খুঁজুন
শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩২

সোহাগের লেখা রোমান্টিক গানে এবার দ্বৈত কণ্ঠে মেজবাহ বাপ্পী ও প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম
সোহাগের লেখা রোমান্টিক গানে এবার দ্বৈত কণ্ঠে মেজবাহ বাপ্পী ও প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস
‘তোমায় নিয়ে লিখি কবিতা, লিখে যাই কত গান, আমার হয়ে থেকো পাশে,  ভুলে সব অভিমান ’।
এমনই কথা কথা মালায় রোমান্টিক গানটি সম্প্রতি রেকর্ড করা হয় বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা কেন্দ্রে!
গানটির লিখেছেন মো.তাজুল ইসলাম সোহাগ ওরফে সোহাগ রেজা ,গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন চ্যানেলের সেরা কন্ঠ ও জি বাংলার সা রে গা মা পা  এবং ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মের তথা এই প্রজন্মের দুই জন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মেজবাহ বাপ্পী ও  প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস! গানটির সুর-সংগীতের কাজটি করেছেন আলমগীর হায়াত রুমন।
গানটি প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস বলেন, ‘বহুদিন পরে চমৎকার এমন কথামালা ও সুরে গান করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে!  গানটি রেকর্ডিং করার সময় আমার মধ্যে অন্যরকম  অনুভূতি ও আবেগে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম; আশাকরি গানটির মিক্সড মাস্টারিংয়ের পরে এই গানটি শ্রোতাদের মনে স্থান করে নিবে”।
অন্যদিকে মেজবাহ বাপ্পী বলেন, ‘আমি সর্বদা একটু ভিন্ন ধরনের মৌলিক গান গাইতে পছন্দ করি ; যেটি মানুষের হৃদয়কে যাদুর মতো আকৃষ্ট করবে ; আজ তেমনই একটি গান করতে পেরে মনেতে ভীষণ শান্তি লাগছে!’
স্টুডিওতে উপস্থিত সবার  উচ্ছ্বাসে  গীতিকার সোহাগ রেজা ভীষণভাবে আনন্দিত হন! পুলকিত হৃদয়ে সোহাগ রেজা জানান, “আমার লেখা গান শ্রোতাদের মনে যদি ভালো লাগার স্থান করে নিতে পারে তবেই শ্রম সার্থক হবে; এবং শ্রোতাদের আন্তরিক অনুপ্রেরণা ও সমর্থন পেলে পছন্দসই অসংখ্য গান লেখার কাজ চালিয়ে  যাওয়ার আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যাবে “।

“ঘুম”

মাহমুদুল হাসান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২৫ পিএম
“ঘুম”

ঘুম—সে কি কেবল জৈবিক নিঃশেষে এক নিথরতা? নাকি সময়ের অদৃশ্য ভারে গঠিত কোনো আধ্যাত্মিক বিন্দু, যার প্রতিটি নক্ষত্রজালেই ঘুমিয়ে থাকে একটি বিলুপ্ত আলো?
আমি জানি না। বরং জানি—ঘুম আসলে অনস্তিত্বের সীমানায় একটি নরম ছায়া, যাকে ধরা যায় না, ছুঁয়ে ফেলা যায় না, কেবল অনুভবে তার উপস্থিতির কম্পন মাত্র।

ঘুম কখনো আত্মার প্রান্তে অপেক্ষমাণ এক ছায়াপথ, আবার কখনো মস্তিষ্কের গহ্বর-জুড়ে এক বিপরীত সংবেদন। সে এসে চোখের পাতায় ফেলে নিরাকার শব্দের ধুলো। তখন সময়ও থেমে যায়—এক অনিয়মিত তালে, যেখানে ঘুম নিজেই নিজের সংজ্ঞা অস্বীকার করে।

ঘুম ঘুম নয়—সে এক অন্তর্বর্তী হ্রস্ব বিস্মৃতি।
সে ‘আমি’ থেকে ‘তুমি’ হয়ে যাওয়া, আবার ‘তুমি’ থেকে ‘কেউ নয়’ হয়ে পড়ার অনিবার্য অন্তর্বিপর্যয়।
সে নিদ্রা নয়, সে নিস্পন্দিত অনুপ্রাণ—এক পরাবাস্তব ঘূর্ণিপাকে অস্তিত্বের জরায়ুতে জমে ওঠা নিরুত্তর অবচেতনতা।

