খুঁজুন
শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ১ ভাদ্র, ১৪৩২

বিপ্রতীপ

জুয়েল দেব
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ১০:৩২ এএম
বিপ্রতীপ

আমি আর অংশৈলুক দাঁড়িয়ে আছি থুইসাপাড়ার একদম শেষপ্রান্তে। ঢালু জায়গাটা শেষ হয়েছে রেমাক্রি নদীতে গিয়ে। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। অংশৈলুকের চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এত রাত অবধি জেগে থাকতে সে অভ্যস্ত নয়। মাথার উপর চাঁদটা বিশাল এক গোলাকার বাতির মত ঝুলে রয়েছে। জোছনায় পাহাড়কে ভেজা ভেজা মনে হয়।

থুইসাপাড়া পর্যন্ত পৌঁছার জন্য আমাদের হাঁটতে হয়েছে পুরো বারো ঘন্টা। থানছি থেকে পদ্ম ঝিরি হয়ে আমরা যখন হাঁটতে শুরু করলাম তখন বিকাল চারটার মত বাজে। ঘন্টাখানেক পরেই সূর্যটা হারিয়ে গেল পাহাড়ের ওপাশে। আমরা হাঁটুসমান পানিতে ঝিরিপথ ধরে হেঁটে চলেছি।
পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হয় পিঁপড়ার মত সারিতে। একজনের পেছনে আরেকজন। হাঁটতে শুরু করার দু’ঘন্টা পরেই রাজেশদা বসে গেলেন। একটা খাড়া পাহাড়ের মাঝ বরাবর এসে তিনি আমাদের বললেন, ‘তোরা চলে যা। আমি আর হাঁটতে পারছি না।’
সামনে পেছনে যেদিকে তাকাই শুধুই পাহাড়। কাউকে কোথাও ফেলে যাওয়ার উপায় নেই। আমরা বসে ঘন্টাখানেক জিরিয়ে নিলাম।
পাহাড় ধরে আমাদের হাঁটা শেষ হয় না। মধ্যরাতে পাহাড়ি রাস্তায় আমরা যখন হেঁটে চলেছি মাথার ওপর তখন বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে জোছনা। নরম আলোয় সবকিছু অপার্থিব লাগে। পাহাড় শেষ হয়ে গিয়ে আবার ঝিরিপথ শুরু হয়। পিচ্ছিল পাথরের উপর আমরা একেকজন ধুপধাপ শব্দে আছাড় খেয়ে পড়ি। আমাদের সাতজনের দলটি কাদামাটি মেখে মোটামুটি ভূত হয়ে গেছি।
থুইসাপাড়াতে যখন পৌঁছলাম তখন রীতিমত ভোর হয়ে গেছে। ঝগড়–র বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে আমার মনে হল অংশৈলুককে খুঁজে বের করতে হবে। দশ বছর আগে দেখেছি। এখন দেখে চিনতে পারব কিনা কে জানে!
আমাদের আসার খবর পেয়ে অংশৈলুকই আমাদের খুঁজে বের করল। পরদিন সন্ধ্যায় সে আমাদের ঘরের দরজায় এসে হাজির। আমি তাকে দেখে একদমই চিনতে পারলাম না। তাগড়া শরীর, পেটানো স্বাস্থ্য। যেন নিয়মিত ব্যায়াম করে। চেহারায় একটা ভারিক্কী ভাব এসেছে। পরনে জিন্সের প্যান্ট আর হাতে দামী ঘড়ি। দেখে বোঝা যায় অংশৈলুকের জীবনে পরিবর্তন এসেছে।
আমি ঘর থেকে বের হয়ে এসে অংশৈলুকের সামনে দাঁড়াই। এই তাগড়া যুবককে কী বলে সম্বোধন করব ভেবে পাই না। আমি কথা খুঁজে না পেয়ে বলি, ‘আমাকে চিনতে পেরেছ?’
অংশৈলুক হাসে, ‘চিনতে পারব না কেন দাদা! আপনাদের সবাইকে আমি চিনতে পেরেছি। আপনারা এসেছেন শুনে দেখা করতে ছুটে এলাম।’
অংশৈলুকের হাসি মাখা মুখ দেখে আমার কোন সংশয় থাকে না। সময়ে মানুষের সবকিছু বদলায়, কিন্তু হাসিটা বদলায় না। যে হাসতে পারে, সে সারাজীবন একইভাবে হাসতে পারে।
