ফরিদপুরে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর ইউনিয়ন পরিষদ দখলের পায়তারা
রেজাউল করিম বিপুল, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:৫৬ পিএম

faridpur protidin
ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ এর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
পঙ্কজ ১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নের কয়েকজন মেম্বারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরে তাদের নিয়ে পঙ্কজ নেতৃত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন এবং প্যানেল চেয়ারম্যান দেওয়ার দাবি জানান।
বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু অভিযোগ করেন, নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই সে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। ৫ ই আগস্টের পর পঙ্কজ ইউনিয়ন পরিষদ দখলে নিতে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
জোরপূর্বক ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার চেষ্টা করছে। সেখান থেকে ফিরেই মেম্বাররা বিষয়টি আমাকে জানান। তার প্রেক্ষিতে তারা নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ এর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ করে ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
দশজন মেম্বার স্বাক্ষরিত অভিযোগে দেখা যায়, তারা নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ এর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মজনুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসককে পঙ্কজ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ওই মেম্বারদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ। ৩ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের বরাবর চেয়ারম্যানের অনুপস্থিত থাকা ও নানাবিধ অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন তারা। পরের দিন ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মেম্বাররা ফের পঙ্কজ এর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ তুলেন।
মজনু অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসকের কাছে প্রথম দিন অভিযোগ দেয়ার সময় পঙ্কজ নিজে নেতৃত্ব দেন। অথচ সে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের কেউ নন। শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে পংকজ ও রঞ্জন আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। টাকা না দিলে আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে বসতে দেবে না। সবশেষ ৩ লাখ টাকার কথা বলছে এই টাকা দিলে আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে বসতে দিবেন। তিনি ইউনিয়নের কেউ না হয়েও সকল কার্মকান্ডে নাকগলিয়ে মেম্বারদের স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে দিচ্ছেন না। তার ভাই রঞ্জনও হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোসলেম উদ্দিন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান পঙ্কজ বিএনপি নেতা। বর্তমান পরিস্থিতি ভালো না তাই তার ভয়ভীতিতে আমি স্বাক্ষর করেছি। আমার এলাকায় চলাচল করতে হয় তারা বলছে তাদের সাথে না গেলে আমি এলাকায় চলাচল করতে পারবো না। তাই স্বাক্ষর করা ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য (১,২ ও ৩) হাছিনা বেগম বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান পঙ্কজ গন্যমান্য ব্যক্তি সে বললো দেখা করতে। তখন তার সাথে দেখা করতে যায়। তারপর সে জোর করে স্বাক্ষর নেন। আমাকে লেখাটা পড়তেও দেয়নি। এমনভাবে কয়েকজনের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন পঙ্কজ । তিনি প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করছে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু মেম্বারদের মধ্যেও দলাদলি আছে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করে থাকতে পারে তবে অধিকাংশ মেম্বারদের জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ বলেন, ৩০ বছর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। সবসময় জনগনের সাথেই ছিলাম। কখন ভয়ভীতির রাজনীতি করি নাই্। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা তিনি পলাতক থাকায় সাধারন মানুষের বিভিন্ন ধরনের সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু চেয়ারম্যান পলাতক তাই প্যানেল চেয়ারম্যান কে দিয়ে যাতে কাজ করানো যায় সে ব্যাপারে মেম্বাররা আমার সাহায্য চাইলে আমি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আমার প্রতিপক্ষ মজনু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা ও ষড়যন্ত্র করছে।
আপনার মতামত লিখুন
Array