ঘুমের ভেতর আমি হারিয়ে ফেলি আমার ‘আমি’-কে। সেখানে আমার নাম থাকে না, মুখ থাকে না, থাকে কেবল রন্ধ্রে রন্ধ্রে রচিত অপার স্বপ্নাবিষ্টতা।
স্বপ্ন? না, স্বপ্নও নয়।
এ যেন এক বহুতল নিঃসরণ, যেখানে প্রতিটি স্তরেই চৈতন্য নিজেকে উল্টো করে তোলে, নিজের ভাষাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

একটা প্রশ্ন—ঘুম কি নিঃশেষে বিস্মৃতি?
না, সে এক পলক-দীর্ঘ মুক্তিপত্র।
যেখানে জন্ম নেয় নীরব চিৎকার, শব্দহীন গল্প, আর অজানা কোনো পুরাকথার অসমাপ্ত অনুরণন।

ঘুম মানে কেবলই চোখ বুজে থাকা নয়।
ঘুম মানে শরীর থেকে মন ছিঁড়ে ফেলা।
ঘুম মানে একটি চলমান ট্রেন, যার গন্তব্য নেই—অথচ গন্তব্যহীনতাই তার একমাত্র পরিচয়।

ঘুম কি কখনো জেগে থাকে?
হ্যাঁ—ঘুম জেগে থাকে, অনেক সময়।
যখন আমাদের চোখ বুজে, কিন্তু চিন্তা ফুঁপিয়ে কাঁদে।
যখন আমরা সুতীব্র ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় পড়ি, কিন্তু অবচেতন চেতনায় ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া কোনো অনুক্ত আর্তনাদ।
তখন ঘুম আমাদের শরীরে আসে, মগজে নয়।
তখন ঘুম হয় এক নিষ্ফল অনুগ্রহ।

ঘুমের গভীরে আমি দেখি নিজেকে,
এক ফাঁকা আয়নায়, যেখানে মুখ নেই, ভাষা নেই—
শুধু অসীম সাদা কুয়াশার মধ্যে ডুবে থাকা এক বিকারগ্রস্ত সত্তা।
তুমি যদি সেখানে আমাকে চিনতে চাও—চিনতে পারবে না,
কারণ ঘুমের মাঝখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না—থাকে কেবল অভিজ্ঞতার ছায়া, অনুভবের দংশন,
আর অনন্ত বিষণ্ন একাকীত্ব।

ঘুম হয়তো শেষ নয়, শুরুও নয়।
সে কেবলই একটি অন্তরীক্ষ—যেখানে নিজের ভেতরের আলো আর অন্ধকার একে অপরকে গ্রাস করে।

ফরিদপুরে ২০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ৮:১৯ পিএম
ফরিদপুরে ২০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গার এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিশ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুরের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভাঙ্গার এক্সপ্রেস ওয়ের টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান চালায়।

এসময় একটি পিকআপ ভ্যানে থাকা ২০ কেজি গাজা, দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার ও দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গার চুমুরদী এলাকার সুমন শেখ ও নগরকান্দার ডাঙ্গী এলাকার জুলহাস মুন্সি।

ফরিদপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. হাসেম আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে চিহ্নিত দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও ২০ কেজি গাজা উদ্ধার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

গণঅভ্যুত্থান : আকাঙ্খা, প্রাপ্তি ও অপূর্ণতা

শেখ রফিক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ১:৩৪ পিএম
গণঅভ্যুত্থান : আকাঙ্খা, প্রাপ্তি ও অপূর্ণতা

আমার দুই ছেলে, সক্রেটিস পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে আর সব্যসাচী সদ্য এসএসসি দিয়েছে। প্রতিদিন রাতে আমি বাসায় ফিরলে ওরা নানা প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলোর অনেকটাই আসে ফেসবুকে দেখা কোনো দুর্ঘটনা, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজি বা সংঘর্ষ নিয়ে। ছোট ছেলে বেশি প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তরগুলো খুব কঠিন। ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা, মানুষ এত খারাপ হয় কেন? তুমি জান, আজ একটা মাজার ভেঙে দিয়েছে। আজ ছাত্ররা-ছাত্ররা মিছিলে মারামারি করেছে। আজ একজনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আজ একজন শিক্ষককে মেরেছে। আজ একজনের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলেছে। আজ একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আজ একজন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়েছে। আজ একজন ছাত্রকে মেরে ফেলেছে। আজ একজনকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলেছে! আজ একজন মেয়েকে রেপ করে মেরে ফেলেছে! এমন অসংখ্য ঘটনার কথা এবং কেন হচ্ছে সেই জিজ্ঞাসার সম্মুখীন গত এক বছর আমাকে হতে হয়েছে। ওরা বলে, ‘এসব করে কেন?’ কিংবা সরাসরি জিজ্ঞাসা করে, ‘সরকার কী করে?’ আমি কখনো উত্তর দিই, আবার কখনো নীরব থাকি। ওদের প্রশ্নের উত্তর হয়তো সবসময় দিতে পারি না। কিন্তু প্রতিদিন প্রশ্ন করে।