অংশৈলুককে বলি, ‘তুমি তো বড় হয়ে গেছ। কী করছ এখন?’
অংশৈলুক আবারও হাসে, ‘কী যে বলেন দাদা! বয়স বেড়েছে না! আমি একটা দোকান চালাই। দোকানটা পাড়ার একদম শুরুতে। আশেপাশের দু’চারটা পাড়ার মধ্যে আমার দোকানের মত আর কোন দোকান নেই। এখন তো সারাবছর ধরেই অনেক পর্যটক আসে এখানে। আপনাদের আশীর্বাদে বেচাকেনা ভালোই হয়।’
আমি অংশৈলুকের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। দশবছর কত দীর্ঘ সময়! এর মধ্যে রেমাক্রি নদী ভরা বর্ষায় যৌবনবতী হয়েছে দশবার। পিচ্ছিল পাথরগুলো দশবার শুকিয়েছে জ্যৈষ্ঠের খড়খড়ে রোদে। দশ বছর আগে অংশৈলুক ছিল সদ্য কৈশোর পার করা এক টগবগে তরুণ। বাংলা ভাষাটা ঠিকমত বলতে পারত না। আধো আধো বাংলায় যা বলত আমরা তা কষ্ট করে বুঝে নিতাম।
থুইসাপাড়াতে এসে আমরা ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। আশেপাশে অনেকগুলো ঝর্ণা আর জলপ্রপাত রয়েছে। কিন্তু পরিচিত কেউ ছাড়া সেগুলো আমাদের পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব না।
সাঈদ ভাই অংশৈলুককে দেখতে পেয়ে তাকে আটকালেন, ‘এই ছেলে, তুমি অমিয়াখুম চেন?’
অংশৈলুক মাথা নাড়তেই সাঈদ ভাই আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদেরকে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে? তোমাকে আমরা টাকা দেব।’
অংশৈলুকের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে। সে একদৌড়ে কোথায় যেন চলে যায়। আমরা অবাক হয়ে দেখি একটু পরেই হাতে একটা চকচকে ধারালো দা নিয়ে সে আবার ফেরত এসেছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে আধো আধো বাংলায় বলল, ‘আমার পেছনে পেছনে হাঁটেন।’
পাহাড়ের সরু পথ ধরে অংশৈলুকের পেছনে হাঁটতে হাঁটতে আমি আবিষ্কার করলাম এই ছেলে তার দুই হাতকে একদম স্থির রাখতে পারে না। আশেপাশে যা দেখে তাতেই দা দিয়ে কোপ মারে। কখনো বাঁশঝাড়ে কোপ মারে, কখনো গাছের গায়ে কোপ মারে। আশেপাশে কিছু না থাকলে সাঁই সাঁই করে শূন্যে দা চালায়।
আমি কিছু না ভেবেই অংশৈলুককে বলি, ‘তুমি বিয়ে করেছ?’
অংশৈলুক হেসে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, ‘হ্যাঁ একমাস হয়ে গেছে।’
আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। এতটুকুন একটা ছেলে একমাস আগে বিয়ে করে ফেলেছে। আমি খুব কৌতূহল বোধ করি। রাজেশদা বলেন, ‘তোমার বিয়ে কীভাবে হয়েছে? কোন অনুষ্ঠান করতে হয়নি?’
অংশৈলুক এবার লাজুক হাসে, ‘আমি টিঙরিকে বলেছি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে পাড়ার শেষ মাথায় আসতে। আমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসব।’
আমি হেসে বলি, ‘টিঙরির সাথে বুঝি তোমার আগে থেকেই ভালোবাসা ছিল?’
অংশৈলুক লজ্জা পায়। মাথাটা নিচু করে বলে, ‘হ্যাঁ আমি তো ওদের পাড়ার উপর দিয়ে পাহাড়ে যেতাম পাখি মারতে। তখন কয়েকবার দেখেছি। তারপর একদিন ওকে দেখলাম রেমাক্রি নদী থেকে স্নান করে পাড়াতে ফিরছে।’
