খুঁজুন
সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫, ২০ শ্রাবণ, ১৪৩২

সালথায় কুমার নদে অবৈধ ড্রেজারের দিয়ে বালু উত্তোলন, আতঙ্কে দুই পাড়ের মানুষ

সালথা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৩৯ এএম
সালথায় কুমার নদে অবৈধ ড্রেজারের দিয়ে বালু উত্তোলন, আতঙ্কে দুই পাড়ের মানুষ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় কুমার নদ থেকে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এতে নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। নদীর তলদেশ গভীর হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের আশঙ্কা বাড়ছে, পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে অদূরে নির্মিত নতুন সেতুসহ আশপাশের স্থাপনা।

শনিবার (০২ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া নতুন ব্রীজের পশ্চিম পাশে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ পাড়ে প্রভাবশালী কামাল মেম্বারের ছত্রছায়ায় মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনে-রাতে সমান তালে ড্রেজার চালিয়ে কুমার নদকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একাধিক স্থানে গভীরভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। নতুন নির্মিত সেতুর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুর রহমান বালী বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যেখানেই তথ্য মিলছে, সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রুত ওই এলাকায়ও অভিযান চালানো হবে।

স্থানীয়রা অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে নদী ও পরিবেশ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাঁরা বলেন, যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নদী ভাঙন, পরিবেশ দূষণ এবং অবকাঠামোগত বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে গট্টি ইউনিয়নের বড়দিয়া বাজারে এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে কুমার নদে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি এ চক্রের দৌরাত্ম্য।

ব্যাংকে টাকার জন্য হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১১ পিএম
ব্যাংকে টাকার জন্য হাহাকার

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে বেপরোয়া লুটপাটে সৃষ্ট ক্ষত কৌশলে আড়াল করে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে এই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এতে হিতে-বিপরীত হয়েছে। লুট হয়েছে ছাপানো টাকাও। বেড়েছে তারল্য ও ডলার সংকট; মূল্যস্ফীতির পারদ হয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। অর্থনৈতিক মন্দা থেকে সৃষ্ট জনরোষ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী আমলের লুটপাটের ঘটনা তদন্ত শুরু করলে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। এখন পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে লোপাটকারীরা। এর বড় অংশই পাচার করা হয়েছে। এসব অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে বর্তমান সরকারের এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। মোট খেলাপি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি। এতে গত এক বছরে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ছিল প্রকট। ছোট-বড় অনেক ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা নিয়মিত টাকা তুলতে পারেননি। যা এখনো অব্যাহত। সবমিলিয়ে আলোচ্য সময়ে টাকার জন্য একরকম হাহাকার পড়েছিল ব্যাংক খাতে।

তবে আশার কথা-বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপে বন্ধ হয়েছে ব্যাংক খাতে নতুন লুটপাট। ব্যাংকগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রবণতাও বাতিল করা হয়েছে। পাচার করা টাকা উদ্ধারে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। দেশ ও বিদেশে কয়েকজন পাচারকারীর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধার করার জন্য নেওয়া হয়েছে বহুমুখী কার্যক্রম। এর সুফল আসতে একটু সময় লাগবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে লুটপাট ও পাচার বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে তারল্যের জোগান বাড়তে শুরু করেছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটপাটের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে এসব টাকা ব্যাংকে নেই। আইএমএফের মতে, ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধার করতে কমপক্ষে ৪ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে একীভূতকরণের তালিকায় থাকা ৫টি ব্যাংককে সচল করতে আগামী এক বছরের মধ্যে ২ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

লুটপাটের টাকা সবই খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে খেলাপি ঋণ শিগগিরই ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে অবলোপন ও আদালতের স্থগিতাদেশের করণে অনেক ঋণ খেলাপি হলেও তা অফিশিয়ালি দেখানো যাচ্ছে না। এগুলো যোগ হলে খেলাপি সাত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণের সব তথ্য দেখানো হচ্ছে না। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। কিন্তু সেগুলোও খেলাপি। অবলোপন করা এই ঋণের অঙ্ক প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। আদালতের মামলা ও অন্যান্য স্থগিতাদেশের কারণে এবং কিছু খেলাপি ঋণের তথ্য ব্যাংকগুলো গোপন করায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে দেখানো হচ্ছে না। অথচ সেগুলোও খেলাপি। এসব মিলে বহু আগেই খেলাপি ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার অভাব ছিল প্রকট। এর নেপথ্যে কয়েকটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-কিছু ব্যাংক দখল করে লুটপাট, ঋণ জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, গ্রাহকদের আস্থার অভাবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া, কয়েকটি ব্যাংককে বিগত সরকারের সময়ে দেওয়া অনৈতিক সুবিধা প্রত্যাহার করায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অব্যাহত ক্ষয়, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনে ভয়াবহ পতনের মাধ্যমে একটি ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত এবং একটি সংকীর্ণ অর্থায়ন ব্যবস্থা পেয়েছে।

