খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

পরিমাণ-ওজনে কম দেওয়া বড় গুনাহ

ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
পরিমাণ-ওজনে কম দেওয়া বড় গুনাহ

লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওজন ও পরিমাণে কমবেশি করা জঘন্যতম গুনাহ। কাউকে ঠকানোর মাধ্যমে উপার্জন করা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরাধ।

সীমাহীন লোভ ও দুষ্ট অভ্যাসের কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছোটে মানুষ। এতে বরকত নেই, বরং বিভিন্ন রকমের ক্ষতি রয়েছে।

 

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ ধরনের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এমন করে তাদের নিন্দা করা হয়েছে।

এ কাজ তাদের পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহাদিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে। ’ (সূরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৬)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমরা সঠিক ওজন কায়েম করো এবং ওজনে কম দিও না। ’ (সুরা রহমান, আয়াত : ৭-৯)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দিই না। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫২)।

পরিমাপে ও ওজনে কম দেওয়ার ফলে আল্লাহ তাআলা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেন ও দুর্ভিক্ষ দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়, যারা মানুষের কাছ থেকে ওজন করে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন মানুষকে মেপে কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। ’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)

রাসুল (সা.) একবার পরিমাপকারী ও দাঁড়িপাল্লা দ্বারা ওজনকারী ব্যবসায়ীদের বলেন, ‘তোমাদের ওপর এমন দুইটি জিনিসের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, যে জিনিস দুইটির দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে তোমাদের আগের উম্মত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ’ (তিরমিজি)

অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘বিচারের দিনে (অসৎ) ব্যবসায়ীদের হাশর হবে ফাসিক, কাফির ও বদকারী হিসেবে, তবে তাদের মধ্যে যারা মুত্তাকি, পুণ্যবান ও সত্যবাদী, তাদের এমনটি হবে না। (মিশকাত, পৃষ্ঠা নং : ২৪৪)

সদরপুরে মাদ্রাসার শীতার্ত শিক্ষার্থীদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন ইউএনও

শিশির খাঁন, সদরপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:১৯ পিএম
সদরপুরে মাদ্রাসার শীতার্ত শিক্ষার্থীদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন ইউএনও

সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। এই শীতে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন গরিব অসহায় ছিন্নমূল মানুষ। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ে তাদের কষ্টও। অসহায় এসব মানুষের কষ্ট লাঘবে কম্বল নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ শাওন।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তিনি ছুটে যান সদরপুর উপজেলার পিয়াজখালি এতিমখান ও নলেরটেক এন্তেজামিয়া মাদ্রাসার এতিম, দুস্থ ও গরীব শিক্ষাদের কাছে। এ সময় তিনি শীতার্ত শিক্ষার্থীদের শরীরে কম্বল জড়িয়ে দেন। শীতার্ত শিক্ষার্থীরা ইউএনও প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

অফিসের দাফতরিক কাজ করে বিকালে কম্বল নিয়ে নিজেই ছুটে যান শীতার্ত মানুষের কাছে। সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে আসা কম্বল নিজে উপস্থিত থেকে বিতরণ করছেন ইউএনও শরীফ শাওন। সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার মাদ্রাসায় গিয়ে অসহায়, এতিম ও গরীব শিক্ষার্থী-মানুষদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন ইউএনও।

এ বছর চাহিদার তুলনায় শীতবস্ত্রের বরাদ্দ কম কিন্তু দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় প্রকৃত অসহায়, গরিব ও দুস্থদের কাছে কম্বল বিতরণ করতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। ত্রাণ তহবিলের এসব কম্বল পেয়ে হাসি ফুটছে শীতার্ত শিক্ষার্থীদের মুখে।

এই ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শরীফ শাওন বলেন, আমরা প্রত্যন্ত এলাকার মাদ্রাসায় গিয়ে দুস্থ, এতিম ও গরীব, শিক্ষার্থীদের কম্বল তুলে দিচ্ছি। প্রয়োজনে বেসরকারিভাবে আরও কম্বল সংগ্রহ করে অসহায় শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আমাদের বিতরণের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

ফরিদপুরে সরিষা ফুলে হলুদ গালিচা, কৃষকের মুখে হাসি

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৫৯ পিএম
ফরিদপুরে সরিষা ফুলে হলুদ গালিচা, কৃষকের মুখে হাসি

