খুঁজুন
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

শৃঙ্খলাভঙ্গে জিরো টলারেন্স বিএনপির, শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫, ১১:২১ এএম
শৃঙ্খলাভঙ্গে জিরো টলারেন্স বিএনপির, শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত

নেতা-কর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলায় রাখতে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থানে বিএনপি। কোনো ধরনের অনিয়ম বা অভিযোগই বরদাশত করছে না হাইকমান্ড।

সাংগঠনিক প্রতিযোগিতার জেরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকে যেন কোনো ধরনের মারামারি না হয় সেদিকে যেমন নজর রাখছে শীর্ষ নেতৃত্ব, তেমনি আর্থিক কোনো ঝামেলা বা কেলেঙ্কারিতে যেন কেউ না জড়ায় সে বিষয়েও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে কড়া বার্তা।

 

রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে কেউ যেন কোনো উসকানি না ছড়ান বা বেফাঁস কিছু না বলেন, সেজন্য করা হচ্ছে হুঁশিয়ারি। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে দেওয়া হচ্ছে শোকজ (কারণ দর্শানোর) নোটিশ। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের দল থেকে করা হচ্ছে বহিষ্কারও। ফলে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক যে পালাবাদল ঘটেছে, তাতে দেশজুড়ে বড় রকমের বিশৃঙ্খলার শঙ্কা দেখা দিলেও বিএনপির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থান নিয়ে সে জায়গায় যেন লাগাম টেনে ধরেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতির মূল প্রেক্ষাপটে চলে আসে কয়েকবার সরকার গঠন করা অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি। এর আগে ১৬টি বছর দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত দমন-পীড়ন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। তাদের শীর্ষ নেতারাও আওয়ামী লীগের চক্ষুশূল হয়েছিলেন টানা আন্দোলনের কারণে। কিন্তু পট পরিবর্তনের পর কতিপয় নেতা-কর্মীর কারণে দলটি নেতিবাচকভাবে আলোচনায় আসে। জনরোষ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের অপরাধ সাম্রাজ্যের অনেক মাফিয়া বা গডফাদার ও তাদের দোসররা পালিয়ে যায়। কিন্তু তাদের দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ে কতিপয় লোক। এদের অনেকে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হতে থাকে।

অভিযোগ পৌঁছে যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও। তিনি একাধিকবার হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু তারপরও জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিবৃত করা যাচ্ছিল না বিধায় শোকজ ও বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে থাকে হাইকমান্ড থেকে। এতেই থেমে থাকছেন না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সাম্প্রতিক এক ভার্চুয়াল সভায় ‘কঠোর সতর্ক বার্তা’ দিয়েছেন তিনি। তারেক রহমান জানিয়েছেন, শৃঙ্খলার স্বার্থে স্বার্থপর হবে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর হয় কেন্দ্র। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসহ দলের শত শত নেতাকর্মীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন অভিযোগ আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয় এক হাজার ৩১ নেতাকে। শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২০৩ নেতাকর্মীকে। যারা শাস্তির মুখে পড়েছেন, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। যারা শোকজ পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ বেফাঁস মন্তব্য বা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পড়েছেন শাস্তির খড়গে।

যেসব অভিযোগের খবর পাওয়া যায়

হাসিনার ষোল বছরের শাসনকালে জমি, ফ্ল্যাট, মার্কেট দখল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যসহ সব অপরাধ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন তার আশ্রিত গডফাদার ও মাফিয়া এবং দলের নেতা-কর্মীরা। হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে এরাও দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নেন।

তারপর অপরাধের এসব সিন্ডিকেট দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে একটি চক্র। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভাগ, জেলা, উপজেলা ইউনিয়নের বাজার, বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন নির্মাণাধীন স্থাপনা, সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীরা চাঁদা নিচ্ছেন—এমন খবর পাওয়া যায়।

