খুঁজুন
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯ আশ্বিন, ১৪৩২

ফরিদপুরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে তিন হাজার কৃষক

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ৯:৪৭ পিএম
ফরিদপুরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে তিন হাজার কৃষক

ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজার কৃষক বর্তমানে মানবেতরভাবে দিনযাপন করছে। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারনে তারা মাঠে কোন ফসল ফলাতে পারছেন না। তাছাড়া যারা অল্পকিছু ফসল ও সবজি বুনেছিলেন তারাও এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে প্রায় ২শ একর ফসলি জমি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি জায়গা ভরাট করে খালের প্রবেশমুখ বন্ধ করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু খালের পানি প্রবাহের প্রবেশমুখই নয়, রেল ব্রিজ ও মহাসড়কের একটি ব্রিজের নিচে মাটি ফেলে ভরাট করার কারণে পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকেরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। এদিকে, জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে খাল পুনরুদ্ধার ও কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি।

রবিবার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন পালন করে। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চাদপুর বারোখাদা, রসুলপুর, রুদ্রপাড়া এবং ৫নং ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকার প্রায় ২ হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় তিন হাজার কৃষক।এসব জমিতে ধান, পাট, তিল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হতো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবরামপুর এলাকায় অবস্থিত আর এম জুট মিলের মালিক সড়ক বিভাগের অধীনে থাকা বড় একটি জায়গা দখল করে সেটি ভরাট করে ফেলে। ফলে উক্ত জমিসহ আশপাশের এলাকার পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি মহাসড়কের একটি ব্রিজের মুখও ভরাট করে ফেলে। এ ব্রিজের নিচ দিয়ে বিভিন্ন স্থানের পানি ভুবনেশ্বর নদ হয়ে কুমার নদে গিয়ে পড়তো।

এটি বন্ধ হবার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ফসলি জমিগুলো। পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামের কৃষক বক্কার শেখ, সেলিম শেখ, মানু কাজী জানান, অল্প বৃষ্টিতেই তাদের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে তারা মাঠে কোন ফসল ফলাতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললেও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। কাকলী বেগম নামের এক কৃষানী বলেন, আমি কয়েক বিঘা জমিতে পুঁইশাক ও মরিচ লাগিয়েছিলাম, পানিতে সব ডুবে গেছে। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাবো। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাল ভরাট করার কারনেই পানি বেরোনোর কোন জায়গা নেই। ফসল ফলাতে না পেরে এ এলাকার প্রায় তিন হাজার কৃষক বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতরভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, গত কয়েকদিন আগে তারা এ বিষয়ে সকলকে নিয়ে একটি সভা করেছেন। বিষয়টির আশু কোন সুরাহা না হলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেবেন। তারা বলেন, রবিবার জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার কবির খান বাচ্চু বলেন, আর এম জুটমিলের মালিক সরকারি খাল ভরাট করার কারণেই আজকে তিন হাজার কৃষক মরতে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। আমরা চাই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আর এম জুট মিলের মালিক শাহিন শাহাবুদ্দিন মামুন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান যাতে করা যায় সেই চেষ্টা করা হবে।

ফরিদপুরে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩:৩২ পিএম
ফরিদপুরে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে রাজবাড়ীর আলোচিত আমজাদ খান হত্যা মামলার মো. সুজন মন্ডল (২৯) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‌্যাব-১০ এর দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদপুর শহরের জোবয়দা ফিলিং স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া সুজন মন্ডল রাজবাড়ী সদরের মুকিদহ এলাকার মো. মকিম মন্ডলের ছেলে।

ফরিদপুর র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সুজন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গ, গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে রাজবাড়ী সদরের মুচিদহ এলাকায় বসতবাড়ীতে ঢুকে মো. আমজাদ খান নামে এক ব্যক্তিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একদিন পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৫১ পিএম
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সজিব খন্দকার (৩৬) নামে এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‌্যাব-১০ এর দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মাস্টার কলোনী এলাকা থেকে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া সজিব খন্দকার ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন বঙ্গেরস্বরদী এলাকার সালাম খন্দকারের ছেলে।

ফরিদপুর-১০, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ ও সেনাবাহিনী এর যৌথ আভিযানে সজিব খন্দকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে একটি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় আরও ৪টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সজীব দীর্ঘদিন যাবৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

হাসানউজ্জামান, ফরিদপুর
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১:০৪ পিএম
কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

সোনালি আঁশে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। এ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। আর এই পাটের কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। এক সময়ে অবহেলা-অনাদরে থাকা পাটকাঠির বেড়েছে কদর। শুধু রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো পাটকাঠি। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই পাটকাঠির এখন দামি পণ্য। এখন এই কাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল পাউডার, বোর্ড, কালিসহ নানা কিছু।