ঢাকায় পঁচিশ বছর ধরে আমি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন, শহীদ মিনার, শাহবাগ ও প্রেসক্লাবে হাজারবার মিছিল-মিটিং-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছি। এই মিছিল-সমাবেশগুলো বারবার বলেছে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা দিন, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম দিন। মতপ্রকাশে বাধা দেবেন না। বিরোধী দলের ওপর মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করুন। হত্যা, ধর্ষণ ও গুম বন্ধ করতে হবে। গরিব মেহনতি মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করুন। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করুন। দুর্নীতি বন্ধ করুন, লুটপাট থামান, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করুন। খেলাপি ঋণ আদায় করুন, সন্ত্রাস দমন করুন, টেন্ডারবাজি ও দখলদারিত্ব রোধ করুন। সিপিবি লাখ লাখবার এসব বলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? কেউ কথা শুনেনি, কেউ কথা রাখেনি। ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?’ বঙ্কিমচন্দ্রের অবিস্মরণীয় এই উক্তি মনুষ্যত্বের এক বাস্তব ও গভীর মূল্যবোধের উৎসারণ। গত ৫৪ বছর ধরে যারা লেখাপড়া করেছেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন, প্রত্যেকেই এই ভাব-সম্প্রসারণ পড়েছেন ও লিখেছেন। কিন্তু কতটা ধারণ করেছেন এবং তা নিজের কর্মজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রয়োগ করেছেন সেটা জনগণ খুব ভালো করেই জানে। বঙ্কিমের এ উক্তি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিম্নলিখিত বাক্যটি স্মরণীয় ‘Relationship is the fundamental truth of the world of appearance, সম্পর্কই হলো এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূল সত্য। মানুষকে মানুষ করে তোলে তার পারস্পরিক সম্পর্ক, সংযোগ এবং সহানুভূতি। আমাদের জীবনে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। এটাই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই সময়ের স্বপ্ন ছিল, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। ‘খেয়ে-পরেই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই’  শিক্ষা ও চিকিৎসায় বৈষম্য বেড়েই চলছে, সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থা ও বেসরকারি খাতের উচ্চ ব্যয় দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে স্বপ্ন করে তুলেছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল দুঃখ-দুর্দশা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। কিন্তু পাঁচ আগস্টের পর শুরু হওয়া হামলা, নির্যাতন ও দমন-পীড়ন ন্যায়বিচারের স্বপ্নকে অনেকটা ভেঙে দিয়েছে। খুনের বিচার হয়নি, দুর্নীতিবাজ গ্রেপ্তার হয়নি, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা যায়নি। মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য বেড়েই চলছে, জনজীবন অনিশ্চিত। জনগণ ভেবেছিল, শেখ হাসিনা চলে গেলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। কারণ তার সরকারের অধীনে ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সম-অধিকার হারিয়ে গিয়েছিল। বিরোধী দল দমন, গুম, খুন, ধর্ষণ ও দুর্নীতি রাজত্ব ছিল। সেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটায়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, গত এক বছরে শান্তি-শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরেছে কি? জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার পেয়েছে কি? র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র কতটুকু বদল হয়েছে? রাষ্ট্র যদি জনবান্ধব হতো, তাহলে আন্দোলনের পর চিন্তাচেতনার সংস্কার হতো; কিন্তু বাস্তবতা বিপরীত, হয়রানি ও দমন চলছে। অপরাধীরা সরকারের দুর্বল নেতৃত্বে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা আজও অধরা। ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার শুধু কোনো ব্যক্তি বা দালান-কোঠায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাষ্ট্রযন্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে গভীরে প্রবাহিত একটি ব্যবস্থা। তাই স্বৈরাচারী শাসন কেবল শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করলেই নির্মূল হয় না; বরং তা পুনরুৎপাদনের আশঙ্কা থেকেই যায়। এ জন্য সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পন্থায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রচর্চার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলা প্রয়োজন। গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়া। যেখানে সবাই মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার পাবে। কিন্তু নেতৃত্বের স্বার্থপরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্ষমতার ‘ডিসিপ্লিনারি মেকানিজম’ জনআকাক্সক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘মব-সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সংখ্যালঘু ও বিরোধী মতের ওপর সহিংসতা এবং গণতান্ত্রিক কণ্ঠরোধকে উসকে দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা কীভাবে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে? অপরাধীরা প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মুখে। ধর্ষক, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও মাদকাসক্তরা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করার চেষ্টা করছে। তারা অস্থিরতা ও ভয় সৃষ্টি করছে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে। এসব ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই অপরাধীরা হঠাৎ কোথাও জন্ম নেয় না; তারা গড়ে ওঠে বৈষম্যপূর্ণ, অব্যবস্থাপনা ও ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যেই।

