খুঁজুন
মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩২

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, ছাড় পাবেন যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৪০ পিএম
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, ছাড় পাবেন যারা

চার শ্রেণির করদাতা ছাড়া অন্য সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

আজ রবিবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত বিশেষ আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

এতে বলা হয়, আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩২৮ এর উপ-ধারা (৪) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৪ আগস্ট থেকে ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের জন্য সব স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার অনলাইনে (www.ctaxnbf.gov.bd) আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে।

তবে বিশেষ আদেশে চার শ্রেণির করদাতাকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন-

১. ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতা;

২. শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা (যথাযথ সনদ দাখিল সাপেক্ষে);

৩. বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক;

৪. মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিরা।

তবে শর্ত থাকে যে, এই চার শ্রেণির করদাতাও ইচ্ছা করলে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

বিশেষ আদেশে আরও বলা হয়েছে, ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে উপরে উল্লিখিত করদাতা ব্যতীত অন্য যেকোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সমর্থ না হলে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে ওই করদাতা পেপার রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিবেন যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিবেন যেভাবে

আগে আয়কর রিটার্ন মানেই লম্বা লাইন, কাগজপত্রের ঝামেলা, সময় আর টেনশন। কিন্তু এখন চাইলে বাসায় বসেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়—একদম সহজভাবে।

 

 

আজকের লেখায় চলুন ধাপে ধাপে জেনে নিই কীভাবে আপনি নিজেই আয়কর রিটার্ন অনলাইনে জমা দিতে পারেন।

 

 

ধাপ ১: টিআইএন (TIN) নম্বর থাকলে তবেই শুরু

 

 

রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমেই আপনার ই-টিআইএন (e-TIN) থাকতে হবে। যদি না থেকে থাকে, তাহলে [https://etaxnbr.gov.bd](https://etaxnbr.gov.bd) ওয়েবসাইটে গিয়ে কয়েক মিনিটেই রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন।

 

 

ধাপ ২: অনলাইনে রিটার্ন জমার ওয়েবসাইটে যান

 

 

অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে গেলে যেতে হবে এই ঠিকানায়: [https://etaxnbr.gov.bd](https://etaxnbr.gov.bd)

 

 

এই ওয়েবসাইটেই আপনি রিটার্ন ফরম পূরণ, জমা দেওয়া, এবং রিসিপ্ট ডাউনলোড – সব কিছু করতে পারবেন।

 

 

ধাপ ৩: অ্যাকাউন্ট খুলুন

 

 

প্রথমবার হলে আপনাকে সাইটে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এখানে আপনার কিছু তথ্য লাগবে:

 

 

– টিআইএন নম্বর

 

 

– জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর

 

 

– মোবাইল নম্বর

 

 

– ইমেইল

 

 

এসব দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাকাউন্ট খুলে নিন। এরপর লগইন করুন।

 

 

ধাপ ৪: আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করুন

 

 

লগইন করার পর রিটার্ন ফরম আসবে। এখানে আপনাকে কিছু সহজ তথ্য দিতে হবে:

 

 

– আপনার মোট আয় (যেমন বেতন, ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি)

 

 

– কর কাটা হয়েছে কি না

 

 

– কোনো কর ছাড় (যেমন চিকিৎসা খরচ, দান, বীমা ইত্যাদি)

 

 

– আপনার সম্পদের বিবরণ

 

 

চাকরিজীবীদের জন্য তথ্য দেওয়া অনেক সহজ—শুধু বেতন স্লিপ হাতে রাখলেই হবে।

 

 

ধাপ ৫: দরকার হলে কাগজপত্র যুক্ত করুন

 

 

সব সময় নয়, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু স্ক্যান করা কাগজপত্র যুক্ত করতে হতে পারে। যেমন:

 

 

– ব্যাংক স্টেটমেন্ট

 

 

– বেতন স্লিপ

 

 

– পুরোনো রিটার্ন কপি ইত্যাদি

 

 

এসব পিডিএফ আকারে আপলোড করতে হবে।

 

 

ধাপ ৬: ফরম ভালো করে দেখে সাবমিট করুন

 

 

সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করার পর একবার ভালো করে দেখে নিন—কোনো ভুল আছে কি না। সব ঠিক থাকলে Submit বাটনে ক্লিক করে দিন।