ফরিদপুরের জেলায় এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। পাট উৎপাদনে যে হারে খরচ বেড়েছে, ঠিক সেভাবে বাড়েনি বাজার দর। তাইতো এ মৌসুমে সোনালি কাঠিতে সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন কৃষকরা। জেলার সর্বত্র এখন চলছে পাটকাঠির পরিচর্যা ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ। এখন পাট কাঠির বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। পাটকাঠির অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক। গত কয়েক বছর আগেও পাট কাঠির তেমন চাহিদা ছিলো না, কিন্তু এখন এর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ জেলায় এসে কাঠি কিনে নিচ্ছেন, কৃষক দামও পাচ্ছেন বেশ। ঘুরে যাচ্ছে জেলার পাট চাষিদের জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাট উৎপাদন উপজেলা সালথা ও নগরকান্দা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে উপজেলার দুটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। একশ মুঠা (এক মুঠো) বা আঁটি পাট কাঠি বিক্রয় হচ্ছে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ফরিদপুরে এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে গড়ে ১৫ হাজার টাকার কাঠি বের হচ্ছে।

পাট চাষিরা জানালেন, পাটের যে বর্তমান বাজারমূল্য তাতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা, তবে তুলনামূলকভাবে পাটকাঠির মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি। পাট বিক্রয় করে খুব বেশি লাভবান না হলেও পাটের কাঠিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন চাষিরা।

স্থানীয়রা জানায়, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়।

নগরকান্দা উপজেলার সাকপালদিয়া গ্রামের কৃষক জীবন কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমার ক্ষেতের পাট খড়ি (পাট কাঠি) তিন রকম বিক্রি হইছে, যেটা লম্বা ও শক্ত-সেটা পেয়েছি ২০০০ টাকা ১০০ মুঠা, মাঝারিটা পেয়েছি ১০০ মুঠায় ১২০০ টাকা, আর যেইগুলো নরম ও খাটো সেগুলো পেয়েছি ৮০০ টাকা।’

একই গ্রামের পাট চাষি কলিম শেখ বলেন, পাটখড়ি শুকিয়ে এখন আমরা স্তুপ করে রেখেছি, প্রতিদিনই কিনতে মহাজনরা লোক পাঠাচ্ছে, দামে পোষালেই ছেড়ে দিব।

সালথা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষাণী জোবেদা খাতুন নিজের হাতেই পাট ছাড়িয়ে পাটকাঠি রোদে দিয়ে শুকিয়েছেন। ১০০ মুঠা ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের আরেক কৃষাণী মজিরন নেসা জানালেন, ওই গ্রামের বেশিরভাগ নারী পাটের আঁশ ছাড়ানো থেকে শুরু করে পাটখড়ি শুকানোর কাজ করেন, যারা পাট আবাদ করেন সেই পরিবারের নারীরাও এই কাজ করেন। আর যাদের জমি নেই- সেই পরিবারের নারীরা শ্রমিক হিসেবে পাটখড়ি শুকানো ও পালা দেওয়ার কাজ করে থাকেন। পাট বাজারে চলে যাবার পর পাটকাঠি শুকানো ও স্তুপ করার কাজ কাজ করে ওই গ্রামের অনেক নারী বাড়তি আয় করছেন।

রসুলপুর গ্রামের পাট কাঠি ব্যবসায়ী সামাদ মাতুব্বর বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পাট কাঠি থেকে আয় ভালো হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্ট, ব্যবসায়ীরা এসে গ্রাম থেকে এটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে।’

সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ জানান, তিনি ৭ বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন । কিন্তু বর্তমানে জেলায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এজন্য ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তারা আর আগের মতো পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ, বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবকা নির্বাহ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটের রুপালি কাঠি উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহাদউজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর দেশের সর্ববৃহৎ পাট উৎপন্নকারী জেলা। এ জেলায় ৫৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে এবার। পাট কাটার মৌসুম শেষ, এখন পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। ফরিদপুর জেলা থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটকাঠি এবার উৎপন্ন হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন পারটেক্স কোম্পানি এবং বেশ কিছু কারখানার রয়েছে- যারা পাটকাঠি পুড়িয়ে কার্বন উৎপন্ন করে চীনে রপ্তানি করে, তারাই কৃষকের কাছ থেকে পাটকাঠি কিনে নেয়। প্রিন্টের কালি এবং কসমেটিকস তৈরির কাজেও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাঠকাঠি। পাটকাঠি রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছি; যাতে করে কৃষক আরও বেশি পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হয়।