ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফরিদপুরের বারবার নির্বাচিত জননন্দিত এমপি ও মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে ফরিদপুরের রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটেছিল এক চরম ঔদ্ধত্য অপশক্তির।
সেই সময় এই জনপদের সাধারণ মানুষ যখন তটস্থ, ভয়ে কেউ সত্য বলার সাহস হারিয়েছিল, বিবেকের কন্ঠস্বরগুলো ক্রমেই স্তিমিত হয়ে এসেছিলো, সেই কঠিন দুঃসময়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের ভরসার মধ্যমনি হয়ে যিনি হয়ে উঠেছিলেন সাহসের বাতিঘর- তিনিই আমাদের সম্মানিত অগ্রজ, প্রিয় সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ।
এক সংগ্রামী জীবনের অধিকারী মহৎ সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব। যিনি ছিলেন দুর্বিনীত অথচ স্পষ্ট আর প্রিয়ভাষী, জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্টের আতঙ্ক, সাহসী সাংবাদিকতার প্রেরণা, অনুজদের নিকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব; প্রাচীন জনপদ ফরিদপুর জেলার সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের মনিকোঠায় আসীন শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালবাসার এক নাম- সকল রক্তচক্ষুর ভয়-ডর উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের জন্য যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। দেশ ও দশের স্বার্থে, শান্তি, সাম্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় যিনি আমৃত্যু আপোষহীনভাবে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত থেকেছিলেন।
আজ বুধবার সেই অকুতোভয় সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের এদিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি ডায়াবেটিক ফুটে আক্রান্ত হন। ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে পায়ের ফোড়ার অপারেশন করিয়েছিলেন। তবে ডায়বেটিক ফুট অপারেশনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ না করায় তিনি পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি।
সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লার সাবেক সরকারী কর্মকতা মরহুম ফজলুল করিমের সেঝো সন্তান ছিলেন। তিনি অকৃতদার ছিলেন। পেশাগত জীবনে প্রথমে দৈনিক মিল্লাত ও দৈনিক দিনকালে কাজ করেন। পরবর্তীতে অনলাইন নিউজ এজেন্সি বাংলার চোখের প্রতিনিধি ও ফরিদপুর টাইমসের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলার শিশু সংগঠনের ফরিদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব ছিলেন। এছাড়া তিনি ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও আজীবন সদস্য ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশপাশি তিনি শিল্প-সাহিত্যের প্রসার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধামনন বিকাশে উল্লেখযোগ্য কাজ করে গেছেন। একজন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্য উদ্ঘাটনে সাহস জোগানো এবং জেলা শহর ফরিদপুরের সাংবাদিক সমাজের পেশাগত ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে তুলতে প্রথম সারিতে থেকে বিশেষ অবদান রাখেন।
অকুতোভয় এই চারণ সাংবাদিক সকল দলমত ও পক্ষপাতিত্বের উর্ধ্বে দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন অপোষহীন প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে চিরস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকবেন।
আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। দয়াময় আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মর্যাদা দান করুন।
লেখক : হারুন আনসারী রুদ্র, সিনিয়র সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন
Array