ভাঙ্গায় মায়ের সাথে খালা বাড়ি বেড়াতে এসে খালে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ফরিদপুরে দোকানের শাটারে হেলান দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইছহাক মাতুব্বর (৫৫) নামে এক মাটি কাটা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের পশ্চিম আলিপুর খন্দকার লজ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিক ইছহাক মাতুব্বর জেলার সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বালিয়াগট্টি এলাকার বাসিন্দা।
ওই এলাকার নির্মাণ শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, পশ্চিম আলিপুর খন্দকার লজের পাশে তরুণ বাবুর বাড়িতে বাথরুমের ৪টি মাটির রিং বসানোর জন্য সকাল ১০টায় বাজার থেকে ওই ব্যক্তিকে ডেকে আনা হয়। এদিন দুপুর ২টার দিকে ওই ব্যক্তি মাটি কেটে রিং বসানোর কাজ শেষ করে দোকানে কিছু খেতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। দোকান থেকে খেয়ে ফেরার পথে বৃষ্টি হলে পশ্চিম আলিপুর খন্দকার লজ এলাকায় জিসান মোল্লার অটো রিক্সার ব্যাটারি ও পার্টসের বন্ধ দোকানের সামনে বসে শাটারের সাথে বিশ্রাম নিতে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. অহিদুজ্জামান জানান, একজন মাটি কাটার শ্রমিক কাজ শেষ করে রাস্তার পাশের একটি দোকানের শাটারের সামনে বসে বিশ্রাম নিতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বিদ্যুত বিভাগের লোক এসে দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। দোকানের সামনে পড়ে থাকা মরদেহটির সুরতহাল শেষে কোতোয়ালি থানায় নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অভিলম্বে বিভাগ বাস্তবায়নসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটি।
বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির উত্থাপিত দাবিসমূহ হলো : অবিলম্বে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন করা, একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা,দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু, ফরিদপুর–ভাঙ্গা মহাসড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীতকরণ, ভাঙ্গায় মানমন্দিরকে কেন্দ্র করে একটি ‘সায়েন্স সিটি’ স্থাপন,ফরিদপুরে গ্যাস সংযোগ প্রদান,একটি মহিলা ক্যাডেট কলেজ স্থাপন, টেপাখোলা লেক থেকে ভুবনেশ্বর নদী পর্যন্ত খনন করে পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, বাইশরশি জমিদার বাড়িসহ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার,কবি জসীমউদ্দীন স্মৃতি কমপ্লেক্সকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।
এসময় সময় কমিটির সভাপতি ডা. এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ, সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ, সিনিয়র সাংবাদিক পান্না বালা, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল, বিশিষ্ট আইনজীবি অধ্যাপক তারেক আইয়ুব খান, অধ্যাপক আজাদ উদ্দিন, অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান, মো. হাফিজুর রহমান মিঞা ও আলাউদ্দিন আহম্মদ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন এবং দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে, যা শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও পর্যটন খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের সূচনা করবে।
সময় বদলেছে, বদলেছে যোগাযোগের ধরনও। একসময় যার অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন প্রিয়জনরা, সেই ডাকপিয়নের ডাক এখন আর শোনা যায় না।
প্রযুক্তির স্পর্শে বদলে গেছে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাতে-কলমে লেখা চিঠির জায়গা করে নিয়েছে মোবাইল, ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়া।
একটা সময় ছিল, চিঠি পৌঁছাতে লাগত সপ্তাহ কিংবা মাস। প্রিয়জনের খবর জানতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো। এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে বার্তা। এক ক্লিকে পাঠানো যাচ্ছে অর্থ, ছবি, শুভেচ্ছা।
চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ডাক বিভাগ একসময় ছিল অপরিহার্য। অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিগত যোগাযোগেও ডাকপিয়নের পদধ্বনি ছিল খবরের প্রতীক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এনালগ থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ডাকবিভাগের সেই জৌলুস ক্রমেই ম্লান হয়ে গেছে। এখন আর দেখা মেলে না রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাখা সেই লাল রঙের ডাকবাক্স। জিপিওর সামনে কয়েকটা রয়েছে তাও ফুটপাতের ভাসমান দোকানের কারণে ভেতরে পড়ে আছে। দেখা যায় না কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আসা চেনা মুখের সেই ডাকপিয়নদের।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে দ্রুত যোগাযোগের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। চিঠির জায়গা দখল করেছে ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এমনকি ফ্যাক্স ব্যবস্থাও হারিয়ে যাচ্ছে ই-মেইলের দাপটে। মানুষের আর্থিক লেনদেনও এখন সহজ। ডাক মানিঅর্ডারের জায়গা নিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। একইসঙ্গে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কুরিয়ার সার্ভিস, যা ডাকবিভাগের বিকল্প হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যদিও তা তুলনামূলক ব্যয়বহুল।
ডাকবিভাগের কার্যক্রম আজও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অফিসিয়াল নথি, সরকারি চিঠি, নিয়োগপত্র কিংবা নোটিশ পাঠানোয় আজও ডাক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০০০ সালে চালু হয় ই-পোস্ট সার্ভিস, এর মাধ্যমে দেশের তৃণমূল জনগণ পাচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক ডাকসেবা। এ ছাড়া অনেক জেলা শহরে রয়েছে নাইট পোস্ট অফিস। যেখানে সারারাত চিঠি ও পার্সেল আদান-প্রদান হয়।
বিশ্বব্যাপী ডাক সেবাকে সমন্বিত ও আধুনিক করার লক্ষ্যেই ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন’। ১৯৬৯ সালে টোকিও সম্মেলনে দিনটি ‘বিশ্ব ডাক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এ সংগঠনের সদস্য হয় এবং তখন থেকেই ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস পালন করে আসছে।
যদিও সময়ের পরিবর্তনে ডাক ব্যবস্থা তার উজ্জ্বলতা অনেকটাই হারিয়েছে, তবুও এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এখনও জনগণের পাশে আছে। ডাকবাক্সে কেউ চিঠি না ফেললেও, এগুলোকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা দরকার— অতীত ঐতিহ্য হিসেবে নয়, বরং ইতিহাসের অংশ হিসেবে। কারণ এই ডাক ব্যবস্থা একসময় ছিল মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি আবেগময় অধ্যায়।
বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলিস্থান এলাকার জিপিওর সিনিয়র পোস্টমাস্টার মো. মনিরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিরক্তবোধ করেন ও জানান কথা বলতে রাজি নন।
গুলিস্তান জেনারেল পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন আবদুল মতিন বলেন, আমরা যেদিন চিঠি হাতে নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় যেতাম, সেদিন ওদের মুখে যে হাসি দেখতাম, সেটা আজ আর দেখি না। তখন মানুষ চিঠির অপেক্ষায় থাকত। এখন অপেক্ষায় থাকে মোবাইলের নোটিফিকেশনের। তবে সব সরকারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদেরকেই জাগায়মতো পৌঁছাতে হয়।
মুরাদপুর হাই স্কুলের শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলজীবনে বন্ধুরা একে অপরকে চিঠি লিখতাম। খামে করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঈদ কার্ডের শুভেচ্ছা পাঠাতাম। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এখন সবকিছু ভার্চ্যুয়াল। চিঠির মতো মমতা আর ভালোবাসা আর কোথাও নেই।
গণমাধ্যমকর্মী আকাশমনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে আমাদের ভালোবাসা হারিয়েছে। আমাদের আবেগ অনুভূতি শেষ হয়ে গেছে। আগে আমরা আবেগ দিয়ে একটি চিঠি লিখতে গিয়ে কত কাগজ নষ্ট করতাম। রাতের পর রাত জাগতাম। সেই সময়ের গভীর যে টান, এখন সেই গভীর টান আর নাই। আমাদের মা, খালারাদের দেখতাম তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার থাকতো কখন ডাকপিয়ন সন্তানের চিঠি নিয়ে বাসায় আসবে।
কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, আগে মানিঅর্ডারেই টাকা পাঠাতাম। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মুহূর্তেই চলে যায়। তবে ডাক বিভাগের নির্ভরযোগ্যতা আজও মনে পড়ে। চিঠি ছিল সম্পর্কের এক মধুর মাধ্যম। আমি চাই, পোস্ট অফিসগুলোকে অন্তত ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক।
আপনার মতামত লিখুন
Array