ফরিদপুরে সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে গত এক বছরে কোন পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যার নিজেরই স্বাস্থের ঠিক নাই, যিনি ক্যানসারের রোগী এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে বানানো হয়েছে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। যার যেখানে অভিজ্ঞতা, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমরা গত এক বছরে অনেক সংস্কার দেখতে পেতাম। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের স্বজনপ্রীতির উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। আজকে শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে সরকারের কি ভূমিকা? এই ফরিদপুর মেডিক্যালে আগেও যা ছিল, এখনো সেই অবস্থায় চলছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।’
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ সবাই মিলে এক সঙ্গে লড়াই করেছি। সেইদিন ফরিদপুরের মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে রাস্তায় নেমেছিল, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুন্ডাদের ঝাঁটা দিয়ে বিতাড়িত করেছিল। তার ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি একটি গণঅভ্যুত্থান।’
তিনি গত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘ফরিদপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও শেখ হাসিনা এখানে উন্নয়ন করেনি, উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডারদের। উন্নয়ন হয়েছে তাঁর বিয়াই সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। সাধারণ মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন কি করেছিলেন তা ফরিদপুর-ভাঙ্গা ৩২ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক দেখলে বোঝা যায়।’
রাশেদ খাঁন অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে আমাদের অনেক আশা ছিল। উপদেষ্টারা তাদের সম্পদের হিসাব দিতে চেয়েছিল, সেটা জনসম্মুখে দেয় নাই। সরকারের এক বছরে দেশে কোন রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হয় নাই, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ হয় নাই, দৃশ্যমান কোন সংস্কার হয় নাই।’
তিনি বলেন, আমরা গত এক বছর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সমালোচনা করি নাই। তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা বন্দোবস্ত টিকিয়ে রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পুলিশে আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন দপ্তরে-সেক্টরে আওয়ামী লীগ। সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগকেই বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এর জন্য কি আমরা সংগ্রাম করেছি, এ জন্য কি ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে?
রাশেদ খান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের স্বজনপ্রীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর স্বজনপ্রীতির উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। যার নিজেরই স্বাস্থের ঠিক নাই, যিনি ক্যানসারের রোগি এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে বানানো হয়েছে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। যার যেখানে অভিজ্ঞতা, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল (বিষয়টি হাসানত আব্দুল্লাহ বলেছিল)। তাহলে আমরা গত এক বছরে অনেক সংস্কার দেখতে পেতাম। আজকে শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে সরকারের কি ভূমিকা? এই ফরিদপুর মেডিক্যালে আগেও যা ছিল, এখনো সেই অবস্থায় চলছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পৌরসভা দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? থানায় দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? কোন সেক্টরেই ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয় নাই। তাহলে কি সংস্কার হলো, মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকার অভ্যুত্থানে যারা সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে তাদেরকে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যারা বলতেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নয়। নির্বাচন না দিয়ে সরকার কি করবে? এই সরকারের কি ক্ষমতা ধরে রাখার সক্ষমতা আছে, নাই। এই জন্যই আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র সমন্বয়কদের সমালোচনা করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপরে সেই ছাত্র প্রতিনিধিরা চাঁদাবাজি ও ট্রেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়লো। এর দায় কার? এর দায় উপদেষ্টা পরিষদের, এর দায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের। কারণ তিনি কখনোই বলেন নাই; তোমার দেশের গর্ব, তোমরা আমাদের গণঅভ্যুত্থান এনে দিয়েছো। তোমরা এখন ক্লাসে ফিরে যাও। তা না করে তিনি ছাত্রদের দল করার পরামর্শ দিয়ে মাথায় তুলেছেন।
তিনি বলেন, ডিসি-এসপি-রা সমন্বয়কদের নাম শুনলে, তাদেরকে (ছাত্রদের) আসেন আসেন ডেকে নিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়েছেন। পারলে সমন্বয়কদের খুুঁশি করতে নিজের চেয়ারটা ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। এইভাবে অতি ভক্তি, তেলামি করে ছাত্রদের বিভ্রান্তিতে ফেলানো হয়েছে। আমি সকল ছাত্রদের কথা বলছি না, যারা করেছে, তাদের বলছি। আজকে ছাত্ররা ডিসি অফিস ও এসপি অফিসে গিয়ে তারা খবরদারি করছে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে এইটা আশা করিনি। দেশে যা শুরু হয়েছে, এভাবে দেশ চলতে পারে না। তিনি সর্বশষে ১৪ দলের সহযোগী জাতীয় পার্টির জি.এম কাদের ও চুন্নুর গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
গণ অধিকার পরিষদের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুর জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ মিয়া, বোয়ালমারী উপজেলা সভাপতি লাবলু শরীফ, ফরিদপুর সদর উপজেলা সভাপতি রাজু আহমেদ, ভাঙ্গা উপজেলার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি হৃদয় আহমেদ, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি জুয়েল ভান্ডারী ও সালথা উপজেলা সভাপতি ফারুক ফকির প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় জেলার নেতৃবৃন্দ রাশেদ খাঁনের মাধ্যমে ফরিদপুর নামেই বিভাগ ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
উজান থেকে নেমে আসার অব্যাহত পানিতে ফরিদপুর জেলার নদ নদীর পানি বাড়ছে। আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার উপরে। এছাড়াও পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে চারটি উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে, এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সেখানকার বসবাসকারী মানুষেরা।
গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর পানি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে আরো ০৬ সে.মে বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার ২০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ধারাবাহিক বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের মধ্য অঞ্চল ফরিদপুরের নদ নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্প। ধান ক্ষেত ও চারা তলিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। নিম্নাঞ্চল ও চর অঞ্চলের শাকসবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে নদ নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন।
গত ক’দিন লাফিয়ে বাড়ছে পদ্মার পানি, আর তার এক সপ্তাহ আগেই টানা বৃষ্টির পানিতে ভরেছিল মাঠঘাট ফসলি জমি। এই পানি বৃদ্ধিতে বিনষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসল।
পানি বাড়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে মধুমতি, পদ্মা এবং আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙ্গন। পানি উন্নায়ন বোর্ড ভাঙ্গন এলাকায় জরুরি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে।
এদিকে এই পানি বৃদ্ধি আগামী আরো পাঁচ দিন টানা থাকবে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম।
স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মা নদীর পানি বাড়ার ফলে তাদের ধানের চারা, সবজি ক্ষেত তলিয়ে নষ্ট হয়েছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পুরোটাই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন নিম্ন অঞ্চলের মানুষেরা।
ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কানাইপুর নতুন ব্রীজের ওপর দুই বাসের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ সময় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী রয়েল এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী দর্শনা ডিলাক্স দুটি পরিবহন মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় এক জন নারী ও দুই জন পুরুষ নিহত হন। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুজ্জামান চাঁন বলেন, ঘটনাস্থলে তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন যাত্রী।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, তিন জন নিহত ও দুই বাসের কমপক্ষে ১৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহতদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে এক জন নারী ও হাসপাতালে নেওয়ার পর দুই জন পুরুষ সহ মোট তিন জন নিহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে হতাহতদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে জানানো যাবে।
আপনার মতামত লিখুন
Array