খুঁজুন
বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫, ২২ শ্রাবণ, ১৪৩২

আলফাডাঙ্গায় হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের কার্পেটিং

আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ৭:৩৩ পিএম
আলফাডাঙ্গায় হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের কার্পেটিং

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নে ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সড়কে কার্পেটিং করার পরদিনই হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তবে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, সাধারণত কার্পেটিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টা লাগে সময় লাগে স্থায়ী হতে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং, এমন চিত্র ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত সড়কের। বিক্ষুব্ধ স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ বিটুমিনসহ নিম্নমানের সামগ্রী গিয়ে সড়কের কার্পেটিং করায় এমন বেহাল দশা।

সূত্র জানায়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ৩ হাজার ৭০০ মিটার দীর্ঘ এ সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

গত শনিবার (১৪ জুন) ভেন্নাতলা অংশে ১৫০ মিটার সড়কের কার্পেটিং করা হয়। পরদিন রোববার (১৫ জুন) দুপুরে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় এক মোটরসাইকেল আরোহী পরে যায়। পরে এলাকার লোকজন সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টান দিলে কার্পেটিং উঠে আসে। এসময় সেখানে উপস্থিত থাকা সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজনের কাছে বিষয়টি জানতে চায় স্থানীয়রা। এরপর একে একে শতাধিক মানুষ এসে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজন সেখান থেকে সরে যায়। এখন পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকে নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। প্রথম থেকেই ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করছেন। তারা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বললেও ঠিকাদার শোনেননি। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টেনে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখান। তাদের দাবি পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হোক সড়কটি।

সরেজমিনে সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী হাত দিয়ে চাপড়া চাপড়া কার্পেটিং তুলছেন। এসময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নিম্নমানের কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টেনে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখান।

স্থানীয় ভেন্নাতলা বাজারের মুদি দোকানি জুয়েল রানা বলেন, শুরু থেকে নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছিল। বিভিন্ন সময় ঠিকাদারকে বিষয়টি বললেও সে কর্ণপাত করেনি। শনিবার বিকালে কার্পেটিং এর কাজ করে। রোববার দুপুরের দিকে সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক, ভ্যান চলাচল করলে বিভিন্ন জায়গায় দেবে যায়। পরে আমরা সড়কটির বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে দেখি কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। টান দিলেই চাপড়া ধরে উঠে আসছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি হাসান কাছেদ বলেন, কার্পেটিংয়ের একদিন পর রোববার দুপুরে বাজারে গিয়ে দেখি সড়কের কার্পেটিং হাত দিয়ে তুলছে কয়েকজন। হাত দিয়ে টান দিলেই চাপড়া ধরে উঠে আসছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কার্পেটিং করায় এ অবস্থা।

তিনি আরো বলেন, ওই সময় সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোক ছিল, বিষয়টি তাদের কাছে জানতে গেলে তাদের সাথে স্থানীয়দের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই তিন শত স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের অবরুদ্ধ করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজন দ্রুত ওই স্থান থেকে সটকে পরে। এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। আমাদের দাবি সড়কটি পুনরায় সঠিকভাবে নির্মাণ করা হোক।

 

ভ্যানচালক সিরাজ বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙ্গা চোরা সড়ক দিয়ে আমরা চলাচল করেছি। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার পর সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু এভাবে নিম্নমানের কাজ করা হবে এটা ভাবতে পারি নাই। কার্পেটিংয়ের একদিন পরই তা চাপড়া ধরে উঠে যাচ্ছে। এর চেয়ে আগের রাস্তাই ভালো ছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, সড়কের কার্পেটিংয়ের অধিকাংশ কাজ বাকি রয়েছে। শুরুতেই এমন নিম্নমানের কাজ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোকজনের সাথে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে। প্রত্যাশা করছি বাকি কাজ টুকু ভালোভাবে সম্পন্ন করবে কর্তৃপক্ষ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহমুদ জানান, শিডিউল অনুযায়ী সড়কের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয়। এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে না পারায় আমাদের সাথে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত রাস্তার কার্পেটিং করার ৭২ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয় না। ২৪ ঘণ্টা পরেই তারা কার্পেটিং তুলে এধরনের অভিযোগ তুলেছে।

