খুঁজুন
সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ভালো কাজের বিনিময়ে পেট ভরে খাওয়া

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:২২ পিএম
ভালো কাজের বিনিময়ে পেট ভরে খাওয়া

 রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে আছেন নানান বয়সি মানুষ। এক তরুণ প্রত্যেককে দুটি করে প্রশ্ন করছেন আর উত্তরগুলো লিপিবদ্ধ করছেন কাগজে।

 

প্রশ্নগুলো হলো- আপনার নাম কি এবং আজ আপনি কি ভালো কাজ করেছেন? উত্তর নিয়েই বিনামূল্যে প্লেটে তুলে দেওয়া হচ্ছে গরম গরম ভাত-তরকারি।

এমন ব্যতিক্রমী দৃশ্য চোখে পড়বে প্রতিদিন দুপুরে বন্দরনগর চট্টগ্রামের কলেজ সড়ক এবং সন্ধ্যায় কাজীর দেউড়ি চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের পাশে, আর এ উদ্যোগের নাম ‘ভালো কাজের হোটেল’।

 

বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকায় একদল তরুণ ভালো কাজকে উৎসাহিত করতে খুলে বসেন এ ভ্রাম্যমাণ হোটেলটি। বর্তমান এটি সাংগঠনিক রূপে ‘ইউথ ফর বাংলাদেশ’ নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামে বিভিন্ন স্পটে প্রায় চার হাজারের অধিক দাতা সদস্যের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।

শনি থেকে বৃহস্পতিবার অসহায় মানুষকে অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার দিয়ে থাকেন তারা। শুক্রবার খাবার নিয়ে ছুটেন বিভিন্ন মসজিদ, এতিমখানা কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। দৈনিক ১০ জন সদস্য এ কাজে সহায়তা করেন।

সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় চার হাজারের বেশি মিলের আয়োজন থাকে এবং চট্টগ্রামে প্রতিদিন সাড়ে চারশ মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তাদের দেওয়া খাবার খেয়ে।

গল্পটা শুরু হয় ২০০৯ সালে। রাজধানী ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন তরুণের মন নাড়া দিয়েছিল অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এরপর গুটি গুটি পায়ে আজ এর অবস্থান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা  ছাড়িয়ে চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

চট্টগ্রামে হোটেলটি চালুর প্রথম দিকে মাসে একদিন দিয়ে শুরু হয়, পরবর্তীতে সপ্তাহে ১ দিন করা হয় এবং গত একবছর ধরে সপ্তাহে ৭ দিন দুপুর ও সন্ধ্যায় চলমান হোটেলের কার্যক্রম।

ভালো কাজের হোটেলের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, তারা প্রত্যেকেই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা এখানে ভালো কাজের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসেন। খাবার বিতরণে কোনও নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় মাঝে মধ্যে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। রোদ-বৃষ্টি কিংবা আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়, বিশেষ করে যেসব জায়গায় খাওয়ানো হয় সেখানে ছাউনি নেই।

তবে সব বাধা উৎরে আলোর গতিতে ছুটছে ভালো কাজের হোটেলের কর্যক্রম। রান্না করার জন্য চট্টগ্রামের সরাইপাড়া এলাকায় রয়েছে কিচেন, বাবুর্চি আর নির্ধারিত কর্মচারী।

ভালো কাজের হোটেল চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক মো. মোরশেদ বলেন, হোটেলটি পরিচালনার জন্য দৈনিক সদস্যদের কাছ থেকে জনপ্রতি দশ টাকা হরে মাসে তিনশ টাকা নেওয়া চাঁদার টাকা একত্রিত করা হয়। বর্তমানে চার হাজারের বেশি সদস্য এবং কিছু দাতা সদস্যের সহযোগিতায় হোটেলটি পরিচালিত হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানান কারণে মাসে ত্রিশ দিনে ত্রিশ দিন কর্মসূচি পরিচালনা করতে অসুবিধা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা কুড়িগ্রাম নয়, সুযোগ মিললে সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবকরা ছড়িয়ে দিতে চান এ কার্যক্রম। অন্তত একবেলা হলেও কিছু দুখি মানুষকে পেট ভরে খাওয়াতে চান তারা।

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি তাবরীজের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:৪৮ পিএম
ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি তাবরীজের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ তাবরীজকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনর্বিবেচনা শেষে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে তিনি পুনরায় স্বীয় পদে বহাল হলেন।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন যৌথভাবে ব*হি*ষ্কা*রাদেশ প্র-ত্যা-হারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে প্রেরিত এই বার্তায় আরও উল্লেখ করেন যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম আরও সুদৃঢ় করতে এবং ভবিষ্যৎ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুরে মন্দিরের জমির বিরোধকে ঘিরে অপপ্রচার, যা বলছে পুলিশ

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০৩ পিএম
ফরিদপুরে মন্দিরের জমির বিরোধকে ঘিরে অপপ্রচার, যা বলছে পুলিশ

