খুঁজুন
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

ফরিদপুরে খ্রীস্টান মিশনারীর দুই কর্মী হত্যায় চারজনের যাবজ্জীবন 

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:০০ পিএম
ফরিদপুরে খ্রীস্টান মিশনারীর দুই কর্মী হত্যায় চারজনের যাবজ্জীবন 

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে খ্রীস্টান মিশনারীর দুই এনজিও কর্মী হত্যা মামলায় চারজনকে যাবাজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে তাদেরকে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।

ঘটনার প্রায় ২০ বছর পর মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে এ রায় দেন ফরিদপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শফিউদ্দীন।

এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ওই চার আসামী পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এরপর পলাতক সাজাপ্রাপ্ত ওই চার আসামির নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই দিবাগত রাতে বোয়ালমারী উপজেলার চর ধোপাপাড়া গ্রামে খুন হন তপন রায় মার্ডি (৩০) ও নিকলাল মার্ডি (৩৫) নামের ওই দুই এনজিও কর্মী। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওই দুই ব্যক্তি একটি মিশনারী সংস্থার মাঠ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন এবং বোয়ালমারীর চর ধোপাপাড়া গ্রামের শিরগ্রামে বিপুল কুমার বাকচীর বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন।

এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ওই চার আসামি হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৫৩), বোয়ালমারী উপজেলার গুণবাহা ইউনিয়নের গুণবাহা গ্রামের কামরুল হাসান ওরফে কামরুজ্জামান (৪৫), বোয়ালমারী চাঁদপুর ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামের মনিরুজ্জামান ওরফে মনির (৪০) ও একই ইউনিয়নের চর ধোপাপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ (৬০)।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে তাদের ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ওই বাড়ির মালিক বিপুল কুমার বাকচী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুলতান মাহমুদ ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ওই চার ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের স্পেশাল জজ আদালতের সরকার পক্ষের কৌশলী (পিপি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, এ মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায়, টাকার লোভে তাঁরা ওই দুই ব্যক্তিকে হত্যা করে। এরপর তাঁরা এ মামলায় আদালত থেকে জামিন লাভ করে পলাতক হন। বিলম্বে হলেও এ জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সস্তুষ্ট।

 

সাহসের বাতিঘর সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ

হারুন আনসারী রুদ্র, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:০০ পিএম
সাহসের বাতিঘর সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ

ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফরিদপুরের বারবার নির্বাচিত জননন্দিত এমপি ও মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে ফরিদপুরের রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটেছিল এক চরম ঔদ্ধত্য অপশক্তির।
সেই সময় এই জনপদের সাধারণ মানুষ যখন তটস্থ, ভয়ে কেউ সত্য বলার সাহস হারিয়েছিল, বিবেকের কন্ঠস্বরগুলো ক্রমেই স্তিমিত হয়ে এসেছিলো, সেই কঠিন দুঃসময়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের ভরসার মধ্যমনি হয়ে যিনি হয়ে উঠেছিলেন সাহসের বাতিঘর- তিনিই আমাদের সম্মানিত অগ্রজ, প্রিয় সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ।

এক সংগ্রামী জীবনের অধিকারী মহৎ সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব। যিনি ছিলেন দুর্বিনীত অথচ স্পষ্ট আর প্রিয়ভাষী, জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্টের আতঙ্ক, সাহসী সাংবাদিকতার প্রেরণা, অনুজদের নিকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব; প্রাচীন জনপদ ফরিদপুর জেলার সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের মনিকোঠায় আসীন শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালবাসার এক নাম- সকল রক্তচক্ষুর ভয়-ডর উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের জন্য যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। দেশ ও দশের স্বার্থে, শান্তি, সাম্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় যিনি আমৃত্যু আপোষহীনভাবে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত থেকেছিলেন।