দুর্বল শাসনব্যবস্থা, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রশাসনিক পক্ষপাত অপরাধীদের উৎসাহ দেয়। যখন অপরাধীরা শাস্তি পায় না, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিচারহীনতা ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নারীর প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব, লিঙ্গ বৈষম্য এবং ঘৃণার রাজনীতি বিকৃত মানসিকতার অপরাধী তৈরিতে সহায়ক। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার প্রতি অবহেলা অপরাধ প্রবণতা বাড়ায়। অপরাধকে ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে দেখা এবং অসৎ জীবনযাপনকে সামাজিক সহানুভূতির মাধ্যমে মেনে নেওয়া একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও মানুষের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, এই জাতি অন্যায় সহ্য করে না। ভাষার অধিকার, ভোটাধিকার বা ন্যায্য জীবনের দাবিতে মানুষ বারবার রক্ত দিয়েছে। প্রতিবারই জন্ম দিয়েছে গণঅভ্যুত্থান, যা শুধু সরকারের পতনের জন্য নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নৈতিক কাঠামো চ্যালেঞ্জ করার জন্য। তবে ১৯৬৯ সালের ছাত্র-অভ্যুত্থান থেকে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া একই প্রতিক্রিয়াশীল ও আত্মবিমুখ।

প্রশাসনে দায়বদ্ধতার অভাব প্রকট, আত্মসমালোচনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিপক্ষের দোষারোপে লিপ্ত, জনগণের রক্ত ও ক্ষোভকে ক্ষমতার খেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে গণতন্ত্র ক্ষয়ে যাচ্ছে, লোভ-হিংসা বাড়ছে, রাষ্ট্র থেকে মানুষ আবার দূরে সরে যাচ্ছে। বর্তমান অস্থিরতা ও হতাশার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো, নিজেকে প্রশ্ন করা ‘আমি কী আমাকে পরিবর্তন করেছি’? সর্বত্র সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। সংস্কার ও নির্বাচন এই দুই পরস্পরের পরিপূরক। জনগণ চায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরে পেতে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারই হওয়া উচিত প্রথম পদক্ষেপ। ভোটাধিকার ফিরলে শাসনব্যবস্থায় শান্তি আসবে। বিচারব্যবস্থা, পুলিশ ও প্রশাসনে সংস্কার অপরিহার্য, সাংবিধানিক পরিবর্তনও সময়ের দাবি। তবে গণতান্ত্রিক সংস্কার সফল হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কারণ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাই প্রথম প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনভাবে কথা বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর আলোচনা চলছে এবং তরুণদের কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরুর কিছু অভিযান সাধারণ মানুষের মাঝে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘমেয়াদে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রদর্শন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও ন্যায্য সম্পদের বণ্টন নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি প্রশাসন স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করবে, সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি অপরাধ ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখবে। নারীর মর্যাদা ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা ধর্ষণ কমাবে। যুবসমাজে নৈতিকতা গড়ে উঠলে দুর্নীতি কমে। উন্নত দেশগুলোতে বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক নিরাপত্তাই অপরাধ হ্রাসের মূল কারণ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের ৩১ দফা রূপরেখা এবং ভিশন-২০৩০-এ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও নির্বানের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক রূপান্তরের বার্তা বহন করে। তবে সময় বলে দিতে এই রূপান্তরের বার্তা কতটা কার্যকর হবে। গণতন্ত্র তখনই সফল হবে, যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবে ‘সাধারণ মানুষ’ এবং রাষ্ট্র হবে সবার মৌলিক অধিকারের রক্ষক ও জনতার প্রকৃত সেবক। তখনই ‘খেয়ে-পরেই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই’ এই আর্তনাদ শব্দহীন হয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক