খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২৪ আশ্বিন, ১৪৩২

সালথায় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা

আবু নাসের, সালথা:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫, ২:০৬ পিএম
সালথায় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা

ফরিদপুরের সালথায় শুরু হয়েছে সোনালী আঁশ পাট কাটা। খালে-বিলে ও মাঠে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে চাষিরা। রাস্তার খাদে ও পুকুরে মাটি দিয়ে পাট জাগ দেওয়া শুরু হলেও আঁশের মান তেমন ভালো হচ্ছে না। এছাড়াও পাট কেটে কুমার নদে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। পাটচাষীদের দাবী ফরিদপুর চুনারুঘাট স্লুইচগেইট খুলে দিলে পানি পাবে তারা।

চাষিরা পাটের ভালো ফলনের আশা করলেও পাট জাগ দেওয়ার জন্য খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আবার পাটের মান ভালো না হলে ন্যায্যমূল্যের চিন্তা তো আছেই।

চাষিদের দাবি, পাটের ন্যায্য দাম নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বীজ, জৈব ও রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকদের মজুরির মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তারা সরকারের কাছে বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম কমানোর সহ ফরিদপুর স্লুইচগেইট খুলে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন সালথার চাষীরা।

পাট চাষি আফজাল হোসেন বলেন, খালে-বিলে, নদী-নালায়, পুকুরে পানি নেই; পাট জাগ দেব কোথায়? ভালো পানি না হলে পাটের রং ভালো হবে না। আমাদের দাবি, পানির জন্য যেন স্লুইচগেইট খুলে দেওয়া হয়।

উপজেলার আরেক চাষী রকমান মোল্যা বলেন, বৃষ্টিতে পাটের খেতে ছিলছিলে পানি হয়েছে, এতে পাটের গোড়া নষ্ট হয়ে গেছে। খেতে বেশি পানি হলে পাটের গোড়া পঁচন ধরতো না। খেতের পাট খেতেই জাগ দেওয়া যেত। এখন নছিমন ও ভ্যানে করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি পাট জাগ দিতে। পানির অভাবে পাটের কালার (রং) খারাপ হচ্ছে, দামও কম পাবো। সব মিলিয়ে চিন্তায় আছি।

পাটচাষী কামাল হোসেন বলেন, আমাদের আটঘর ইউনিয়নের মাঠে-ঘাটে কোথাও পানি নেই। পাট কেটে জাগ দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ফরিদপুর স্লুইচগেটের অপরপাশে পানি বাড়ছে, তাই স্লুইচগেট খুলে দিলে আমরা পানি পেতাম।

সালথা উপজেলা কৃষি অফিসার সুদর্শন সিকদার বলেন, এবছর সালথায় ১৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে পাট খেতে পানি জমে পাটের গোড়া পঁচন ধরেছে। এখন যারা পাট কাটবে তাদের ফলন ভালো হবে।

তিনি আরো বলেন, পানি না থাকায় পাট পঁচনে সমস্যা হচ্ছে পাট চাষীদের, এতে পাটের রং খারাপ হতে পারে। ফরিদপুরের স্লুইচগেইট যাতে খুলে দেয়, সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি।

চিঠি হারিয়ে গেলেও ঐতিহ্যের সাক্ষী লাল ডাকবাক্স

দেলোয়ার হোসেন বাদল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২:২৭ পিএম
চিঠি হারিয়ে গেলেও ঐতিহ্যের সাক্ষী লাল ডাকবাক্স

সময় বদলেছে, বদলেছে যোগাযোগের ধরনও। একসময় যার অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন প্রিয়জনরা, সেই ডাকপিয়নের ডাক এখন আর শোনা যায় না।

প্রযুক্তির স্পর্শে বদলে গেছে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাতে-কলমে লেখা চিঠির জায়গা করে নিয়েছে মোবাইল, ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়া।

 

একটা সময় ছিল, চিঠি পৌঁছাতে লাগত সপ্তাহ কিংবা মাস। প্রিয়জনের খবর জানতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো। এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে বার্তা। এক ক্লিকে পাঠানো যাচ্ছে অর্থ, ছবি, শুভেচ্ছা।

চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ডাক বিভাগ একসময় ছিল অপরিহার্য। অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিগত যোগাযোগেও ডাকপিয়নের পদধ্বনি ছিল খবরের প্রতীক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এনালগ থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ডাকবিভাগের সেই জৌলুস ক্রমেই ম্লান হয়ে গেছে। এখন আর দেখা মেলে না রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাখা সেই লাল রঙের ডাকবাক্স। জিপিওর সামনে কয়েকটা রয়েছে তাও ফুটপাতের ভাসমান দোকানের কারণে ভেতরে পড়ে আছে। দেখা যায় না কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আসা চেনা মুখের সেই ডাকপিয়নদের।

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে দ্রুত যোগাযোগের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। চিঠির জায়গা দখল করেছে ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এমনকি ফ্যাক্স ব্যবস্থাও হারিয়ে যাচ্ছে ই-মেইলের দাপটে। মানুষের আর্থিক লেনদেনও এখন সহজ। ডাক মানিঅর্ডারের জায়গা নিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। একইসঙ্গে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কুরিয়ার সার্ভিস, যা ডাকবিভাগের বিকল্প হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যদিও তা তুলনামূলক ব্যয়বহুল।

ডাকবিভাগের কার্যক্রম আজও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অফিসিয়াল নথি, সরকারি চিঠি, নিয়োগপত্র কিংবা নোটিশ পাঠানোয় আজও ডাক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০০০ সালে চালু হয় ই-পোস্ট সার্ভিস, এর মাধ্যমে দেশের তৃণমূল জনগণ পাচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক ডাকসেবা। এ ছাড়া অনেক জেলা শহরে রয়েছে নাইট পোস্ট অফিস। যেখানে সারারাত চিঠি ও পার্সেল আদান-প্রদান হয়।

বিশ্বব্যাপী ডাক সেবাকে সমন্বিত ও আধুনিক করার লক্ষ্যেই ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন’। ১৯৬৯ সালে টোকিও সম্মেলনে দিনটি ‘বিশ্ব ডাক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এ সংগঠনের সদস্য হয় এবং তখন থেকেই ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস পালন করে আসছে।

যদিও সময়ের পরিবর্তনে ডাক ব্যবস্থা তার উজ্জ্বলতা অনেকটাই হারিয়েছে, তবুও এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এখনও জনগণের পাশে আছে। ডাকবাক্সে কেউ চিঠি না ফেললেও, এগুলোকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা দরকার— অতীত ঐতিহ্য হিসেবে নয়, বরং ইতিহাসের অংশ হিসেবে। কারণ এই ডাক ব্যবস্থা একসময় ছিল মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি আবেগময় অধ্যায়।

বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলিস্থান এলাকার জিপিওর সিনিয়র পোস্টমাস্টার মো. মনিরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিরক্তবোধ করেন ও জানান কথা বলতে রাজি নন।

গুলিস্তান জেনারেল পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন আবদুল মতিন বলেন, আমরা যেদিন চিঠি হাতে নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় যেতাম, সেদিন ওদের মুখে যে হাসি দেখতাম, সেটা আজ আর দেখি না। তখন মানুষ চিঠির অপেক্ষায় থাকত।  এখন অপেক্ষায় থাকে মোবাইলের নোটিফিকেশনের। তবে সব সরকারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদেরকেই জাগায়মতো পৌঁছাতে হয়।

মুরাদপুর হাই স্কুলের শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলজীবনে বন্ধুরা একে অপরকে চিঠি লিখতাম। খামে করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঈদ কার্ডের শুভেচ্ছা পাঠাতাম। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এখন সবকিছু ভার্চ্যুয়াল। চিঠির মতো মমতা আর ভালোবাসা আর কোথাও নেই।

গণমাধ্যমকর্মী আকাশমনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে আমাদের ভালোবাসা হারিয়েছে। আমাদের আবেগ অনুভূতি শেষ হয়ে গেছে। আগে আমরা আবেগ দিয়ে একটি চিঠি লিখতে গিয়ে কত কাগজ নষ্ট করতাম। রাতের পর রাত জাগতাম। সেই সময়ের গভীর যে টান, এখন সেই গভীর টান আর নাই। আমাদের মা, খালারাদের দেখতাম তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার থাকতো কখন ডাকপিয়ন সন্তানের চিঠি নিয়ে বাসায় আসবে।

