৮০ বছরেও পাকা সেতু নেই, বেইলি জোড়াতালিতে বন্দি ফরিদপুর
ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে কুমার নদের ওপর একটি স্থায়ী পাকা সেতু না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই পাড়ের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। সরকারি হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার, সরকারি তিতুমীর বাজার ও বৃহত্তর নিউমার্কেট—এই তিনটি পুরনো ও জনগুরুত্বপূর্ণ বাজারকে সংযুক্ত করা সেতুবন্ধনে দীর্ঘ ৮০ বছরেও নির্মিত হয়নি একটি স্থায়ী সেতু। বারবার অস্থায়ী বেইলি সেতু সংস্কার আর জোড়াতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়া এই তিন বাজারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হলে অন্তত অর্ধকোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হতো। একই সঙ্গে শহরের যানজট কমে যেত প্রায় ৬৬ শতাংশ। দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠত বাজার, সড়ক ও সেতু এলাকা, ফিরত কুমার নদের নান্দনিক সৌন্দর্যও।
এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদপুরের সমাজসেবক ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান পিংকু বলেন, “পরিকল্পিতভাবে সেতুটিকে অনওয়ে সড়ক সেতু হিসেবে গড়ে তুললে ফরিদপুর শহরের চেহারাই পাল্টে যেত। কিন্তু বছরের পর বছর শুধু বেইলি সেতু মেরামতের নামে লোক দেখানো কাজ হয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবছর ৫০–৬০ লাখ টাকা বা তারও বেশি ব্যয় দেখিয়ে সেতু সংস্কারের বিল তোলা হলেও স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।
পিংকু সেতুর দুই পাশে একাধিক সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে শহরের যানবাহন চলাচল সহজ হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।
শরীয়তুল্লাহ বাজারের সাবেক সভাপতি মো. নুর ইসলাম মোল্লাও একই দাবি জানিয়ে বলেন, “৮০ বছরে অনেক সরকার এসেছে গেছে, কিন্তু শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কেউ করেনি। বেইলি সেতুর পরিবর্তে এখনই একটি প্রশস্ত পাকা সেতু প্রয়োজন।”
এদিকে সম্প্রতি আলীমুজ্জামান বেইলি ব্রিজে ফের অস্থায়ী মেরামত কাজ শুরুর খবরে শহরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে সেতুটি দিয়ে সব ধরনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার জানান, ‘বেইলি ব্রিজটি সংস্কার প্রয়োজন হওয়ায় কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন সেতু নির্মাণের একটি পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে কবে নাগাদ স্থায়ী পাকা সেতুর কাজ শুরু হবে—সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা দিতে পারেননি তিনি।’
ফলে ফরিদপুরবাসীর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—আর কত বছর বেইলি সেতুর জোড়াতালিতেই চলবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা?

আপনার মতামত লিখুন
Array