খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

সালথার সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:০৭ পিএম
সালথার সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর (৪৮) ও তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তারের (৪০) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন, মিথ্যা তথ্য প্রদান ও জ্ঞাত আয়ের থেকে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্যের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুর বিজ্ঞ সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন ফরিদপুর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ।

জানা যায়, ওয়াদুদ মাতুব্বর সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কাঠিয়াগট্টি এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি পরপর দুইবার সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সর্বশেষ চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সরকারের এক ঘোষণায় অপসারিত হোন। বর্তমানে তিনি একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তিনি আওয়ামীলীগ নেতা হলেও দলীয় কোনো পদে ছিলেন না এবং ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তার পাশ্ববর্তী সিংহপ্রতাপ গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামীলীগ নেতা ইমামুল হোসেন তারা মিয়ার মেয়ে। স্বামী ওয়াদুদ মাতুব্বর চেয়ারম্যান থাকাকালীন রুমা আক্তারের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন।

জেলা দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে অবেধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকে অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে গত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর সম্পদ বিবরনী দাখিল করেন এবং ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেন দুদক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় ওয়াদুদ মাতুব্বর ও তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওয়াদুদ মাতুব্বর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিবরনীতে মোট ২৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৮৪ টাকার মূল্যের সম্পদ উল্লেখ করেন। অনুসন্ধানকালে ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩১ টাকার সম্পদের সন্ধান মিলে। এরমধ্যে ৫৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে সে। অপরদিকে ২০ লক্ষ টাকা ঋণের মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন দুদকে। এছাড়া ২০১২-১৩ থেকে ২৩-২৪ অর্থ বছরে আয়কর রিটার্নের তথ্যমতে বৈধ সম্পদের পরিমান ৩১ লাখ ২০ হাজার ১৬৭ টাকার কথা উল্লেখ করেন দুদক।

অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তার ৭৪ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৯৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করে এবং মিথ্য তথ্য প্রদান করে। অনুসন্ধানকালে তাঁর নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পায় দুদক। যারমধ্যে এক কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ১৩৭ টাকা অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এই সম্পদের মধ্যে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকায় একটি ফ্লাটবাসাও তাঁর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তাঁর বৈধ আয় ১৯ লক্ষ ৭২ হাজার ৬১৭ টাকা মূল্যের সম্পদের কথা উল্লেখ করেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, “ওয়াদুদ মাতুব্বর ও তাঁর স্ত্রীর এসব সম্পদ অর্জনের বৈধ আয়ের উৎস বা তথ্য পাওয়া যায়নি।”

সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (২৬) নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় জড়িত অভিযোগে জাফর মোল্যা (৪২) নামের আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের সদস্যরা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জাফর মোল্যাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার সাভারের পশ্চিম ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাফর মোল্যা ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন তেঁতুলিয়া এলাকার মৃত কাদের মোল্যার ছেলে।

এদিকে, গত ১৩ ডিসেম্বর এ হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ফিরোজ মাতুব্বর নামের অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১০।

র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জাফর মোল্যাকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাছ ব্যবসায়ী উৎপল হত্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে তার নাম এসেছিল। জাফরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।’

প্রসঙ্গ, গত ৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের কালীতলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী উৎপল সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হত্যার একদিন পর উৎপলের বাবা অজয় কুমার সরকার বাদী হয়ে সালথা থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
কচুলতায় এসেছে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা। দেড়শ বিঘা দিগন্তজুড়ে কচুর লতার সফল চাষ মৌলভীবাজার জেলায় সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা। তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় কচুর লতা চাষে এক ধরনের কৃষি বিপ্লব দেখা যাচ্ছে এ জেলায়।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রচলিত অনেক ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় কচুর লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় তিনশ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই-তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপক বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকাতেই মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি লতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মৌসুম যত এগোচ্ছে, দামও বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি এক কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলায় কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে তার উদ্যোগে লতি চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ ও ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসলে পরিণত হয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে যেখানে দুই-তিন বিঘা জমিতে লতি চাষ হতো, এখন সেখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির আবাদ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি অত্যন্ত লাভজনক ফসল এবং এতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামটি যেন এখন ‘লতার গ্রাম’ হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক ফসল। অল্প খরচে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। লতি চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।

সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:০৯ পিএম
সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুরের সালথায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গিয়ে খোরশেদ খান (৪৫) নামে এক কৃষক লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল। এ ঘটনায় ওই হামলাকারী কৃষকলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোরশেদ খান গট্টি ইউনিয়নের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও ওই গ্রামের উচমান খানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে যায় একদল পুলিশ। এ সময় ওই আসামীকে ধরতে বাধা দেন কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ খান। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলু রহমান খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গেলে খোরশেদ খান বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।