ফরিদপুরের কুমার নদে গভীর রাতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:২২ পিএম

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আদেশ অমান্য করে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের কুমার নদের উৎসমুখ মদনখালী এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল।
সরেজমিনে রোববার (১৬ ফেব্রয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের এম এম ভাটা সংলগ্ন এলাকায় কুমার নদ থেকে একাধিক ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন এম এম ব্রিংকসের মালিক শাহজাহান মিয়া। তার লোকজন দিয়ে রাতে ৩টি বেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটিগুলো ১০টি ট্রাকে নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশ অমান্য করে এম এম ব্রিংকের মালিক শাহজাহান মিয়া গভীর রাতে তাদের নির্দেশ অমান্য করে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তারা প্রভাবশালী তাই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ রাজি হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আরো জানান, শাহজাহান স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করছে, আমরা যারা নদী তীরবর্তী বাসিন্দা রয়েছি তাদের জন্য এখানে বসবাস হুমকির মুখে।
তারা জানান, বালু উত্তোলনে অনেক ফসলী জমি বিলীন হয়ে গেছে। আমরা যারা নদী তীরে বসবাস করছি এভাবে বালু উত্তোলন করায় আমরা বসবাস করতে পারবো না। এছাড়া রাতে বালু উত্তোলন করে শহর রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে তারা ট্রাকে করে বালু নিয়ে যায়। শহর রক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে। ধুলায় নদী তীরের বাসিন্দারাও আক্রান্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইরশাত জাহান জানান, বিষয়টি আমাদের জানা ছিলনা। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার স্যার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন শেষে স্যাররা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন। স্যারদের নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা বালু উত্তোলন করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিব হোসেন জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এখনই বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ০২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান মোল্লা ও পুলিশ সুপার মো: আব্দুল জলিল সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বালু উত্তোলনের স্থানগুলো ও শহর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন এবং নদী তীরের বাসিন্দারের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শুনেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেন। এসময় তারা জানান, আজকের পর থেকে কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে পারবে না। যদি কেউ দু:সাহস দেখায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও এখনো অবৈধভাবে সূর্য্যর আলো অস্তমিত হওয়ার পরেই বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
গত ২০১০-১১ অর্থবছরে ১শ ৬৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সাড়ে ১০ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কাজটি সম্পন্ন হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে, অবৈধভাবে বালু উত্তোল করায় হুমুকির মুখে রয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।
আপনার মতামত লিখুন
Array