খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে ভূমি আইন লঙ্ঘন করে পুকুর খনন, কৃষি জমির সর্বনাশ

তন্ময় উদ্দৌলা, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩৪ পিএম
ফরিদপুরে ভূমি আইন লঙ্ঘন করে পুকুর খনন, কৃষি জমির সর্বনাশ
‘ভূমির আকার পরিবর্তন করা যাবে না’- এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও ফরিদপুরের পৌর সদরে উর্বর ও ফসলি জমিকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে করে জেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।
দিনরাত বিরতিহীনভাবে পুকুর খনন করে সে মাটি আবার বিভিন্ন ইটভাটায় করা হচ্ছে বিক্রি। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১০টায় পৌরসভার ৪ং ওয়ার্ডের মৃগি মৌজায় জমির মালিক হানিফ মোল্যা (৪৫)  সহিদ  (৩৮) নামের একজন পুকুর ব্যবসায়ীকে দিয়ে এভাবেই তা নিজ ফসলি জমি কাটছেন। জেলা প্রশাসকের কোনরকম অনুমতি ছাড়াই এভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে এলাকার বিভিন্ন ভাটায় এসব মাটি  সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি ক্ষেত, কোথাও ধান ও গম আবার কোথাও সরিষা ক্ষেত। এরই মাঝে স্থানীয় এক জমির মালিক হানিফ মোল্যার  কৃষি জমিতে ভূমি আইনের তোয়াক্কা না করেই ভেকু দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেছে। ভেকু দিয়ে উত্তোলন করা মাটি ট্রাকে করে যাচ্ছে আশপাশের ভাটাতে। মাঠের মধ্যের জমি হওয়ায় রাস্তা না থাকায় ব্যাবহার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ক্ষেতের জমি।  এতে করে মাঠের অন্যান্য ক্ষেত মালিকরা তাদের ফসলি জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এর জন্য কৃষি জমি ধ্বংস হবার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে  গ্রামীণ রাস্তাঘাট  এমনটায় অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে এলাকাবাসী প্রশাসনকে বার বার অবগত করলেও মিলছে না কোন সমাধান।
পার্শ্ববর্তী জমির মালিক হাসান খান বলেন, আমাদের এলাকাই এই মাটটিই একমাত্র কৃষি জমি এবং এখানে আমরা ফসল উৎপাদন করি, এখন ধান লাগিয়েছি। আমার জমির পাশে এভাবে পুকুর খনন করার ফলে পরবর্তীতে  পুকুরের পাড় ধ্বসে যে কোন সময় আমার ক্ষেত নষ্ট হতে পারে। ভূমিখেকো হানিফ মোল্যাকে বার বার অবগত করলেও কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করেন না।
পার্শ্ববর্তী জমির আরেক মালিক ফরহাদ হোসেন বলেন, হানিফ মোল্লা মূলত পতিত আওয়ামীলীগের দোসর, আওয়ামী সরকার  আমল থেকে তিনি এভাবে ফসলী জমির মাটির রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে আমাদের এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অথচ এই কৃষি জমি থেকে আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। এ বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে তবে অদৃশ্য শক্তি বলে তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এর সঠিক প্রতিকার চাই।
মাটিকাটায় অভিযুক্ত জমির মালিক হানিফ মোল্লা বলেন, আমার পুরাতন পুকুর সংস্কারের জন্য ডিসি অফিস বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়েছি তবে এখনো কোনো অনুমতি পাইনি। আশা করছি অনুমতি পেয়ে যাবো। এদিকে অনুমতি ছাড়া মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন ইটভাটায় মাটি দিচ্ছি না, বরং বিভিন্ন স্থান ভরাটের কাজে আমার কাছ থেকে অনেকেই মাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ফসলি জমির মাটি উত্তলনের বিষয়ে, ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াসির কবির বলেন, মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। স্থানীয় ইউএনওকে অবগত করা হবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

মিয়া রাকিবুল, আলফাডাঙ্গা:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:৩৪ পিএম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যাত্রা শুরু হলো একটি নিজস্ব ও সুপরিসর খেলার মাঠের।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা প্রদর্শনের মাধ্যমে নবনির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন মাঠটির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে।

