খুঁজুন
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে শিশু হত্যাসহ এক মাসে ৮ খুন, উদ্বেগ বাড়ছে

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৭ এএম
ফরিদপুরে শিশু হত্যাসহ এক মাসে ৮ খুন, উদ্বেগ বাড়ছে

ফরিদপুরে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শিশু ও নারীসহ আটটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ২০ নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত এসব ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দু’টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করা হয়েছে। বাকি ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মাত্র দুটি ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলোচিত একটি শিশু হত্যাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও এখনও রহস্য উদঘাটন হয়নি।

🟥 আলোচিত শিশু জায়ান হত্যাকাণ্ড

গত ২০ নভেম্বর আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামে সাত বছর বয়সী শিশু জায়ান মোল্যার মরদেহ বাড়ির পাশের একটি বাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটির মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় পাঁচ দফা মানববন্ধন হলেও এখনও হত্যার প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের পরিচয় উদঘাটিত হয়নি। এক প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলেও পুলিশ রহস্য জানাতে পারেনি।

🟥 ডাব ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ড

২২ নভেম্বর বোয়ালমারীর রামচন্দ্রপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে ডাব ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের মরদেহ উদ্ধার হয়। এক মাস পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি।

🟥 চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত

২৩ নভেম্বর নগরকান্দায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে শাহীন শিকদার নামে এক যুবক নিহত হন। শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

🟥 মাছ ব্যবসায়ী উৎপল সরকার হত্যার রহস্য উদঘাটন

৪ ডিসেম্বর সালথার কালীতলা ব্রিজ এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী উৎপল সরকারকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। পরকীয়া ও পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

🟥 যৌনপল্লী থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

১৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌনপল্লী থেকে নাসরিন নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে।

🟥 কলাবাগান থেকে রিকশাচালকের গলাকাটা মরদেহ

১৮ ডিসেম্বর কোতোয়ালী থানাধীন এলাকায় রিকশাচালক টিপু সুলতানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার হয়। সম্প্রতি এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

🟥 হাত বাঁধা বিবস্ত্র নারীর মরদেহ

১৯ ডিসেম্বর সদরপুরে এক নারীর হাত বাঁধা বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার হয়। পিবিআই ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

🟥 বঁটির কোপে ভাশুর নিহত

ভাঙায় ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বঁটির কোপে টুকু মোল্লা নিহত হন। অভিযুক্ত নারী পলাতক, মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম বলেন, “সালথা ও কোতয়ালীর দু’টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। অন্যান্য ঘটনাগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। দ্রুতই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

এক মাসে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ফরিদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

আলফাডাঙ্গায় গ্রাম্য দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল এক ব্যক্তির, এলাকা উত্তপ্ত

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০৭ এএম
আলফাডাঙ্গায় গ্রাম্য দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল এক ব্যক্তির, এলাকা উত্তপ্ত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম গ্রামে গ্রাম্য বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় সাইফুল সর্দার ওরফে সাইফেল (৪৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইসমাইল মোল্যা নামে আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার সময় কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১টার দিকে রাতের আঁধারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য ও পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এরই জেরে রাতের বেলা প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাইফুল সর্দারের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুল সর্দারকে উদ্ধার করা হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় আহত ইসমাইল মোল্যাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

খবর পেয়ে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় যাতে নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. আজম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূর্ব বিরোধের জেরে অতর্কিত হামলায় এ ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহতের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম।

হাড় কাপাঁনো শীতে জবুথবু ফরিদপুরের জনজীবন

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০০ এএম
হাড় কাপাঁনো শীতে জবুথবু ফরিদপুরের জনজীবন

হঠাৎ করে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় হাড় কাপাঁনো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের জনজীবন। ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ, দিনমজুর, ভ্যানচালক, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা।

সকালে শহরের সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। অনেকেই গরম কাপড় জড়িয়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের সর্দি-কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