ভঙ্গুর ব্যাংক খাতকে সচল করতে ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। ব্যাংকগুলো যাতে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদায়ি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা হিসাবে ১২ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রদান করেছে। এর মধ্যে ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকাই দেওয়া হয়েছে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া তারল্য ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করাতে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের অধীনে ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মে পর্যন্ত এই স্কিমের আওতায় নেওয়া ঋণের মধ্যে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দৈনন্দিন কার্যক্রমের চাহিদা মেটাতে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা প্রদান এবং অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতকে বিগত সরকার খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবে স্থিতি কোনো ব্যাংকের ঘাটতি হতে পারবে না। ঘাটতি হলেই বুঝতে হবে ওই ব্যাংকে ভয়াবহ সংকট রয়েছে। লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলোর ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ওই চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তা আড়াল করে রেখেছিল। বর্তমান গভর্নরও দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবে ঘাটতি সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক নিজেরাই ঘাটতি সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি কয়েকটি ব্যাংক এখনো ঘাটতিতে আছে। এসব ব্যাংককে জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থাকা চলতি হিসাবের স্থিতির ঘাটতি মোকাবিলায় প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধারের জন্য তিনটি বিশেষায়িত টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত সংস্কার টাস্কফোর্স প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করা, সম্পদের মান উন্নত করা এবং কার্যকর ব্যাংক ব্যবস্থা গঠনের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।

বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্চ মাসে ব্যাংক খাত পুনর্গঠন এবং সমস্যা সমাধানে একটি ইউনিট গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়ানো এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে দ্বিতীয় টাস্কফোর্সটি।

তৃতীয় টাস্কফোর্সটি বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত করে তা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। এ কাজের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট সাড়ে ৬ হাজারের বেশি সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।

ব্যাংক খাতের সংকট চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল’ নামে একটি নতুন আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যাংক খাতে সংকটের পাশাপাশি আশপাশের পদ্ধতিগত সংকটের (রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নানা অসন্তোষে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া) প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা এবং প্রশমিত করা। এটি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংক খাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি আগাম চিহ্নিত করে সমাধানের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এছাড়া একটি সেতু বা ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা হবে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে ঋণ আদায় বাড়ানো, যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু অচল সেগুলো সচল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করলেও এই সরকার প্রকাশ করে দিচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। নতুন খেলাপি হওয়া ৩ লাখ কোটি টাকার প্রায় সবই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুট করা অর্থ। যেগুলো আগে খেলাপি করা হয়নি। এখন সেগুলোকে খেলাপি করা হচ্ছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। কারণ প্রকৃত আয় কমায় খেলাপি ঋণ বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। প্রভিশন ঘাটতি বাড়ায় বেড়েছে মূলধন ঘাটতি। যে কারণে ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁচেছে।

ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। এর আগে ২০০৪ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যবর্তী সময়ে মূলধন রাখার হার বেড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লুটপাটের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ায় এখন মূলধন রাখার হার কমেছে।

 

সূত্র : দৈনিক যুগান্তর

 

ফরিদপুরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে তিন হাজার কৃষক

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ৯:৪৭ পিএম
ফরিদপুরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে তিন হাজার কৃষক

ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজার কৃষক বর্তমানে মানবেতরভাবে দিনযাপন করছে। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারনে তারা মাঠে কোন ফসল ফলাতে পারছেন না। তাছাড়া যারা অল্পকিছু ফসল ও সবজি বুনেছিলেন তারাও এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে প্রায় ২শ একর ফসলি জমি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি জায়গা ভরাট করে খালের প্রবেশমুখ বন্ধ করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু খালের পানি প্রবাহের প্রবেশমুখই নয়, রেল ব্রিজ ও মহাসড়কের একটি ব্রিজের নিচে মাটি ফেলে ভরাট করার কারণে পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকেরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। এদিকে, জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে খাল পুনরুদ্ধার ও কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি।

রবিবার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন পালন করে। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চাদপুর বারোখাদা, রসুলপুর, রুদ্রপাড়া এবং ৫নং ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকার প্রায় ২ হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় তিন হাজার কৃষক।এসব জমিতে ধান, পাট, তিল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হতো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবরামপুর এলাকায় অবস্থিত আর এম জুট মিলের মালিক সড়ক বিভাগের অধীনে থাকা বড় একটি জায়গা দখল করে সেটি ভরাট করে ফেলে। ফলে উক্ত জমিসহ আশপাশের এলাকার পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি মহাসড়কের একটি ব্রিজের মুখও ভরাট করে ফেলে। এ ব্রিজের নিচ দিয়ে বিভিন্ন স্থানের পানি ভুবনেশ্বর নদ হয়ে কুমার নদে গিয়ে পড়তো।

এটি বন্ধ হবার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ফসলি জমিগুলো। পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামের কৃষক বক্কার শেখ, সেলিম শেখ, মানু কাজী জানান, অল্প বৃষ্টিতেই তাদের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে তারা মাঠে কোন ফসল ফলাতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললেও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। কাকলী বেগম নামের এক কৃষানী বলেন, আমি কয়েক বিঘা জমিতে পুঁইশাক ও মরিচ লাগিয়েছিলাম, পানিতে সব ডুবে গেছে। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাবো। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাল ভরাট করার কারনেই পানি বেরোনোর কোন জায়গা নেই। ফসল ফলাতে না পেরে এ এলাকার প্রায় তিন হাজার কৃষক বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতরভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, গত কয়েকদিন আগে তারা এ বিষয়ে সকলকে নিয়ে একটি সভা করেছেন। বিষয়টির আশু কোন সুরাহা না হলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেবেন। তারা বলেন, রবিবার জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার কবির খান বাচ্চু বলেন, আর এম জুটমিলের মালিক সরকারি খাল ভরাট করার কারণেই আজকে তিন হাজার কৃষক মরতে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। আমরা চাই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আর এম জুট মিলের মালিক শাহিন শাহাবুদ্দিন মামুন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান যাতে করা যায় সেই চেষ্টা করা হবে।

ফরিদপুরে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুপানি, তলিয়ে যায় সড়ক

মো. ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা:
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ৭:৪৬ পিএম
ফরিদপুরে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুপানি, তলিয়ে যায় সড়ক

বৃষ্টি হলেই রাস্তা জুড়ে হাঁটুপানি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী ও পথচারীরা। এ চিত্র ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাঁকাইল পাগলের আস্তানা থেকে বিশ্বাস পাড়া জামে মসজিদ প্রর্যন্ত প্রায় ৭০০মিটার সড়কে।

এ অবস্থার জন্য সরকারি খালের ওপর অপরিকল্পিতভাবে স্থপনা নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেছেন সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় এ সড়ক। চলাচলেল অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি। হাঁটুপানি সড়কে অনেক সময় অটোভ্যান ও মোটরসাইকেল উল্টে পড়ে যায়। অনেকেই আহত হয়েছেন।

আলফাডাঙ্গা সদরে প্রবেশ মুখে বাঁকাইল এলাকার সড়কটি এখন হাঁটুপানি রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কয়েক শতাধিক অটোভ্যান, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে পৌরসভার এই কার্পেটিং সড়ক দিয়ে অবৈধ মাটির ট্রলি চলাচল করে রাস্তার বেহাল দশা হয়েছে।

সরেজমিন রাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার মাঝে হাঁটুপানি জমে গেছে। কোনো মানুষ পায়ে হেঁটে চলতে পারছে না। প্রায় আধা কিলোমিটার ঘুরে অন্য সড়ক দিয়ে সদর বাজারে প্রবেশ করতে হচ্ছে পথচারীদের। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়কের পাশ দিয়ে কোনো একসময় সরকারি খাল ছিল, অনেকেই সেই খালের জায়গা দখল করে অপরিকল্পিতভাবে বড় বড় স্থাপনা তৈরি করেছেন। যার জন্য পানি বের হতে পারছেনা।

স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলার চরডাঙ্গা মর্নিংস্টার স্কুলের শিক্ষিকা চায়না রাণী সাহা বলেন, এ সড়ক সংলগ্ন আমাদের বাসা। সড়কে পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এখন বাসা থেকে বের হতে পারছি না। অচিরেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ সড়ক দিয়ে রোজ শত শত যানবাহন যাতায়াত করে। আমরা খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছি। এর একটি স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

স্থানীয় ভূক্তভোগী উপজেলার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমীর সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টি হলেও পানি জমে যায়, পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার মোটরসাইকেল অন্যের বাড়িতে রাখতে হচ্ছে। এ সড়কটি পৌরসভার মধ্যে একটি ব্যস্ততম সড়ক। এলাকাবাসীর দাবি এর একটি স্থায়ী সমাধান।

সড়ক সংলগ্ন বাসিন্দা মরণ সাহা বলেন, এই সড়কটি যখন নতুন করে কার্পেটিং করে অনেক উচু ছিল ও ভালো ছিল। কিন্তু এ সড়ক দিয়ে প্রায় দিনই মাটির ট্রাক প্রবেশ করে রাস্তার বেহাল দশা করে ছেড়েছে। রাস্তাটি সংষ্কার করে মাটির ট্রাকসহ ভারি যান চলাচল বন্ধ করতে হবে।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার প্রকৌশলী জাকারিয়া আলম জানান, আপনার মাধ্যমে খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়টি অবগত করেছি। পানি নিষ্কাশন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যামে জানতে পারলাম। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বর্ষার মৌসুম শেষ হলে সড়কের কাজ ধরা হবে। তার আগে পানি নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খাল দখল ও অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন রাসেল ইকবাল।