আমার কৌতূহল কমে না, ‘তখন তুমি তাকে ভালোবাসার কথা বলেছ?’
অংশৈলুকের তামাটে মুখটা কেমন যেন রক্তবর্ণ হয়ে যায়, ‘তাকে বলেছি ও যদি আমাকে বিয়ে না করে তাহলে সামনের উঁচু পাহাড়টাতে উঠে লাফিয়ে পড়ব রেমাক্রি নদীতে। শক্ত পাথরের উপর পড়লে থেঁতলে যাবে পুরো শরীর। তখন লাশটা ভেসে যাবে সাঙ্গু পর্যন্ত।’ অংশৈলুক একটু দম নিয়ে বলে, ‘এরপর সাঙ্গু নদী কোথায় গেছে সেটা আমিও জানি না, টিঙরিও জানে না। তাই লাশ কতটুকু পর্যন্ত যাবে সেটা আর বলতে হয়নি।’
অংশৈলুকের কথা শুনে আমরা সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠি। আমরা থামতেই অংশৈলুক বলে, ‘তখন টিঙরি আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বলল, আমি তাকে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।’
রাজেশদা আবার কথা বলেন, ‘তুমি তো বললে না টিঙরিকে কীভাবে নিয়ে এসেছ!’
অংশৈলুক একমনে হাঁটতে থাকে। একবারও পেছন ফিরে তাকায় না। হাঁটতে হাঁটতেই সে বলে, ‘আমি আমার পাড়ার কয়েকজনকে নিয়ে ওদের পাড়ার মাথা পর্যন্ত যাই। টিঙরি দৌড়ে আমার কাছে চলে আসে।’
আমি আবার কৌতূহলী হই, ‘কেউ তোমাদের আটকায় নি?’
অংশৈলুক বলে, ‘ওদের পাড়ার যুবক ছেলেরা তো সবসময় পাহারা দেয়। ধরতে পারলে ওদেরকে তিরিশটা শুয়োর দিয়ে পরব খাওয়াতে হত। আমাদেরকে ধরতে পারেনি। আমার তাই শুয়োর কেটে খাওয়াতে হয়নি। তাছাড়া আমি গরীব মানুষ। ধরলেও কিছু করার ছিল না। আমার তো একটা শুয়োর কেনার মত পয়সাই নেই।’
নোমান ভাই বললেন, ‘আমরা তিন চারদিন এখানে ঘুরে বেড়াব। পাড়াতে ফিরব না। আমরা এখানে ক্যা¤িপং করব। তুমি তো ঘরে নতুন বউ রেখে এসেছ। আমাদের সাথে থাকতে পারবে, নাকি পাড়াতে ফিরে যাবে?’
অংশৈলুক হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। একটুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অনেক দূরে হাতছানি দেয়া কেওক্রাডং-এর দিকে। তারপর আবার হাঁটতে হাঁটতে বলে, ‘বউ তো সারাজীবন থাকবে। কিন্তু ঘরে আমার ভালো লাগে না। পাহাড়ের মধ্যে কী যেন একটা আছে। পাহাড় ধরে হেঁটে বেড়াতে আমার ভালো লাগে। নতুন কোন ঝর্ণা দেখলে বুকের মধ্যে ধুকপুক করে।’
অংশৈলুকের কথা শুনে আমরা সবাই চুপ করে থাকি। কেমন এক ঝিম ধরা অলস দুপুর। বিচিত্র রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে চারপাশে। এর মধ্যে আমরা হেঁটে চলেছি। আমার কাছে মনে হতে লাগল এই সরু পথ শেষ হয়েছে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে।
আমি নীরবতা ভেঙে অংশৈলুককে বলি, ‘তুমি কখনো ঢাকা শহরে গিয়েছ?’
অংশৈলুক হাসে, ‘বান্দরবান শহরেই তো যাইনি কখনো। আমার তো শহরে কোন দরকার নেই। শুধু শুধু কেন যাব!’
ঠিকই তো বলেছে। আমি দমে যাই। এই ছেলেকে শহরে নিয়ে গেলে এর অবস্থা হবে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মত।

