কনকনে শীতেও থামে না জীবনযুদ্ধ: ভোরের ফরিদপুরে মানুষের মানবিক গল্প
কুয়াশার চাদরে ঢাকা শহর তখনো পুরোপুরি জাগেনি। রাস্তার বাতিগুলোর আলো ম্লান, বাতাসে কনকনে শীত। তবুও জীবনের প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। কেউ শ্রমের খোঁজে, কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউ বা শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভোর পাঁচটা থেকেই জড়ো হতে থাকেন দিনমজুররা। পুরোনো চাদর গায়ে, কেউ কেউ আবার পলিথিনে নিজেকে জড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কাজ মিলবে কি না—এই অনিশ্চয়তার মাঝেই কেটে যায় তাদের সকাল। কথা হয় রহিম মিয়ার সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। বললেন,
“শীত তো আসে যায়, কিন্তু কাজ না থাকলে পেটের আগুন নেভাবো কীভাবে?”
শহরের অলিগলিতে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হন কয়েকজন সবজি বিক্রেতা। শীতের সকালে বিক্রি কম, তবুও থেমে থাকলে সংসার চলবে না। গৃহবধূরা ভোরেই বাজারে যাচ্ছেন—কম দামে সবজি কেনার আশায়। কেউ কেউ সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, শীতের মধ্যেই ইউনিফর্ম গায়ে চাপিয়ে।
কুমার নদের পাড়ে বসে থাকা কয়েকজন বৃদ্ধের চোখে ভিন্ন এক গল্প। কারও ছেলে শহরের বাইরে, কারও সন্তান বিদেশে। শীতের সকালে নদীর ধারে বসে রোদ ওঠার অপেক্ষায় থাকেন তারা। একজন বৃদ্ধ ধীরে বললেন,
“রোদ উঠলে শরীর একটু ভালো লাগে, মনটাও।”
শহরের হাসপাতাল চত্বরে ভোরেই দেখা মেলে রোগীর স্বজনদের। কেউ কম্বল পেতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। ঠান্ডা মেঝেতে বসে চা খাচ্ছেন একজন মা—ভেতরে তার অসুস্থ সন্তান। তার চোখে ক্লান্তি, তবুও আশার আলো নিভে যায়নি।
এই শহরে শীত কেবল তাপমাত্রা নয়, শীত যেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তবুও মানুষ থেমে থাকে না। কেউ হাল ছাড়ে না। প্রতিটি সকালই নতুন করে লড়াই শুরু করার সাহস এনে দেয়।
ফরিদপুরের এই ভোরগুলো হয়তো খুব জাঁকজমকপূর্ণ নয়, কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে মানুষের অদম্য জীবনচর্চা, সংগ্রাম আর মানবিকতার নীরব গল্প।

আপনার মতামত লিখুন
Array