শীতের প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষের আয়ে। ভ্যানচালক ও রিকশাচালকরা জানান, সকালবেলা যাত্রী কম থাকায় আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দিনমজুরদের অনেকেই কাজ না পেয়ে বসে আছেন। নদী ও চরাঞ্চলের মানুষ শীতের প্রকোপে আরও বিপাকে পড়েছেন। পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

শীতের কারণে জেলার হাট-বাজারগুলোতেও আগের মতো ভিড় নেই। সবজির বাজারে কিছুটা দাম বাড়তির দিকে, কারণ ভোরের কুয়াশায় কৃষকরা সময়মতো পণ্য আনতে পারছেন না। তবে শীতের সবজি উঠতে শুরু করায় ক্রেতাদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা গরম কাপড় ব্যবহারের পাশাপাশি ঠান্ডা এড়িয়ে চলা ও শিশু-বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা এখনও অপ্রতুল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। দ্রুত আরও শীতবস্ত্র বিতরণ ও মানবিক সহায়তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

হাড় কাপাঁনো এই শীতে ফরিদপুরবাসী এখন তাকিয়ে আছে একটু উষ্ণতার আশায়, যেন স্বস্তি ফিরে আসে।

৮০ বছরেও হয়নি সেতু, বেইলি জোড়াতালিতে দুর্ভোগে ফরিদপুরবাসী

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:২৪ এএম
৮০ বছরেও হয়নি সেতু, বেইলি জোড়াতালিতে দুর্ভোগে ফরিদপুরবাসী

ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে কুমার নদের ওপর একটি স্থায়ী পাকা সেতু না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই পাড়ের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। সরকারি হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার, সরকারি তিতুমীর বাজার ও বৃহত্তর নিউমার্কেট—এই তিনটি পুরনো ও জনগুরুত্বপূর্ণ বাজারকে সংযুক্ত করা সেতুবন্ধনে দীর্ঘ ৮০ বছরেও নির্মিত হয়নি একটি স্থায়ী সেতু। বারবার অস্থায়ী বেইলি সেতু সংস্কার আর জোড়াতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়া এই তিন বাজারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হলে অন্তত অর্ধকোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হতো। একই সঙ্গে শহরের যানজট কমে যেত প্রায় ৬৬ শতাংশ। দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠত বাজার, সড়ক ও সেতু এলাকা, ফিরত কুমার নদের নান্দনিক সৌন্দর্যও।

এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদপুরের সমাজসেবক ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান পিংকু বলেন, “পরিকল্পিতভাবে সেতুটিকে অনওয়ে সড়ক সেতু হিসেবে গড়ে তুললে ফরিদপুর শহরের চেহারাই পাল্টে যেত। কিন্তু বছরের পর বছর শুধু বেইলি সেতু মেরামতের নামে লোক দেখানো কাজ হয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবছর ৫০–৬০ লাখ টাকা বা তারও বেশি ব্যয় দেখিয়ে সেতু সংস্কারের বিল তোলা হলেও স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।

পিংকু সেতুর দুই পাশে একাধিক সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে শহরের যানবাহন চলাচল সহজ হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।

শরীয়তুল্লাহ বাজারের সাবেক সভাপতি মো. নুর ইসলাম মোল্লাও একই দাবি জানিয়ে বলেন, “৮০ বছরে অনেক সরকার এসেছে গেছে, কিন্তু শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কেউ করেনি। বেইলি সেতুর পরিবর্তে এখনই একটি প্রশস্ত পাকা সেতু প্রয়োজন।”

এদিকে সম্প্রতি আলীমুজ্জামান বেইলি ব্রিজে ফের অস্থায়ী মেরামত কাজ শুরুর খবরে শহরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে সেতুটি দিয়ে সব ধরনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার জানান, ‘বেইলি ব্রিজটি সংস্কার প্রয়োজন হওয়ায় কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন সেতু নির্মাণের একটি পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে কবে নাগাদ স্থায়ী পাকা সেতুর কাজ শুরু হবে—সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা দিতে পারেননি তিনি।’

ফলে ফরিদপুরবাসীর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—আর কত বছর বেইলি সেতুর জোড়াতালিতেই চলবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা?