শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার দিন দুপুরে হোগলাকান্দি বাজারের পাশে নদীর তীরে বসে ইজ্জল শেখ মোবাইলে জুয়া ধরে লুডু খেলতে বসেন স্থানীয় হানিফ শেখের সঙ্গে। খেলা শেষ হলে বাড়ি ফিরে যান ইজ্জল শেখ। পরবর্তীতে হানিফ শেখ তার মোবাইল খুঁজে না পেলে ইজ্জল শেখকে ডেকে আনেন এবং মোবাইল সে নিয়েছে বলে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে যেখানে বসে খেলছিল সেখান থেকে মোবাইল এনে হানিফ শেখকে দেন ইজ্জল শেখ।
এঘটনা নিয়ে বিকেলে ইজ্জল শেখকে পুনরায় মারপিট করে হানিফ শেখ ও তার লোকজন। এরপর কিছু সময় পর হোগলাকান্দি বাজার সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ইজ্জল শেখকে পরে থাকতে দেখে এবং মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। সেখানে এসে হানিফ শেখের লোকজন ইজ্জল শেখকে অসুস্থ অবস্থায় তুলে নিয়ে বাজারের পাশে নদীর পানির মধ্যে চুপিয়ে অচেতন অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে ইজ্জল শেখের পরিবারের দাবি, তাকে মারপিট ও বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি নিহতের স্বজনদের।
নিহতের স্ত্রী নবীরন বেগম বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাই। স্বামী কোনো কাজ করতো না। সে মাঝে মধ্যে জুয়া খেলতো, তাকে অনেকবার নিষেধ করেছি, কিন্তু শোনে না। ঈদের দিন আমি ফরিদপুর গেছিলাম মাংস জোগাড় করতে। বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে গিয়ে মাংস নিয়ে বাড়িতে আসি। এরপর বাড়ি এসে শুনতে পারি আমার স্বামীকে হানিফসহ তার লোকজন মারপিট করেছে। আমি বিষয়টি জানতে গেলে আমাকেও মারপিট করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মারপিট করার পর আমার স্বামীর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে নদীতে নিয়ে চুবানো হয়, এক পর্যায়ে তার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে সেখান থেকে হানিফ ও তার লোকজন চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আমার স্বামীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
নবীরন বেগম বলেন, ‘এঘটনার পর আমাকে অর্থের লোভ দেখানো হচ্ছে। মিটমাট করতে বলা হচ্ছে। এমনকি হুমকি ধামকিও দেওয়া হচ্ছে আমাকে মিটমাট করার জন্য। কিন্তু আমি মিটমাট চাই না, স্বামী হত্যার বিচার চাই। যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হোক। আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাই, গরিব মানুষ বলে স্বামীর হত্যার বিচার পাব না?’
নিহতের বোন ফরিদা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে একটি কাগজে তাকে কারা মারছে তাদের নাম উল্লেখ করে লিখে রেখে গেছে। ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। সন্তানরা এতিম হয়ে গেল, ওদের দেখবে কে। ভাইকে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই।’
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন বলেন, ‘হোগলাকান্দি এলাকায় মাদক ও জুয়ায় সয়লাব হয়ে গেছে। যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তি এলাকায় মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু রোধ করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ইজ্জল শেখের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সহায়তা কামনা করেন এবং যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতারের অনুরোধ জানান তিনি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ইজ্জল শেখের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মৃত্যু বিষক্রিয়ায় হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তবে মোবাইলে জুয়া খেলা নিয়ে তাকে মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অন্য কোনো কারণ পেলে সেই হিসেবে মামলা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন
Array