খুঁজুন
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮ আশ্বিন, ১৪৩২

ব্যাংকে টাকার জন্য হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১১ পিএম
ব্যাংকে টাকার জন্য হাহাকার

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে বেপরোয়া লুটপাটে সৃষ্ট ক্ষত কৌশলে আড়াল করে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে এই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এতে হিতে-বিপরীত হয়েছে। লুট হয়েছে ছাপানো টাকাও। বেড়েছে তারল্য ও ডলার সংকট; মূল্যস্ফীতির পারদ হয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। অর্থনৈতিক মন্দা থেকে সৃষ্ট জনরোষ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী আমলের লুটপাটের ঘটনা তদন্ত শুরু করলে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। এখন পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে লোপাটকারীরা। এর বড় অংশই পাচার করা হয়েছে। এসব অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে বর্তমান সরকারের এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। মোট খেলাপি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি। এতে গত এক বছরে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ছিল প্রকট। ছোট-বড় অনেক ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা নিয়মিত টাকা তুলতে পারেননি। যা এখনো অব্যাহত। সবমিলিয়ে আলোচ্য সময়ে টাকার জন্য একরকম হাহাকার পড়েছিল ব্যাংক খাতে।

তবে আশার কথা-বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপে বন্ধ হয়েছে ব্যাংক খাতে নতুন লুটপাট। ব্যাংকগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রবণতাও বাতিল করা হয়েছে। পাচার করা টাকা উদ্ধারে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। দেশ ও বিদেশে কয়েকজন পাচারকারীর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধার করার জন্য নেওয়া হয়েছে বহুমুখী কার্যক্রম। এর সুফল আসতে একটু সময় লাগবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে লুটপাট ও পাচার বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে তারল্যের জোগান বাড়তে শুরু করেছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটপাটের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে এসব টাকা ব্যাংকে নেই। আইএমএফের মতে, ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধার করতে কমপক্ষে ৪ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে একীভূতকরণের তালিকায় থাকা ৫টি ব্যাংককে সচল করতে আগামী এক বছরের মধ্যে ২ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

লুটপাটের টাকা সবই খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে খেলাপি ঋণ শিগগিরই ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে অবলোপন ও আদালতের স্থগিতাদেশের করণে অনেক ঋণ খেলাপি হলেও তা অফিশিয়ালি দেখানো যাচ্ছে না। এগুলো যোগ হলে খেলাপি সাত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণের সব তথ্য দেখানো হচ্ছে না। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। কিন্তু সেগুলোও খেলাপি। অবলোপন করা এই ঋণের অঙ্ক প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। আদালতের মামলা ও অন্যান্য স্থগিতাদেশের কারণে এবং কিছু খেলাপি ঋণের তথ্য ব্যাংকগুলো গোপন করায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে দেখানো হচ্ছে না। অথচ সেগুলোও খেলাপি। এসব মিলে বহু আগেই খেলাপি ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার অভাব ছিল প্রকট। এর নেপথ্যে কয়েকটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-কিছু ব্যাংক দখল করে লুটপাট, ঋণ জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, গ্রাহকদের আস্থার অভাবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া, কয়েকটি ব্যাংককে বিগত সরকারের সময়ে দেওয়া অনৈতিক সুবিধা প্রত্যাহার করায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অব্যাহত ক্ষয়, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনে ভয়াবহ পতনের মাধ্যমে একটি ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত এবং একটি সংকীর্ণ অর্থায়ন ব্যবস্থা পেয়েছে।

ভঙ্গুর ব্যাংক খাতকে সচল করতে ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। ব্যাংকগুলো যাতে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদায়ি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা হিসাবে ১২ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রদান করেছে। এর মধ্যে ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকাই দেওয়া হয়েছে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া তারল্য ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করাতে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের অধীনে ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মে পর্যন্ত এই স্কিমের আওতায় নেওয়া ঋণের মধ্যে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দৈনন্দিন কার্যক্রমের চাহিদা মেটাতে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা প্রদান এবং অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতকে বিগত সরকার খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবে স্থিতি কোনো ব্যাংকের ঘাটতি হতে পারবে না। ঘাটতি হলেই বুঝতে হবে ওই ব্যাংকে ভয়াবহ সংকট রয়েছে। লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলোর ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ওই চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তা আড়াল করে রেখেছিল। বর্তমান গভর্নরও দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবে ঘাটতি সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক নিজেরাই ঘাটতি সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি কয়েকটি ব্যাংক এখনো ঘাটতিতে আছে। এসব ব্যাংককে জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থাকা চলতি হিসাবের স্থিতির ঘাটতি মোকাবিলায় প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধারের জন্য তিনটি বিশেষায়িত টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত সংস্কার টাস্কফোর্স প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করা, সম্পদের মান উন্নত করা এবং কার্যকর ব্যাংক ব্যবস্থা গঠনের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।

বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্চ মাসে ব্যাংক খাত পুনর্গঠন এবং সমস্যা সমাধানে একটি ইউনিট গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়ানো এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে দ্বিতীয় টাস্কফোর্সটি।

তৃতীয় টাস্কফোর্সটি বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত করে তা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। এ কাজের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট সাড়ে ৬ হাজারের বেশি সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।

ব্যাংক খাতের সংকট চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল’ নামে একটি নতুন আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যাংক খাতে সংকটের পাশাপাশি আশপাশের পদ্ধতিগত সংকটের (রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নানা অসন্তোষে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া) প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা এবং প্রশমিত করা। এটি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংক খাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি আগাম চিহ্নিত করে সমাধানের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এছাড়া একটি সেতু বা ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা হবে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে ঋণ আদায় বাড়ানো, যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু অচল সেগুলো সচল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করলেও এই সরকার প্রকাশ করে দিচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। নতুন খেলাপি হওয়া ৩ লাখ কোটি টাকার প্রায় সবই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুট করা অর্থ। যেগুলো আগে খেলাপি করা হয়নি। এখন সেগুলোকে খেলাপি করা হচ্ছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। কারণ প্রকৃত আয় কমায় খেলাপি ঋণ বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। প্রভিশন ঘাটতি বাড়ায় বেড়েছে মূলধন ঘাটতি। যে কারণে ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁচেছে।

ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। এর আগে ২০০৪ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যবর্তী সময়ে মূলধন রাখার হার বেড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লুটপাটের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ায় এখন মূলধন রাখার হার কমেছে।

 

সূত্র : দৈনিক যুগান্তর

 

ফরিদপুরে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩:৩২ পিএম
ফরিদপুরে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে রাজবাড়ীর আলোচিত আমজাদ খান হত্যা মামলার মো. সুজন মন্ডল (২৯) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‌্যাব-১০ এর দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদপুর শহরের জোবয়দা ফিলিং স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া সুজন মন্ডল রাজবাড়ী সদরের মুকিদহ এলাকার মো. মকিম মন্ডলের ছেলে।

ফরিদপুর র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সুজন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গ, গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে রাজবাড়ী সদরের মুচিদহ এলাকায় বসতবাড়ীতে ঢুকে মো. আমজাদ খান নামে এক ব্যক্তিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একদিন পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৫১ পিএম
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সজিব খন্দকার (৩৬) নামে এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‌্যাব-১০ এর দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মাস্টার কলোনী এলাকা থেকে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া সজিব খন্দকার ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন বঙ্গেরস্বরদী এলাকার সালাম খন্দকারের ছেলে।

ফরিদপুর-১০, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ ও সেনাবাহিনী এর যৌথ আভিযানে সজিব খন্দকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে একটি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় আরও ৪টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সজীব দীর্ঘদিন যাবৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

হাসানউজ্জামান, ফরিদপুর
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১:০৪ পিএম
কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

সোনালি আঁশে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। এ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। আর এই পাটের কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। এক সময়ে অবহেলা-অনাদরে থাকা পাটকাঠির বেড়েছে কদর। শুধু রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো পাটকাঠি। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই পাটকাঠির এখন দামি পণ্য। এখন এই কাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল পাউডার, বোর্ড, কালিসহ নানা কিছু।