সম্প্রতি ফরিদপুরের সদরপুরে মন্দিরের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব ও অপপ্রচারের অভিযোগে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পুলিশ।

রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে ফরিদপুর জেলা পুলিশ এ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি “HINDUS NEWS” নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবং ফেসবুক পেইজে “ফরিদপুরের সদরপুরে মন্দিরের জমি নিয়ে সংঘর্ষ- পালিয়ে যাচ্ছে হিন্দু পরিবার, টহলে পুলিশ” শিরোনাম একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত সংবাদে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের হরিনা গ্রামে রাধা গোবিন্দ মন্দিরের জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর সহ হামলার পর ভয়-আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক হিন্দু পরিবার বলে দাবী করা হয়। বিষয়টি ফরিদপুর জেলা পুলিশের নজরে এসেছে। উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্ত এবং প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ নিশ্চিত করছে যে, ছড়িয়ে পড়া ওই তথ্যটি অতিরঞ্জিত, অসত্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘হরিনা মৌজার ৫৮৪ নং খতিয়ানের ৪১২/৪১৩ দাগে ৪৬ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন মহাদেব ঘোষ। আনুমানিক ৬/৭ মাস পূর্বে মহাদেব ঘোষ উক্ত জমি স্থানীয় বাবুল বেপারী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী সুশান্ত মালো গং-এর নিকট সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন।’

জেলা পুলিশ জানায়, ‘জমি বিক্রির বিষয়টি মহাদেব ঘোষের প্রতিপক্ষ মানিক ঘোষ গং জানতে পারলে তারা দাবি করেন যে, ওই জমিটি সার্বজনীন মন্দিরের। এ নিয়ে বিক্রেতা মহাদেব ঘোষ এবং ক্রেতা সুশান্ত মালো ও বাবুল বেপারী পক্ষের সাথে প্রতিপক্ষ মানিক ঘোষ পক্ষের বিরোধ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, বিরোধটি মূলত ‘জমির মালিক/বিক্রেতা ও ক্রেতা’ বনাম ‘প্রতিপক্ষ দাবিদার’-এর মধ্যে, যেখানে উভয় পক্ষেই সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন জড়িত রয়েছেন।

মারামারি ও পুলিশি পদক্ষেপ:

‘গত ১৬ নভেম্বর ভোরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। খবর পাওয়া মাত্রই সদরপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুশান্ত মালো নামের একজনকে আটক করে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ কর্তৃক বাবুল বেপারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

গুজব নিরসন:

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত “হামলার ভয়ে ৫ শতাধিক হিন্দু পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে” এবং “চরম নিরাপত্তাহীনতা”—এই তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন । সরেজমিনে তদন্তে দেখা গেছে, কোনো পরিবার গ্রাম ছেড়ে যায়নি এবং বর্তমানে এলাকাটি পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।’

সতর্কবার্তা:

একটি স্বার্থান্বেষী মহল সাধারণ জমি সংক্রান্ত বিরোধকে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে জনমনে ভীতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হলো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যেকোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলা পুলিশ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উক্ত ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।

চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীতে অভিযান: ৬ বাঁধ, ২ ভেসাল অপসারণ

আসলাম বেপারী, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:২৩ পিএম
চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীতে অভিযান: ৬ বাঁধ, ২ ভেসাল অপসারণ

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে নির্মিত ৬টি আড়াআড়ি বাঁধ এবং ২টি ভেসাল অপসারণসহ ১০টি চায়না দুয়ারি ও ১০ কেজি মাছ জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।

রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়।

উপজেলা মৎস্য দপ্তর জানায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ বসিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুনের নির্দেশনায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাঈম হোসেন বিপ্লবের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে সহযোগিতায় ছিল চরভদ্রাসন থানার চৌকস পুলিশ টিম এবং উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সকল কর্মকর্তা–কর্মচারী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুটি প্রভাবশালী মহলসহ কয়েকটি জেলে গোষ্ঠী নদীতে এসব বাঁধ নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ আয় করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযানে পদ্মা নদী থেকে ৬টি আড়াআড়ি বাঁধ ও ২টি ভেসাল অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে একটি বাঁধের প্রস্থ ছিল প্রায় ১ কিলোমিটার এবং বাকি ৫টি ছিল ৫০০ মিটার করে, মোট ৩.৫ কিলোমিটার। এছাড়া জব্দ করা হয় ১০টি চায়না দুয়ারি ও ১০ কেজি মাছ। নিষিদ্ধ জাল ও দুয়ারি জনসম্মুখে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় এবং উদ্ধার করা মাছ বাদুল্লা মাতুব্বরের ডাঙ্গী মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাঈম হোসেন বিপ্লব বলেন, পদ্মা নদীর মৎস্য সম্পদ ও প্রজনন রক্ষায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। নদীতে মাছের অবাধ চলাচল ও প্রজনন নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।