 

 

ধাপ ৭: রিসিপ্ট ডাউনলোড করে রেখে দিন

 

 

রিটার্ন জমা দেওয়ার পর একটা Acknowledgement রিসিপ্ট পাবেন। এটাকে PDF আকারে ডাউনলোড করে কম্পিউটারে বা মোবাইলে রেখে দিন। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

 

 

কিছু দরকারি কথা

 

 

সর্বশেষ সময় : সাধারণত প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হয়

 

 

জরিমানা এড়াতে : সময়মতো না দিলে জরিমানা বা অন্য ঝামেলা হতে পারে

 

 

যদি না পারেন : নিজে না পারলে একজন ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার বা হিসাববিদের সাহায্য নিতে পারেন

 

 

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া এখন অনেক সহজ। নিজে করলেই সময়, টাকা— দুটোই বাঁচে।

 

 

দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই উচিত নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া। এতে যেমন আপনি আইনি ঝামেলা এড়াতে পারবেন, তেমন দেশের উন্নয়নে ছোট একটা অবদানও রাখতে পারবেন।

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি স্কুল অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সালথায় মানববন্ধন 

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি স্কুল অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সালথায় মানববন্ধন 

“জুলাই বিপ্লবের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই” এই স্লোগান সামনে রেখে ফরিদপুরের সালথায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫-এ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (০৪ আগস্ট) সকাল ১০ টার দিকে সালথা উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের ব্যানারে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন সালথা উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামানের নেতৃত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন- এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত কুমার দত্ত সহ উপজেলার বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।

বক্তরা বলেন, ‘সরকার যখন দেশের সব শিশুর জন্য সমান শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলছেন। সেখানে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষার্থীদের। এমন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের দাবি জানান তিনি। একই বয়সী শিক্ষার্থীরা একই পাঠ্যসূচিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করলেও শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মেধা যাচাই ও মূল্যায়নের জন্য কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগামী মেধা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সমান অধিকার রাখার জোরালো দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।’

মানববন্ধন শেষে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বালীর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান প্রসঙ্গে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।

ব্যাংকে টাকার জন্য হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১১ পিএম
ব্যাংকে টাকার জন্য হাহাকার

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে বেপরোয়া লুটপাটে সৃষ্ট ক্ষত কৌশলে আড়াল করে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে এই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এতে হিতে-বিপরীত হয়েছে। লুট হয়েছে ছাপানো টাকাও। বেড়েছে তারল্য ও ডলার সংকট; মূল্যস্ফীতির পারদ হয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। অর্থনৈতিক মন্দা থেকে সৃষ্ট জনরোষ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী আমলের লুটপাটের ঘটনা তদন্ত শুরু করলে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। এখন পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে লোপাটকারীরা। এর বড় অংশই পাচার করা হয়েছে। এসব অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে বর্তমান সরকারের এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। মোট খেলাপি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি। এতে গত এক বছরে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ছিল প্রকট। ছোট-বড় অনেক ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা নিয়মিত টাকা তুলতে পারেননি। যা এখনো অব্যাহত। সবমিলিয়ে আলোচ্য সময়ে টাকার জন্য একরকম হাহাকার পড়েছিল ব্যাংক খাতে।

তবে আশার কথা-বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপে বন্ধ হয়েছে ব্যাংক খাতে নতুন লুটপাট। ব্যাংকগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রবণতাও বাতিল করা হয়েছে। পাচার করা টাকা উদ্ধারে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। দেশ ও বিদেশে কয়েকজন পাচারকারীর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধার করার জন্য নেওয়া হয়েছে বহুমুখী কার্যক্রম। এর সুফল আসতে একটু সময় লাগবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে লুটপাট ও পাচার বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে তারল্যের জোগান বাড়তে শুরু করেছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটপাটের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে এসব টাকা ব্যাংকে নেই। আইএমএফের মতে, ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধার করতে কমপক্ষে ৪ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে একীভূতকরণের তালিকায় থাকা ৫টি ব্যাংককে সচল করতে আগামী এক বছরের মধ্যে ২ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