এতদিন উপজেলা প্রশাসনের জাতীয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানগুলো পরিষদের বাইরে স্থানীয় আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নিজস্ব মাঠে বিজয় দিবস উদযাপিত হলো।

​উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের পুরাতন ভবনের পেছনে বিশাল একখণ্ড নিচু জমি দীর্ঘকাল ধরে পরিত্যক্ত ও অকেঁজো অবস্থায় পড়েছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক এই স্থানটিকে ভরাট করে একটি আধুনিক মাঠে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন এবং স্থানীয় সমাজ সেবকদের সহযোগিতার আহ্বান জানান। ​ইউএনও’র সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণ সমাজসেবক তাজমিনউর রহমান তুহিন মাঠটি তৈরির দায়িত্ব নেন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরহুম আলহাজ্ব আলী আহমেদ মৃধার ছেলে। তুহিন হযরত শাহ্ জালাল মৎস্য এ্যান্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ও লেবাজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

​ব্যক্তিগত অর্থায়ন ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় এক মাস সময় ধরে বিপুল পরিমাণ মাটি ভরাট করে জায়গাটিকে একটি আধুনিক ও সমতল খেলার মাঠে রূপান্তর করেন তুহিন। তার এই নিঃস্বার্থ অবদানের ফলে বর্তমানে মাঠটি সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত এক মনোরম স্থানে পরিণত হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর এই মাঠেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কুচকাওয়াজ ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

​নতুন মাঠে প্রথম অনুষ্ঠান সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তাজমিনউর রহমান তুহিন বলেন, ‘তৎকালীন ইউএনও রফিকুল হকের অনুপ্রেরণায় আমরা কাজটি শুরু করি। আজ যখন দেখলাম এই সুন্দর মাঠে জাতি শ্রদ্ধাভরে বিজয় দিবস উদযাপন করছে, তখন মনটা ভরে গেল। এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি স্থায়ী মিলনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।’

​এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনিরুল হক সিকদার বলেন, ‘এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন একটি মাঠের অভাবে জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে যে সীমাবদ্ধতা ছিল, তা দূর হলো। সমাজসেবক তুহিনের মতো তরুণরা এগিয়ে এলে সমাজের আমূল পরিবর্তন সম্ভব।’

​উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুধীজন মনে করছেন, এই মাঠটি শুধু খেলাধুলা নয়, বরং বছরজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।

সদরপুরে অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করল প্রশাসন

শিশির খাঁন, সদরপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৬ পিএম
সদরপুরে অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করল প্রশাসন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার পর নির্বাচন কমিশন সকল প্রকার রাজনৈতিক ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশনা দেন। গত শনিবার রাত নয় টায় ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করেননি তারা। সেই নির্দেশনা না শুনায় ফেস্টুন অপসারণ করেছে প্রশাসন।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়ার নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন ব্যানার ফেস্টুন এবং পোস্টার অপসারণ অভিযান শুরু করেন।

অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সদরপুর বাজার, কৃষ্ণপুর মোড় ও থানার মোড় এলাকায় অপসারণ করেন। এ সময় ভূমি অফিসের কর্মচারী সহ গ্রাম পুলিশের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সদরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আনজুম পিয়া বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন এবং পোস্টার অপসারণ করেন নাই বিধায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপসারণ অভিযান শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর-৪ নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য সকল প্রার্থীর সব ধরণের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড , গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী নিজ খরচে/দায়িত্বে অপসারণ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হলো ২৪ রোগী

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:১৮ পিএম
বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হলো ২৪ রোগী

ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের আওতাধীন সদরপুর উপজেলা থেকে ২৪ জন অসহায় ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রোগীকে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

এর আগে দুই ধাপে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলায় বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ধাপে সদরপুর উপজেলায় ৩৫ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে চরভদ্রাসন উপজেলায় ২৮ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন (লেন্সসহ) সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল।

এই পুরো কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও দেখভাল করছেন ফরিদপুর-৪ আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুল।

জানা গেছে, চোখের চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি এর আগেও একাধিকবার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প (ওষুধসহ) এবং ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করেছেন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম খান বাবুল জানান, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এসব মানবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।