ফরিদপুরের জেলায় এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। পাট উৎপাদনে যে হারে খরচ বেড়েছে, ঠিক সেভাবে বাড়েনি বাজার দর। তাইতো এ মৌসুমে সোনালি কাঠিতে সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন কৃষকরা। জেলার সর্বত্র এখন চলছে পাটকাঠির পরিচর্যা ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ। এখন পাট কাঠির বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। পাটকাঠির অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক। গত কয়েক বছর আগেও পাট কাঠির তেমন চাহিদা ছিলো না, কিন্তু এখন এর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ জেলায় এসে কাঠি কিনে নিচ্ছেন, কৃষক দামও পাচ্ছেন বেশ। ঘুরে যাচ্ছে জেলার পাট চাষিদের জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাট উৎপাদন উপজেলা সালথা ও নগরকান্দা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে উপজেলার দুটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। একশ মুঠা (এক মুঠো) বা আঁটি পাট কাঠি বিক্রয় হচ্ছে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ফরিদপুরে এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে গড়ে ১৫ হাজার টাকার কাঠি বের হচ্ছে।

পাট চাষিরা জানালেন, পাটের যে বর্তমান বাজারমূল্য তাতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা, তবে তুলনামূলকভাবে পাটকাঠির মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি। পাট বিক্রয় করে খুব বেশি লাভবান না হলেও পাটের কাঠিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন চাষিরা।

স্থানীয়রা জানায়, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়।

নগরকান্দা উপজেলার সাকপালদিয়া গ্রামের কৃষক জীবন কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমার ক্ষেতের পাট খড়ি (পাট কাঠি) তিন রকম বিক্রি হইছে, যেটা লম্বা ও শক্ত-সেটা পেয়েছি ২০০০ টাকা ১০০ মুঠা, মাঝারিটা পেয়েছি ১০০ মুঠায় ১২০০ টাকা, আর যেইগুলো নরম ও খাটো সেগুলো পেয়েছি ৮০০ টাকা।’

একই গ্রামের পাট চাষি কলিম শেখ বলেন, পাটখড়ি শুকিয়ে এখন আমরা স্তুপ করে রেখেছি, প্রতিদিনই কিনতে মহাজনরা লোক পাঠাচ্ছে, দামে পোষালেই ছেড়ে দিব।

সালথা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষাণী জোবেদা খাতুন নিজের হাতেই পাট ছাড়িয়ে পাটকাঠি রোদে দিয়ে শুকিয়েছেন। ১০০ মুঠা ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের আরেক কৃষাণী মজিরন নেসা জানালেন, ওই গ্রামের বেশিরভাগ নারী পাটের আঁশ ছাড়ানো থেকে শুরু করে পাটখড়ি শুকানোর কাজ করেন, যারা পাট আবাদ করেন সেই পরিবারের নারীরাও এই কাজ করেন। আর যাদের জমি নেই- সেই পরিবারের নারীরা শ্রমিক হিসেবে পাটখড়ি শুকানো ও পালা দেওয়ার কাজ করে থাকেন। পাট বাজারে চলে যাবার পর পাটকাঠি শুকানো ও স্তুপ করার কাজ কাজ করে ওই গ্রামের অনেক নারী বাড়তি আয় করছেন।

রসুলপুর গ্রামের পাট কাঠি ব্যবসায়ী সামাদ মাতুব্বর বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পাট কাঠি থেকে আয় ভালো হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্ট, ব্যবসায়ীরা এসে গ্রাম থেকে এটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে।’

সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ জানান, তিনি ৭ বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন । কিন্তু বর্তমানে জেলায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এজন্য ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তারা আর আগের মতো পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ, বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবকা নির্বাহ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটের রুপালি কাঠি উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহাদউজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর দেশের সর্ববৃহৎ পাট উৎপন্নকারী জেলা। এ জেলায় ৫৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে এবার। পাট কাটার মৌসুম শেষ, এখন পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। ফরিদপুর জেলা থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটকাঠি এবার উৎপন্ন হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন পারটেক্স কোম্পানি এবং বেশ কিছু কারখানার রয়েছে- যারা পাটকাঠি পুড়িয়ে কার্বন উৎপন্ন করে চীনে রপ্তানি করে, তারাই কৃষকের কাছ থেকে পাটকাঠি কিনে নেয়। প্রিন্টের কালি এবং কসমেটিকস তৈরির কাজেও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাঠকাঠি। পাটকাঠি রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছি; যাতে করে কৃষক আরও বেশি পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হয়।