খুঁজুন
শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ, ১৪৩২

ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থবির : সালথায় ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবী মেম্বারদের

সালথা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫, ৭:৩৭ পিএম
ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থবির : সালথায় ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবী মেম্বারদের

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের গাড়ি ভাংচুর মামলা সহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামী সালথা উপজেলার ৪নং ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক উজ্জমান ফকির মিয়ার অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন একই ইউনিয়নের ইউপি মেম্বাররা।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সালথা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় ইউপি চেযারম্যানের অপসারণ চেয়ে বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য আবু মোল্যা, মো. মামুন সরদার, মাহবুবুর রহমান, আদেল মোল্যা, আবু বক্কার প্রমূখ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিগত ৭/৮ মাস যাবত সালথা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৪নং ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক উজ্জমান ফকির মিয়া বিভিন্ন মামলায় পলাতক রয়েছে। সে ইউনিয়ন পরিষদে না আসায় জনসাধারণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, স্থবির হয়ে পড়েছে পরিষদের কার্যক্রম। গত ৫ই আগস্টের পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ জনসাধারণের সেবা নিশ্চিত করতে চেয়ারম্যানের অপসারণ চাই।

প্রতিদিনই ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নেওয়ার জন্য এসে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ফিরে যায় অনেক সেবা প্রত্যাশী।

তিনি পরিষদে উপস্থিত না থাকার কারণে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।

এব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। তাকে আটকের অভিযান চলছে।

এবিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যানের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গণঅভ্যুত্থান : আকাঙ্খা, প্রাপ্তি ও অপূর্ণতা

শেখ রফিক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ১:৩৪ পিএম
গণঅভ্যুত্থান : আকাঙ্খা, প্রাপ্তি ও অপূর্ণতা

আমার দুই ছেলে, সক্রেটিস পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে আর সব্যসাচী সদ্য এসএসসি দিয়েছে। প্রতিদিন রাতে আমি বাসায় ফিরলে ওরা নানা প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলোর অনেকটাই আসে ফেসবুকে দেখা কোনো দুর্ঘটনা, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজি বা সংঘর্ষ নিয়ে। ছোট ছেলে বেশি প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তরগুলো খুব কঠিন। ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা, মানুষ এত খারাপ হয় কেন? তুমি জান, আজ একটা মাজার ভেঙে দিয়েছে। আজ ছাত্ররা-ছাত্ররা মিছিলে মারামারি করেছে। আজ একজনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আজ একজন শিক্ষককে মেরেছে। আজ একজনের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলেছে। আজ একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আজ একজন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়েছে। আজ একজন ছাত্রকে মেরে ফেলেছে। আজ একজনকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলেছে! আজ একজন মেয়েকে রেপ করে মেরে ফেলেছে! এমন অসংখ্য ঘটনার কথা এবং কেন হচ্ছে সেই জিজ্ঞাসার সম্মুখীন গত এক বছর আমাকে হতে হয়েছে। ওরা বলে, ‘এসব করে কেন?’ কিংবা সরাসরি জিজ্ঞাসা করে, ‘সরকার কী করে?’ আমি কখনো উত্তর দিই, আবার কখনো নীরব থাকি। ওদের প্রশ্নের উত্তর হয়তো সবসময় দিতে পারি না। কিন্তু প্রতিদিন প্রশ্ন করে।