অংশৈলুকের কথায় আমার সম্বিৎ ফিরে আসে, ‘দাদা রাত হয়েছে তো। ঘুমাতে যাবেন না?’
আমি হেসে বলি, ‘আমি শহরের মানুষ। মধ্যরাতেও বাইরে ঘুরে বেড়ানো আমার অভ্যাস আছে। আমার অত সহজে ঘুম আসে না।’ একটু গলা খাঁকারি দিয়ে আবার বলি, ‘তার চাইতে তোমার কথা বল। দশ বছর পরে তোমাকে দেখলাম। যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তখন সদ্য বিয়ে করেছিলে। এতদিনে নিশ্চয় কয়েকটা বাচ্চাকাচ্চার বাপ হয়ে গেছ।’
অংশৈলুক ঘুম ঘুম চোখে হাসে, ‘দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে। বড় ছেলেটার বয়স আট বছর হয়ে গেল। একদমই ঘরে থাকতে চায় না। সারাক্ষণ পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়।’
আমি মুচকি হাসি, ‘তোমার স্বভাব পেয়েছে। তুমিও তো কমবয়সে এরকম পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে।’
একটু থেমে গোপন কথার ভঙ্গিতে ফিসফিস করে বলি, ‘আমরা কিন্তু এবারও তিন চারদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ব। পাড়াতে ফিরব না। পাহাড়ে ক্যা¤িপং করব আর ঝর্ণা খুঁজে বেড়াব। ঠিক দশ বছর আগের মত। তুমি আমাদের সাথে যাবে নাকি?’
অংশৈলুকের মুখটা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায়। এই প্রথম আমার তাকে একদম অচেনা মানুষ মনে হতে থাকে। অংশৈলুক ধীরে ধীরে বলে, ‘আপনারা যান দাদা। এখন হারিয়ে যাওয়ার কোন ভয় নেই। অনেক পর্যটক ঘোরাফেরা করছে। আমার দোকান আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য আছে, ছেলেমেয়েরা আছে। এসব ফেলে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।’
আমি খুব অবাক হই, ‘পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে তোমার ভালো লাগে না?’
অংশৈলুক হাসে। সেই একই সারল্যমাখা হাসি। তারপর বলে, ‘আপনারা শহুরে মানুষ। দু’দিনের জন্য পাহাড়ে ঘুরতে এসেছেন। আপনাদের কাছে সবকিছুই ভাল লাগবে। যা দেখবেন তাতেই মুগ্ধ হবেন। নতুন কিছু আবিষ্কারের আনন্দটা অন্যরকম। আমি তো এখানেই থাকি সারাজীবন। আমার কাছে তাই আবিষ্কারের কোন আনন্দ নেই। সেই একঘেয়ে পাহাড় আর পাহাড়। তার চেয়ে বরং বছর-দু’বছরে একবার শহরে যাই। ঘুরে বেড়িয়ে চলে আসি। শহরের রাস্তায় অসম্ভব ধুলোবালি। তাতেও অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগে না। রাস্তা পেরোতে গেলে তো ভয়ে দম আটকে আসে। আমি সেই ভয়টা উপভোগ করি।’
অংশৈলুকের কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে থাকি স্থাণুর মত। সময়ে সবকিছুই পাল্টায়। আমার হঠাৎ মনে হয় রেমাক্রি নদীটাও কি পাল্টে গেছে! কিংবা পাহাড়ের ওপাশে ডুবতে বসা চাঁদটা! যে চাঁদটা প্রতি পূর্ণিমায় ঝলসিয়ে দেয় রেমাক্রি নদীতে জেগে থাকা ডুবো পাথরগুলোকে।

