

ভোর থেকেই শহরের প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যায় রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল। শীত উপেক্ষা করে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবীরা বেরিয়ে পড়ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। অনেকেই গরম কাপড়, মাফলার, টুপি ও হাতমোজা পরে শীত মোকাবিলা করছেন। আবার নিম্নআয়ের মানুষের অনেককে দেখা যাচ্ছে খোলা আকাশের নিচে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে।

শহরের কাঁচাবাজারগুলোতেও সকাল থেকেই ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সবজি বিক্রেতা, মাছ ও মাংস ব্যবসায়ীরা শীতের মধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতারাও প্রয়োজনের তাগিদে বাজারে আসছেন, যদিও শীতের কারণে অনেকের মুখে অস্বস্তির ছাপ স্পষ্ট। এক সবজি বিক্রেতা বলেন, “শীত বেশি হলেও বেচাকেনা থেমে নেই, পেটের দায়ে বসতেই হয়।”

অন্যদিকে, শীতের প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনে। ফুটপাত ও খোলা জায়গায় বসবাসকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতবস্ত্রের অভাবে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সামাজিক উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ শুরু হলেও তা এখনও পর্যাপ্ত নয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

এদিকে চিকিৎসকরা শীতজনিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরের ঝুঁকি বেশি থাকায় গরম কাপড় পরা, কুসুম গরম পানি ব্যবহার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে কনকনে শীত ফরিদপুরের মানুষের জীবনযাত্রায় কিছুটা কষ্ট বাড়ালেও জীবন থেমে নেই। সংগ্রাম আর জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই প্রতিদিনের পথচলা অব্যাহত রেখেছে এ জেলার মানুষ।

শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে ফরিদপুরে শুরু হচ্ছে ৯ম ঘুড়ি উৎসব

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:৫৩ এএম
শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে ফরিদপুরে শুরু হচ্ছে ৯ম ঘুড়ি উৎসব

বছর ঘুরে আবারও ফিরে এলো বহুল প্রতীক্ষিত Papertech Industries Ltd-এর ৯ম ঘুড়ি উৎসব। শৈশবের হারানো আনন্দ, আকাশভরা রঙিন ঘুড়ি আর প্রাণের উচ্ছ্বাসে মুখর হতে যাচ্ছে ফরিদপুর। পৌষের হিম শীতল সকালে ছোট-বড় সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিতে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন আবারও ডাকছে ঘুড়ি ও নাটাই হাতে মাঠে নামতে।

আয়োজকদের ভাষায়, এই ঘুড়ি উৎসব শুধু বিনোদনের নয়—এটি আমাদের হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক আন্তরিক প্রয়াস। প্লাস্টিক আর প্রযুক্তির যুগে শৈশবের সেই কাগজের ঘুড়ি, বাঁশের কাঠামো আর সুতোয় জড়িয়ে থাকা আবেগকে আবার জীবন্ত করতেই এই আয়োজন।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর, শনিবার, ফরিদপুরের ধলার মোড় এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসব। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলবে ঘুড়ি ওড়ানো, নানা রকম ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির প্রদর্শনী এবং আনন্দঘন মিলনমেলা। শিশুদের পাশাপাশি তরুণ-তরুণী ও বয়োজ্যেষ্ঠরাও ফিরে যেতে পারবেন তাদের শৈশবের স্মৃতিময় দিনগুলোতে।

এই উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে Papertech Industries Limited—যারা ধারাবাহিকভাবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে আসছে। বিশেষ সহযোগী পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে Fustan Emporium Limited। এছাড়াও সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যুক্ত রয়েছে Eblum Cafeteria, Times University Bangladesh, EPD IT Solution, Digital Plus Faridpur—যারা এই আয়োজনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে।

পুরো আয়োজন বাস্তবায়ন করছে ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশন, যারা স্থানীয় সংস্কৃতি ও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।

আয়োজকদের প্রত্যাশা, এবারের ঘুড়ি উৎসব শুধু একটি দিনের অনুষ্ঠান নয়, বরং ফরিদপুরের সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডারে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

রঙিন ঘুড়িতে ভরে উঠবে আকাশ, হাসি-আনন্দে মুখর হবে চারপাশ—শৈশবের সেই নির্মল আনন্দ ফিরে পেতে সবাইকে আমন্ত্রণ ৯ম ঘুড়ি উৎসবে।