ঢাকায় পঁচিশ বছর ধরে আমি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন, শহীদ মিনার, শাহবাগ ও প্রেসক্লাবে হাজারবার মিছিল-মিটিং-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছি। এই মিছিল-সমাবেশগুলো বারবার বলেছে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা দিন, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম দিন। মতপ্রকাশে বাধা দেবেন না। বিরোধী দলের ওপর মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করুন। হত্যা, ধর্ষণ ও গুম বন্ধ করতে হবে। গরিব মেহনতি মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করুন। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করুন। দুর্নীতি বন্ধ করুন, লুটপাট থামান, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করুন। খেলাপি ঋণ আদায় করুন, সন্ত্রাস দমন করুন, টেন্ডারবাজি ও দখলদারিত্ব রোধ করুন। সিপিবি লাখ লাখবার এসব বলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? কেউ কথা শুনেনি, কেউ কথা রাখেনি। ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?’ বঙ্কিমচন্দ্রের অবিস্মরণীয় এই উক্তি মনুষ্যত্বের এক বাস্তব ও গভীর মূল্যবোধের উৎসারণ। গত ৫৪ বছর ধরে যারা লেখাপড়া করেছেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন, প্রত্যেকেই এই ভাব-সম্প্রসারণ পড়েছেন ও লিখেছেন। কিন্তু কতটা ধারণ করেছেন এবং তা নিজের কর্মজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রয়োগ করেছেন সেটা জনগণ খুব ভালো করেই জানে। বঙ্কিমের এ উক্তি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিম্নলিখিত বাক্যটি স্মরণীয় ‘Relationship is the fundamental truth of the world of appearance, সম্পর্কই হলো এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূল সত্য। মানুষকে মানুষ করে তোলে তার পারস্পরিক সম্পর্ক, সংযোগ এবং সহানুভূতি। আমাদের জীবনে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। এটাই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই সময়ের স্বপ্ন ছিল, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। ‘খেয়ে-পরেই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই’  শিক্ষা ও চিকিৎসায় বৈষম্য বেড়েই চলছে, সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থা ও বেসরকারি খাতের উচ্চ ব্যয় দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে স্বপ্ন করে তুলেছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল দুঃখ-দুর্দশা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। কিন্তু পাঁচ আগস্টের পর শুরু হওয়া হামলা, নির্যাতন ও দমন-পীড়ন ন্যায়বিচারের স্বপ্নকে অনেকটা ভেঙে দিয়েছে। খুনের বিচার হয়নি, দুর্নীতিবাজ গ্রেপ্তার হয়নি, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা যায়নি। মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য বেড়েই চলছে, জনজীবন অনিশ্চিত। জনগণ ভেবেছিল, শেখ হাসিনা চলে গেলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। কারণ তার সরকারের অধীনে ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সম-অধিকার হারিয়ে গিয়েছিল। বিরোধী দল দমন, গুম, খুন, ধর্ষণ ও দুর্নীতি রাজত্ব ছিল। সেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটায়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, গত এক বছরে শান্তি-শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরেছে কি? জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার পেয়েছে কি? র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র কতটুকু বদল হয়েছে? রাষ্ট্র যদি জনবান্ধব হতো, তাহলে আন্দোলনের পর চিন্তাচেতনার সংস্কার হতো; কিন্তু বাস্তবতা বিপরীত, হয়রানি ও দমন চলছে। অপরাধীরা সরকারের দুর্বল নেতৃত্বে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা আজও অধরা। ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার শুধু কোনো ব্যক্তি বা দালান-কোঠায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাষ্ট্রযন্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে গভীরে প্রবাহিত একটি ব্যবস্থা। তাই স্বৈরাচারী শাসন কেবল শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করলেই নির্মূল হয় না; বরং তা পুনরুৎপাদনের আশঙ্কা থেকেই যায়। এ জন্য সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পন্থায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রচর্চার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলা প্রয়োজন। গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়া। যেখানে সবাই মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার পাবে। কিন্তু নেতৃত্বের স্বার্থপরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্ষমতার ‘ডিসিপ্লিনারি মেকানিজম’ জনআকাক্সক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘মব-সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সংখ্যালঘু ও বিরোধী মতের ওপর সহিংসতা এবং গণতান্ত্রিক কণ্ঠরোধকে উসকে দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা কীভাবে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে? অপরাধীরা প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মুখে। ধর্ষক, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও মাদকাসক্তরা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করার চেষ্টা করছে। তারা অস্থিরতা ও ভয় সৃষ্টি করছে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে। এসব ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই অপরাধীরা হঠাৎ কোথাও জন্ম নেয় না; তারা গড়ে ওঠে বৈষম্যপূর্ণ, অব্যবস্থাপনা ও ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যেই।

দুর্বল শাসনব্যবস্থা, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রশাসনিক পক্ষপাত অপরাধীদের উৎসাহ দেয়। যখন অপরাধীরা শাস্তি পায় না, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিচারহীনতা ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নারীর প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব, লিঙ্গ বৈষম্য এবং ঘৃণার রাজনীতি বিকৃত মানসিকতার অপরাধী তৈরিতে সহায়ক। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার প্রতি অবহেলা অপরাধ প্রবণতা বাড়ায়। অপরাধকে ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে দেখা এবং অসৎ জীবনযাপনকে সামাজিক সহানুভূতির মাধ্যমে মেনে নেওয়া একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও মানুষের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, এই জাতি অন্যায় সহ্য করে না। ভাষার অধিকার, ভোটাধিকার বা ন্যায্য জীবনের দাবিতে মানুষ বারবার রক্ত দিয়েছে। প্রতিবারই জন্ম দিয়েছে গণঅভ্যুত্থান, যা শুধু সরকারের পতনের জন্য নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নৈতিক কাঠামো চ্যালেঞ্জ করার জন্য। তবে ১৯৬৯ সালের ছাত্র-অভ্যুত্থান থেকে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া একই প্রতিক্রিয়াশীল ও আত্মবিমুখ।