ফরিদপুরে ফুল সজ্জিত গাড়িতে শিক্ষকদের রাজসিক বিদায়

মধুখালী প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ৮:১০ পিএম
ফরিদপুরে ফুল সজ্জিত গাড়িতে শিক্ষকদের রাজসিক বিদায়

ফরিদপুরের মধুখালীতে নানা আয়োজনে ও ফুল সজ্জিত গাড়িতে দুই শিক্ষক ও এক অফিস সহকারীকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার মেগচামী স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ আয়োজন হয়।

এসময় বিদায়ী শিক্ষকদের গলায় গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে মঞ্চ থেকে গাড়িতে নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা গাড়ির দুই পাশে দাঁড়িয়ে করতালির দিয়ে অভিবাদন জানান। পরে ফুল সজ্জিত গাড়িতে শিক্ষকদের স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। এর আগে স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্কাউট দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

বিদায়ীরা হলেন- সিনিয়র শিক্ষক ক্ষিতিশ চন্দ্র দাস, সরজিৎ চক্রবর্তী ও অফিস সহকারী মহিউদ্দিন মৃধা। তাদের প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারী, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এ সংবর্ধনা দেয়। বিদায় বেলায় এমন আয়োজনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিদায়ী শিক্ষক-কর্মচারী।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ক্ষিতিশ চন্দ্র দাস ১৯৮৭ সালে স্কুলে যোগদান করেন, সিনিয়র শিক্ষক সরজিৎ চক্রবর্তী ১৯৮৪ সালে স্কুলে যোগদান করেন। তারা দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতি টেনে অবসরে গেছেন। তাই প্রিয় শিক্ষকদের বিদায় জানাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা এসব আয়োজন করেন। দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এমন সম্মান পেয়ে গর্ববোধ করেন তারা।

বিদায় অনুষ্ঠানে মেগচামী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম মৃধা সভাপতিত্ব করেন।

সিনিয়র শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র কুন্ডুর সঞ্চালনায় বিদায়ী শিক্ষকরাসহ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদায়ী শিক্ষকদের উপহার প্রদান করেন।

মেগচামী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম মৃধা বলেন, দীর্ঘদিনের কর্মজীবন শেষ করে গুণী শিক্ষক ও একজন অফিস সহকারী অবসরে গেছেন। তাই প্রিয় শিক্ষকদের বিদায় জানাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব আয়োজন করেন।

ফরিদপুরে চোর সন্দেহে আড়ায় ঝুলিয়ে যুবককে পিটুনি, গ্রেপ্তার-৩

নুর ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ৭:৫৮ পিএম
ফরিদপুরে চোর সন্দেহে আড়ায় ঝুলিয়ে যুবককে পিটুনি, গ্রেপ্তার-৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গত ১২ আগস্ট চোর সন্দেহে এক যুবককে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে পিটুনির ঘটনায় স্থানীয় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার ফরিদপুর আদালতে পাঠিয়েছে।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে স্থানীয় থানায় মামলাটি দায়ের করেন চোর সন্ধেহে পিটুনি দেওয়া যুবক আহাদ শিকদার (৩০)। তাকে ঝুলিয়ে পিটুনির ঘটনার একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট চোর সন্দেহে বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা গ্রামের সালাম সিকদারের ছেলে আহাদ সিকদারকে (৩০) আড়ার সাথে ঝুলিয়ে পিটুনি দেয় স্থানীয়রা। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় বিভিন্ন আলোচনা ও উত্তেজনা শুরু হয়। পরে শুক্রবার দুপুরে আহাদ শিকদার বাদি হয়ে বোয়ালমারী থানায় ১২জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আসামি সাদ্দাম শেখ (৩০), সুৃরুজ শেখ (২১) ও ইসমাইল শেখকে (২১) গ্রেপ্তার আদালতে পাঠায় পুলিশ। এ মামলায় উপজেলা যুবদলের সদস্য কালাম শেখের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক শিমুল মোল্যা বলেন, আসামি সাদ্দাম ও সুরুজ দুই ভাইকে ডোবরা গ্রামের বাড়ি থেকে আর ইসমাইল শেখকে ডোবরা জনতা জুটমিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইসমাইল শেখ আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগিবরাট গ্রামের ওসমান শেখের ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আহাদ সিকদার থানায় হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। তিনি একজন পেশাদার চোর। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রয়েছে। তবে সে চোর হোক আর যাই হোক তাকে তো অমানবিকভাবে পিটানো যাবেনা। তার জন্য আইন-আদালত আছে। এ ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই’  –ফরিদপুরে রাশেদ খাঁন

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৭:২৪ পিএম
‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই’    –ফরিদপুরে রাশেদ খাঁন

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে গত এক বছরে কোন পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যার নিজেরই স্বাস্থের ঠিক নাই, যিনি ক্যানসারের রোগী এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে বানানো হয়েছে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। যার যেখানে অভিজ্ঞতা, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমরা গত এক বছরে অনেক সংস্কার দেখতে পেতাম। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের  স্বজনপ্রীতির উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। আজকে শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে সরকারের কি ভূমিকা? এই ফরিদপুর মেডিক্যালে আগেও যা ছিল, এখনো সেই অবস্থায় চলছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।’

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ‌দুপুর দেড়টার দিকে‌ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে ‌‌জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ‌তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ সবাই মিলে এক সঙ্গে লড়াই করেছি। সেইদিন ফরিদপুরের মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে রাস্তায় নেমেছিল, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুন্ডাদের ঝাঁটা দিয়ে বিতাড়িত করেছিল। তার ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি একটি গণঅভ্যুত্থান।’

