বন্ধুদের প্ররোচনায় বা কৌতুহলবশত যুবসমাজ সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যা থেকে বের হতে না পেরে আত্মহত্যা বা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে যুবসমাজ। সাইবার ক্রাইমের এমন ভয়াবহ দিক তুলে ধরে ফরিদপুরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি এগুলো থেকে প্রতিকার ও সচেতনতামূলক দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন অতিথিবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বাংলাদেশ ইয়াংস্টার সোস্যাল অর্গানাইজেশন নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়৷ এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য, লিডারশীপ, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার, তরুণদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, বিশেষ অতিথি ছিলেন- সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ এম এ আব্দুল হালিম ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আল আমিন সরোয়ার।
বক্তারা জানান, দিনদিন সাইবার অপরাধের পরিধি বিস্তৃতিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। স্ক্যামিং, বুলিং, ফিশিং, হ্যাকিং, ডিজিটাল প্রতারণা, অনলাইন জুয়া মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। এ ধরনের অপরাধের কেউ শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনশট বা পোস্টটি সেভ করে নিকটস্থ থানায় অবগত করতে হবে কিংবা বিশ্বস্ত কারো সাথে শেয়ার করতে হবে। এছাড়া অজানা লিংকে প্রবেশ করার বিষয়ে নিষেধ করা হয়। কারণ, এমন এসব লিংকের মাধ্যমে বা ফিশিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হতে হয় বলে সতর্কতা করা হয়। এছাড়া এআইয়ের নেতিবাচক দিক নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
আয়োজিত এ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন তরুণ প্রতিনিধি ও সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী রিয়াজ। তিনি বলেন- সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট যারা কার্যক্রম করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক দিক দিয়ে কৌতুহলবশত ঝুঁকে পড়ে। পরবর্তীতে যেখান থেকে আর বের হতে পারে না। সমাজে অনলাইন জুয়া একই পদ্ধতিতে গেঁথে যাচ্ছে। প্রথমে বন্ধুদের প্ররোচণা কিংবা নিজে কৌতুহল বশীভূত হয়ে অনলাইনে খুব দ্রুত টাকা ইনকামের নেশায় একবার জড়িয়ে পড়ে আর বের হতে না পেরে নিজে তো ধ্বংস হচ্ছে পাশাপাশি পরিবারকেও ধ্বংস করছে। এক পর্যায়ে কোনো না কোনোভাবে ট্রাপে পড়ে যায় সে, তখন পরিবারকে না জানিয়ে বা আইনের আশ্রয় না নিয়ে ট্র্যাপ থেকে বাঁচতে আরও ঘনিষ্ঠতায় চলে যায়। যার কারণে নেশায় জড়িয়ে পড়ে বা আত্মহত্যার করে থাকে।
এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল। তিনি সাইবার অপরাধের প্রতিকারের দিক তুলে ধরেন। পুলিশ সুপার বলেন- “সাইবার সুরক্ষার নতুন আদেশ হয়েছে, যেখানে অনলাইন জুয়ার জরিমানা এক কোটি টাকা ও দুই বছরের কারাদণ্ড। যদি কারো মোবাইলে জুয়ার অ্যাপ পাওয়া যায় তাহলে এই ধারা প্রযোজ্য। এছাড়া ফিশিংয়ের মাধ্যমে একজনের তথ্য ব্যবহার করে অন্যজন একজন অপরাধ করে যাচ্ছে বলে পুলিশ সুপার সতর্ক করেন। এক্ষেত্রে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের অনুরোধ জানান পুলিশ সুপার।
তিনি আরও বলেন- এসব অপরাধের কারণে একবার যদি মামলায় কারও নাম উঠে যায় তাহলে তাহলে নিষ্পত্তি হতে ১৪ থেকে ২০ বছর সময় লেগে যাবে। এই ২০ বছর সময়ের মধ্যে কেউ যদি সরকারি চাকরি পায় তাহলে ভেরিফেকেশনের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা যাবে না বলে পুলিশ সুপার জানান।
এছাড়া কর্মশালায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আল আমিন সরোয়ার। তিনি সকলকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠার অনুরোধ জানান। এছাড়া লিডারশীপ, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার, তরুণদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন- সংস্থাটির সদস্য কাজী জেবা তাহসিন, উপদেষ্টা শামসুদ্দিন করিম ও রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মামুন রহমান।
আপনার মতামত লিখুন
Array