ফরিদপুরের মাঠজুড়ে এখন চোখ জুড়ানো সরিষা ফুলের হলুদ আভা। জেলার সদরসহ ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী, সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে চারপাশ। শীতের শেষে বসন্তের আগমনে এই হলুদ গালিচা প্রকৃতি যেমন সাজিয়েছে, তেমনি আশার আলো দেখাচ্ছে কৃষকদের চোখে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে গাছে ভালো ফুল এসেছে এবং ফলনও আশাব্যঞ্জক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরিষা চাষি কৃষকরা জানান, এবার বীজ বপনের পর পর্যাপ্ত শীত ও কুয়াশা না থাকায় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম হওয়ায় চাষে বাড়তি খরচও হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কমে লাভের সম্ভাবনা বেড়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষক রহিম মোল্যা ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সরিষা খুব ভালো হয়েছে। ফুল দেখে বুঝা যাচ্ছে ফলন ভালো হবে। বাজার দাম ঠিক থাকলে লাভবান হবো।”

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সংবাদকর্মী আবু নাসের হোসাইন ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘সরিষা ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। এছাড়া সরিষার তেল মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তাইতো, কৃষকরা অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষার আবাদ করে থাকে। অন্যদিকে, সরিষার দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।’

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত জমি পরিদর্শন করছেন।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডিএ) কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামামান ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, “চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে রয়েছে। রোগবালাই কম হওয়ায় ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলায় ১২ হাজার কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, “কৃষকদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি ও উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে, কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত গ্রুপ মিটিং করা হচ্ছে যাতে তেলজাত ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যায়।”

সরিষা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই গ্রামের পাশাপাশি শহর থেকেও মানুষ ভিড় করছেন মাঠের ধারে। অনেকেই ছবি তুলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন এই হলুদ সৌন্দর্যের দৃশ্য।

কৃষি বিভাগ আশা করছে, সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে ভোজ্যতেলের ঘাটতি কমবে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী হবেন। একই সঙ্গে ফরিদপুরের কৃষি অর্থনীতিতে সরিষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

মিয়া রাকিবুল, আলফাডাঙ্গা:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:৩৪ পিএম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যাত্রা শুরু হলো একটি নিজস্ব ও সুপরিসর খেলার মাঠের।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা প্রদর্শনের মাধ্যমে নবনির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন মাঠটির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে।

এতদিন উপজেলা প্রশাসনের জাতীয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানগুলো পরিষদের বাইরে স্থানীয় আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নিজস্ব মাঠে বিজয় দিবস উদযাপিত হলো।

​উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের পুরাতন ভবনের পেছনে বিশাল একখণ্ড নিচু জমি দীর্ঘকাল ধরে পরিত্যক্ত ও অকেঁজো অবস্থায় পড়েছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক এই স্থানটিকে ভরাট করে একটি আধুনিক মাঠে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন এবং স্থানীয় সমাজ সেবকদের সহযোগিতার আহ্বান জানান। ​ইউএনও’র সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণ সমাজসেবক তাজমিনউর রহমান তুহিন মাঠটি তৈরির দায়িত্ব নেন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরহুম আলহাজ্ব আলী আহমেদ মৃধার ছেলে। তুহিন হযরত শাহ্ জালাল মৎস্য এ্যান্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ও লেবাজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

​ব্যক্তিগত অর্থায়ন ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় এক মাস সময় ধরে বিপুল পরিমাণ মাটি ভরাট করে জায়গাটিকে একটি আধুনিক ও সমতল খেলার মাঠে রূপান্তর করেন তুহিন। তার এই নিঃস্বার্থ অবদানের ফলে বর্তমানে মাঠটি সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত এক মনোরম স্থানে পরিণত হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর এই মাঠেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কুচকাওয়াজ ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

​নতুন মাঠে প্রথম অনুষ্ঠান সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তাজমিনউর রহমান তুহিন বলেন, ‘তৎকালীন ইউএনও রফিকুল হকের অনুপ্রেরণায় আমরা কাজটি শুরু করি। আজ যখন দেখলাম এই সুন্দর মাঠে জাতি শ্রদ্ধাভরে বিজয় দিবস উদযাপন করছে, তখন মনটা ভরে গেল। এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি স্থায়ী মিলনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।’

​এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনিরুল হক সিকদার বলেন, ‘এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন একটি মাঠের অভাবে জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে যে সীমাবদ্ধতা ছিল, তা দূর হলো। সমাজসেবক তুহিনের মতো তরুণরা এগিয়ে এলে সমাজের আমূল পরিবর্তন সম্ভব।’

​উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুধীজন মনে করছেন, এই মাঠটি শুধু খেলাধুলা নয়, বরং বছরজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।