তিনি গত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘ফরিদপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও শেখ হাসিনা এখানে উন্নয়ন করেনি, উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডারদের। উন্নয়ন হয়েছে তাঁর বিয়াই সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। সাধারণ মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন কি করেছিলেন তা ফরিদপুর-ভাঙ্গা ৩২ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক দেখলে বোঝা যায়।’

রাশেদ খাঁন অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে আমাদের অনেক আশা ছিল। উপদেষ্টারা তাদের সম্পদের হিসাব দিতে চেয়েছিল, সেটা জনসম্মুখে দেয় নাই। সরকারের এক বছরে দেশে কোন রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হয় নাই, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ হয় নাই, দৃশ্যমান কোন সংস্কার হয় নাই।’

তিনি বলেন, আমরা গত এক বছর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সমালোচনা করি নাই। তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা বন্দোবস্ত টিকিয়ে রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পুলিশে আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন দপ্তরে-সেক্টরে আওয়ামী লীগ। সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগকেই বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এর জন্য কি আমরা সংগ্রাম করেছি, এ জন্য কি ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে?

রাশেদ খান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের স্বজনপ্রীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর স্বজনপ্রীতির উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। যার নিজেরই স্বাস্থের ঠিক নাই, যিনি ক্যানসারের রোগি এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে বানানো হয়েছে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। যার যেখানে অভিজ্ঞতা, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল (বিষয়টি হাসানত আব্দুল্লাহ বলেছিল)। তাহলে আমরা গত এক বছরে অনেক সংস্কার দেখতে পেতাম। আজকে শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে সরকারের কি ভূমিকা? এই ফরিদপুর মেডিক্যালে আগেও যা ছিল, এখনো সেই অবস্থায় চলছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, পৌরসভা দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? থানায় দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? কোন সেক্টরেই ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয় নাই। তাহলে কি সংস্কার হলো, মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকার অভ্যুত্থানে যারা সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে তাদেরকে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন যারা বলতেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নয়। নির্বাচন না দিয়ে সরকার কি করবে? এই সরকারের কি ক্ষমতা ধরে রাখার সক্ষমতা আছে, নাই। এই জন্যই আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র সমন্বয়কদের সমালোচনা করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপরে সেই ছাত্র প্রতিনিধিরা চাঁদাবাজি ও ট্রেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়লো। এর দায় কার? এর দায় উপদেষ্টা পরিষদের, এর দায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের। কারণ তিনি কখনোই বলেন নাই; তোমার দেশের গর্ব, তোমরা আমাদের গণঅভ্যুত্থান এনে দিয়েছো। তোমরা এখন ক্লাসে ফিরে যাও। তা না করে তিনি ছাত্রদের দল করার পরামর্শ দিয়ে মাথায় তুলেছেন।

তিনি বলেন, ডিসি-এসপি-রা সমন্বয়কদের নাম শুনলে, তাদেরকে (ছাত্রদের) আসেন আসেন ডেকে নিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়েছেন। পারলে সমন্বয়কদের খুুঁশি করতে নিজের চেয়ারটা ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। এইভাবে অতি ভক্তি, তেলামি করে ছাত্রদের বিভ্রান্তিতে ফেলানো হয়েছে। আমি সকল ছাত্রদের কথা বলছি না, যারা করেছে, তাদের বলছি। আজকে ছাত্ররা ডিসি অফিস ও এসপি অফিসে গিয়ে তারা খবরদারি করছে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে এইটা আশা করিনি। দেশে যা শুরু হয়েছে, এভাবে দেশ চলতে পারে না। তিনি সর্বশষে ১৪ দলের সহযোগী জাতীয় পার্টির জি.এম কাদের ও চুন্নুর গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

গণ অধিকার পরিষদের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি ‌মো. ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ‌ফরিদপুর জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ মিয়া, বোয়ালমারী উপজেলা সভাপতি‌ লাবলু শরীফ, ফরিদপুর সদর উপজেলা সভাপতি রাজু আহমেদ, ভাঙ্গা উপজেলার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ‌হৃদয় আহমেদ, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি ‌জুয়েল ভান্ডারী ও সালথা উপজেলা সভাপতি ‌ফারুক ফকির প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় জেলার নেতৃবৃন্দ রাশেদ খাঁনের মাধ্যমে ফরিদপুর নামেই বিভাগ ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।