 

কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, আগে মানিঅর্ডারেই টাকা পাঠাতাম। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মুহূর্তেই চলে যায়। তবে ডাক বিভাগের নির্ভরযোগ্যতা আজও মনে পড়ে। চিঠি ছিল সম্পর্কের এক মধুর মাধ্যম। আমি চাই, পোস্ট অফিসগুলোকে অন্তত ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক।

বাংলাদেশ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল ঘোষণা, নতুন মুখ আকিম

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২:০১ পিএম
বাংলাদেশ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল ঘোষণা, নতুন মুখ আকিম

বাংলাদেশ সফরের জন্য দল ঘোষণা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। চলতি মাসেই সাদা তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দুটি সিরিজ খেলবে টাইগাররা।

মিরপুরে ১৮ অক্টোবর শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ, এরপর ২৭ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামে গড়াবে টি-টোয়েন্টি সিরিজিটি।

 

দুই ফরম্যাটেই নেতৃত্বে থাকছেন নিয়মিত অধিনায়ক শাই হোপ। তার সঙ্গে থাকছেন গুডাকেশ মতি, রোমারিও শেফার্ড, শারফেইন রাদারফোর্ড, জেডন সিলস ও ব্র্যান্ডন কিংয়ের মতো পরিচিত মুখরা।

সবচেয়ে বড় চমক প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন সাবেক অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়ক আকিম অগাস্ট। তরুণ এই ব্যাটারকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে দেখছে দল। অভিজ্ঞ ওপেনার এভিন লুইস চোটের কারণে ছিটকে গেছেন। কব্জির ইনজুরি থেকে তিনি এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেননি।

আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই সিরিজকে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম ম্যানেজমেন্ট। দলের প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামি বলেন, ‘আমরা এমন একটি দল গড়েছি, যারা জয়ের মানসিকতা ধরে রাখতে পারবে এবং শক্ত দলীয় সংহতি তৈরি করতে সক্ষম হবে। দীর্ঘমেয়াদে সফলতার জন্য এই দুটি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজ আমাদের জন্য দারুণ সুযোগ এনে দেবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অর্জনের, যা বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। ’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ সূচি ও স্কোয়াড

ওয়ানডে দল: শাই হোপ (অধিনায়ক), অ্যালিক আতানাজে, আকিম অগাস্ট, জেদিয়া ব্লেডস, কেসি কার্টি, রস্টন চেজ, জাস্টিন গ্রিভস, আমির জাঙ্গু, শামার জোসেফ, ব্র্যান্ডন কিং, গুডাকেশ মতি, খারি পিয়ার, শারফেইন রাদারফোর্ড, জেডেন সিলস ও রোমারিও শেফার্ড।

টি-টোয়েন্টি দল: শাই হোপ (অধিনায়ক), অ্যালিক আতানাজে, আকিম অগাস্ট, রস্টন চেজ, জেসন হোল্ডার, আকিল হোসেইন, আমির জাঙ্গু, শামার জোসেফ, ব্র্যান্ডন কিং, গুডাকেশ মতি, রোভম্যান পাওয়েল, শারফেইন রাদারফোর্ড, জেডেন সিলস, রোমারিও শেফার্ড ও র‌্যামন সিমন্ডস।

ওয়ানডে সিরিজ
  • ১ম ওয়ানডে – ১৮ অক্টোবর, মিরপুর, ঢাকা
  • ২য় ওয়ানডে – ২১ অক্টোবর, মিরপুর, ঢাকা
  • ৩য় ওয়ানডে – ২৩ অক্টোবর, মিরপুর, ঢাকা
টি-টোয়েন্টি সিরিজ
  • ১ম টি-টোয়েন্টি – ২৭ অক্টোবর, চট্টগ্রাম
  • ২য় টি-টোয়েন্টি – ২৯ অক্টোবর, চট্টগ্রাম
  • ৩য় টি-টোয়েন্টি – ৩১ অক্টোবর, চট্টগ্রাম

ফরিদপুরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিলীন হচ্ছে নদীতে, মালামাল যাচ্ছে ভাঙ্গাড়ির দোকানে

নুর ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৬ পিএম
ফরিদপুরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিলীন হচ্ছে নদীতে, মালামাল যাচ্ছে ভাঙ্গাড়ির দোকানে

এক সময় জায়গা ছিলো না, ঘর ছিলো না। এই রকম ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য তের বছর আগে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চাপুলিয়া গ্রামে সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল আশ্রায়ণ প্রকল্পের ১৩০টি ঘর। সাথে করা হয়েছিল একটি অফিস ঘর। তখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলি থেকে মধুমতি নদীর দূরত্ব ছিল এক কিলোমিটার বেশি। গত ২০২১ সালে ওই এলাকায় মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙ্গন শুরু হলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আশ্রায়ণ প্রকল্পের কমপক্ষে একশটি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেখানে থাকা একটি অফিস ঘরসহ ৩০টি বসতঘরের মধ্যে এ বছর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অফিস ঘরসহ চারটি ঘর। এই সুযোগে প্রকল্প এলাকার একটি চক্র রাতের আঁধারে ঘরগুলোর মালামাল ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে ১৩০টি পরিবারের আবাসনের জন্য নির্মাণ করা হয় আশ্রায়ণ প্রকল্প নামে। বসবাসের কয়েক বছরের মাথায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ঘরগুলি। তবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০০টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর ভাঙন ঝুঁকিতে প্রকল্পের চারটি পরিবার অন্যত্র চলে যায়। এই সুযোগে সেসব ঘরের ঢেউটিন, লোহার এঙ্গেল ও ইট খুলে নিয়ে রাতের আঁধারে ভ্যান ভর্তি করে নামমাত্র মূল্যে ভাঙারির দোকানে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাপুলিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইমরুল শেখ ইমুল, আরিফুল শেখ ও মুকুল শেখ রাতের আঁধারে ভ্যান ভর্তি করে কয়েকটি ঘরের ঢেউটিন ও লোহার এঙ্গেল পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল বাজারের বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেছে। এখনো ওইসব ঘরের কিছু মালামাল তাদের বাড়ির সামনে জমা আছে। যেকোন সময় চক্রটি ওইসব মালামালও বিক্রি করে দিতে পারে।’

ভাঙ্গারির দোকানে মালামাল বিক্রির অভিযোগটি অস্বীকার করে শেখ ইমুল বলেন, ‘নদীতে প্রকল্পের অফিস ঘর ভেঙে যাচ্ছিল। তাই অফিস ঘরের মালামাল খুলে এনে আমার ঘরের সামনে রাখা হয়েছে। এসব দিয়ে নতুন করে আবার ঘর করা হবে।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে একবার ১০ মণ লোহার মালামাল বিক্রি করেছিলাম। পরে ইউএনও অফিস থেকে জানতে পেরে আমাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর সেই মালামাল ফেরত দিয়ে আমি মুক্তি পাই। সেই থেকে আমি আর কোন সরকারি মালামাল বিক্রি করিনি।

চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সভাপতি আকুব্বর শেখ বলেন, ‘আমরা যখন এখানে আসি তখন ১৩০ পরিবারের বসবাস ছিল। প্রতিবছর নদীতে ভাঙতে ভাঙতে এখন আমরা মাত্র ৩০ পরিবার বসবাস করি। প্রকল্পের ঘরগুলোর মালামাল গোপনে বিক্রি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব আমার জানা নেই।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম কালু বলেন, ‘বেশ কয়েকবছর ধরে মধুমতি নদীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে যাচ্ছে। এই সুযোগে ওখানের কিছু লোকজন সরকারি মালামাল নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ঘরগুলি যখন নির্মাণ করা হয় তখন নদী অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ছিল। এরপর থেকে নদী ভাঙতে ভাঙতে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে চলে এসেছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অবশিষ্ট ঘরগুলি ভাঙ্গণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর আগে কয়েক বছরে একশো ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ঘরগুলি সরকারি সম্পত্তি। সরকারি মালমাল গোপনে বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ। ঘরের মালামাল গোপনে বিক্রির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।