প্রশাসনে দায়বদ্ধতার অভাব প্রকট, আত্মসমালোচনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিপক্ষের দোষারোপে লিপ্ত, জনগণের রক্ত ও ক্ষোভকে ক্ষমতার খেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে গণতন্ত্র ক্ষয়ে যাচ্ছে, লোভ-হিংসা বাড়ছে, রাষ্ট্র থেকে মানুষ আবার দূরে সরে যাচ্ছে। বর্তমান অস্থিরতা ও হতাশার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো, নিজেকে প্রশ্ন করা ‘আমি কী আমাকে পরিবর্তন করেছি’? সর্বত্র সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। সংস্কার ও নির্বাচন এই দুই পরস্পরের পরিপূরক। জনগণ চায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরে পেতে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারই হওয়া উচিত প্রথম পদক্ষেপ। ভোটাধিকার ফিরলে শাসনব্যবস্থায় শান্তি আসবে। বিচারব্যবস্থা, পুলিশ ও প্রশাসনে সংস্কার অপরিহার্য, সাংবিধানিক পরিবর্তনও সময়ের দাবি। তবে গণতান্ত্রিক সংস্কার সফল হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কারণ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাই প্রথম প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনভাবে কথা বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর আলোচনা চলছে এবং তরুণদের কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরুর কিছু অভিযান সাধারণ মানুষের মাঝে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘমেয়াদে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রদর্শন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও ন্যায্য সম্পদের বণ্টন নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি প্রশাসন স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করবে, সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি অপরাধ ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখবে। নারীর মর্যাদা ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা ধর্ষণ কমাবে। যুবসমাজে নৈতিকতা গড়ে উঠলে দুর্নীতি কমে। উন্নত দেশগুলোতে বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক নিরাপত্তাই অপরাধ হ্রাসের মূল কারণ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের ৩১ দফা রূপরেখা এবং ভিশন-২০৩০-এ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও নির্বানের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক রূপান্তরের বার্তা বহন করে। তবে সময় বলে দিতে এই রূপান্তরের বার্তা কতটা কার্যকর হবে। গণতন্ত্র তখনই সফল হবে, যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবে ‘সাধারণ মানুষ’ এবং রাষ্ট্র হবে সবার মৌলিক অধিকারের রক্ষক ও জনতার প্রকৃত সেবক। তখনই ‘খেয়ে-পরেই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই’ এই আর্তনাদ শব্দহীন হয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক

সালথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার: মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন!

নুরুল ইসলাম নাহিদ, সালথা:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ৪:০২ পিএম
সালথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার: মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন!

ফরিদপুরের সালথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর থেকে নাসিমা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কাইয়ুম মাতুব্বরের স্ত্রী। তবে ওই গৃহবধুর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, নাসিমা শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। গতকাল বুধবার রাতে নাসিমার সাথে তার স্বামী কাইয়ুমের ঝগড়া হয়। পরে রাতেই নাসিমা শ্বাসকষ্টে মারা যায় বলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে নাসিমার ছোট ভাই আবুল হাসান শরীফ জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশকে জানান তার বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে নাসিমার স্বামীর দাবি, তিনি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে বড় খারদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর থেকে নাসিমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে শ্বাসকষ্টের মারা গেছে বলা হলেও তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছে শ্বাসকষ্টে মারা গেছে আবার কেউ বলছে মেরে ফেলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যদিও মরদেহের শরীরের আঘাতের কোনো দাগ নেই। আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।

ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক হত্যায় পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ৩:২৯ পিএম
ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক হত্যায় পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড

ফরিদপুরে শওকত মোল্যা (২০) নামের এক ইজিবাইক চালক হত্যায় পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়। এই মামলার অপর এক আসামিকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে দশ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মো. মাকসুদুর রহমান এ রায় দেন।

দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মো. মেহেদী আবু কাওসার (২৫), মো. জনি মোল্লা (৩০), রাসেল শেখ (২৫), রাজেস রবি দাস (২৯) ও মো. রবিন মোল্লা ওরফে ভিকি (২৫)।

রায়ের সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে উপস্থিত আসামিদের পুলিশ পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়।

এদের মধ্যে মো. রাসেল শেখ পলাতক থাকায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। অপর আসামী রাজবাড়ীর মজলিসপুর এলাকার বাদশা শেখকে (৩১) দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে দশ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।

‎মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর শওকত মোল্যা (২০) নামে এক যুবক নিজ বাড়ি থেকে বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এরপর তার পরিবার তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরের দিন সকাল ৭ টার দিকে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মোল্যা বাড়ী সড়কের শেষ মাথার বাইপাস রোডের কাছে আবুল হোসেনের ধান ক্ষেতের মধ্যে তার মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর তার পিতা আয়নাল শেখ বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

‎এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট চৌধুরীর জাহিদ হাসান (খোকন) জানান, ইজিবাইক ছিনতাই করতে চালককে হত্যার মামলায় দীর্ঘ শুনানী ও স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন। এদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক এক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। তিনি বলেন, এই মামলায় আমরা সর্বোচ্চ রায় পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি।