খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

সালথায় গরু চুরির হিড়িক, সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা

নুরুল ইসলাম নাহিদ, সালথা:
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ২:২৫ পিএম
সালথায় গরু চুরির হিড়িক, সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা

ফরিদপুরের সালথায় গত এক সপ্তাহ ধরে একের পর এক গরু চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের চন্ডীবরদী, চরবল্লভদী ও খালিশা বল্লভদী গ্রামে এসব চুরির ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। সংঘবদ্ধ চোরের রাতের আঁধারে খামারি ও কৃষকদের গোয়ালঘর থেকে অন্তত ৯টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। চোরেরা বল্লভদী ইউনিয়নের সীমান্তে থাকা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ব্যবহার করে চুরি করা গরুগুলো খুব সহজেই ট্রাক ও পিকআপে করে গন্তেব্যে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা।

অন্যদিকে, একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় পুরো ইউনিয়নবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে রাত জেগে গরু পাহারা দিতে শুরু করেছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, এভাবে একের পর এক গরু চুরির ঘটনা ঘটতে থাকলে এ এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পথে বসে যাবে। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার জন্য ও পুলিশের টহল বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে শুধু চন্ডীবরদী গ্রাম থেকেই চুরি হয়েছে অন্তত ৬টি গরু। সর্বশেষ সোমবার (০৭ জুলাই) গভীররাতে চন্ডিবরদী গ্রামের কৃষক সেলিম শেখের গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী সেলিম শেখ বলেন, সারাজীবনের জমানো টাকায় কেনা আমার তিনটি গরু চোরেরা নিয়ে গেছে। এই গরুর দুধ বিক্রি করেই চলে আমার সংসার। চোরেরা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কী করব?

এর আগে গত ২ জুলাই গভীররাতে চন্ডীবরদী গ্রামের গ্রাম পুলিশ মিলন মিয়ার গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়। ভুক্তভোগী মিলন মিয়া বলেন, কিছুদিন আগে আমার তিনটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। চোরের দল আমাকে একেবারে সর্বস্বান্ত ও নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। এই তিনটি গরু ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল ছিল না। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাবো? কে আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে?

এ ছাড়াও সম্প্রতি চন্ডীবরদী গ্রামের শাজাহান সরদারের তিনটি গরু, পিলি মুন্সির একটি গাভী এবং চরবল্লভদী গ্রামের হাসেম মোল্যার দুটি গরু ও খালিশা বল্লভদী গ্রামের কোবাদ মোল্যার দুটি গরু চুরি হয়েছে। ভুক্তভোগী কোবাদ মোল্যা বলেন, আমার দুটি গরু চুরি হওয়ার পর থেকে গরু পালন বাদ দিয়েছি। এত কষ্ট করে গরু বড় করার পর যখন চোরে নিয়ে যায়, সেই কষ্টের কোনো সীমা থাকে না।

চন্ডীবরদী গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান শরিফ বলেন, আমাদের এলাকাটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চোরেরা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে করে গরু নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় খুব সহজেই। এরা কোনো ছিঁচকে চোর নয়, এরা সংঘবদ্ধ বড় কোনো চোর চক্র। এদের হাত থেকে আমাদের সম্পদ রক্ষা করা জরুরী। নইলে মানুষ তাদের আয়ের মাধ্যম হারিয়ে পাগল হয়ে যাবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মহিনুর শিকদার বলেন, কৃষকরা তাদের গরুকে সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। সেই গরু চুরি হলে সন্তান হারানোর মতোই কষ্ট পায়। এমন অবস্থায় চুরি প্রতিরোধে চন্ডীবরদী স্ট্যান্ড, চরবল্লভদী মোড় ও বাউশখালির মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কঠোর পাহারার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। একইসাথে মহাসড়কে ওঠার প্রধান পথ চন্ডীবরদী স্টান্ডে একটি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের করা হলে চোর শনাক্তে সহায়ক হবে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, গত রাতের গরু চুরির ঘটনাটি জানার পর ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। কিছুদিন আগেও গ্রাম পুলিশ মিলন মিয়ার গরু চুরির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। এসব চুরির ঘটনায় পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ইতোমেধ্য ওই এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুতই চোর শনাক্ত করতে পারবো।

সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (২৬) নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় জড়িত অভিযোগে জাফর মোল্যা (৪২) নামের আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের সদস্যরা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জাফর মোল্যাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার সাভারের পশ্চিম ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাফর মোল্যা ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন তেঁতুলিয়া এলাকার মৃত কাদের মোল্যার ছেলে।

এদিকে, গত ১৩ ডিসেম্বর এ হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ফিরোজ মাতুব্বর নামের অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১০।

র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জাফর মোল্যাকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাছ ব্যবসায়ী উৎপল হত্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে তার নাম এসেছিল। জাফরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।’

প্রসঙ্গ, গত ৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের কালীতলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী উৎপল সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হত্যার একদিন পর উৎপলের বাবা অজয় কুমার সরকার বাদী হয়ে সালথা থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
কচুলতায় এসেছে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা। দেড়শ বিঘা দিগন্তজুড়ে কচুর লতার সফল চাষ মৌলভীবাজার জেলায় সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা। তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় কচুর লতা চাষে এক ধরনের কৃষি বিপ্লব দেখা যাচ্ছে এ জেলায়।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রচলিত অনেক ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় কচুর লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় তিনশ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই-তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপক বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকাতেই মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি লতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মৌসুম যত এগোচ্ছে, দামও বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি এক কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলায় কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে তার উদ্যোগে লতি চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ ও ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসলে পরিণত হয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে যেখানে দুই-তিন বিঘা জমিতে লতি চাষ হতো, এখন সেখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির আবাদ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি অত্যন্ত লাভজনক ফসল এবং এতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামটি যেন এখন ‘লতার গ্রাম’ হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক ফসল। অল্প খরচে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। লতি চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।

সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:০৯ পিএম
সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুরের সালথায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গিয়ে খোরশেদ খান (৪৫) নামে এক কৃষক লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল। এ ঘটনায় ওই হামলাকারী কৃষকলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোরশেদ খান গট্টি ইউনিয়নের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও ওই গ্রামের উচমান খানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে যায় একদল পুলিশ। এ সময় ওই আসামীকে ধরতে বাধা দেন কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ খান। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলু রহমান খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গেলে খোরশেদ খান বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।