যেমন ৫ আগস্টের আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি করতেন আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেন। ৮ আগস্ট থেকে বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নীরব কারওয়ান বাজারসহ তেজগাঁও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়।

জানা যায়, পদধারী ও মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ তাদের কর্মী বাহিনী দিয়ে মাটি ভরাট করে নদীর জমি দখল করেছেন। একই পর্যায়ের বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে অর্থ আদায় করছেন এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। এসব অভিযোগ বিভিন্ন মাধ্যমে কেন্দ্রে গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

যদিও শোনা গেছে, ‘সিন্ডিকেটের’ আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় অনেক নেতা শাস্তি থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। শীর্ষ নেতারা বলেছেন, দলের হাইকমান্ড চায় না নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ তুলে বিএনপিবিরোধী কেউ কোনো ফায়দা নিক।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযুক্ত উঠলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য মনোনয়ন কোন্দলেও নেতারা একে অপরকে নানা কারণে অপবাদ দিচ্ছেন। তাই ঢালাও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তদন্ত হচ্ছে, সে হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও

আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে গুমের শিকার হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে তার হদিস মেলে ভারতে। ৯ বছর ধরে মেঘালয়ের শিলং অবস্থান করছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ উৎখাত হওয়ার পর দেশে ফেরেন। তার বিরুদ্ধে আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলমের বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তাকে শোকজ করে বিএনপি। একই ঘটনায় চট্টগ্রামে বিএনপির দক্ষিণ জেলা শাখার আহবায়কসহ স্থানীয় তিন নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। সেই কমিটিও বাতিল করে দেয় বিএনপি।

২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট নাটোরে দলীয় আদর্শের পরিপন্থী বক্তব্যের অভিযোগ ওঠে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে। তাকে দল থেকে শোকজ করা হয়। এ অভিযোগের জন্য শাস্তিও পান দুলু। তিনি ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে। পরে তাকে সরিয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়।

এছাড়া শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে শোকজ করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের মতো নেতাদেরও। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগের খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের কাছে সুবিধা দাবির অভিযোগ মেলে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বায়রা ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় আবু আশফাক, শান্তিনগরের ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের কমিটি দখল; ঢাকা ও ফেনীতে চাঁদাবাজির ঘটনায় রফিকুল আলম এবং আবদুল মোনায়েমের বিরুদ্ধে পরিবহন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে।

হাসিনার পতনের পরপরই মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দখল নিতে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের অন্তত ছয় কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। সেসময় ঘটনাটিতে বিতর্কিত গ্রুপ এস আলমের পক্ষে ভূমিকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম ওরফে নয়নের বিরুদ্ধে।

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কবির ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত। এ ঘটনার পেছনের কারণ ছিল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ। পরে শামা ও বাবুলের দলীয় পদ স্থগিত করে দল।

ময়মনসিংহের ভালুকায় ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করায় দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে দল থেকে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।

বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় বিরোধ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে পুকুর দখল ও ট্রাক দিয়ে বালু এনে সেটি ভরাটের অভিযোগ ওঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহানের (শিরিন) বিরুদ্ধে। পরে তার পদ স্থগিত করা হয়। যদিও বিলকিস দাবি করেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

এ ছাড়া বাগেরহাটে দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম, কয়রা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাবুল, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, তেরখাদা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু মোল্লা, সদস্য ফেরদৌস মেম্বার, গাউস মোল্লা ও রবিউল ইসলাম লাকু, ফুলতলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আবুল বাশার ও সদস্য সচিব মনির হাসান টিটো, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল, আগৈলঝাড়ার ছাত্রদলের আহ্বায়ক মফিদুল মোল্লা, মেহেন্দীগঞ্জ ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুবায়ের মাহমুদ, জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, সুনামগঞ্জ তাহিরপুরের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান, মৌলভীবাজার যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিম, বগুড়ার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা এনামুল হক সুমন, জেলা বিএনপির সহকোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বাকি, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ, বদলগাছীর উপজেলা বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির ১০ সাংগঠনিক জেলায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় হাইকমান্ড।

বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, চাঁদাবাজি, দখল, হুমকি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে থাকবে দলটি। অবশ্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি প্রমাণিত না হলে ওই নেতা বা কর্মীর শাস্তি বাতিল হবে। এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ নেই, কিন্তু প্রাথমিকভাবে তাকে বহিষ্কার বা পদ স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা কী বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএনপির অবস্থান সাধুবাদযোগ্য। কারণ এহেন সব অভিযোগের পরও হাইকমান্ড যদি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এসব বিষয় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। কারণ এরই মধ্যে যেসব কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তাতে ১৬ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতা-কর্মীরাই উল্টো জনতার প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। এর প্রভাব পড়তে পারে ব্যালট বাক্সে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির এখনই সময় নিজেদের ক্লিন ইমেজকে জনগণের সামনে তুলে ধরা। তবে এ সময়েই দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু কিছু অভিযোগ আসছে যা দুঃখজনক। বিএনপির উচিৎ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। জনগণ এখন অনেক স্মার্ট। এ বিষয়টিকে ভালোভাবে বোঝা ও জনগণের পালস বোঝা দরকার। নয়ত, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মতো বিষয়গুলো বিএনপিকে বড় বিপদে ফেলে দেবে।

শৃঙ্খলাভঙ্গে ‘জিরো টলারেন্স’

যাদের বিষয়ে অভিযোগ, মিলছে তাদের ক্ষেত্রে বিএনপি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করছে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই নিশ্চিত হওয়া গেছে। নেতারা বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নিজস্ব সিদ্ধান্ত-স্বার্থ নিয়ে কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হবে। কোনো অপরাধের জন্য ছাড় দেওয়া হবে না।

নেতারা এও বলছেন, অভ্যুত্থানের আগে বিএনপিকে নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপসহীন আদর্শ ধরে রেখে গত ১৬ বছর পার করেছে দল। সেদিক থেকে দলের ভেতরে-বাইরে কারও কোনো অপরাধের বিষয়ে আপস হবে না।

বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। তবে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত। যেসব ঘটনায় সত্যতা পাওয়া গেছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কোনো ঘটনায় কারও নাম এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই অন্যায়কারীদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বিএনপি হাইকমান্ড কোনো অন্যায়ে জড়িত কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না।

 

Source : Banglanews24

ফরিদপুরে বেহাল মহাসড়কে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি, ডাকাতির শঙ্কা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ৬:২৪ পিএম
ফরিদপুরে বেহাল মহাসড়কে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি, ডাকাতির শঙ্কা

 

 

ভাঙ্গা উপজেলা থেকে ফরিদপুর জেলা সদর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় এবারের ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঘর মুখো মানুষকে।

একদিকে খানাখন্দে ভরপুর সড়ক দিয়ে চলাচলে প্রায়শ ভেঙ্গে যাচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রপাতি, অন্যদিকে ওই সড়ক অতিক্রমে ভোগান্তির পাশাপাশি ধীর গতির কারণে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌছাতে না পারাসহ রাতে ছিনতাই ও ডাকাতির শংকা রয়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের মাঝে। যদিও ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বলছেন, ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই অংশে রাতের বেলায় পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। তাই শংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলা এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার, যা দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরে গেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বেড়েছে খানা-খন্দের পরিমান।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করা ফরিদপুরসহ অন্তত ১০ জেলার মানুষ। ফরিদপুরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের এই সড়কটির ব্যাপারে উদাসীনতাকে দায়ি করছে এই সড়কে যাতায়াতকারীরা।

ওই সড়ক ব্যবহারকারী যানবাহন চালক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খানাখন্দের কারণে প্রায়শ গাড়ীর যন্তপাতি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এছাড়া ধীর গতিতে যানবাহন চালাতে হচ্ছে, ফলে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পেছানো যাচ্ছেনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