আজ বুধবার সেই অকুতোভয় সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের এদিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি ডায়াবেটিক ফুটে আক্রান্ত হন। ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে পায়ের ফোড়ার অপারেশন করিয়েছিলেন। তবে ডায়বেটিক ফুট অপারেশনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ না করায় তিনি পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি।

সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লার সাবেক সরকারী কর্মকতা মরহুম ফজলুল করিমের সেঝো সন্তান ছিলেন। তিনি অকৃতদার ছিলেন। পেশাগত জীবনে প্রথমে দৈনিক মিল্লাত ও দৈনিক দিনকালে কাজ করেন। পরবর্তীতে অনলাইন নিউজ এজেন্সি বাংলার চোখের প্রতিনিধি ও ফরিদপুর টাইমসের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলার শিশু সংগঠনের ফরিদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব ছিলেন। এছাড়া তিনি ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও আজীবন সদস্য ছিলেন।

সাংবাদিকতার পাশপাশি তিনি শিল্প-সাহিত্যের প্রসার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধামনন বিকাশে উল্লেখযোগ্য কাজ করে গেছেন। একজন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্য উদ্ঘাটনে সাহস জোগানো এবং জেলা শহর ফরিদপুরের সাংবাদিক সমাজের পেশাগত ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে তুলতে প্রথম সারিতে থেকে বিশেষ অবদান রাখেন।

অকুতোভয় এই চারণ সাংবাদিক সকল দলমত ও পক্ষপাতিত্বের উর্ধ্বে দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন অপোষহীন প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে চিরস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকবেন।

আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। দয়াময় আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মর্যাদা দান করুন।

 

লেখক : হারুন আনসারী রুদ্র, সিনিয়র সাংবাদিক

ফরিদপুরে দুদকের মামলায় সাবেক হিসাব রক্ষকের ৬ বছরের কারাদন্ড

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৫:৩০ পিএম
ফরিদপুরে দুদকের মামলায় সাবেক হিসাব রক্ষকের ৬ বছরের কারাদন্ড

ফরিদপুরে হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক হিসাব রক্ষক আবুল ফজল মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে দুর্নীতি মামলায় পৃথক দুইটি ধারায় তিন বছর করে মোট ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাকে আরো দুই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন আদালত।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল জজ মো. শরীফ উদ্দীন মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় সাবেক হিসাব রক্ষক আবুল ফজল মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে পুলিশ প্রহরায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি মহল্লার আব্দুল করিম মিয়া সড়কের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তিনি জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের শেখপুরা গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুর হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক হিসাবরক্ষক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাকরিকালীন সময়ের ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯২১ টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে এ ব্যাপারে ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর দুদক ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রেজাউল করিম বাদী হয়ে তার নামে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। তদন্ত করেন দুদক ফরিদপুরের সহকারি পরিচালক সরদার আবুল বাসার।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ৪১ লাখ টাকার দুর্নীতির মামলায় তিনি মাত্র ১০ হাজার টাকার উৎস দেখাতে পারেন। বাকী টাকার উৎস দেখাতে না পারায় আদালত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বাকী সমস্ত অর্থ (৪১ লাখ ১৫ হাজার ৯২১ টাকা) সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং একই আইনের ২৭(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক, ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক মো. শামীম হোসেন জানান, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।

ফরিদপুরে দুই কৃষককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২:১২ পিএম
ফরিদপুরে দুই কৃষককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ফরিদপুরে সোয়েব শেখ (৪০) ও আইয়ূব শেখ (৪৫) নামের দুই কৃষককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়ার আরশাদ মুন্সীর ডাঙ্গী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত দুই কৃষক হলেন, আরশাদ মুন্সীর ডাঙ্গী এলাকার সোবহান শেখের ছেলে সোয়েব শেখ ও আইয়ূব শেখ। তারা পরস্পর দুই ভাই।

আহত কৃষকের পরিবার জানায়, বুধবার সকালে ফসলি জমিতে পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করতে যান তারা। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন রড, শাপোল দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেন। পরে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’