এলজিইডির আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম জানান, গুণগতমান বজায় রেখেই কাজটি করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় কিছু লোকজন গতকাল বিষয়টি বুঝতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। সাধারণত কার্পেটিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে স্থায়ী হতে। তবে ঠিকাদারের গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় এলাকাবাসীর বাধার মুখে সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে দু-এক দিনের মধ্যে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে সালথায় জামায়াতের গণমিছিল

সালথা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২৩ পিএম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে সালথায় জামায়াতের গণমিছিল

ফরিদপুরের সালথায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সালথা উপজেলা শাখার উদ্যোগে ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপুর্তি উপলক্ষে বিজয় মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫ টায় উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে মিছিলটি শুরু করে সদর বাজার এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাইপাস সড়কে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর প্রফেসর আবুল ফজল মুরাদের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুর-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী (দাড়িপাল্লা) মাওলানা সোহরাব হোসেন, ফরিদপুর জেলা জামায়াতের অফিস সেক্রেটারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান, জেলা জামায়াতের মজলিসে সুরা সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন, উপজেলা জাময়াতের নায়েবে আমীর মো. আজিজুর রহমান মজনু, সেক্রেটারী তরিকুল ইসলাম, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি চৌধুরী মাহবুব আলী নসরু সহ জামায়াত ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আবুল ফজল মুরাদ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর কিন্ত আমরা এই ৫৪ বছরে আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি। এই ৫৪ বছরে আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা পাইনি, এই ৫৪ বছরে আমরা প্রকৃত স্বাধীন হতে পরিনি। আমরা যদি প্রকৃত স্বাধীনতা পেতে চাই, আমরা যদি শান্তিতে বসবাস করতে চাই, এদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খিৃষ্টান মুসলিম সহ যত শ্রেণি পেশার মানুষ আছে সকল মানুষ যদি তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, ব্যবসায়ীক স্বাধীনতা, সকল প্রকার স্বাধীনতা পেতে চাই তাহলে আমাদের কোরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি ক্ষমতায় যায়, এদেশের ১৮ কোটি মানুষ ৩৬ কোটি হাত। সকলকে কাজের ব্যবস্থা করা হবে, কোন মানুষ বেকার থাকবে না, শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি করা হবে, চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকারি করা হবে। আমরা এদেশে অনেক শাসন দেখেছি বর্তমানে দেশের ৮০% মানুষ ইসলামের পক্ষে রায় দিচ্ছে।

ফরিদপুরে বসতবাড়ির আঙ্গিনা থেকে ককটেল উদ্ধার

শ্রাবণ হাসান, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ৭:১২ পিএম
ফরিদপুরে বসতবাড়ির আঙ্গিনা থেকে ককটেল উদ্ধার

ফরিদপুরে ওবায়দুর মোল্যা (৫৫) নামে সাবেক এক ইউপি সদস্যের বসতবাড়ির আঙ্গিনা থেকে বিস্ফোরক জাতীয় ককটেল সদৃশ দুটি বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে সন্দেহ করছেন ওই বাড়ির সদস্যরা। তবে প্রতিপক্ষের দাবি, ষড়যন্ত্র করে নাম বলা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) দুপুর ১ টার দিকে জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটিকানাইপুরের দোতলা ভবন বিশিষ্ট মমতাজ মঞ্জিল নামক ওই বাড়ির আঙিনায় ফুলের বাগান থেকে বস্তু দুটি উদ্ধার করে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা। এর আগে সকালে ওই স্থানে লালটেপে মোড়ানো বস্তু দুটি দেখতে পান বাড়ির সদস্যরা। পরে কোতয়ালী থানা পুলিশকে জানান।

বাড়িওয়ালার ছেলে মিজানুর মোল্যা দাবি করেন, প্রতিবেশী ও ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কবির মোল্যা ও আফজাল মাতুব্বরদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে তাঁদের। তিনি বলেন, এর জেরে গত তিনদিন যাবৎ বাড়ির সামনে লোকজন নিয়ে মহড়া দেয়া হচ্ছে। আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরের সামনেই ককটেল। আমাদের ধারণা, ভয় দেখানোর জন্য তাঁরাই রেখে গেছে। আমরা এখন মামলা করব।