এই সড়ক দিয়ে ঢাকাগামী মাইক্রোচালক আবুল হোসেন বলেন, এয়ারপোর্টে যাচ্ছি যাচ্ছি আনতে ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত সড়কের যে অবস্থা তাতে গাড়ির গতিসিমা সর্বোচ্চ ১৫ বেশি চালানো যায় না। মহাসড়কের গতি যদি এরকম হয় সে ক্ষেত্রে ডাকাতি সহ নানা পদের ঝামেলার আশঙ্কা থাকে।

এদিকে গাড়ী নষ্ট হওয়া ও ধীর গতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখো মানুষেরাও। এছাড়া রাতে ধীর গতির কারণে ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনার শংকাও রয়েছে তাদের মধ্যে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী তাদের।

যদিও ছিনতাই ও ডাকাতির বিষয়টি মাথায় রেখে ওই অংশে পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল।

তিনি জানান, ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ককে চারটি ভাগে ভাগ করে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা হযেছে। কোনো ধরনের সমস্যা বা সন্দেহ হলে দ্রুত পুলিশকে জানানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জানিয়েছে, আপাতত চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক করতে সড়কটির সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।

‘জিয়াউর রহমান ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’– এ্যাড. বুলু

এহসানুল হক, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ৬:১৪ পিএম
‘জিয়াউর রহমান ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’– এ্যাড. বুলু

‘জিয়াউর রহমান ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ বলে মন্তব্য করেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. লিয়াকত আলী খান বুলু।

ফরিদপুরের নগরকান্দায় জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।  এসময় লিয়াকত আলী খান বুলু জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন।

বুধবার (৪ জুন) নগরকান্দা পৌর বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুজ্জামান অনু, উপজেলা ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ঝিলু, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেন মোল্লা, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি মহিদ বিল আল মাহিম প্রমুখ।

আলোচনাসভা শেষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করেন তাঁরা।

ফরিদপুরে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে এক ব্যবসায়ী নিহত

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:৩৩ পিএম
ফরিদপুরে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে এক ব্যবসায়ী নিহত
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে লিয়াকত মোল্যা (৪০) নামে এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাদিরদী বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী এলাকার ইউপি সদস্য বুলবুল আহমেদ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মাগুরা জেলার গোপালনগর ইউনিয়নের সংকোচ খালী এলাকার তিন ব্যবসায়ী কয়েকটি গরু বোঝাইকৃত ট্রাক নিয়ে ফরিদপুর টেপাখোলা গরুর হাটে যাচ্ছিলেন। তারা মহম্মদপুর-বোয়ালমারী উপজেলার সীমান্ত ব্রীজ পার হয়ে ফরিদপুর জেলার কাদিরদী বাজার এলাকায় পৌঁছালে পিকআপ থেকে গরু লাফ দিলে গরু বোঝাইকৃত পিকআপ উল্টে যায়। এ সময় পিকআপে থাকা লিয়াকত মোল্যাসহ দুই ব্যবসায়ী আহত হয়। স্থানীয়রা মারাত্মক আহত অবস্থায় দুই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিয়াকত মোল্যাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অপর ব্যবসায়ী ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী এলাকার ইউপি সদস্য বুলবুল আহমেদ জানান, মাগুরা সদর থেকে গরু বোঝাইকৃত পিকআপটি ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা গরুর হাটে যাচ্ছিল। গরুর গাড়িটি কাদিরদী বাজারে আসলেই একটি গরু লাফ দিলে গাড়ীটি উল্টে ব্যবসায়ীরা চাপা পড়ে। সেখান থেকে আহত দুইজনকে ফরিদপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরে জানতে পেরেছি লিয়াকত নামে ব্যবসায়ী মারা গেছে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনো অবগত নই। এমনকি ঘটনাটি আমাদের কেউ জানায়নি।