লুটপাটের টাকা সবই খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে খেলাপি ঋণ শিগগিরই ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে অবলোপন ও আদালতের স্থগিতাদেশের করণে অনেক ঋণ খেলাপি হলেও তা অফিশিয়ালি দেখানো যাচ্ছে না। এগুলো যোগ হলে খেলাপি সাত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণের সব তথ্য দেখানো হচ্ছে না। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। কিন্তু সেগুলোও খেলাপি। অবলোপন করা এই ঋণের অঙ্ক প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। আদালতের মামলা ও অন্যান্য স্থগিতাদেশের কারণে এবং কিছু খেলাপি ঋণের তথ্য ব্যাংকগুলো গোপন করায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে দেখানো হচ্ছে না। অথচ সেগুলোও খেলাপি। এসব মিলে বহু আগেই খেলাপি ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার অভাব ছিল প্রকট। এর নেপথ্যে কয়েকটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-কিছু ব্যাংক দখল করে লুটপাট, ঋণ জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, গ্রাহকদের আস্থার অভাবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া, কয়েকটি ব্যাংককে বিগত সরকারের সময়ে দেওয়া অনৈতিক সুবিধা প্রত্যাহার করায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অব্যাহত ক্ষয়, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনে ভয়াবহ পতনের মাধ্যমে একটি ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত এবং একটি সংকীর্ণ অর্থায়ন ব্যবস্থা পেয়েছে।

ভঙ্গুর ব্যাংক খাতকে সচল করতে ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। ব্যাংকগুলো যাতে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদায়ি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা হিসাবে ১২ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রদান করেছে। এর মধ্যে ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকাই দেওয়া হয়েছে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া তারল্য ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করাতে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের অধীনে ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মে পর্যন্ত এই স্কিমের আওতায় নেওয়া ঋণের মধ্যে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দৈনন্দিন কার্যক্রমের চাহিদা মেটাতে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা প্রদান এবং অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতকে বিগত সরকার খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবে স্থিতি কোনো ব্যাংকের ঘাটতি হতে পারবে না। ঘাটতি হলেই বুঝতে হবে ওই ব্যাংকে ভয়াবহ সংকট রয়েছে। লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলোর ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ওই চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তা আড়াল করে রেখেছিল। বর্তমান গভর্নরও দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবে ঘাটতি সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক নিজেরাই ঘাটতি সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি কয়েকটি ব্যাংক এখনো ঘাটতিতে আছে। এসব ব্যাংককে জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থাকা চলতি হিসাবের স্থিতির ঘাটতি মোকাবিলায় প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধারের জন্য তিনটি বিশেষায়িত টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত সংস্কার টাস্কফোর্স প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করা, সম্পদের মান উন্নত করা এবং কার্যকর ব্যাংক ব্যবস্থা গঠনের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।

বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্চ মাসে ব্যাংক খাত পুনর্গঠন এবং সমস্যা সমাধানে একটি ইউনিট গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়ানো এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে দ্বিতীয় টাস্কফোর্সটি।

তৃতীয় টাস্কফোর্সটি বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত করে তা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। এ কাজের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট সাড়ে ৬ হাজারের বেশি সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।

ব্যাংক খাতের সংকট চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল’ নামে একটি নতুন আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যাংক খাতে সংকটের পাশাপাশি আশপাশের পদ্ধতিগত সংকটের (রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নানা অসন্তোষে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া) প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা এবং প্রশমিত করা। এটি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংক খাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি আগাম চিহ্নিত করে সমাধানের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এছাড়া একটি সেতু বা ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা হবে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে ঋণ আদায় বাড়ানো, যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু অচল সেগুলো সচল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করলেও এই সরকার প্রকাশ করে দিচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। নতুন খেলাপি হওয়া ৩ লাখ কোটি টাকার প্রায় সবই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুট করা অর্থ। যেগুলো আগে খেলাপি করা হয়নি। এখন সেগুলোকে খেলাপি করা হচ্ছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। কারণ প্রকৃত আয় কমায় খেলাপি ঋণ বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। প্রভিশন ঘাটতি বাড়ায় বেড়েছে মূলধন ঘাটতি। যে কারণে ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁচেছে।

ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। এর আগে ২০০৪ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যবর্তী সময়ে মূলধন রাখার হার বেড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লুটপাটের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ায় এখন মূলধন রাখার হার কমেছে।

 

সূত্র : দৈনিক যুগান্তর