অপরদিকে বিএনপি নেতা কবির মাতুব্বর দাবি করেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ওবায়দুরদের সাথে আমাদের জমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ বা ঝামেলা নেই। অন্য একজনের সাথে ঝামেলা চলতেছে। আমার বড় ভাই আমিন মাতুব্বরকে (৭৫) ওই জমির মামলায় স্বাক্ষী সন্দেহ করে তিনদিন আগে মারধর করে মিজানুর মোল্যা৷ এরপর বিষয়টি জানতে গিয়েছিলাম, কোনো মহড়া দেয়া হয়নি। আবার আজ সকালে শুনলাম, ওদের বাড়িতে ককটেল পাওয়া গেছে। পরিকল্পিতভাবে আমাদের ফাঁসানোর জন্য নাম বলতেছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ওই বস্তু দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক মূল ঘটনা জানা গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফরিদপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মধুমতি তীর রক্ষা বাঁধে ধ্বস

নুর ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ৬:৪৪ পিএম
ফরিদপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মধুমতি তীর রক্ষা বাঁধে ধ্বস
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে গেছে মধুমতি নদীর ডান-তীর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি অংশ। এতে নদীর তীরে বসবাসরত শতাধিক পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এবং যথাযথ ডাম্পিং না করে সিসি ব্লক বসানোর কারণে বৃষ্টির পানিতেই বাঁধ ধসে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা এখনো কাজ বুঝে পাননি। কাজে অনিয়ম হলে তার দায়ভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের মিলনস্থল চর আজমপুর এলাকায় ডান-তীর রক্ষায় ৩০০ মিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিক। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে বাঁধের আনুমানিক ৩০ মিটার ধ্বসে পড়ার দৃশ্য দেখা যায়। এতে সিসি ব্লকগুলো পর্যায়ক্রমে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী মধুমতি নদীর পূর্বপাড়ে দীর্ঘ কয়েক বছর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি, স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদী পাড়ের অনেক বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে কয়েকবার বসতি স্থাপনা পাল্টিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। গত সরকারের আমলে এলাকাবাসীর দাবির পেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চেষ্টায় মধুমতি পাড়ে সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। যা ‘মধুমতি নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ নামে ২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ২৮টি প্যাকেজে কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মধুমতি নদীর ডান তীর রক্ষায় ২৮টি প্যাকেজের মধ্যে ২ নম্বর প্যাকেজের আওতায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজটি প্রায় শেষের দিকে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নির্মাণ কাজের কয়েক জায়গা ধসে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কাজটি চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান শরীফ (৬৩) নামে এক ব্যক্তি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই বৃষ্টির পানিতেই বাঁধ ধ্বসে পড়েছে। দ্রুত তীর সংরক্ষণ বাঁধ মেরামত না করা হলে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শেফালী বেগম (৫৫) নামে এক বাসিন্দা জানান, স্থায়ী বাঁধ হওয়ার কারণে গত দুই মাস আগে ধারদেনা করে বাড়িতে একটা ঘর দিয়েছি। কিন্তু সেই স্থায়ী বাঁধও নদীতে যদি ভেঙে যায়। তাহলে তো আর কোথাও বলার জায়গা থাকলো না। আমরা এই এলাকায় বসবাস যাতে করতে পারি, সেই অনুযায়ী বাঁধটি যেন সরকার করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মেসার্স লিটন মল্লিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বার্ধীকারী লিটন মল্লিককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।
তবে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধের কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ওই অংশে বালু ভর্তি জিও ব‍্যাগ ফেলানো হচ্ছে। পরবর্তীতে নদীর পানি কমলে তা মেরামত করে দেওয়া হবে। আমাদের বাঁধ নির্মাণের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ধসে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ কাজটির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুর রহমান জানান, আমি সবেমাত্র ফরিদপুরে নতুন যোগদান করেছি। বাঁধ নির্মাণ কাজটি স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) সাথে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বাঁধের ধ্বসে যাওয়া অংশের কাজ পুণরায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজে কোন অনিয়ম আছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।