আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে বন্ধ ফরিদপুরের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব
ফরিদপুরে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে আয়োজিত বহুল প্রতীক্ষিত ঘুড়ি উৎসবটি শেষ মুহূর্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের নির্দেশনায় তা স্থগিত করা হয়। আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন উৎসবপ্রেমী সাধারণ মানুষসহ আয়োজকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ফরিদপুর জেলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নগর বাউল জেমসের সংগীত পরিবেশনের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই ঘুড়ি উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে—এমন ধারণা করছেন অনেকেই।
শনিবার সকালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস ঘুড়ি উৎসব বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “বর্তমান সময়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঘুড়ি উৎসবটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে এর বেশি বিস্তারিত জানাতে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “ঘুড়ি উৎসবটি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”তিনিও সিদ্ধান্তের পেছনের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ঘুড়ি উৎসব বন্ধের প্রকৃত কারণ জানতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশনের সভাপতি ও ঘুড়ি উৎসব আয়োজন কমিটির সভাপতি মো. ইমদাদ হাসান ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা ঘুড়ি উৎসবটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।”
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের ঘুড়ি উৎসবটি কেবল বিনোদনের আয়োজন নয়; এটি গ্রামীণ সংস্কৃতি ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রতিবছর এ উৎসব ঘিরে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
হঠাৎ করে উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের মতে, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এমন একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন বাতিলের আগে বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত।
রঙিন ঘুড়িতে ভরে ওঠা আকাশের অপেক্ষায় থাকা ফরিদপুরবাসীর প্রশ্ন—বারবার কেন সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে?

আপনার মতামত লিখুন
Array